কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

<<<< সম্পাদকীয় >>>>





কালিমাটি অনলাইন / ৬৮  


প্রতি বছর যেমন হয়, এবছরও যথারীতি আয়োজিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষ্যে অসংখ্য রবীন্দ্রানুষ্ঠান, রবীন্দ্রসন্ধ্যা, রবীন্দ্র উৎসব, রবীন্দ্রমেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। বৈশাখ মাসে তো অবশ্যই, জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়েও চলে এই ঢেউ। তারপরই দেখতে দেখতে চলে আসে শ্রাবণ। শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিন উপলক্ষ্যে আরও কত শত অনুষ্ঠান। মূলত বাঙালিরাই এইসব অনুষ্ঠানের  আয়োজন করে থাকে। মূলত বাঙালিরাই এইসব অনুষ্ঠানে যোগদান করে থাকে। মনে হতেই পারে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যখন এত উৎসাহ ও মাতামাতি, সুতরাং তারা নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথকে তাদের নিজেদের জীবনে কর্মে, ভাবনায়, আদর্শে, দর্শনে জড়িয়ে ধরেছে; তাঁকে সামগ্রীক পর্যায়ে আত্মস্থ করেছে, জীবনচর্যায় তাঁকে  ধ্রুবতারার উপমায় গ্রহণ করেছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই ঘটেছে? রবীন্দ্রনাথকে কি আজও আদৌ প্রাসঙ্গিক বলে চেতন ও অবচেতন বলে মনে করে তারা? এবং এই জিজ্ঞাসা শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেই নয়, আরও অনেক অনেক মহান ব্যক্তিত্ব ও মহর্ষি সম্পর্কেওযেমন রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন...  


এবং প্রসঙ্গটা শুধুমাত্র বাঙালিকে কেন্দ্র করে নয়, বরং সামগ্রীক দেশের ক্ষেত্রেও তাই। দেশের সাধারণ মানুষ আজ তারিখ ও তিথির হিসেবে বিভিন্ন মহাপুরুষকে স্মরণ করে, অনুষ্ঠান করে, হৈ চৈ করে; কিন্তু তাঁদের কৃতি ও জীবনাদর্শ সম্পর্কে তাদের আদৌ কোনো  চিন্তা ভাবনা নেই, জীবনে প্রয়োগের কোনো সচেতনতা ও উদ্যোগ নেই। মনে হয়, যেন একটা অশুভ অন্ধকার আমাদের জীবন ও অস্তিত্বকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে গ্রাস করে চলেছে। আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের শুভবোধ, জীবনের সৌন্দর্য ও মহিমাসোচ্চার মিথ্যার দমকে চমকে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে প্রকৃত সত্য। অথচ এইসব অশুভ শক্তি ও মিথ্যার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার বৌদ্ধিক ও মানসিক শক্তি অনায়াসে অর্জন করতে পারি, যদি আমরা আমাদের প্রকৃত পথ প্রদর্শক মহান মানুষদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হই, তাঁদের নির্দেশিত পথে আমাদের জীবনচর্যাকে প্রবাহিত করি। নিছক কারও জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করে যেমন তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায় না, তেমনি নিজের জীবন, সমাজ ও সময়কেও মর্যাদা দান করা যায় না। এই সত্য যত তাড়াতাড়ি আমরা উপলব্ধি করতে পারব, ততই আমাদের মঙ্গল। নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হিসেবেই গণ্য হব।  


আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India

<<<< কথনবিশ্ব >>>>


অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়





প্রক্রিয়া থাক বহুভাষিকতার — একভাষিকতার প্রকল্প নয় 




                                                                                         ত্রিভাষা সূত্র নিয়ে আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে। হিন্দি শেখানো বা না শেখানো নিয়ে। আমাদের ছোটবেলায় ক্লাস ফাইভ থেকে সেভেন পর্যন্ত হিন্দি শিখতে হতো। এইটে সংস্কৃত। আমার ছেলে মেয়েদের ফাইভ থেকে সেভেন পর্যন্ত হিন্দি বা সংস্কৃত। কিন্তু তাতে আমার হিন্দি জ্ঞান যত হয়েছিলো ওদের সংস্কৃত জ্ঞান তার থেকে বেশি বা কম হয়নি। একা তিনশোর নরেন্দ্রবাবু এবং তাঁর দল হিন্দি-হিন্দুস্থানের সঙ্ঘী লক্ষ্যে বহুভাষিকতার নামে দেশের যোগ-ভাষা হিসেবে ক্লাস এইট পর্যন্ত আবশ্যিক পাঠ্য করতে গিয়ে দক্ষিণী রাজ্যগুলির চাপে পিছিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই প্রোজেক্ট বা প্রকল্প পরে আবার আসবে, আসবেই।   

কিন্তু প্রক্রিয়া হিসেবে বহুভাষিকতা এদেশের ঐতিহ্য ছিল শিশিরকুমার দাস ভারতে প্রাচীন রোমকদের মধ্যে তুলনামূলক সাহিত্যের ‘Suncrisis’ পদ্ধতির অনুরূপ কোনো পদ্ধতিতে  সুপ্রাচীন সংস্কৃত এবং তামিল সাহিত্যকে কাছে আনার ও পরস্পর সম্পর্কে অধ্যয়নের কোনো প্রয়াস ভারতে না দেখতে পেলেও, একটি প্রাক্-ঔপনিবেশিক ভারতীয় সাহিত্যের ধারণাকে দাঁড় করিয়েছেন প্রাচীন সংস্কৃত পণ্ডিতদের প্রাকৃত-জ্ঞান ও বহুভাষিকতার উপর তাছাড়াও তিনি অন্য গবেষকদের উপরে নির্ভর করে দেখাতে চেয়েছেন যে দক্ষিণ ভারতে খুব সম্ভবতঃ প্রাকৃত সাহিত্য প্রাচীন তামিল সাহিত্যের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিল এর উদাহরণ ২০০-৮০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সঙ্কলিত মহারাষ্ট্রীয় প্রাকৃত পদ্যসংগ্রহ গাথাসত্তসাই (গাথাসপ্তশতী)-এর সঙ্গে তামিল সাহিত্যের সম্পর্ক; মধ্যযুগে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভাষাগুলির সংস্কৃতের সাধারণ উত্তরাধিকার এবং আরবী ও ফারসি প্রভাবের প্রতি বিভিন্ন মাত্রার উন্মোচনের কারণে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক;  এবং মধ্যযুগ থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সুভাষিতর মিল, যা বিভিন্ন ভাষায় লেখা গ্রন্থের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে সাধারণ পাঠকের বোধকে বিম্বিত করে যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের একটি প্রবাদ অনুযায়ী বিল্বমঙ্গল জয়দেব হিসেবে, জয়দেব নারায়ণ তীর্থ হিসেবে এবং নারায়ণ তীর্থক্ষেত্রেয় হিসেবে পুনর্জন্ম পেয়েছেন, যদিও এঁরা আলাদা আলাদা জায়গায় কয়েক শতাব্দীর ব্যবধানে জন্মগ্রহণ করেন সমগ্র মধ্যযুগ ধরে প্রতিবেশী বা সন্নিহিত সাহিত্য সমূহের এই মিথস্ক্রিয়া চলতে থাকার প্রমাণ ‘new genres, themes and occasionally styles’-এর আবির্ভাব, যেমন সংস্কৃত ও মালয়ালমের মধ্যে পরস্পর যোগের কারণেমণিপ্রভালম্ নামের স্টাইলের জন্ম ও চতুর্দশ শতাব্দীতে তার আলোচক কবিখ্যাত সংস্কৃতভাষী গ্রন্থ, লীলাতিলকম্ ভারতীয় সাহিত্যে ফারসী প্রভাব বাড়ার পর এই আন্তর্ভাষিকতা যে আরো দৃঢ় হয় তার প্রমাণ উর্দুর জন্ম

ইউ. আর. অনন্ত মূর্তি জানিয়েছেন এই বেবেল-টাওয়ার প্রতিম দেশেও দু-তিনটি ভাষা জানলেও যে কোনো জায়গায় মানুষ কাজ চালিয়ে নিতে পারে বরং অনন্ত মূর্তি তাঁর প্রিয়তত্ত্ব আওড়েছেন যে ভারতবর্ষে কেউ যত বেশি শিক্ষিত ততই কম ভাষা বলে, যারা ইংরেজি-শিক্ষিত তারা তো কেবল ইংরেজিতেই কথা বলে তাঁর চেনা যে ছোট শহরগুলিতে যে অর্ধশিক্ষিত মানুষরা তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, কিছুটা হিন্দি এবং কিছুটা ইংরেজি বলে তারাই ভারতবর্ষকে একত্র রেখেছে, শিক্ষিত একভাষীরা নয় ভারতবর্ষ যে অতীতকাল থেকেই একটা বহুভাষিকতার বাতাবরণে বাস করেছে, তার প্রমাণ শঙ্করাচার্য (মালয়ালম / সংস্কৃত), আনন্দতীর্থ (ঘরে টুলু, বাইরে কন্নড়, লেখায় সংস্কৃত), রামানুজ (তামিল / সংস্কৃত), বুদ্ধ (সংস্কৃত / পালি), এমনকি ভারতীয় সভ্যতার ‘critical insider’ গান্ধী (গুজরাটি, হিন্দুস্থানি, ইংরেজি) আমরা এরসঙ্গে একই যোগ করতে পারি যে রাজিন্দর সিং বেদী, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, যশপাল, বা সাহির লুধিয়ানভি পাঞ্জাবি হয়েও হিন্দি বা উর্দুতে লিখতেন, আর সর্দার কর্তার সিং হিতকারি একে একে সংস্কৃত, ব্রজভাষা এবং পাঞ্জাবিতে ভক্তিকাব্য লিখেছিলেন আবার বাংলার মহিষাদলে জাত বিখ্যাত হিন্দিকবি নিরালার (সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী) প্রথম কবিতা ছিল বাংলায়, যদিও তিনি বাড়িতেবৈস্বারী বা পূর্বীহিন্দি বলতেন, আর আরো পরে খাড়িবোলি শিখে ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে হিন্দি হৃৎভূমিতে, প্রথমে লক্ষ্ণৌ, তারপর এলাহাবাদে চলে যান অনন্ত মূর্তির মতে এই বহুভাষিকতার সঙ্গে যোজ্য আরো দুটিভাষা’, রামায়ণ ও মহাভারত কারণ বহু ভারতীয় এই দুই মহাকাব্য না পড়েও বিভিন্ন পদ্ধতিতে তার সংস্পর্শে এসেছে, প্রভাবিত হয়েছে, আর তাদের বিবিধ ‘text’-কে আত্মসাৎ করেছে আধুনিক ভারতীয় লেখকদের কাছে তাই এইসব ভাষার বহু  বেণীসঙ্গম ছাড়াও সংস্কৃত, ইংরেজি, অনুবাদে ফরাসী ও পর্তুগিজ, আর অবশ্যই অনুবাদে এবং ওরিজিন্যালে রুশ, আয়ত্ত সাধ্য ছিল তাদের সঙ্গেই ছিল একটি ‘great and new phenomenon in the Indian languages … the dalits’, যাঁরা প্রথমে মারাঠি, তারপর গুজরাটি, কন্নড়, তেলেগু এবং তামিল ভাষায় লিখতে শুরু করেন এর দ্বারা অনুপ্রেষিত ললিতাম্বিকা অন্তর্জনম, মহাদেবী বর্মা, এবং মহাশ্বেতা দেবীর মতো লেখকদের নারীবাদী সাহিত্য বা তার আর দলিত সাহিত্যের মিশ্র ভারতীয় ভাষাগুলিকে অনন্ত মূর্তি আলংকারিক অর্থেজীর্ণাগ্নি বা সর্বভুক অগ্নির সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা একসময় সংস্কৃতকে আত্মসাৎ করেছিল, এখন ইউরোপকে করছে

এই প্রক্রিয়া আবার চালু হোক বা থাকুক বলিউডি ছবির কারণে সারা ভারত কথ্যহিন্দি জানে কিন্তু একে আবার প্রোজেক্ট করলেই বিপদ আর মোদি কোন হিন্দিকে যোগ-ভাষা করতে চাইছেন? ১৯০৪ সালে গ্রিয়ারসন যে Linguistic survey of India বের করেছিলেন তার মধ্যে বিশাল বিশাল পঞ্চম খণ্ড অংশতঃ বিহারি, ষষ্ঠ খণ্ড পূর্বী হিন্দি, নবম খণ্ড পশ্চিমা হিন্দিকে নিয়ে। ১৯৬১-র যে ভাষাভিত্তিক  সেন্সাস হয়, তার ১৬৫১টি ভাষার মধ্যে অনেকগুলি হিন্দির নাম ছিল। একটা কারণ অবশ্যই সব্বাই ভাষাগত আত্মপরিচয় বজায় রাখতে চেয়েছিল। জানি কেউ বলবেন ১৯৫১ সালে ভারতীয়ত্ব তত জোরালো ছিল না। কিন্তু ২০১১ সালের সেন্সাসেও কেবল দশ সহস্রের বেশি কথক অনুযায়ী কেবল হিন্দি ভাষীর সংখ্যা হলো, গোষ্ঠি হিসেবে গোষ্ঠি হিসেবে হিন্দি ৫২,৮৩,৪৭,১৯৩; অবধী ৩৮,৫০,৯০৬; বাঘাটি/বাঘাটি পাহাড়ি ১৫,৮৩৫; বাঘেল/বাঘেলখণ্ডী ২৬,৭৯,১২৯; বাগড়ি রাজস্থানী ২,৩৪,২২৭; বাঞ্জারি ১৫,৮১,২৭১; ভদ্রওয়াহি ৯৮,৮০৬; ভাগোরিয়া ২০,৯২৪; ভারমোউরি/গড্ডি ১,৮১,০৬৯; ভোজপুরী ৫,০৫,৯৭,৪৪৭;বিশ্নয় ১২,০৭৯; ব্রজভাষা ১৫,৫৬,৩১৪; বুন্দেলি/ বুন্দেলখণ্ডী ৫৬,২৬,৩৫৬; চাম্বিয়ালি/চামরালি ১,২৫,৭৪৬; ছত্তিসগড়ী ১,৬২,৪৫,১৯০; চুরাহি ৭৫,৫৫২; ঢুণ্ঢরী ১৪,৭৬,৪৪৬; গাড়ওয়ালি ২৪,৮২,০৮৯; খাড়ি বোলি ৫০,১৯৫; খোরঠা/খোট্টা ৮০,৩৮,৭৩৫; কুলভি ১,৯৬,২৯৫; কুমায়ুনি ২০,৮১,০৫৭; কুর্মালি থর ৩,১১,১৭৫; লামানি/লাম্বাডি/লাবানি ৩২,৭৬,৫৪৮; লারিয়া ৮৯,৮৭৬;লোধি ১,৩৯,১৮০; মগধী/মগহী ১,২৭,০৬,১২৫; মালবী ৫২,১২,৬১৭; মান্ডিয়ালি ৬,২২,৫৯০; মাড়োয়াড়ি ৭৮,৩১,৭৪৯; মেওয়ারি ৪২,১২,২৬২; নাগপুরিয়া ৭,৬৩,০১৪; নিমাডি ২৩,০৯,২৬; পাট্টনি ১৬,৫১০; পাদারি ১৭,২৭৯; পঞ্চি ১৩,৮১২; পাহাড়ি ৩২,৫৩,৮৮৯; পালমুহা ২৩,৫৭৯; পাঁচ পরগনিয়া ২,৪৪,৯১৪; পান্ডো/পান্ডোয়ানি ১৫,৫৯৫; পাঙ্গোয়ালি ১৮,৬৬৮; পাওয়াই/পওয়ারি ৩,২৫,৭৭২; পুরান/পুরান ভাষা ১২,৩৭৫; রাজস্থানি ২,৫৮,০৬,৩৩৪; সদন/সাদ্রি ৪৩,৪৫,৬৭৭; সিরমাউরি ১,৪৭,৪০১; সোন্দওয়ারি ২,২৯,৭৮৮; সুগালি ১,৭০,৯৮৭; সুরগুজিয়া ১৭,৩৮২৫৬; সুরযপুরি ২২,৫৬,২২৮; অন্যান্য ১,৬৭,১৭০।

এই হিন্দি উপভাষাগুলির ওই একক হিন্দির বিষয়ে কী দৃষ্টিভঙ্গি তা বুঝতে কেবল মৈথিলী আর হিন্দির পরস্পর সম্পর্ক বুঝলেই একটা খেই পাওয়া যাবে। বিহারের মাতৃভাষা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত মৈথিলী হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা বা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চাইলেও হিন্দির মধ্যে নিজের সত্তা হারানোর বিরোধীমৈথিলীকে হিন্দির উপভাষা বলতে রাজি নন। মৈথিলীর বিশাল মুখপাত্র, ডঃ অমরনাথ ঝা ১৯৪৩ সালে মৈথিলীভাষার বই হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের দ্বারা প্রকাশকে ১৯৪৩ সালে ‘লজ্জাকর’ বলেছিলেন। ১৯৪৭ সালে অ্যালাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অভ হিন্দি যে তিন খণ্ডের হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাস বের করতে উদ্যোগী হয়েছিল, তাতে তৃতীয় খণ্ডে অবধী, ভোজপুরী, বুন্দেলি, মাড়োয়াড়ি এবং মৈথিলীর ইতিহাস থাকার কথা ছিল। মৈথিলী ভাষাবিদ ডঃ উমেশ মিশ্রকে এর উপরে একটা লেখা দিতে বললে তিনি গররাজি হন এই কারণে যে মৈথিলী একটি স্বাধীন ভাষা। তার আলাদা ইতিহাস আছে। আসলে এখানে ভাষা আত্মপরিচয়ের বাহন ও বাহক। অনেক পণ্ডিত হিন্দির জয়যাত্রায় ‘কবীর মীরাবাঈ তুলসীদাস সুরদাস, নরসিং মেহতা-দাদু-রসখান-লালদেদ-নাভাজীদাস’ ইত্যাদির কথা বলতে গিয়ে আবেগে একঘর হন। এঁদের কোন হিন্দি উপভাষায় রাখতে হবে তাঁরা বলতে পারবে তো? রুশ পর্যটক লেবেডেভ সাহেব কলকাতার যে স্থানীয় হিন্দির অভিধান/ব্যাকরণ করে গেলেন, তা কলকাতায় মারোয়াড়িরা আসার আগে আপ-কান্ট্রি হিন্দিভাষীদের জগাখিচুড়ি, যাতে পাঞ্জাবী, উত্তর প্রদেশের, বিহারের মানুষের মুখের ভাষা ছিল মিলে মিশে। সেটা রাশায় বলে এলাম।
ভারতের মানুষের ভাষার অধিকারের আবেগ এইভাবে সমাধান করা যাবে না। ভারতীয় ভাষাগুলির  মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠির ৫৪টি ভাষা বলেন  জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ; কুড়িটি দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠির ভাষী প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ; ২০টি Mon Khmer ভাষাগোষ্ঠির এবং ৯৮টি Sino-Tibetan  ভাষাগোষ্ঠির ভাষী হলেন জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ

অনন্তমূর্তি কোথাও লিখেছেন কোনো ভাষার নিজস্ব সাহিত্য হতে গেলে তার রাষ্ট্র আর সেনাবাহিনী চাই। কিন্তু ভারতবর্ষে অনেক ভাষার তো নিজস্ব রাজ্যই নেই, যদিও তাদের জনসংখ্যা ইউরোপের অনেক ভাষার চেয়ে বেশিতাদের মধ্যে প্রায় পঁয়ষট্টি লক্ষ সাঁওতালির কিয়দংশের মাথার উপর ঝাড়খণ্ডের সীমিত ছাদ আছে, কিন্তু প্রায় তেইশ লক্ষ ডোগ্‌রির, প্রায় চোদ্দ লক্ষ বড়োর, পঁচিশ লক্ষ কোঙ্কানির, ঊনত্রিশ লক্ষ নেপালির, ছাব্বিশ  লক্ষ  সিন্ধির, দশ লক্ষ ভিলির, সাতাশ লক্ষাধিক গোণ্ডির, প্রায় এগারো লক্ষ হো-র, প্রায় আঠারো লক্ষ কুরুখ/ওঁরাওর, প্রায় এগারো লক্ষ মুণ্ডারির, সতেরো লক্ষাধিক টুলুর, প্রায়  ছাব্বিশ লক্ষ সিন্ধির ভাষার উপর মাথার উপর রাজ্যের ছাদও নেই; রাষ্ট্র আর সেনাবাহিনী (গেরিলা বাহিনী বাদে) কল্পনারও বাইরে  তার চেয়েও বড় কথা চোদ্দ হাজারের কিছু বেশি সংস্কৃতভাষী আছেন, আর ইংরেজিভাষীর সংখ্যা  অনেক ভারতীয় ভাষার থেকেও বেশি, প্রায় তেইশ লক্ষ ভাষাগুলির মধ্যে স্কুলে  পড়ানো হয় ৫৮টি, খবরের কাগজ আছে ৮৭টিতে, ৭১টিতে রেডিও প্রোগ্রাম, ১৫টিতে চলচ্চিত্র, আর অন্ততঃ এই বছর থেকে ইউ.পি.এস.সি.র মূল (Mains) পরীক্ষাতেও পরীক্ষার্থী সব কটি আঞ্চলিক ভাষায় বসতে পারেবাকি মানুষরা ভারতবর্ষের ভাষা-সংখ্যালঘু এঁদের অনেকেরই নিজস্ব লিপিই নেই অথবা তার  দাবি মানা হচ্ছে না। এর পরেও গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে আছে ভাষা-ইতিহাস রচনার (historiography) কাঠামোয় বহিষ্করণের রাজনীতি, যার শিকার কেবল অরুণাচলের মতো প্রান্তিক ভূমি বা তার মানুষ নয়,১০ কোথাও-কখনো এমনকি ঊর্দুর মতো সমৃদ্ধ সাহিত্যও।১১ বাকি অবজ্ঞাত ভাষা/সাহিত্যগুলির খবর কে রাখে’, যদিও প্রায়ই তাদের কোন্ দূরের হাওয়াভারত সাহিত্যের সন্নিষ্ঠ সুরের পাগলাকেরসবাণিজ্যের ডাক দিয়ে যায়।

তাহলে কেউ বলবেন এতো ভাষা বৈচিত্র্যের মধ্যে ভারতে কথা হবে কী করে? কী করে হবে নয়, ভাবুন কী করে হচ্ছে। এই বহুভাষিকতা নিয়ে কবি যশোধরা রায়চৌধুরীর একটি পোস্টে স্মিতা খাটোর (Smi Ta) নাম্নী আমার এক অতিসাম্প্রতিক ফেসখী পারিবারিক কারণে তাঁর রাজস্থানী হিন্দি আর বঙ্গদেশের দু’তিনটি জেলার বাংলাভাষা বলা মার কথা বলেছিলেন। আর সেই প্রসঙ্গেই তাঁর নিজের কাজের অভিজ্ঞতায় পাওয়া বহুভাষিকতা নিয়ে একটা নিজের আগের পোস্ট দিয়ে দিয়েছিলেন। ঋণ স্বীকার করে তাঁর সেই বক্তব্য হুবহু তুলে দিচ্ছি।

ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা ভাষা নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা করি বহুমুখী সমৃদ্ধ এই আলোচনার মধ্যে যদিও খুব একটা খেয়াল করিনি এমন আলোচনা যেখানে আমাদের দেশজোড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ভাষাজগৎ, তাঁদের ভাষাগত সমস্যার দিক উঠে আসে উড়িষ্যার অজন্মাপীড়িত, খরাবিধ্বস্ত কালাহাণ্ডি আর বোলাঙ্গির জেলা থেকে কাতারে কাতারে যে নারী এবং পুরুষরা তেলেঙ্গানা আর অন্ধ্র প্রদেশের ইটভাঁটাগুলোয় কাজে যান অনেকেই বাধ্য হন স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতে, দেশের বাড়িতে যেহেতু তাদের দেখভাল করার কেউ থাকে না কোথাও কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুল আছেও, কিন্তু ভাষা এত বড়ো একটা সমস্যা যে অধিকাংশই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাবা মার কাজে হাত লাগায় সারা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের, বিশেষ করে যেখানে ইটভাঁটার মতো পরিবারকে ইউনিট ধরে কাজ হয় সেখানে এটা খুব বড়ো একটা সমস্যা এক সাংবাদিক বন্ধু যখন অন্ধ্র প্রদেশের সাঙ্গারেড্ডি জেলার আন্নারাম গ্রামের ইটভাঁটায় কাজে গিয়েছিলেন তখন উড়িষ্যার নুয়াপাড়া জেলার কুরুমপুরি গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকরা এটা শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন যে তিনিও তাঁদেরই জেলার মানুষ তাঁদের মধ্যে বয়সে বড়ো একজন শ্রমিক বলেছিলেন, ‘বহুদিন বাদে এমন কারও দেখা পেলাম যে ওড়িয়া ভাষায় কথা বলছে

কেরলের কান্নুর জেলার চেরুমাভিলায়ি গ্রামের নির্মাণশ্রমিক মুহাম্মদ শফি সারাদিনের ইঁট, চুন, সিমেন্ট, সুরকির কাজ শেষ হলে অনুবাদের কাজে হাত লাগান কিশোর বয়সে কাজের সন্ধানে দেশান্তরী হন ব্যাঙ্গালোর শহরে একটা চায়ের স্টল দেন সেখানে আসতেন তামিল শ্রমিকরা তাঁদের মধ্যে থেকেই তিনি তামিল রপ্ত করেন একটি রাশিয়ান গল্প তামিল থেকে মালায়লামে অনুবাদ করেন সি পি আইয়ের মালায়লাম দৈনিক জনযুগমে পাঠান ১৯৮৫ সালে সেটি প্রকাশিত হয় পরবর্তীতে অনুবাদ করেছেন পেরুমলমুরুগন সহ আরও অনেকের লেখা গল্প, উপন্যাস একবার পিসাইনাথ আমাদের বলেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে এমন অনেককে তিনি দেখেছেন যাঁরা সহজেই পাঁচ সাতটা ভাষা গড়গড় করে বলতে পারেন... পেটের দায়ে তাঁরা নিজেই শিখে যান আর কি! অবশ্য এসব তাঁদের স্কিলের পরিচায়ক নয়, তাঁদের পরিচয় 'আনস্কিল্  লেবার' হিসেবেই১২

ফলে ভারতের যোগসূত্র ভাষার সমাধানসূত্র এই বাধ্যতঃ নিরক্ষরদের হাতে ছেড়ে রাখলে বহুভাষিকতা প্রক্রিয়া হিসেবে চলবেই। তাকে প্রকল্প করার দরকার এই।
এদের মধ্যে ওই হিন্দভি বা হিন্দকী কোথায়? ওঁকে বলবে কবীর মীরাবাঈ তুলসীদাস সুরদাস বহু কণ্ঠস্বরকে একাকার করে এই রথযাত্রা। নরসিং মেহতা-দাদু-রসখা -লালদেদ-নাভাজীদাস কত বুলি একাকার হল এই cultural melting point-সেটা এই ভাষাগুলির কোনটায় কোনটায় রাখবো? মীরাবাঈকে বোধহয় মেওয়ারিতে রাখতে হবে (৪২,১২,২৬২ কথকের); কবীরকে আর বাকিদের কোনগুলিতে তা আমিও অনুমান করার চেষ্টা করতে পারি। করছি  না। রুশ পর্যটক লেবেডেভ সাহেব কলকাতার যে স্থানীয় হিন্দির অভিধান করে গেলেন, তা কলকাতায় মারোয়াড়িরা আসার আগে আপ-কান্ট্রি হিন্দিভাষীদের জগাখিচুড়ি, যাতে পাঞ্জাবী, উত্তর প্রদেশের, বিহারের মানুষের মুখের ভাষা ছিল মিলে মিশে। সেটা রাশায় বলে এলাম। কবীরের সব দোঁহা প্রধানমন্ত্রী পড়ে অর্থ উদ্ধার করতে পারবেন তো?


গ্রন্থসূত্র

1.   Sisir Kumar Das, ‘Comparative Literature in India: A Historical Perspective’, Journal of the Comparative Literature association of India, 1(February 2011): pp. 18-29, esp. 18-21.
2.   U. R. Ananthamurthy, ‘Towards the Concept of a New Nationhood: Languages and Literatures in India’, in U. R. Ananthamurthy Omnibus, (ed.) N. Manu Chakravorty (Gurgaon, Delhi: Arvind Kumar, 2007), pp. 289-99, Omnibus. 
3.   Carlo Coppola and Amrita Pritam, ‘Amrita Pritam’ in Mahfil 5(3) Amrita Pritam Number: 5-6 (1968-1969), courtesy http://www.jstor.org/ stable/40874236, accessed: 24 July 2013.
4.   Heidi Pauwels, ‘Diptych in Verse: Gender Hybridity, Language Consciousness, and National Identity in Nirālā’s “Jago Phir Ek Bār”’, Journal of the American Oriental Society 121:3 (2001): 449-81, esp. 450.
5.   Paul R. Brass, Language, Religion and Politics in North India (Lincoln, NE : iUniverse, 2005),pp.69-72.
6.    U. R. Ananthamurthy, ‘The Fragmented Vision’, Omnibus, pp. 300-302.
7.   এই ভাষাভাষীদের যথাযথ সংখ্যার জন্য দেখুন, Statement 1 and 4, Census of India, 2001, Office of the Registrar General and …, censusindia.gov.in/,  ২৪শে জুলাই ২০১৩-তে দৃষ্ট। 
8.   www.indiansaga.com/languages/, ২৪শে জুলাই ২০১৩-তে দৃষ্ট। 
9.   Myron Weiner, ‘India’s Minorities: Who are They? What Do They Want?’, in Partha Chatterjee, State and Politics in India (ed.) Partha Chatterjee (Delhi: Oxford University Press, 1998), pp. 463-67.
10.               Stuart Blackburn, ‘Unscripted: The People of Arunachal Pradesh in Literary and Other National Histories’, in Hans Herder (Ed.) Literature and Nationalist Ideology: Writing Histories of Modern Indian Languages (New Delhi: Social Science Press, 2011), pp. 305-23.
11.                Navina Gupta, ‘The Politics of Exclusion? The Place of Muslims, Urdu and Literature in Ramachandra Shukla’s Hindi Sahitya Ka Itihas’, Herder, Literature and Nationalist Ideology, pp. 259-81.
12.               সৌজন্যে স্মিতা খাটোর ও তাঁর পোস্ট।
1                

শিবাংশু দে




হরীতকী ফলের মতন



অমৃতসর এক্সপ্রেস দুপুর দিকে ছাড়ে টাটানগর থেকে। গত পাঁচদিনে পর্ণা অনেক চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করার জন্য। আমি এড়িয়ে গেছি। জানি, সেই এক কথা বলবে, তোমাকে ছেড়ে দুমাসের জন্য আমি যাবো না। এত্তো ছেলেমানুষ রয়ে গেছে এখনও, বাবার আদরের দুলালি! পৃথিবীর মাটিতে এখনও ঠিক করে পা ফেলেনিতার দুনিয়ায় সব কিছু অন্যের। অন্যের দুঃখ, অন্যের সুখ, অন্যের অপমান, অন্যের সার্থকতা, তাই নিয়ে তার জীবন। পৃথিবীর থেকে অনেক আঘাত পাবে সে, যদি একটু নিজের দিকে ফিরে না দেখে। জানি না আমি তাকে এই নিষ্ঠুর দুনিয়ার ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে কতোটা আড়াল করে রাখতে পারবো।

আমি দূর থেকে দেখি ওর বাবা-মা এসেছেন স্টেশনে ছাড়তে। আমি ওঁদের সামনে আর যাইনি। ট্রেন ছাড়লো যথাসময়ে। গাড়ির আশিভাগ যাত্রী সর্দারজি। গাম্হারিয়া পেরোতেই এস-ফোর কামরার দিকে এগিয়ে যাই। আমার সিট এস  থ্রি-তে। সাবধানে এগোতে এগোতে দেখি কামরার মাঝামাঝি একটা ক্যুপে জানালার ধারে উদাসিনী পূর্বমেঘ হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। উড়ন্ত চুল আর ওড়নার ব্যাকড্রপ ছাপিয়ে মেলানকোলি পার্সোনিফায়েড একটি রূপসী তরুণী। সামনের সিটে একটি শিখ পরিবার। পাশটি খালি। রামগড় থেকে উঠবে।
 

এগিয়ে গিয়ে বলি, নমস্কার আজ্ঞা...
তুমি... তুম...ই, তু...
-আরে হচ্ছেটা কী? সর্দারজি খুব মন দিয়ে দেখছে। জানো তো ওদের শিভালরি জাগলে একেবারে বেণীর সঙ্গে মাথা। হাত ফাত চালালে তোমারই ক্ষতি। তবে সর্দারনি যদি হাত চালায় তবে কন্সিডার করা যেতে পারে। কী ধারালো ফিচার দেখেছো?
 -তুমি কখনো শুধরাবে না, তোমার মার খাওয়াই উচিৎ...
-যদি তাই সাব্যস্ত হয় দেবি, তবে আমা হেন অসুরকে বধ করার দায়িত্ব  আপনিই নিন...
-তুমি এখানে কী করছো?
-আজ্ঞে, আমি আমার হৃদয়েশ্বরীর সঙ্গে এই মুহূর্তে রহস্যালাপ করছি...
-হেল, এই ট্রেনে তুমি কেন...
-আজ্ঞে, টিকিট কাইট্যা উঠসি, নামাইতে পার্বা না...
-ইন্করিজিবল...
-কিসু কইলেন নাকি?
 
-ইম্পসিবল...
-দ্যাখেন ঠাইরেন, ইংরাজিতে গালাগালি দিয়েন না, আমিও এ-বি-সি-ডি সব পরসি...



কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে, অপাঙ্গে দেখে। মতলব বোঝার চেষ্টা করে। শেষে একেবারে হাল ছেড়ে দেয়।
-তোমার যদি আসারই ছিলো, তবে আমায় বললে না কেন?
-দ্যাখো তুমি হইলে গিয়া 'স্টুডেন্ট'
তোমাগো কাইজ ল্যাখাপড়া করা। zদি আমি কইতাম, তয় তোমার সিত্ত সন্সল হইতো। তাই কই নাই।
-তুমি একটু ভদ্রলোকের মতো কথা বলবে?
-অ্যাঁ, অপমান, আমাগো মামাবাড়ির ভাসারে অপমান... লন্ডভন্ড অইয়্যা zআইবো গিয়া...
-মুখটা বন্ধ করে একটু বসো। সর্দারনিকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?
-ঠিক ধরেছো, তাই তো তোমায় এতো ভালোবাসি... তবে শোনো, আমি চলেছি ইলাহাবাদ। কুম্ভক্ষেত্রে
আমার বন্ধু রাজীব সিং পাটনা থেকে আসবে। ওর একটা ঠেক আছে ইলাহাবাদে। আমরা দিনকয়েক থাকবো ওখানে
- আমায় বলোনি কেন?
- সব কি বলে দিতে আছে? কিছু তো বোঝার জন্যও রাখতে হয়। শুনেছি কুম্ভতে অনেক মেমসাহেবরাও আসে। তোমার বিরহ ভুলতে এ ছাড়া আমার কিছু করার ছিলো না।
 
-তুমি কোথায় সিট পেয়েছো?
-পাশের কামরায়...
-এখানে আসতে পারবে না? অন্তত ইলাহাবাদ পর্যন্ত সঙ্গে যাওয়া যেতো।
-হ লা সুন্দরী, শুধু কি ইলাহাবাদ? বহুদূর পাড়ি দিতে হবে একসাথে, হিংলাজ মরুতে গিয়া গেয়ে যাই কচুরির গান...
-মানে?
-ঐ হিং শুনলেই কচুরি মনে পড়ে যায় কিনা... যাকগে দেখি মামাকে বলে যদি এদিকে ম্যানেজ হয়...

ম্যানেজ হয়ে গেলো দুটো সাইড বার্থ। ইলাহাবাদ পৌঁছোয় সকালবেলা। তার মানে রাতের ঘুম গয়া। পাগলি ঘুমোতে দেবে না রাতভর। সেই রাতে যতো কথা, আজে কথা, বাজে কথা, সব যেন খেয়ালের স্থায়ীর মতো বারবার ঘুরে আসে ভালোবাসা হয়ে। ভালোবাসা যেন সেই শাশ্বত চাকা, যাকে রোজ নতুন করে আবিষ্কার করতে হয়। রোজ দূরে ঠেলে দিই, এই বলতে বলতে, ফিরে এসো ফিরে এসো চাকা...
আমাদের ব্যক্ত, অব্যক্ত সব সংলাপ, ফুলের ভিতর মধুর মতন, বিনয়ের নীরব স্বগতোক্তি যেন-
'আমার আশ্চর্য ফুল, যেন চকোলেট, নিমিষেই
গলাধঃকরণ তাকে না-ক'রে ক্রমশ রস নিয়ে
তৃপ্ত হই, দীর্ঘ তৃষ্ণা ভুলে থাকি আবিষ্কারে, প্রেমে।
অনেক ভেবেছি আমি, অনেক ছোবল নিয়ে প্রাণে
জেনেছি বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে, কাকে বলে নীল-
আকাশের, হৃদয়ের; কাকে বলে নির্বিকার পাখি।
অথবা ফড়িং তার স্বচ্ছ ডানা মেলে উড়ে যায়।
উড়ে যায়, শ্বাস ফেলে যুবকের প্রাণের উপরে।
আমি রোগে মুগ্ধ হয়ে দৃশ্য দেখি, দেখি জানালায়
আকাশের লালা ঝরে বাতাসের আশ্রয়ে-আশ্রয়ে।
আমি মুগ্ধ; উড়ে গেছো; ফিরে এসো, ফিরে এসো, চাকা,
রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হ'য়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
সুর হয়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।'
 



ভোরবেলা যখন ইলাহাবাদে নামছি, বললুম, সাবধানে থেকো, ভালো থেকো...
সারা রাত ট্রেনজার্নি করে কেউই খুব দর্শনধারী থাকে না। কিন্তু পর্ণাকে খুব ফ্রেশ লাগছিলো, তার হাজার ওড়া চুলের চালচিত্র, কাজলমোছা চোখ আর স্বভাবলাল ঠোঁট বলছিলো ভালো থেকো, খুব ভালো থেকো। কিন্তু মুখে বললো, সাবধানে থেকো, মধুরিমাকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না।

আবার, আবার, সেই ফিরে এসো চাকা। এ গল্প বোধহয় আর ফুরোনোর নয়...
 

(শেষ হলো)

-----------------------------------
 
(এই লেখার কোনও উপসংহার হয়না। নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু লেখাটির দ্বিতীয় কিস্তি পর্যন্ত পড়ে আমার বাল্যবন্ধু কবি সৌমিত্র সেনগুপ্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে জানিয়েছিলো, 'দারুণ লিখছিস। কন্টিনিউ কর। ভালো থাকিস।'
 

আমি তো আছি একরকম। তুই লেখাটা পুরো না পড়েই কোথায় চলে গেলি মুন্না। শেষ করে তোকে পাঠালুম। পড়িস।)



(সৌজন্যস্বীকার ঃ গুরুচন্ডালী) 

পারমিতা চক্রবর্ত্তী




মা 



‘মা’ শব্দর থেকে পৃথিবীতে পবিত্র ও সুখকর শব্দ  আর কিছু নেই মা ডাক শোনার জন্য হাজার হাজার কিমি পথ অতিক্রম করা যায় মা এমনই এক শব্দ  যার কোন বিকল্প হয় না মা হওয়ার জন্য প্রতিবছর কত নারী মারা যান কত যে মা, মা-হতে না পেরে আত্মঘাতী হয়! কথায় আছে ‘মা হওয়া মুখের কথা না’!  সত্যিই তাই মা হতে গেলে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় সেই যন্ত্রণা শুধু নাড়ি ছেঁড়া / প্রসব যন্ত্রণা নয়, মাকে অনেক সামাজিক,অর্থনৈতিক পীড়া বহন করতে হয়সন্তানের সাথে মা'র নাড়ির টান মা'র শরীর থেকে প্রোটিনের যে নির্যাস,  যাকে বলে দুধ, সেই দুধ পান করে একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে একটা শিশু যখন জন্মায় তখন খিদে ছাড়া আর কোন প্রবৃত্তি তার মধ্যে থাকে নাঠিক সেই সময় মা তার আদরের বুকখানি এগিয়ে দেয় সন্তানের মুখে একজন মা পরম স্নেহে, যত্নে নিজের শরীরের সবটুকু দিয়ে লালন করে সন্তানকে, যাকে বলে আত্মিক বন্ধন

তবে মা হওয়া নিয়ে বর্তমানে অনেক পদ্ধতি চালু হয়েছেটেস্টটিউব বেবির কথা আমরা সবাই জানিএখন গর্ভ ভাড়া দেওয়া হচ্ছে যে মা নিজে সন্তান ধারণে অক্ষম, সে সারোগেসি পদ্ধতিতে  সন্তান লাভ  করতে পারেএকটা সময় ছিল, যখন দক্ষিণ এশিয়াতে বাণিজ্যিক সারোগেসি বলতেই উঠে আসত ভারতের নাম২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই পদ্ধতির মাধ্যমে হাজারো ভারতীয় দম্পতি, সন্তানহীন নারী ও পুরুষ সন্তানলাভ করেছিলেন এছাড়া মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে সারোগেসির খরচ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণে, অথবা কোথাও কোথাও এই প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে, বহু সন্তানহীন দম্পতিই গর্ভ ভাড়া করার জন্য উপস্থিত হতেন ভারতেকিন্তু ২০১৫-র নভেম্বরে গর্ভ ভাড়া করে ইন-ভিট্রো-ফার্টিলাইজেশন' বা আইভিএফ-এর  মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার এই প্রক্রিয়া বিদেশিদের জন্য আইনত নিষিদ্ধ হয়ে যায় শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে বাণিজ্যিক সারোগেসি নিষিদ্ধ করতে সারোগেসি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৬' নামে সংসদে একটি বিল আনা হয় তাতে গর্ভ ভাড়া  করার এই প্রক্রিয়াকে অনৈতিক' হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বলা হয়, আইন না থাকায় গরিব ও অশিক্ষিত মহিলাদের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ধনবানরাঅর্থাৎ সারোগেসি ক্লিনিকগুলি ধনীদের জন্য নিছক বেবি-ফ্যাক্টরি' হয়ে দাঁড়িয়েছে 

মা হওয়া নিয়ে যতরকম পদ্ধতি চালু থাকুক না কেন অসম্ভব ভাবে কমে যাচ্ছে কন্যা অনুপাত ভারতবর্ষের মত দেশে যতই নিয়ম করে লিঙ্গনির্ধারণ বন্ধ হোক  না কেন কন্যাভ্রুণ হত্যা হচ্ছে অহরহ দেশের ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে  ১৭টিতেই লিঙ্গ অনুপাত পড়ে গিয়েছে আশঙ্কাজনক হারে।  গুজরাটের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১২-২০১৪ সালের মধ্যে যেখানে প্রতি ১০০০ পুত্রসন্তান  জন্মালে, কন্যার জন্ম ছিল ৯০৭, তা ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে কমে হয়েছে ৮৫৪, একলাফে ৫৩ পয়েন্ট পড়েছে। গুজরাটের পরেই রয়েছে আরেক  রাজ্য হরিয়ানা৩৫ পয়েন্ট কমেছে সেখানে অনুপাততারপরেই  রাজস্থান (৩২ পয়েন্ট)উত্তরাখণ্ড (২৭ পয়েন্ট)  কর্নাটকে লিঙ্গ অনুপাত পড়েছে ১১ পয়েন্ট। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, লিঙ্গ অনুপাত বেড়েছে পাঞ্জাব, উত্তপ্রদেশ ও বিহারে। 

গবেষকরা বলছেন, বছরে প্রায় কুড়ি লক্ষ ভারতীয় মহিলা স্রেফ হারিয়ে যাচ্ছেন! বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯৯০ সালে প্রথম এই হারিয়ে যাওয়া নারীদের কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, গত কয়েক বছরে ভারত এবং চিন থেকে দশ কোটি নারী হারিয়ে গিয়েছেন। অমর্ত্য সেনের গবেষণার ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদ সিয়ান অ্যান্ডারসন এবং দেবরাজ রায় ভারতের হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের উপর একটি বিশেষ গবেষণাপত্র ২০১২ সালের মার্চ মাসে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ করেন। সেখানেই বলা হয়, বছরে কুড়ি লক্ষ মহিলা ভারত থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে ভারতের সর্বশেষতম জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শিশুকন্যার জন্মের হার শিশুপুত্রের তুলনায় ক্রমশ কমছে। ২০১১ সালে প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের অনুপাতে ৯১৪ জন শিশুকন্যা জন্মগ্রহণ করেছে। শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার এই অনুপাতটি স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সবথেকে খারাপ অনুপাত। ২০০১ সালে এই অনুপাত ছিল হাজারে ৯২৭ জন। আদর্শ পরিস্থিতিতে শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার অনুপাত হওয়া উচিত ১০২০ : ১০০০কারণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ছেলেদের জন্মের সময় মৃত্যুহার বেশি হয়। ছয় বছর বয়সের পর পুত্র ও কন্যার অনুপাতের পার্থক্য কমে আসে। অ্যান্ডারসন ও দেবরাজ রায়ের পেশ করা গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, জন্মানোর পর ও শিশু অবস্থায় হারানোর চেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা অনেক বেশি মাত্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্ক। আরও জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবে কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মারা যায় জন্মের সময়। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা ওই রাজ্যেই সবথেকে বেশি হয়। ১৫ বছরের কমবয়সী মেয়েদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি (১৫%) ঘটে হরিয়ানা ও রাজস্থানে। যে রাজ্যে সব থেকে কম (১০%) মেয়েদের হারিয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়, সেগুলি হল কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু। 

২০১৭ সাল নাগাদ, বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে ৮৮% হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু এখনও প্রতিদিন ৮৩০ জন মহিলারা গর্ভাবস্থায় বা সন্তানের জন্মের কারণে মারা যান। ইউনাইটেড নেশনস জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ২০১৭-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি প্রতি দুই মিনিটে এক মহিলার এবং যারা মারা যায় তাদের প্রত্যেকের ২০ বা ৩০টি কারণ থাকে, যা গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় সম্মুখীন করে। এই মৃত্যুর অধিকাংশই এবং সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।

ভারতের গ্রামাঞ্চলের অনেক মেয়েই অল্প বয়সে বিয়ের কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়এখনও অনেক শিক্ষিত পরিবার  মুখে শিক্ষার বুলি আওড়ালেও  পুত্র সন্তান জন্ম না নিলে বউমার উপর শুরু করে অত্যাচার সুষ্ঠু পরিবার  পরিকল্পনার অভাবে এক গর্ভধারণের ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই মেয়েদের একটার পর একটা সন্তান  হয়ে যায় পরিবারের মানুষজন ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাটুকুও দেয় না ৷ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাদ দিয়ে বাড়িতেই জন্ম নেয় বহু শিশু ফলে সংক্রমিত হচ্ছে মা ও শিশু১৯৯১ সালে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রতি লাখে ৫২৩ জন, আজ এই হার প্রতি লাখে ২৫৪ জন সংখ্যাটি যদিও আশ্বস্ত করে আমাদের, তবুও এই সংখ্যাটি আরও কমে যাওয়া কাম্য

ইউনিসেফের হয়ে শিশু উন্নয়ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন গীতাঞ্জলি চতুর্বেদী ভারতে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর সমস্যাটি নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন তিনি তাঁর ভাষায়,  ‘‘এ ক্ষেত্রে তিনটি মূল সমস্যা রয়েছে, কিছু কিছু সমস্যা স্পষ্টতই রাজনেতিক, কিছু সমস্যা সামাজিক, এবং আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যাও রয়েছে” অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়াটা একটা সামাজিক সমস্যা এর ফলে টিন-এজ- থাকতেই বাচ্চা হয়ে যায়ে অনেক মেয়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আমাদের মায়েদের স্বাস্থ্যের দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত, কিন্তু পরিস্থিতি  হয় এর বিপরীতটাই ভারতীয় নারীদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী নিজেকে অবহেলা করে সন্তানকে বড় করতে গিয়ে হারিয়ে যায় অনেকটা সময়
একজন মা  নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে যে সন্তানকে মানুষ করে পরবর্তীতে তার ঠিকানা যেন না  হয় বৃদ্ধাশ্রম সন্তানের প্রতি দায়িত্ব যেমন মা'র তেমন সন্তানের কিছু দায়িত্ব থেকে যায় যে ভালোবাসার বীজ বোনা থাকে  সন্তানের মধ্যে সেই সন্তান  মাকে প্রতারণা করেবর্তমানে বহু মা নিজের অধিকার, নিরাপত্তার জন্য আদালত অবধি পৌছে যাচ্ছেন আমরা স্বাধীন হচ্ছি  ঠিকই কিন্তু চিন্তাভাবনায় নেই কোন মৌলিকতা আমাদের সংস্কৃতি শেখায় আমাদের অতীতকে আঁকড়ে ধরতে‘মা’ শব্দটির যেন ভুল ব্যাখা কখনই না  হয় অনেকেই বলেন, কর্মব্যস্ত জগতে মার গুরুত্ব কিছুটা প্রশ্ন চিহ্নের মুখেWrking womenদের ঘর-বার সামলে সন্তানকে উৎকর্ষ সময় দেওয়াটাই এক বড় চ্যালেঞ্জ তবুও ‘মা’র প্রতিশব্দ ‘মা’ই যার কাছে কোন মিথ্যা কথা বলা যায় না, নিজের দুঃখকে চাপতে হয় না কারণ মা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সবটুকু বুঝে যান সন্তানের শত অপরাধটুকু প্রশ্রয় দেয় একমাত্র মা তাই কোন একদিন নয়, রোজই হওয়া উচিত ‘মা দিবস’