কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সুকান্ত দেবনাথ

 

ধারাবাহিক উপন্যাসিকা

অস্তাচল



আট

-        স্মিতা তুমি কি সত্যি বলতে ভুলে গেছ?

-        না ভুলিনি, আমি এখনও সত্যি বলার মত বুকের পাঁটা রাখি।

-        আর আহ্নিক তুমি কি ভুলে গেছ সব সত্যি আনন্দ দেয় না। কিছু কিছু কষ্ট দেয় খুব।

-        কি করে ভুলতে পারব? ঝুমুরকে যে বড় ভালবাসতাম।

-        তাহলে স্মিতা তুমি চুপ করে আছ কেন? কিছু বলছ না কেন?

-        কাকে বলব? ভেবে ছিলাম আহ্নিক আমার কিন্তু এখন দেখছি সে ঝুমুরকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসত।

-        ঝুমুর আহ্নিকের কে ছিল?

-        জানিনা, তবে ঝুমুরের মায়ের কাছে আহ্নিকের বাবা যেত। এখনই রটনা।

-        তাহলে আহ্নিক তুমিকি জান না, ঝুমুরের কথা উঠলেই তার বাবার কথা সামনে আসবে?

-        জানি এখন এক ডিল করছে বিকাশ। আমরা সব দেখতে পাচ্ছি। যেমন আগেও ঘরে দেখতাম, অথচ চুপ করে থাকতাম।

একটা নৈশব্দে স্মিতার ঘরটা তাদের দুজনকে আবার এসব প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে। তারা দেখতে পাচ্ছে যা কিছু উন্মোচিত সব কেমন যেন এক মিথ্যের ওড়নায় ঢাকা। স্বচ্ছ এক ওড়না বুকে পাছায় জরিয়ে যদি কোনও কাল নাগিনী উঠে যায় সিঁড়ি দিয়ে। তবে তার চলে যাওয়া যেমন দেখায়। তেমনই আজকের এই অন্তর্বর্তী সরকার। সে কাল নাগিনীর ফেলে যাওয়া ছায়া মানুষের মনে এক ভ্রম তৈরি করছে।

এবার আহ্নিক সরাসরি উচ্চারণ করল, কেন মারল স্মিতা মেয়েটাকে? ও তো কারোর ক্ষতি করেনি।

স্মিতা যেন ঘরটাকেই উত্তর দিল, ক্ষতি করেনি, তবে ক্ষতিকারক ছিল।

-        কী চেয়েছিল ঝুমুর?

-        ঝুমুর সাক্ষী ছিল, আমাদের দেখে ছিল, ঝুমুর তার মায়ের মত চেয়ে ছিল সারা জীবন আমাদের ব্ল্যাকমেল করে যাবে। যা তার মায়ের স্বভাব ছিল। কোনও ভাবে কোনও পুরুষকে ফাঁসিয়ে, তাকে চুষতে থাকো। চুষে চুষে সে যখন ছিবড়ে হয়ে যাবে, তখন তাকে ফেলে অন্য কোনও পুরুষ। এবং সে যেমন তেমন পুরুষ নয়। তার হাতে যেন কিছুটা ক্ষমতা থাকে। ম্যান পাওয়ার থাকে। মানি পাওয়ার থাকে।

-        সে সব হাজার হলেও, ঝুমুর তো বোন ছিল।

-        তোমার বাবা কি তা বলে গেছে?

শব্দ তার সীমা ছাড়িয়ে যেন ভ্রহ্মের দিকে চলে যাচ্ছে। পিছনে ফেলে যাচ্ছে প্রশ্নের প্রতিপক্ষ প্রশ্ন। তাহলে এবার?

ফিরে এসেছে বিকাশ। পুলিশ ফিরে এসেছে। তাদের সামনে বসেছে। কাজের মেয়ে চা এনে দিয়েছে। তারা এখন মন দিয়ে চা খাচ্ছে। সাথে কিছু একটা স্ন্যাক্স, যা আর আহ্নিকের খেতে ইচ্ছে করছে না। তবু যন্ত্রচালিতের মত গিলে যাচ্ছে সে। তাকে পুলিশ বলেছে, এখন আপনি বাড়ি যান। আপনার কাজ শেষ। যখন প্রয়োজন হবে তখন ঠিক ডেকে নেওয়া হবে। সে পুলিশকে বলেছে, আমি চলে গেলে যদি লাশ গায়েব হয়ে যায়। পুলিশ বলেছে, সে আপনি থাকলেও হবে। কিছু কি করতে পারবেন?

না তেমন কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। বা তেমন করার মত বুকের জোর হয়তো তার নেই। তবু একটা প্রতিরোধ থাকা উচিৎ। পুলিশ বুঝিয়েছে, দেখুন ঘটনাটা এভাবে সাজান যেতে পারে, মেয়েটা আর আপনি একটা গ্যাং। একসাথে কাজ করেন। এখানে এসে ছিলেন মেয়েটার পেটের বাচ্চা বিকাশের ঘাড়ে ফেলে যদি কিছু আর্ন করা যায়। এখন আজকে কিছু একটা বিষয়ে ভাগ বাটোয়ারা যখন হচ্ছিল না। মেয়েটির সাথে আপনার একটা ঝামেলা হয়। সে সময়ে স্মিতা ঘরে ছিল না। আপনি মেয়েটিকে মেরে পালিয়ে যান। স্মিতা ফিরে এসে দেখে মেয়েটি মেঝেতে পড়ে আছে।

 -        বলুন কেমন হয়েছে গল্পটা। নোবেল টোবেল পাবে তো?

-        আপনি সত্যিটা জানতে চান না?

-        এটাও সত্যি হতে পারে?

-        মেয়েটির মেডিকেল টেস্ট করালেই কার বাচ্চা বেরিয়ে যাবে।

-        সব টেস্টের রিপোর্ট আপনার এগেনেস্টেই যাবে। ধরে রাখুন। আর এত মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? মেয়েটা আপনার কে ছিল?

-        মেয়েটা নয়, ঝুমুর। ঝুমুর আমাদেরই একজন ছিল।

-        না ঝুমুর আমাদের একজন ছিল না, অন্তত আপনি আমি যেখানে রয়েছি ঝুমুর সেখানে ছিল না। সে আর তার মা, তারা আমাদের মাঝে থেকেও অন্য জগতে থাকে।

-        তার মাকে জানাতে হবে না? জানিয়েছেন?

-        তার মায়ের খবর আপনি রাখেন না?

-        আমি কেন রাখব?

-        আপনার তো রাখা উচিৎ। আপনার বাবার স্পেশাল ছিল।

আহ্নিক কি এখন আকাশ থেকে পড়বে, যখন সে জানতে পারবে ঝুমুরের মা এই কিছু দিন হল এক রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। সে সময়ে ঝুমুরের মা আজকের প্রতিপক্ষ দলের একজনের গাড়িতেই ছিলেন। এবং গাড়িটা রোড সাইড এক টি স্টলে দাঁড়িয়ে ছিল, যখন গাড়ির মালিক সেই দোকানে ছিলেন। পিছন থেকে এক ডাম্পার এসে গাড়িটাকে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। না আহ্নিক আকাশ থেকে পড়বে না। বরং সে কিছুটা নড়ে বসবে, কেননা মা মেয়ে দুজনেই শেষ।

হ্যাঁ তাহলে মা মেয়ে দুজনেই শেষ হয়েছে। এবং যার গাড়িতে সে মহিলা ছিল, তার কাছ থেকেই বিকাশ এসেছে। তাহলে কি বিকাশের সবকিছু জানা ছিল?

-        আপনি বাড়ি চলে যান।

উঠে পড়েছে আহ্নিক। তাকে চলে যেতে হবে। না হলে তাকে জড়িয়ে এক অন্য খেল দেখা যাবে এখানে। যদিও সে জানে সে চলে গেলে, মেয়েটা হারিয়ে যাবে অনন্তে। তবু সে চলে যাচ্ছে। এখন আমরা জানি স্বামী স্ত্রী ডাইভোর্স হয়ে গেলেও, তারা ফিরে ভাই বোন হয়ে যায় না। তারা তেমনই থাকে। তার চোখ গেল স্মিতার দিকে। দেখতে পেল, স্মিতা ঠিক সেখানটায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে সে ঝুমুরের মৃত দেহটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এখন অবশ্য একা। বিকাশ শেষ প্রতিদান হিসাবে তাকে এবারের মত কোনও একটা লুপ হোল দিয়ে বার করে দেবে। যে লুপ হোলে এই কিছুক্ষণ আগে তারা সঙ্গমে লিপ্ত ছিল।

আহ্নিক বেরিয়ের যাচ্ছে অথচ মনে এক সংশয় নিয়ে যাচ্ছে। এই কি সেই মুহূর্ত যখন মায়া অনুপস্থিত। এবং স্মিতার অভ্যন্তরে তো তার শুক্রাণু রাখা হল না। তাহলে সে গেল কোথায়? সে স্মিতার ঘরটার দিকে তাকিয়ে দেখল, যে ঘরের সাথে সে কথা বলে মাঝে মাঝে। বা যে ঘর তার সাথে কথা বলে। যে দেয়াল ঝুমুর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল, দেয়ালে ঝুলে থাকা ছবিগুলো দেখছিল। সেই সব ছবিগুলো যেন এখন দেয়াল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে চলে যাওয়ার আগেও একবার শেষ বারের মত অপেক্ষা করল, যদি ঘরটা তাকে কিছু বলতে চায়। যদি ঘরটা দেখাতে পারে সেই ভার্চুয়াল লুপ কোথায় রয়েছে?

ঝুমুর যেন ঘরের আড়াল থেকে তাকে বলল, বাড়ি যাও আহ্নিকদা। না হলে স্মিতা তোমাকে শেষ করে দেবে।

স্মিতা যেন ঘরের আড়াল থেকে তাকে বলল, বাড়ি যাও আহ্নিকদা। না হলে ঝুমুর তোমাকে শেষ করে দেবে।

পিছন থেকে পুলিশ অফিসার আর বিকাশ বলল, বাড়ি যান। এখানে যা কিছু দেখলেন, সব কাল্পনিক। সব আপনার কল্পনায় হয়েছে। এ এক কল্পনার জগত, যেখানে আপনি স্মিতা, ঝুমুর বা বিকাশ সবাই কাল্পনিক।

 

নয়

আহ্নিক গাড়ি চালাচ্ছে। পিছনে রাস্তা যেন ঢেউয়ের মত উথাল পাথাল করে এগিয়ে দিচ্ছে তাকে। কথাও কোনও মানুষ নেই, কথাও কোনও শব্দ নেই। এতক্ষণ যা ঘটেছে তার কোনোটাই সত্য নয়। সব তার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় চমকে উঠে বসে পড়েছিল বিছানায়। তখনই তার মনে পড়েছিল ঝুমুরের কথা। ঝুমুর যাকে সে সেই ছোট্ট বেলা থেকে দেখে এসেছে। যাকে একবার সাইকেলের সামনে বসিয়ে অনেক দূর ঘুরিয়ে নিয়ে আসার এক অদম্য ইচ্ছে তার ছিল। অথচ কোনোদিন সম্ভব হয়নি। ঝুমুর যাকে সে দেখে এসেছে একটা ডল পুতুলের মত। ঝুমুর যাকে সে শেষবার কোলে করে হসপিটালের ট্রেচারে শুইয়ে দিয়েছিল।

আর স্মিতা?

ঘরে আবার একদিন স্মিতার বাবা এসেছে। এতদিনে তার বাবা এ ঘরে বেশ পরিচিত। এতদিনে তাকে আমরা সবাই চিনে ফেলেছি। সে এসেছে মেয়ের বিয়ের খবর দিতে।

 -        মেয়ের বিয়ে দিয়ে এলাম।

-        ওমা, তাই নাকি, তা তো বেশ ভালো খবর। কোথায় দিলেন?

-        এখানেই ছেলের বাড়ি। একসাথে পড়ত। সেখানেই ওদের আলাপ।

-        তা কী করে ছেলে?

-        এখনও কিছু করে না। তবে একটা ব্যবসা করবে বলছে।

-        ও আচ্ছা, তা বেশ ভালো।

-        কিসের ব্যবসা করবে করে ঠিক করেছে ছেলে?

-        ঠিক তেমন কিছু করেনি। তবে একটা পারিবারিক ব্যবসা ওদের ছিল, আগে বেশ ভালোই চলত, এখন কিছুটা মন্দা পড়ে গেছে সে ব্যবসায়। সেটাই আবার করবে মনে হয়।

-        ও আচ্ছা। সে তো বেশ ভালো। ঘরের ব্যবসাই করা উচিৎ। তাতে পরিবারের মান বাড়ে। কিসের ব্যবসা সেটা?

-        আগে তো ওর বাবা লটারির টিকিত বিক্রি করত ঘুরে ঘুরে। এখন সে ব্যবসাটা আর নেই। মাঝে একটা ঝামেলা হয়ে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

-        ওমা, ঝামেলা আবার কীসের?

-        ঝামেলা বলতে। ডেলি লটারির অনেক ঝামেলা। সেই কারণেই একবার দাদার কাছে আসা। উনি যদি একবার পার্টিতে বলে দিতেন। তবে আবার একবার সেই লটারির ব্যবসাটা খোলার খুবই ইচ্ছে ছেলের।

আহ্নিক আড়াল থেকে শুনছিল। স্মিতা শেষপর্যন্ত এক লটারি বয়কে পাকড়াও করল? হায় রে, জগতে ছেলে ছিল না আর! কিছুটা অভিমান হল তার, কিছুটা হিংসে আর কিছুটা এক বক্র অভিব্যক্তি, যা সে নিজেও জানে না। অথচ ওদের সামনে দিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের সাথে চোখাচুখি হল একবার। মায়ের চোখও স্বপ্রশ্ন চোখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জিজ্ঞাসা করছে, কী করলি তুই? এত সুন্দর মেয়েটা সামনে দিয়ে এক বেকার ছেলের সাথে চলে গেল, আর তুই কিছুই করতে পারলি না? আহ্নিক তেমন কিছু বলেনি। কেননা তখন বলার মত কিছু ছিল না তার কাছে। সেও তো বেকার, আবার মেয়েটা তার সমবয়সী। মাকে পরে বলেছিল, ও মেয়ে ঘরের জন্য নয়। বাইরের জন্য। চিন্তা কোরো না। সময়কে বয়ে যেতে দাও, সময় সব সত্যি দেখিয়ে দেবে।

না তার বাবা তেমন কিছু হেল্প করতে পারেনি। কেননা ততদিনে তার বাবার ক্ষমতাই চলে গেছে। তখন আপনি বাঁচলে বাপের নাম। নিজের গুটাতে ব্যস্ত সবাই। সেখানে কোন এক লটারিওয়ালা, যার দোকান ছিল তালতলার বস্তির লাগোয়া। সেই বস্তির ছেলেরাই টিকিত কিনত। ইললিগাল ডেলি লটারি। কয়েকজন নাকি সেই লটারিতে নিজের জমা পুঁজি সব হারিয়ে সুইসাইড করেছিল। তারপর পুলিশ সে দোকান উঠিয়ে দেয়। সে সব ঘটনা সবার জানা। এখন তার ছেলে কীভাবে স্মিতার মত মেয়ের খবর পেয়েছে, সেটা বলা মুস্কিল।

তবে সেই যে বললাম, সব মুস্কিল সময়ের হাতে জল হয়ে যায়। সময় ঘুরিয়ে দেখায় সে ছেলে বিকাশের ক্যাশ কালেক্টর হিসাবে কাজ শুরু করেছে। বিকাশ তখন উঠতি নেতা। তার অনেক ব্যবসা ছিল আগে থেকে, এখন কাজের চাপে সে সব আর একা হাতে সামলাতে পারে না। একটা বিয়ার বারে নির্দিষ্ট একটা টেবিল বিকাশের নামে বুক থাকত সব সময়। সেখানেই কোনওভাবে তার সাথে সেই সময় স্মিতার বরের দেখা হয়ে ছিল। সে যাইহোক কোন টেবিল কার, সেখানে কে বসে গল্প করছে, তাতে আহ্নিকের কি যায় আসে! অন্তত টেবিল চেয়ারগুলো তো তার কোনও ক্ষতি করেনি। তারা তো মানুষকে কিছুক্ষণ বসে থাকার স্বাধীনতা দিয়েছে। সে টেবিলে আহ্নিকও বসেছে কয়েকবার, বিকাশের আসার আগে বা পরে। একবার সেখানে যে ছেলেটা কাজ করত সে বলে ছিল, দাদা এই টেবিলটা আমাদের সারা বছর বুক থাকে। এখানে বসবেন না। ও আচ্ছা, সারা বছর বুক থাকে? ঠিকাছে অন্য কথাও বসি। যদিও তখন আহ্নিক জানতে চায়নি, কার নামে বুক থাকে এ টেবিল। স্মিতার বিয়ের পরেই সে জানতে পারে, বিরাট এক কোইন্সিডেন্স এই টেবিলটাকে ঘিরে।

অবশ্য বিয়ার বারের একটা টেবিল, সে এতটা গুরুত্ব পায় কী করে? কোনও কিছুর গুরুত্ব তখনই বাড়ে যখন সে হয় অপরিহার্য হয়ে ওঠে, নাহলে ইগো হয়ে ওঠে। এখানে ইগো ছিল চরম। চতুর্দিকে ইগো, আকাশে বাতাসে ইগো। কারণ কয়েকমাস পরেই সে আবার শুনেছিল, স্মিতা তার বরকে ফেলে বিকাশের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল, আবার বিয়ের দুদিনের মাথায় সেই ছেলেটাকে ফেলে বিকাশের সাথে পালিয়েছে। খবরটা সে মাকে দিয়েছিল বেশ রসিয়ে রসিয়ে। মা ছেলে দুজনেই সেদিন বেশ অনেকক্ষণ পাশাপাশি বসে গল্প করেছিল, তারপর মায়ের হাতের রান্না মা-বেটা তৃপ্তি করে খেয়েছিল। কেন এত তৃপ্তি? সে কথা কি কেউ জিজ্ঞাসা করেছে? জানতে চেয়েছে? না কেউ জানতে চায়নি। কেন সেদিন সামান্য দুপুরের ঘুমেও মা-বেটা দুজনে স্বপ্ন দেখেছিল। স্মিতা বিকাশকে ফেলে আবার পালিয়ে এ বাড়ি চলে এসেছে।

আর সেই ছেলেটা। যার বৌ ছিল স্মিতা। যে ছেলে স্মিতাকে খুশি করার জন্য না জানি কত ছক্কা পাঞ্জা করেছে লাইফে। সে ছেলের কী হয়েছিল? বেশি কিছু হয়নি, কারণ বেশি কিছু হওয়ার ছিল না। সেই বিয়ার বারে, সেই টেবিলটা বিকাশের নামের থেকে তার নামে ট্র্যান্সফার হয়ে গিয়েছিল। এরপর তার নামে বুক থাকত সারা বছর। এবং আরও এক কোইন্সিডেন্স, একদিন যখন আহ্নিক সেই বারে বসে ছিল, অন্য একটা ছেলে এসে স্মিতার সেই প্রাক্তন বরের শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ পত্র বারের ম্যানেজার আর সেখানে যারা কাজ করে তাদের নামে দিয়ে গিয়েছিল। বেচারা বছর খানেকের মধ্যেই লিভার সিরোসিসে মারা যায়। যে ছেলেটা সেই নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে এসেছিল, সে তার ভাই হবে। বা একমাত্র যে তাকে ভালোবাসত। ছেলেটার চোখ ছল ছল করছিল। চোখে মুখে মদ আর এই বিয়ার বারের প্রতি ঘৃণা।

তাহলে স্মিতার প্রতি আহ্নিকের কি অনুভূতি থাকতে পারে? আহ্নিক চলে যাচ্ছে তার শেষ আশাটুকু ফেলে রেখে আর কিছু বলার নেই। স্মিতার কাছে কিছু চাওয়ার নেই। তাও চলে যাওয়ার সময় আহ্নিকের মনে হয়েছে, আশ্চর্য এই মন। এত কিছুর পরেও পুরুষমানুষ তার অবচেতনের মেয়েটাকে ক্ষমা করতে চায়!

(ক্রমশ)

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন