কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

দ্য ক্লাউড

 


(সপ্তদশ পর্ব)

ভারতীয় এই পুজোকে ছট বলে। কার্তিকের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি। আজ কবরখানার মাঠের উল্টোদিকের নদী বাঁধ আলোর মালায় সাজছে। উপোষী পূণ্যার্থীদের আর একটু বাদেই দেখা যাবে নদী ঘাটে নামতে।

মানতের ঢাক এসেছে গাঁ গঞ্জ থেকে। ঢাকিরা স্টেশন চত্ত্বরে ক্রমাগতই তাদের ঢাক বাজিয়ে যাচ্ছে। সূর্য দেবতা ও ষষ্ঠীদেবীর কাছে যে যেমন প্রার্থনা করেন, তার ফল মিললেই প্রার্থনা অনুযায়ী কেউ চার ঢাক, কেউ ছয় ঢাকে, আবার কেউ বা একটা ঢাকে তাদের পুজো সারে।

উৎপলের তুলি চলছে। সেই দূরন্ত তুলির টানে মনিরত্না ভরদ্বাজ আজ চারদিনের ব্রতের মূল দিনে ঘনঘন মেঘের ডাকের সাথে সাথে চলেছে পারিজাত নদীতে।

আকাশময় বিন্দু বিন্দু তারাদের আলো একটু একটু করে ফুটে উঠছে, আবার নিভে যাচ্ছে। কেননা আকাশের মেঘ সেইসব উজ্জ্বল নক্ষত্র আলোকে ঢেকে দিচ্ছে।

এবারের বর্ষা একটু দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য নদীতীরবর্তী অঞ্চলে কাদার পাহাড়।

মনিরত্না ভরদ্বাজ তখন যেন পৃথিবীবাসী এক নারী। যে নারীর কামনাবাসনা আছে। সংসারের মায়ায় লেপ্টে থাকা যা কিছু, তাদেরকে টিকিয়ে রাখা সহ সেইসব বস্তুবাচক প্রাণের বাড়বাড়ন্ত হবে, এমন কামনা-ও সে করে।

বাবলুর হাতে পাথুরে মেঘ ঘষা চকমকি আলোয় মনিরত্না একটার পর একটা সিঁড়ি ভেঙে নদীর দিকে নেমে যাচ্ছে। তার হাতে ধরা নিমের দাঁতন একবার মুখে, তো আর একবার মুখের বাইরে।

নিমচাঁদ আর আনন্দ গতকালই এসে বৈকুন্ঠলোকের কদলী বৃক্ষ দিয়ে সূর্য ও ষষ্ঠী দেবীর জন্য ছাঁদনাতলা নির্মাণ করে গেছে। এই মুহূর্তে নিমচাঁদ আনন্দের মাথায় রোদসুতো দিয়ে তৈরি নতুন বস্ত্র দিয়ে ঢাকা পুজো সামগ্রী একে একে নামিয়ে রাখছে ছাঁদনাতলায়।আর বাবলু সেইসব সামগ্রী সাজিয়ে দিচ্ছে দেবতা ও দেবীর উদ্দেশ্যে।

আকাশ হয়তো আজ আলোকিত হবে না। কেননা মেঘেরঘটা আগে থেকেই এঁকে রেখেছে উৎপল চিত্রকর। কিন্তু সমঝদার আর্টিস্ট বলে, সে সূর্যাস্তের লাল দীপ্তি বোঝাতে পশ্চিম দিগন্তে কালো’র মধ্যে একটু লাল রংএর ছোঁয়া দিয়ে  অদ্ভুত সুন্দরভাবে অস্তগমনের আভা ফুটিয়ে তুলেছে।

পৃথিবীর সময় আর পরাবর্ত না- শরীরের চলমান-চিত্রের সময় এক গতীয় নয়। তাই সূর্যের উদয় ও অস্ত ব্রহ্মান্ডের সর্বত্র এক নয়। তবুও তো সূর্য তো সূর্য-ই! তিনিই একমাত্র জীবন্ত দেবতা। তিনি সকল প্রাণের উৎস।

মনিরত্না সেই জীবন্ত দেবতার উদ্দেশ্যে স্তব শুরু করে বলতে থাকলো -

হে সূর্য দেব, তুমি উগ্র বীর। তুমি স্বয়ং বিষ্ণু। তোমার মুখের ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলছে পৃথিবীর সব পাপতাপ। আমাদের সৌরপতি স্বয়ং ভীষণ হলেও তিনি ভদ্র এবং একমাত্র তিনিই মৃত্যুর-ও মৃত্যু। তুমি এক এবং অদ্বিতীয়। তোমাকে প্রণাম জানাই। এই বলে সূর্যাস্তের লালীমা মেশা জলে ডুব দিয়ে মনিরত্না চিৎকার করে ডেকে উঠলো - বা... ব… লু...

বাবলুও জলে ঝাঁপ দিয়ে তার নতুন জন্মের মা’এর জলে ভেজা হাতে ধরা মেয়ে মানুষের বেনুনী করা চুল দেখতে পেয়ে মা ও ছেলে মিলে সেই ফুলে ঢোল হওয়া নারীকে টেনে টেনে পাড়ের দিকে আনতে থাকলো।

(ক্রমশঃ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন