রবীন্দ্রনাথের বর্ষা, নিঃসঙ্গতা : শ্রাবণ সঙ্গীত
বৃষ্টি থেমে গেলে জলের ফোঁটাগুলো যখন রাস্তায় জড়ো হয়, তখন মনে হয়, সদ্য যেন শিউলি ফুটেছে, কিংবা কদম ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে। সূর্য উপুড় করে বিকেলকে ঢেলে সাজিয়েছে ঠিকই তবু অদ্ভুত এক বৃষ্টিভেজা গন্ধ ঘিরে ধরেছে চারিদিক। মনখারাপ এক বিকেল, এক বিষণ্ণ বিকেল। দূর থেকে ভেসে আসছে কাঙ্খিত বর্ষার মর্মস্পর্শী সেই গান
"মেঘের পরে মেঘ জমেছে
পরান আমার কেঁদে বেড়ায় দুরন্ত
বাতাসে" ... প্রবল মেঘের ঘনঘটায় কবির মন ব্যাকুল, দিশাহারা, ঘনকালো মেঘের আড়ালে
বর্ষার স্পর্শ কবিকে এক অজানা নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরছে। নিঃসঙ্গ মনের ভাবপ্রবন মন উড়ে
চলেছে কালিদাসের যুগে যেখানে আরও স্পষ্টভাবে উপস্থিত কালিদাস, তাঁর 'মেঘদূত’ তার রেবানদী
ও শ্যামলশৈলশির! যে গানের সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি অনাঙ্গ কীভাবে জড়িত যে গানের সঙ্গে
গেঁথে আছে বাঙালির চিরকালের গরিমা অহংকার।
"বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ়
এলো
আমার মনে
কোন সে কবির ছন্দ বাজে ঝরো ঝরো
বরিষণে"।
ভরে"...
আবার পরে গিয়ে বলছেন-
"সে কে বাঁশি বাজিয়েছিল কবে
প্রথম সুরে তালে,
প্রাণেরে ডাক দিয়েছিল সুদূর আঁধার
আদিকালে।
তার বাঁশির ধনী খানি আজ আষাঢ়
দিল আনি"
সেই অগোচরের তরে আমার হৃদয় নিলো
হ'রে"...
আষাঢ়ের উদ্দেশ্যেই যে এত কিছু
বলা তা আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না। এই আষাঢ় সংগীতের নিবিড় নস্টালজিয়া আমাদের এক
অজানা, অদেখা বর্ষা যুগের কোন এক অজানা পথে নিয়ে যায়।
আবার ধরুন শুধুমাত্র আষাঢ়ের ধ্বনির
ম্যাজিক দেখা গেল আরেকটি অসামান্য গানে অসাধারণ আধুনিকতার মোড়কে। গানটিকে রচনা করলেন
তিনি আষাঢ়ের কন্ঠে বজ্রমানিকের মালা গেঁথে দিয়ে। আপনাদের মনে আছে তো সেই গানটি।
"বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ়
তোমার মালা তোমার শ্যামল শোভার বুকে বিদ্যুতেরই জ্বালা"…।
কবি বারবার এই আষাড়ের ভয়ঙ্কর
রূপ দেখেছেন। কখনোও পর্দার বুকে কখনও বা নিজের ঘরের ভেতরেই। একই সঙ্গে প্লাবন ও ধ্বংসের
ভয়ঙ্কর রূপ তিনি লিখেছেন আর তাই তিনি লিখেছেন
"আমার শুকনো পাতার ডালে এই
বর্ষায় নব শ্যামের আগমনের তালে"...
চাতকের অপেক্ষা যখন শেষ হয়, তখন
সত্যি মনে মিলনের এক আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু সেই বর্ষা যখন দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে,
তখন দুঃখ যাপন যেন বেড়েই চলে। বর্ষা আর নিঃসঙ্গতা হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলে সারাজীবনের
মতো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নিঃসঙ্গতা অনুভব করেছেন সেই বাল্যকাল থেকে। কাব্য কবিতা সৃষ্টির
তাগিদ অনুভব করলেও, শুধু বর্ষা কেন গ্রীষ্মকেও নিরীক্ষা করতেন যেন একাকী। আসলে প্রকৃতির
সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ, বলা যায় নাড়ির যোগাযোগ। একমাত্র কবিই তো বলতে পারেন,
"আজ যেমন করে চাইছে আকাশ তেমনই
করে চাও গো "...
পুকুরঘাটে দুপুরের জনশূন্য নিস্তব্ধতা
এক বৈশাখীর মধ্যাহ্নের একাকীত্ব
বালক রবির মনের একাকীত্বের সঙ্গে যেন মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নে বালক কবি লুকিয়ে
ছাদে উঠে যেতেন তিনি বলছেন-
"বরাবর এই দুপুর বেলাটা নিয়েছে
আমার
মন ভুলিয়ে"...
এক বালক যখন গ্রীষ্মের খরতাপের সঙ্গে তার মনের নিঃসঙ্গতাকে মিলিয়ে নিতে পারে, সে যখন যৌবনে পা দেয় তাঁর নিঃসঙ্গতার ব্যাপ্তি যে বেশি হতে পারে, তা সহজেই আমরা অনুভব করতে পারি। এই নিঃসঙ্গতা ক্রমশ বেড়েছে। বালক ভানুসিংহ ছদ্মনামে যখন একের পর এক পদ লিখে চলেছেন, তখন কোনোও এক নির্জন বর্ষণমন্দ্রিত দুপুরে খাটের ওপর উপুর হয়ে শুয়ে লিখে ফেললেন-
"গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে
মৃদুল মধুর বংশী বাজে
বিসরি ত্রাস লোক লাজে
সজনী আও আও লো"...
নিঃসঙ্গতা ও বর্ষা যেন চির অপরচিত নিভৃত মনের কোনও অজানা জীবনকে উদঘাটিত করে। বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবিহৃদয়কে ব্যাকুল করে।
"দূরের পানে মেলে আঁখি
কেবল আমি চেয়ে থাকি
পরান আমার কেঁদে বেড়ায় দুরন্ত
বাতাসে"...
আবার সোনার তরী কাব্যগ্রন্থে
অঝোর বর্ষণের ঘোর লাগা মুহূর্তের
কথায় মূর্ত হয়ে ওঠে।
"গগনে গরজে মেঘ
ঘন বরষা
কুলে একা বসে আছি
নাহি ভরসা (সোনার তরী) "...
আবার প্রচলিত গানে কৃষ্ণকলি, মেঘলা আকাশ, আর কালো হরিণ চোখ, যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
"কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি.....
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ".....
বর্ষার সাথে কবির আত্মীয়তা নিবিড়।
বর্ষার বিভিন্ন রঙ, কবিমন, নানাভাবে পরিক্রম করে। বর্ষার অঝোর ধারা কখনোও তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যায় কালিদাসের যুগে। অতৃপ্ত বাসনা, চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি পেয়ে কবিমন অচিনপুরের যাত্রায় উধাও হয়। অচিনপুরের উদ্দ্যেশ্যে যেতে যেতে বর্ষার আবেদন যেন কোন মোহময়তায় প্রবেশ করায় তাঁকে। বর্ষার আকাশে অভিমানের মেঘ যখন জড়ো হয়, তখন সে একা হয়ে যায় বিশ্ব সংসারে।
মনে হয় শ্রাবণ কি বৃষ্টির ঘনঘটায়
তাঁর একাকীত্ব দূর করতে পারবে? বলতে পারবে-
"হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে
ময়ূরের মত নাচে রে"....
বর্ষা আসলেই তার মন উতলা হয়ে ওঠে।
আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা, বাতাসে আদ্রতার ছোঁয়া, বৃষ্টি ধারায় প্রকৃতি যখন সজল সবুজ,
তখন তাঁর কবির মন হয়ে ওঠে রোমান্টিক। বর্ষামঙ্গল কবিতায় কবি বলছেন,
"স্নিগ্ধ সজল মেঘকজ্জল দিবসে
বিবশ প্রহর অচল অলস আবেশে
শশী তারা হীনা অন্ধতামসী যামিনী
কোথা তোরা পূবকামিনী
"....
বর্ষা তার সম্ভারসমূহ দিয়ে প্রকৃতিকে
যে রূপে সাজিয়ে তোলে, কবি তো সেই রূপেরই পূজারী। তাই কবি মন চিরকাঙ্ক্ষিত বর্ষা ঋতুকে
ডাক দিয়ে বলে-
"এসো শ্যামল সুন্দর,
আনো তব তপোহরা তৃষাহারা সঙ্গসুধা
".....
বসন্তের গর্ভেই বসবাস বর্ষার। আবার বর্ষার গর্ভজাত এই বসন্ত। বর্ষা চির রোম্যান্টিক। আর রোমান্টিসিজমের রাজাই তো বসন্ত। বাদল দিনে তাই রোমান্টিক কবির ভাবনা, মেঘের সঙ্গী হয়ে উড়ে চলে দিকদিগন্তের পানে। কদম, কেতকী, হাসনুহানার গন্ধ নিয়ে বৃষ্টির সিম্ফনি কবি শুনতে থাকেন এক মায়াময় আবেশে। কবি বলে ওঠেন
"মোর ভাবনারে কি হাওয়ায়
মাতালো ওই
দোলে মনে দোলে অকারণ হরষে
"...
কবির বিরহকাতর মন কাউকে কি ব্যকুলভাবে
প্রত্যাশা করে? মাঝে মাঝে নিজেকেও অচেনা লাগে। যা ছিল কবির সম্পূর্ণ আজানা, অদেখা তাকেই
এতদিন অতি সংগোপনে, সন্তর্পনে নিজের মধ্যে লালন করে এসেছেন কবি। মেঘদের সম্মেলনে আজও
ভেসে আসে সেই স্মৃতি, যাকে তিনি খুঁজে বেরিয়েছিলেন আজন্মকাল, আচমকা তাকেই যেন খুঁজে
পাওয়া। আবিষ্কার করেন এক অচেনা বর্ষাকে। এই পৃথিবীর সঙ্গে, প্রকৃতির ছয় ঋতুর সঙ্গে
তাঁর গভীর আত্মীয়তা। ছিন্নপত্রগুলির অনেক স্থানে সেই আত্মীয়তার খবর পাওয়া যায়।
যেমন
তিনি বলছেন "আমার সর্বাঙ্গে
এবং সমস্ত মনের উপর বিশুদ্ধ নতনেত্র প্রকৃতির কি একটা বৃহৎ উদার বাক্যহীন স্পর্শ অনুভব
করি (ছিন্নপত্রাবলী ৩১)। ওই যে মস্ত পৃথিবীটা চুপ করে পড়ে রয়েছে ওটাকে এমন ভালোবাসি,
ওর ওই গাছপালা নদী ঘাট কোলাহল বিশুদ্ধতার প্রভাত সন্ধ্যা, সমস্ত দুহাতে আঁকড়ে ধরতে
ইচ্ছে করে,আমি এই পৃথিবীকে ভারী ভালবাসি"।
প্রকৃতির প্রতি তাঁর অমোঘ টান। সেই প্রকৃতির প্রাণসংগীত বসন্ত। আর অনুরাগ অভিমান যত বর্ষাকে ঘিরে। বহু কবিতা ও গানের মধ্যে দিয়ে কবি সেই অনুভূতি বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। কখনোও শ্রাবণের আমন্ত্রণে তিনি উন্মাদ হয়েছেন। কখনোও বা বসন্তের আগমনী বার্তায়। তিনি বলেছেন-
"কোন পুরাতন প্রাণের টানে'
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
কখনো বাদল ছোঁয়া লেগে.....
বসন্তকে তিনি খুঁজে পেতেন বর্ষার
গভীরেও। বসন্ত যেখানে শুধুই রোমান্টিকতা। বর্ষার অন্তরে বিরহের গভীরতা, কবির কাছে রোমান্টিকতার
থেকেও বেশি কিছু। অনেক বেশি সীমাহীন। তাই তিনি বলেন-
"ঝরঝর ঝরো ভাদরও বাদরও
বিরহকাতর শর্বরী
ফিরেছে এখন অসীম রোদন
কানন কানন মর্মরী
অথবা
"আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে
জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে
মন লাগে না"
বর্ষার সংগীত রচনা ক্ষেত্রে কবির
রোমান্টিকতা প্রাধান্য পেয়েছে।বর্ষায় আসলে, প্রকৃতির এক অচেনা, অজানা জগৎ উদঘাটিত
হয়, অতি সংগোপনে সবার অজ্ঞাতে যাকে সে নিজেই লালন করেছে। আচমকা যখন সে তার স্বরূপ
নিয়ে চলে আসে, কবি কিরকম যেন চঞ্চল হয়ে ওঠেন। কাঙ্ক্ষিত সুখ না পাওয়ার আপাতত যন্ত্রণা
দগ্ধ করে হৃদয়কে।
১৩২১ সনের আষাঢ় মাসে লেখা আষাঢ়
প্রবন্ধে কবি লেখেন-
"ভারতবর্ষের প্রত্যেক ঋতুরই
একটা না একটা উৎসব আছে। কিন্তু কোন ঋতু যে নিতান্ত বিনা কারণেই তাহার হৃদয় অধিকার
করিয়াছে, তাহা যদি দেখিতে চাও, তবে সংগীতের মধ্যে সন্ধান করো। কেননা, সঙ্গীতেই হৃদয়ের
ভিতরকার কথাটা ফাঁস হইয়া পড়ে। বলিতে গেলে, ঋতুর রাগ রাগিণী কেবল বর্ষার আছে আর বসন্তের।
সংগীত শাস্ত্রের মধ্যে সকল ঋতুরই জন্য কিছু কিছু সুরের বরাদ্দ থাকা সম্ভব। কিন্তু সেটা
কেবল শাস্ত্রগত। ব্যবহারে দেখতে পাই_ বসন্তের জন্য আছে বসন্ত আর বাহার আর বর্ষার জন্য
মেঘ, মল্লার, দেশ এবং আরোও বিস্তর। সংগীতের পাড়ায় ভোট লইলে বর্ষারই হয় জিত"।
বর্ষার সময় পৃথিবী যে কি অপরূপ সুন্দর হয়ে ওঠে এবং গভীরভাবে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তা তিনি দেখেছেন বহুবার। সুন্দর প্রকৃতির কোলে দোল খেতে খেতে ১৮৯১ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে বর্ষাকে প্রথম আলিঙ্গন করেছিলেন চিঠিতে-
"আকাশের কোনখানে যেন একটা
আস্ত জগত ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ব্যাখ্যা করেছেন " কাল ১৫ মিনিট বাইরে বসতে
না বসতে পশ্চিমে ভয়ানক মেঘ করে এলো---
খুব কালো গাড়ো আলু থালু রকমের
মেঘ। তারই মাঝে মাঝে চোরা আলো পড়ে রাঙ্গা হয়ে উঠেছে__ এক একটা ঝড়ের ছবিতে যেমন দেখা
যায় ঠিক সেই রকম"।
তাঁর লেখায় বর্ষাকেই তিনি যে প্রাধান্য দিয়েছেন বহুবার এটাই প্রকট হয়ে উঠেছে। পূর্ববঙ্গে থাকাকালীন ঠাকুর পরিবারের জমিদারের দেখাশোনার কাজে শিলাইদহ, সাজিদাপুর এবং পাতিসরে অনেকদিন তাকে থাকতে হয়েছিল। সেই সময় পদ্মানদী এবং তারও তীরবর্তী অঞ্চলে, বিশেষ করে বর্ষার সময় বর্ষার সেই অপরূপ দৃশ্য তাঁকে অভিভূত করে তোলে। সেখান থেকে মধ্য বয়সে হৃদয়ে লাগে ঘোর। নতুন করে আসে রোমান্টিকতা। প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, বেদনা সংমিশ্রিত বিবিধ অনুভতির জন্ম হয়।
বর্ষা কবির মনে প্রধানত বেদনার
সুরকেই প্রতিফলিত করেছে। আর নববসন্তের মাধুর্য কবির মনে আনন্দের শিহরণ জাগিয়ে তুলেছে।
একদিকে বেদনাবিধুর বর্ষাকে আবাহন করা। অন্যদিকে নববসন্তের আনন্দকেও আমন্ত্রণ জানানো।
কবি বর্ষার অন্তরের অন্তঃস্থলে
আবিষ্কার করেছেন, মধুর বেদনাবিধুর সৌন্দর্যকে, খুঁজে পেয়েছেন মন হারাবার এক নির্জন
নিঝুম একাকী সময়কে। যেখানে সে আর শুধু বর্ষা মুখোমুখি। বৃষ্টির নিজস্ব ছন্দ আছে। সেই
ছন্দের মাধুর্যে বর্ষা নিজে কখনোও চঞ্চল, কখনোও উগ্র কখনোও বা অদ্ভুত এক অলৌকিক পরিবেশ
তৈরি করে। বলা যেতে পারে অতিপ্রাকৃত বিষয় তৈরি হয়। কবিগুরুর গানের মধ্যেও সেই অতিপ্রাকৃত
বিষয় ধরা দেয়। স্বনামধন্য সঙ্গে শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাসত্বের একটি প্রতিবেদনে
পড়েছিলাম। তিনি বলছেন-
"সঘন গহন রাত্রি" এই
গানটির কথা।
যেখানে স্কেচ করতে করতে আধো অন্ধকার
একটি মেয়ের অবয়ব তিনি কল্পনা করেছিলেন কল্পনা করেছিলেন সেই মেয়েটি যেন কাদম্বরী
দেবী। তাঁর বর্ষার গানকে বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্নভাবে কল্পনা করেছেন। উপলব্ধি করেছেন
তাদের মতন করে ব্যাখ্যা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনে এত যন্ত্রনা দেখেছেন, বিচ্ছেদ দেখেছেন,
তাই হয়তো মেঘ বৃষ্টি রোদ্রের ঘনঘটায় কোথাও যেন অলৌকিকতা মিশে যায় তাঁর গানের মধ্যে
রচনার মধ্যে সাবলীলভাবে। বর্ষাকে তিনি কখনও যেন নিঃসঙ্গতার দেবী হিসেবে কল্পনা করেছেন।
বর্ষার মধ্যে এমনিতেই রোমান্টিকতা
আছে যে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে অন্যকে ব্যথিত করতে পারে, ছান্দিক করে তুলতে পারে।
সেই ছন্দ কখনোও ঝমঝম করে কখনো বা টিপটিপ করে, কখনো বা মুষলধারে শরীর মন ভিজিয়ে দেয়।
মানব হৃদয়ে তৈরি হয় এক অদ্ভুত
ছন্দ। এক অদ্ভুত অনুভূতি। আবার কখনোও বা এই বৃষ্টি তৈরি করে সব হারানোর যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ
যেভাবে বর্ষাকে দেখেছেন সেভাবে হয়তো আমরা কখনোই দেখতে পারি না। তার দেখানো দৃষ্টিতে
বর্ষাকে দেখার চেষ্টা করি।

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন