| সমকালীন ছোটগল্প |
আর একটু অন্ধকার
বন্ধ কাঠের পাল্লা। তারপর কলাপসিবল। সবশেষে শক্তপোক্ত পেল্লাই লোহার গেট একটা। চাবির গোছাটা পদা সরখেলের হাতে। সবসময়। মাসের শেষ শনিবার। মাঝরাত। চিকনা আর পল্টন সিঁড়ি বেয়ে। পেছন পেছন পদা। একটা একটা করে তালা, খুলতে খুলতে শেষ গেট। ফেরার পথে বন্ধ করতে করতে পদা।
কিন্তু আজ পদা ছিল না। দু’জনে সিঁড়ির
উপরের ধাপে। উত্তেজিত এবং কী করবে বুঝে উঠতে না পারার আতঙ্কে দু'জনেই বিভ্রান্ত।
মাসের শেষ শনিবার পদা সরখেলের ফূর্তির
রাত। দুটো হুইস্কির পাঁইট বরাদ্দ চিকনা আর পল্টনের জন্য। ছোলাসেদ্ধ, মেটে-চচ্চড়ি। পদা
ওদের জন্য পেগ সাজায়। সে নিজে মাল খায় না।
যেভাবে শুরু শনিবারের সন্ধে, আজও সেভাবেই।
আলাদা কিছু না। মেজাজে মর্জিতে রকমফের বা কম বেশি ফারাকও ছিল না। কিন্তু লাস্ট সিনে
সব ওলট-পালট। কথার পিঠে অকথা, কথার মুড়ো, ল্যাজা, ধড় - তালেগোলে ব্যাঁকাত্যাড়া, গরম
তাওয়ায় ছ্যাঁকা লেগে ধুন্ধুমার। অন্য শনিবারে সাত-সাড়েসাত পেগ শেষ করে একটু টলোমলো,
এছাড়া দু'জনেই টানটান। চোখে
ঝাপসা বা বেশি বাওয়াল - কখনো না।
জ্ঞান
টনটনে, সাপটে রুটি, মেটে চচ্চড়ি থালা চেটে, তবু নেশার ঘোর নেই। নেশা আছে কিন্তু সবটাই আড়ে, গোপনে, চুপকে
চুপকে। কতদিন মাঝরাত পার করে দু'জনে হাঁটত, দেখার কেউ থাকত না, কিন্তু যদি থাকত, মনে করত বিয়ে বাড়ি ফেরত দুই ভদ্দরনোক, কাঠি দিয়ে দাঁত
খোঁচাতে খোঁচাতে - এতটাই স্বাভাবিক একপেট মাল খাওয়া চিকনা আর পল্টন। অথচ আজ,
পল্টন
হঠাৎ - ‘আরো মাল চাই - লাও মাল!’ বলতে বলতে চিৎপটাং। তুলতে গিয়ে চিকনাও। দু'জনে দু’জনের
কোমর জড়িয়ে গড়াগড়ি, দু'জনের চেষ্টা দু'জনকে ওঠানো, যা সম্ভব ছিল না। হঠাৎই একটা দেওয়াল
পেয়ে পল্টন উঠে দাঁড়াতেই চিকনাও রাস্তা খুঁজে পেল। চিকনা উঠে দাঁড়াতেই পল্টন নাচ শুরু করেছিল। নাচ দেখে চিকনা পেচ্ছাপে।
পদা সরখেলের হাঁ মুখ টিপ করে। মুখ ছেড়ে নাকের ফুটোয়, চোখ, কপাল ছাপিয়ে পদার দামি কাশ্মীরী
কার্পেটে। নাচ থামিয়ে পল্টনও পেচ্ছাপে।
কার্পেট ভাসিয়ে ঘর থেকে বেরোতেই চিকনার
আবার পেচ্ছাপ। পদা তোর সিঁড়ির মুখে মুতি – বলে পল্টনও। দু'জনের হিসিতে পদার যোধপুরী
মার্বেল ভিজে ছপছপ। এই
সিঁড়ি পদার প্রাণ। পাশাপাশি তিনজন অনায়াসে, এতটাই চওড়া। সুযোগ পেলেই পাথরের গল্পে পদা।
রাজস্থান, যোধপুর, মিস্তিরি - সবার মুখে মুতে
উল্লাসে ফেটে পড়ে দু'জনে। পেচ্ছাপে
ভেজা সিঁড়ি, সিঁড়ির মার্বেল - সে বড়ই খতরনাক।
পা পিছলে একবার, শুধু একটু বেখেয়ালে ঠ্যাং, কোমর, শিরদাঁড়া - সাতপেগ মদের গুঁতোতেও
এই সাবধানবাণী কানে - সিঁড়ির একটা একটা ধাপ
- পিচ্ছিল, হড়হড়ে - রেলিং আঁকড়ে পা টিপে টিপে, অথচ তাড়াতাড়ি কেটে পড়ার গরজ - তার মধ্যে
চিকনার হাতে চাবির গোছা — সামনে অনেকগুলো তালা খোলার কাজ।
এই চাবির গোছা থেকে একটা একটা চাবি ধরে ধরে পদার আলমারি, একটাও লাগেনি। গোছা গোছা টাকা, একই রিং - আলমারির চাবি, বাইরের গেটের চাবি সব এক জায়গায় — একটা খুট শব্দে হাতের মুঠোয় পদার সব টাকা — কিন্তু সে চেষ্টা ফেল করতেই বের হবার জন্য বাইরের গেটের চাবি — এই একই রিং-এ - পেচ্ছাপ ভাসানো মার্বেলের সিঁড়িতে পা, রেলিং-এ একহাত, আরেক হাতে সেই চাবির গোছা নিয়ে চিকনা ভাবছিল, এর মধ্যে যদি গেট খোলার চাবি না থাকে!
সেকথা পল্টনও বলে - শুধু যে বলে - না
- ঠিক বলে না, আতঙ্ক তাড়িত ভূতে পাওয়া স্বর তার গলা থেকে।
-দোযদি গেট খোলার চাবি -
চিকনার গলা হঠাৎই ভরসায় টইটম্বুর। -ঘাবড়াস
না।
গণধোলাই থেকে আধমরা চিকনা আর পল্টনকে
নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে পদা এভাবেই বলেছিল, ঘাবড়াস না। তারপর অনেকবার। সমস্যা এলেই।
পদা সরখেলের ঘরে, ওই কার্পেটে দু মাস। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দু'জনে। প্রথম একমাস সেরে ওঠা, তারপর বিশ্রামে বাকি দিনগুলো। টাকা খরচে, যত্নে পদা, যাদের সে চেনে না, দেখেনি - দুটো হাড়হাভাতে নতুন করে বেঁচে উঠেছিল।
সেই বিশ্রামের দিনগুলোতে, যতটুকু বোঝা
যায়, দেখা বা শোনা যতদূর, নাক টেনে গন্ধ শুঁকে যতটা সম্ভব, মনে হচ্ছিল - হবে, কিছু
একটা হবে। শুশ্রূষার মধ্যে ব্যাপারটা শেষ হবে না। ব্যবস্থা একটা হবেই হবে।
পদা সরখেল নিজেও বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তাড়াহুড়ো না করে, ভেঙে ভেঙে, টুকরো কথায় - কী তার
মতলব।
—তোরা যেমন, আমিও আনকোরা একদিন। এই লাইনে
সবার শুরু এভাবেই। আমিও চুরি, ছিনতাই, পকেটমারি - আমারও এভাবেই হাত পেকেছে। হেভি ক্যালানি,
পাবলিক থেকে পুলিশ, না খাওয়া দিনের পর দিন।
দু'জনের হাঁ-মুখের বিস্ফার পদার চোখ এড়ায়নি।
সে আরেক ধাপ গলা চড়িয়ে বলেছিল, আবে! আমার এত রস নেই যে তোদের ফালতু ফালতু, খামোখা বাঁচাতে
যাব। মালটা আমি পাঁক ঘাঁটা নর্দমার পোকা।
হ্যাঁ, গাড়ি চড়ি। সব ব্যাপারে ফিটফাট।
থানা পুলিশ, নেতা মন্ত্রী - সব ম্যানেজ করা আছে। তোদের দু'জনকেই দরকার। নেটওয়ার্ক বাড়ছে
তো।
কাজ সামান্য। পদা সরখেলের প্যাকেট, কাগজের
খাম ঠিক ঠিক জায়গায়। জামার রং, চেহারা, চুলের রং, রুমালের গিঁট - আলাদা ব্যবস্থা, গোপন
সিগনাল।
মাসের শেষ শনিবার বিশেষ রাত। দেখা সাক্ষাৎ,
হিসাব-নিকাশ, পেমেন্ট, আর নতুন প্যাকেট, নতুন খাম।
তারপর পদা সরখেলের খেলা। এ খেলায় দু'জনের অভ্যাস অনেকদিনের। একারণেই
গণধোলাই। সে ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই পদা সরখেলের হাতে। পুরু কার্পেটে দু'জনকে নিয়ে
পদা সরখেল যেমন খুশি।
-ভয় পেলে চলবে না। এ লাইনে সবাই রাজা।
মিনমিন করলেই লাথ খাবি। অন্যেরা তোর হকের লাভ
চাটবে। গলা টিপে ধরবি - সুযোগ পেলেই। না হলে শিয়ালে-কুকুরে ছিঁড়ে খাবে।
—একবার দাঁড়াতে যা ঝক্কি ঝামেলা - টিকে
গেলে দেখবি তোদের সামনে খোলা মাঠ। চিল চিৎকার বন্ধ। সবাই তোদের হাই, হ্যালো করছে। হুড়কো
দেবার জন্য দু চার পিস তো থাকবেই, কিন্তু ততদিনে তোদের পকেটে নোট, একটু জমতে না জমতেই
দেখবি ছাটের মাল সব মাটিতে গড়াগড়ি। তোরা নোট ছড়িয়ে জায়গামতো পাঠিয়ে যাবি, দু তিনগুণ
ফেরত আসবে।
এসব বাতেলায় পদা সরখেল প্রথম প্রথম, একটু
বেশি সময় নিয়ে, তার মধ্যে দু পেগ শেষ করে চিকনা বা পল্টন একটা হালকা খিস্তিতে আর পদা
সরখেলের উদোম গা থেকে পাউডার মুহূর্তে কার্পেটে ছড়িয়ে যেত।
ছোটবেলা, মানেই চিকনার পুতুল খেলার দিন। ফ্রক, লম্বা চুলে ক্লিপ,
খেলনা বাটি - সাথী সমবয়সী মেয়েরা।
স্কুলে ছেলেরা খুব বুলি করত। খুব তাড়াতাড়ি
সে সবার টার্গেট। ছেলে হয়েও মেয়ে মেয়ে ভাব, অল্পতেই কান্নাকাটি - ওরা বলত ওটাও মেয়েলি। মেয়েরা ওভাবেই
কাঁদে। একটু বড়ো হতেই চিকনার বুক মেয়েদের মতো। স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছেলেদের নজরে সে।
যে পারত, এসে বুক টিপে দিত। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে কাঁদলেই চাঁটি।
ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পরীক্ষার পাট না থাকায়
অসুবিধে হয়নি। সিক্সে দু বার,সেভেনে দু বার হয়ে সবে ক্লাস এইটে, তার মধ্যেই আঠারো পার,
চিকনা দেখে ক্লাসে ঘাপটি মেরে, যেন তারই অপেক্ষায় পল্টন। দুজনেই মনে মেয়ে, সে শরীর
যাই হোক, গলাগলি হতে সময় লাগেনি।
-তোরা যে চাবুক মাল দেখেই বুঝেছিলাম।
তখন দুজনেই পাঁচ পেগে। পদা খুশিতে ডগমগ।
নীল ছবির ভিডিও টিভিতে। পদা সরখেলের চিৎকার, এবার জমবে মজা।
চিকনার বাড়িতে ঝামেলা সেই আঠারোতে। ওসব
হাফ-মেয়ে, হাফ-ছেলে চলবে না।সঙ্গে লাথি। লাথির
পর লাথি। এখান থেকে ভাগ, কে খাওয়াবে তোকে?
পল্টনের এক কেস। এক কথা। রোজগার চাই।
দামড়া মাল, সখী সেজে যাত্রা মারাচ্ছিস?
বস্তির গা ঘেঁষে লেক। সন্ধে হলেই কাজ
শুরু। এদিক ওদিক খদ্দের, ঘুরঘুর অন্ধকারে। দরদাম ঠিক করে ঝোপের আড়াল। দু জনের কামকাজ
শেষ হলে যা পকেটে, তাতে একটা পাঁইট। সঙ্গে তরকা রুটি।
এই লাইনে লেডিস অনেক। বেশ্যাপট্টির কয়েকজন।
জমজমাট ব্যবসা। একেকদিন ডবল ট্রিপ।
কিন্তু হাওয়া খেতে আসা ভদ্দরলোকেরা ছিল।
সংখ্যায় তারাই বেশি। - দিনকাল কোথায় ঠেকেছে! বৌ-বাচ্চা নিয়ে লেকের হাওয়া খাওয়ার দিন
শেষ।
ভদ্দরলোকেরা তলে তলে জোট বেঁধে একদিন
পুলিশ নিয়ে। চিকনা, পল্টন হাতে নাতে। সেই গণধোলাই!
মাসের এই দিনে আলমারি খোলে পদা। দুই মক্কেলের
পাওনাগন্ডা বুঝে নিয়ে গুনে গুনে আলমারির তাকে টাকা সাজিয়ে চাবি লাগায়। তার আগে ওদের
পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পাট শেষ।
এরকম শুরুর মুহূর্তে শেষ শনিবার - আলমারি খোলা, পদা মোবাইলে উত্তেজনায় কান ফাটানো চিৎকারে, আলমারির সামনে চিকনা, চিকনার চোখের সামনে টাকার বান্ডিল, তাক ভর্তি টাকা - সেখান থেকে তার চোখ পল্টনের দিকে - পল্টন তখনও টাকা থেকে চোখ সরায়নি - তারপর চোখ সরালে চিকনার চোখে চোখ -
এই পাঁচ বছরে পদার সবকিছু দুজনে মুখস্থ
করে নিয়েছে। প্যাকেটে গাঁজা, খামে চরস, ঝুট ঝামেলা বন্ধের জন্য কোথায় টাকা দিতে হয়,
পুলিশ, নেতা - সব পরিস্কার। একাজের জন্য পদা যা দেয়, ঘরভাড়া থেকে খ্যাটন, সব হয়েও নেশার
বরাদ্দে কিছু থাকে।
কিন্তু শেষ শনিবারের এই হুজ্জতি - তিনগুণ
উশুল করে পদা সরখেল। একমাসের
কামকাজের ফাঁকে দুজনের মনে একটাই কথা। এবার গোছাতে হবে। রেট বাড়াতে হবে। চিকনা বলবে সেকথা। পল্টন
ধুয়ো দেবে। কিন্তু আজ তিন ঘন্টা পার করেও চিকনার হিম্মত হয়নি সেকথা বলার। যতই নাঙ্গা
হোক, সব খুলেও পদা তার ভিতরের কিছুই খোলেনি।
পাঁচ থেকে ছ নম্বর পেগেও অবস্থা পাল্টায়নি।
বিরক্তি আর শরীরের অস্বস্তিতে সুর তাল কেটে যাচ্ছিল। আর তখনই পদা চন্ডমূর্তি ধরে। তেরিয়া
মেজাজে খিঁচিয়ে ওঠে - আবে! বেজম্মার বাচ্চা! কে তোদের পয়দা করেছে?
বোতলে তখনও একপেগ মাল। জল না মিশিয়ে সবটুকু
এক ঢোঁকে চিকনাকে পেটে চালান করতে দেখে পল্টনও তার বোতল খালি করে।
পদা তখনও খিস্তিখেউড়ে। তার তোয়াক্কা না
করে পল্টন চেঁচিয়ে উঠেছিল - রেট বাড়াতে হবে।
চিকনা ঠেকা দিতেই পল্টন আবার বলতে শুরু
করেছিল, টাকা বাড়াতে হবে। আমাদের তো কিছুই নেই। তোমার সব আছে। গাড়ি, বাড়ি, বউ, ছেলে
-
পদার চোখের দিকে তো নয়ই, ওর নগ্ন শরীর
এড়িয়ে কিছুটা দেয়াল, দেয়াল ছাড়িয়ে টিউব লাইটে চোখের ঘোরাঘুরি আর কথাগুলো কোনরকমে উগড়ে
দেওয়া। পদার এসময়ের চোখ বা মুখের চেহারা যা হতে পারে - পল্টনের হাড়-মজ্জা শুকনো লাউডগা
হয়ে হাওয়ায় ফরফরানির পক্ষে যথেষ্ট। সেই ভয়ে কাঁপুনি ছিল তার কথায়। দু’জনকে পুঁতে ফেলতে হাত কাঁপবে
না পদার। আগে অনেকবার, অনেকের বেইমানির শাস্তি নিয়ে কথা আর পদা যে সেসবে দয়াশূন্য,
হিংস্র কসাই বিশেষ - এক বর্বর রক্তপিশাচ - তার বর্ণনায় ঘুরেফিরে বহুবার। বেশি জানার
চেষ্টা প্রথম থেকেই বারণ, বেফালতু উঁকিঝুঁকি - একদম না।
পল্টন মদ খুঁজছিল। সাহসের দরকারে মদ।
পদা যে ফাটবে, দু'জনেই জানত। তাই হয়েছিল।
পদার নগ্ন দেহের কামুক দৃষ্টির বদলে রক্তচক্ষু আর গর্জন।
-ঘেয়ো কুকুর! বেজম্মার বাচ্চা। ভাগাড়
থেকে তুলে মানুষ বানালাম, তার এত চোপা? চুতিয়া! টাকা কি হারামে গজায়?
চিকনা কেসটা ম্যানেজ করবে ভেবে পদাকে
একটু আদর করত গিয়ে পল্টনের হুংকারে দু পা পেছোয়।
-কী বললি? আমরা বেজম্মা? তুই শালা কী? বাড়িতে বৌ থাকতে
আমাদের সঙ্গে তোর কিসের ফূর্তি? ঘেয়ো কুকুরের গন্ধ কেন শুঁকিস?
দপদা
আর হারামি বলতে পারেনি। পল্টনের হাতের খালি বোতলটা যখন পদার মাথায় ঠোকা খেয়ে ভেঙে পড়ল,
তার মুখে হা-শব্দটা লেগে গিয়েছিল।
এক ঝটকায় কার্পেটের নিচ থেকে চাবির গোছা
পল্টনের হাতে। চিকনার দিকে ছুঁড়ে বলেছিল, লাগা।
ঘোর কাটতে যেটুকু সময় - একটা, দুটো, তিনটে
- চাবি লাগছিল না। বাকি চাবিগুলো - চিকনার হাতের কাঁপুনি নাগাড়ে, না থেমে - পল্টন চাবির
গোছা ছিনিয়ে নিজেই লাগাতে থাকে। একটাও চাবি লাগেনি। -আবে, এখান থেকেই তো চাবি নিয়ে
- আলমারির
ভেতর টাকা! গোছা গোছা - আতঙ্কে কেঁপে উঠে পল্টন এটুকুই বলতে পারে।
তারপরেই শুরু হয় পল্টনের উলঙ্গ নৃত্য।
ও শালা চাবি হাপিস করে দিয়েছে - পল্টন নাচতে নাচতে বলে। লাফায় আর নাচে। - মদ দে, আরো
মদ দে - আমার মদ চাই -
তখনই পেচ্ছাপ পেয়েছিল চিকনার। পদা সরখেলের
হা-মুখ টিপ করে জল ছেড়েছিল।
হ্যালোজেনের হলুদ আলোয় রাস্তার সবটুকু
দেখা যায়। দু'জনার নগ্নতা পরিষ্কার।
মাঝরাত পার করা নির্জনতায় হলুদ আলো থেকে
সরে দু'জনেই আড়াল খোঁজে। ঝোপঝাড়, একটা বাঁক, বাঁকের খাঁজে একটা ঝুপড়ি, একটা পোড়োবাড়ি।
আর একটু অন্ধকার!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন