কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

অর্ঘ্য দত্ত বক্সী

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

সত্যান্যাস



অথবা

গোদার দেখে ৭৮৬টি মনোলগ

একটি বৈদান্তিক ভোগবাদ বিরোধী উপন্যাস

A social media collage

যে বাজার থেকে মুক্ত সে মুক্ত 

(পর্ব ৯)

 



 

লেখার এডিটিং বিষয়ক, মেমোরি ও ‘মেটালেখনী বিষয়ে

 

আসলে আমি যাই লিখি কিছুদিনের মধ্যেই তার সম্পূর্ণটাই ভুলে যাই। ফলত কিছুদিন পর এডিটিং করতে বসে অনেকটাই বদলে ফেলি লেখাটিকে। তারপর ভুলে যাই। তারপর আবার কিছুদিন পর লেখাটি নিয়ে বসলে সেই একই চক্রবৎ পুনরাবৃত্তি। ক্যানভাসে তা চলে না। আগেকার রিলের জমানার ফিল্ম এডিটিং-এ তা চলত না। বারবার যথেচ্ছ এডিটিং প্রায় কোনো প্রফেশনাল রাইটারই করেন না। আমি করি। রবীন্দ্রনাথের মতো বারবার আগেকার লেখা পড়াশুনা সব ভুলে যাই বলে করি। ম্যাগাজিনে ছাপানোর পর বইতে প্রকাশের আগেও করি। ভুলে যাই যে। নতুন নতুন পড়ি যে। পুরোনো মানসিক অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার বা আরো খারাপ মানসিক অবস্থার ছাপ পরে এডিটিং-এ। তাই আমি নিজেই একটি লিখিত সাইকোলজিক্যাল কেস স্টাডি। টাইপিং চলে আসায় এর মাত্রা অন্যরকম হয়ে গেছে এই উপন্যাসে। আমি কেরুয়াকসুলভ ব্যাপক কাট পেস্ট ব্যবহার করলাম। উপন্যাসটিকে অবশ্যই কোলাজ বলা যায়। কিন্তু এর টোটাল স্ট্রাকচার পিরামিডের মতো ঘনত্বে রাখলাম। শুরুর দিকে অতি ধারালো ও হাল্কা, শেষের দিকে কিছু তদাপেক্ষা ভারী ও গম্ভীর কিছু বিষয় নির্বাচন। ইতিমধ্যে শুরুর দিকে কী লিখেছি আমি ভুলে গেছি! অবশ্য তাতে কীই বা যায় আসে? গত মার্চে কতদিন কিচ্ছু লিখি না নতুন, প্রায় দুই বছর হল কোনো ফিকশন, এই হতাশা থেকে এক্ষুনি কিছু লিখবো বলে শুরু করছিলাম সেই মুহূর্তের দৈনন্দিনের একেবারে সারফেস লেভেলে যা ঘটে চলেছে সেই উত্তেজক কিছু ঘটনার বিদ্যুৎঝিলিক। কিচ্ছু ছিল না মাথায়, শুধু বেতো হাতের আড়, দামী দামী জেল পেনগুলোর আলসেমি, মোটা মোটা সাদা খাতার পাতারা আর একপ্রকার অতিরিক্ত জপজাত ধ্যানজাত এনার্জি ক্ষইয়ে দেওয়ার বাসনা ছাড়া। অনেক অনেক মনের বীর্য জমে গিয়েছিল নিজেরই অজান্তে। তাই প্রতিজ্ঞাত আর কোনো দিনও লিখবো না ব্যক্তিগত আত্মজৈবনিক, আমি লিখে ফেললাম এই স্থান কাল পাত্র গুলিয়ে দেওয়া, থিয়েটারি সংলাপ, চরম নৈরাজ্যের মাঝখানে সেই আমাকেই। এর মূল্য চোকাতে হবে যখন সব ভুলে যাব আর আবার মানসিকভাবে চরম লো ফেজ আসবে আমার। হাতে পড়বে এই বই আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না এত ব্যক্তিগত ডিসক্লোজ করার জন্য। তখন সেই অনসেট নিউরোটিকে এই বইগুলো পুড়িয়ে ফেলতে চাইবো! তবু থাক। গত পাঁচ বছরে আমার আপডেশনের এক নথি হয়ে থাক এই উপন্যাস। আর আমার বিশ্বাস আমার যাবতীয় পুরোনো প্রতিষেধকীয় গোষ্ঠী, হপ্তাক বা বৈখরী বন্ধুত্ব আকা পলিটিক্স গ্রাস করুক ও হজম করে ব্রেন ধৌত করে দিক এ টেক্সটি যাকে আদৌ উপন্যাস বলা যায় কিনা তা নিয়ে স্বয়ং লেখকই সন্দিহান! তবে হ্যাঁ আমি নিশ্চিত ছবি বিষয়ে এ লেখার পাঠককে আগ্রহী করে তুলতে পারবো। আর এ বিষয়ে যে, সার্ফেস লেভেল রিয়ালিটি দিয়েও যে কেউ যে কোনো সময়ে ঔপন্যাসিক হয়ে উঠতে পারে, ব্যাকগ্রাউন্ডে তার স্পেশালিটি নিয়ে। আমার পেশা মাস্টারি। তাই নগ্নভাবে তা উঠে আসতে দিয়েছি এখানে। আর আমার ফিলজফি বেদান্ত। আমার এই উপন্যাস থেকে  ম্যাসেজ সুতরাং এই ভোগবাদের যুগে তুমি দেহ নও, এই মত, তাও তো তোমাকে বিদ্রোহে প্ররোচিত করে। ভাষা? তার কারুকাজ? বারবার নিউরোটিক অ্যাটাক যদি কগনিটিভ ক্ষমতাকে ভোঁতা করে দেয় তার পরেও একটি ৩৫ হাজার শব্দের উপন্যাস লেখা যায় ২ মাসে যদি শুধু হাতের জড়তা কাটাতে, হে একুশ তুমি নেপচুনে অলিম্পিক অর্গানাইজ করো। শেষত আমার একটাই এইম। সকলেই লেখক হয়ে উঠুন। এবং উৎসর্গ করা দু একজন শুরুও করেছেন বা অন্তত বলেছেন যে তারাও লিখবেন তাদের লেখা, নিজের কথা। এটাই লেখাটি প্রকাশ করার আগেই আমার পরিশ্রমের মজুরি। এতে দেশের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক উন্নত হবে। সমাজ অনেক সংবেদনশীল হবে। চিন্তা হবে গভীর, পাঠ হবে নিবিড়, বিল্পব আসবে সত্বর! জয় হো!

শেষে কিছু গান হোক, সমাপ্তি সঙ্গীত থাকবে না পারফরম্যান্সের, যতি উপন্যাসীয় ক্রমিনালিক হোক না কেন…

-        হোক, হোক…

প্রথমেই চার্বাকের গান, চার্বাক দর্শন নিয়ে আমার গান…

 

হতেও পারে না হতেও পারে   স্যাৎ অস্তি নাস্তি কয় তাহারে।

কোন মতই ধ্রুব না রে   ক্ষণে জন্মে ক্ষণে মরে।।

যাহা হতে মদের সৃষ্টি   তাহাতে নেই মদশক্তি।

দেহ বিনে আত্মাবুদ্ধি    আকাশকুসুম খপুষ্পী।।

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ    কীসের স্বর্গ কীসের বিবেক।

থাক বসে নিয়ে চতুর্বেদ   আত্মা দেহে নেই যে বিভেদ।।

তাহাই সত্য যাহা প্রামাণ্য   মাটির মানুষ মোর প্রণম্য।

নিয়ে ভাবব তোর ব্রহ্মধর্ম   তিন চাহিদা মিটলে পরে।।

হতেও পারে না হতেও পারে...

 

বাউল সহজিয়াদের বা বলা ভালো বেদবিরোধী গান…

-        হোক, হোক…

 

মহাজনের মাল পুঁজি যেমন   পরমবস্তু গুরুরতন।

সত্যকামে ব্যবসা করো   কেবা আমি তুমি কেমন।।

দল দল দল পদ্মমাঝে   স'কার ব'কার নিত বিরাজে।

হাওয়ার এমন মহিমা যে   দুয়ের ঘরে করে গমন।।

তার উপরে বারো আঙুল   জটা থেকে গঙ্গা নামুক।

বক্‌সী বলে বেদ-সামাদি   ছেড়ে ধরো তন্ত্রচরণ।।

কে বা আমি তুমি কেমন

 

সাংখ্যের গান…

 

(আমার) অন্তর বাহির হবে   বাহির অন্তর হবে।

অহং-ইন্দ্রিয় যবে    শ্রান্ত হয়ে শান্ত হবে।।

যাহা দেখি বাহিরপানে    মানসে তার ছায়াজ্ঞানে।

ত্রিতত্ত্ব সামান্য হলে    মোক্ষ মেলে মন যে মলে।।

শুদ্ধাভক্তি করহ ধারণ    ভেদাভেদ অদ্বৈত বচন।

বিচার ছেড়ে দেখি রে মন    যাহা শাস্ত্র তাহাই রমণ।।

ভিতর বাহির মিলে গেলে   তবে দেখবি আঁধার মলে।

চব্বিশ তত্ত্বে ঘুরেই মরে   সেই উদাসীন ফাঁদে কাঁদে।।

 

পাঠক এবার শেষপর্যন্ত শেষ। আমার প্রথম বই “থ”-এর (২০০৯) ভূমিকার পাতাটি দিয়ে হোক সমাপ্তি, যেহেতু কিছুই বদলায়নি, কিছুই বদলায় না, আমরা জিতলে আর মরলে তবে খবর হয়…

 


 


 

।।ইতি রামকৃষ্ণায় অর্পণমস্তু।।

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন