![]() |
| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২ |
ঝগড়া
সান্ত্বনা মনে মনে কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছিল না কিছুতেই। শুধুই মনে হচ্ছিল, সকালে অফিস যাবার ঠিক আগে সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে হরিদ্বারের সঙ্গে ঝগড়া করা ঠিক হয়নি। হ্যাঁ, ঝগড়া করার কারণ একটা আছে, কিন্তু সেই ঝগড়াটা অফিস যাবার আগে না করে সন্ধ্যায় হরিদ্বার ঘরে ফিরে আসার পরও করা যেত। কারণটা তো আর পালিয়ে যেত না! কিন্তু সান্ত্বনার এটাই দোষ, কোনো ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় পড়লে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। বুকের মধ্যে রাগ বা অভিমান জমিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আর্টিজিয়ান কূপের মতো গলগল করে বেরিয়ে আসতেই থাকে।
অফিস থেকে হরিদ্বারের ঘরে ফিরতে রাত আটটা বেজেই যায়। কখনও দেরি হলে ন’টা সাড়ে-ন’টা। কিন্তু আজ রাত সাড়ে-দশটা বেজে গেল, অথচ এখনও ফিরে এলো না! সান্ত্বনা অধৈর্য হয়ে ফোন করল হরিদ্বারের অফিসের দুই সহকর্মীকে। তারা জানালো, সেকী! এখনও ঘরে পৌঁছননি! হরি তো সাতটার পরেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে!
সান্ত্বনার দুশ্চিন্তা এবার দুর্ভাবনায় রূপান্তরিত হলো। রাত বাড়ছে, মানুষটা ফিরে আসছে না কেন? তাহলে কি সে যা অনুমান করেছে, সেটাই সত্যি? বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছে তাদের। দুই পরিবারের অভিভাবকেরা খোঁজখবর নিয়ে সম্বন্ধ করে বিয়ের আয়োজন করেছিল। বিয়ের আগে তদন্ত করে যেটুকু জানা গেছিল, হরিদ্বারের নারীঘটিত কোনো কেলেংকারি ছিল না, সে ছিল নারীবর্জিত পুরুষ। সান্ত্বনার সম্পর্কে সবাই মন্তব্য করেছিল, খুবই ভালো মেয়ে। কোনো ছেলের সঙ্গে লটরপটরের কেচ্ছা কারও জানা নেই। সুতরাং পাঁজি বিচার করে শুভদিন দেখে তাদের বিয়ে হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সন্তানের আগমন যদিও হয়নি, তবে বছর দেড়েক নির্বিঘ্নেই সংসারধর্ম পালন করছিল।
গোলমালটা শুরু হলো মাসছয়েক আগে। হঠাৎ একদিন সান্ত্বনা তার এক বান্ধবীর কাছে খবরটা পেয়ে হকচকিয়ে গেল। হরিদ্বারকে নাকি অফিসের পরে দেখা গেছে কোনো এক মহিলার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে। বান্ধবী এটাও জানালো যে, সে স্বচক্ষে তাদের ঘুরে বেড়াতে দেখেছে। সেদিন রাত থেকেই গোলমালের সূচনা। মজার ব্যাপার, সান্ত্বনা প্রায় হামলে পড়ে অভিযোগ জানাতে হরিদ্বার নির্বিকারভাবে স্বীকার করে নিল, অভিযোগ অসত্য নয়। সে সত্যিই একজন মহিলার সঙ্গে অফিসের ছুটির পরে মাঝেমাঝে একসঙ্গে বেড়াতে যায়, কখনও সিনেমাহলে, কখনও পার্কে, কখনও রেস্টুরেন্টে। মহিলা তার বন্ধু, সহকর্মী।
এরপর থেকে প্রায় নিয়ম করে ঝগড়া শুরু হলো দুজনের মধ্যে। মূল ঝগড়াটা সান্ত্বনাই করত, হরিদ্বার ঠেকা দিত। আর ঝগড়াটা হতো হরিদ্বার অফিস থেকে ঘরে ফিরে আসার পরে। কখনও কখনও সান্ত্বনা এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়ত যে, হরিদ্বারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আঁচড়ে কামড়ে দেবার চেষ্টা করত। হরিদ্বারও রেগে যেত। বলত, তোমাকে তো বলছি, তুমি যা ভাবছ, তা নয়। কিন্তু তুমি বুঝতেই চাইছ না!
মূলত ঝগড়ার সময় রাতে হলেও কোনো কোনোদিন সকালেও হতো। কিন্তু অফিসের পরে রাত হলেও ঘরে ঠিক ফিরে আসত হরিদ্বার। অথচ আজ রাত বারোটা বেজে গেলে, এখনও ঘরে ফিরে এলো না কেন?

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন