কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

মৃণালিনী মৃণাল




শৈশব


রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শিশু মনঃস্তত্ত্ব ফুটে উঠেছে চমৎকার ভাষায়-

"
খোকা মাকে শুধায় ডেকে / এলেম আমি কোথা থেকে, / কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমাকে।"

শুধু কবিতা কেন, অতুল প্রসাদের সংগীতের কথায়-

"
যা ছিল কল্প মায়ায়/ বুঝি আজ ধরল কায়া। এলে কী একুল ওকুল দুকুল হতে কুল মেলাতে এই অকুলে - একা মোর গানে তরী..."

বর্তমানে দ্রুতগতির জীবন  অদৃশ্য কম্পিটিশনে প্রত্যক্ষভাবে শিশুর ওপর,  পরোক্ষভাবে যেন বাবা-মা ঝাপিয়ে পড়েনইঁদুর দৌড়ে। কারণ বাবা-মা সব সময়  চান তাদের সন্তান পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট এর সঙ্গে 'ফ্রি ইন ওয়ান' অর্থাৎ  আঁকা /গান/ নাচ/ খেলা/ আর্ট/ আবৃত্তি সব কিছুতেই ভালো হবে। সুতরাং তারা না চাইলেও শিশুর ওপর এক অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।অভিভাবকদের এসব অতিরিক্ত চাপ  অতিরিক্ত চাপহীন অর্থাৎ দায়িত্বমুক্ত শিশুরা নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠলেও লক্ষ্যকরা যায়, শিশুদের Conduct Disorder এবং হিংসাশ্রয়ী  মনোভাব।  School Bullying,  স্কুলের  র‍্যাগিং, মারামারি এমনকি দোতলা থেকে  ফেলে দেওয়া ঘটনাও গিয়েছে অল্পবয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে।

-১২ বয়সের বা Sexually Inert, এই সময়ের ছেলেরা কুকুরকে ঢিল মেরে, অন্যকে নির্মমভাবে প্রহার করে এক রকমআনন্দ লাভ করে। যদিও এটা কোন রোগ নয়, একটা বয়সের পর যৌবন এলে অর্থাৎ অন্যদিকে প্রেম ভালোবাসার টান এসেগেলে এই Conduct Disorder, চুরি, অপরের জিনিস ভেঙে ফেলা  এমন সব  প্রবণতাগুলো কমে কমে যেতে থাকে। Conduct Disorder দুই শ্রেণি- Socialised Conduct Disorder, যেমন রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের 'ফটিক' আর Unsocialised Conduct Disorder, এরা  একলা, অপরাধী মনোভাব  সম্পন্ন।  বড়  হয়ে  সাধারণত Anti Social Personality-এ পরিণত হয়। এমনকি তাদের  জেল, জরিমানা এসব শাস্তি পেতে দেখা যায়। শিশু বয়সে অভিভাবকেরা পর্যবেক্ষণের  মাধ্যমে ধরতে পারেন না, ফলে অনেকসময় বুঝিয়ে  আটকাতে বা  মোটিভেশান সম্ভব হয় না। আস্তে আস্তে সে সমাজ বিরোধী হয়ে উঠতে পারে। তাই, শিশু   কৈশোরের যে কোন ধরনের হিংসা অপরাধকে Counselling বা শাসন  করে বদলানো যেতে পারে। এতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঅভিভাবকদের, তেমনই  স্কুলের শিক্ষকদেরও

স্কুল ছাত্রছাত্রীরা সামগ্রিকভাবে একটা আলাদা জনগোষ্ঠী নয়, তাদের মধ্যে কিছু  শিশু বাকিরা কিশোর এবং উঁচু ক্লাসেসদ্য যুবক যুবতীরাও থাকে। সুতরাং পরিবারে তাদের আলাদা চোখে দেখা হলেও স্কুলের গণ্ডির মধ্যে তারা শুধুই শিশু, তবে কেউএকটু বড়, কেউ একটু ছোট - এছাড়া অন্য কোন বিভেদ বিভাজন রাখা হয় না। কৈশোরে বিশেষত কিশোরীদের মধ্যে খাদ্যেঅকারণ অনীহা বা Anorexia Nervosa খুবই দেখা  যায়। এর বহুরকম  চিকিৎসা এবং  PsychotherapyBehavioral Therapy  দিয়ে এই গোলযোগটা সারানো  রীতিমতো কঠিন।  Anorexia মানে খাদ্যে অরুচি যার ইংরেজি তর্জমা Loss of appetite  Nervosa  মানে নার্ভ  বা  স্নায়ুতন্ত্র থেকে এর উৎপত্তি। খাদ্যের  প্রতি  অরুচি বা  অনীহার কারণে Extremely Slim থেকে  Cachectic বা  Cachectic বা কঙ্কালসার  চেহারায় পরিণত হয়। ডাক্তার দেখান হয় কিন্তু কজন অভিভাবক মনোচিকিৎসকের  কাছে যান, তাতে সন্দেহ থেকে যায়। তারা চেষ্টা করেন জোর করে অতিরিক্ত  খাওয়া-দাওয়া করিয়ে সুস্থ  করে  তুলতে। কিন্তু এর কারণে অনেকে রোগে  ভুগে থাকে। মফঃস্বল বা গ্রামের স্কুলে রোগা টিঙটিঙে মেয়ের সংখ্যা দেখলে অবাক হতে  হয়। অনেকের বাবা-মা দুবেলা খাবার খরচের  পয়সা  যোগাড় করে  উঠতে  পারে না, কিন্তু তাদের জোর করেও মিড-ডে  মিল খাওয়ানো যায় না। খাবার খেতে হবে  এইভয়ে তারা বাথরুমে লুকিয়ে থাকে। জিজ্ঞেস করলে খেয়েছি বলে মিথ্যার আশ্রয় নিতেও কুণ্ঠা বোধ করে না।

একসময়  District School Health Officer-প্রতি জেলায় একজন  জনস্বাস্থ্য  আধিকারিক থাকত। বর্তমানে স্কুল পড়ুয়াদের শরীর ও  স্বাস্থ্য সম্পর্কে  সুযোগ  সুবিধে অনেক বেশি। তাহলেও কি শৈশব  কৈশোর সমস্যা মুক্ত? একটি শিশুকে সুস্থ মানসিকতার নাগরিক  হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবার, স্কুল ও সমাজের একটি বিশাল ভুমিকা থাকে, তা কোন মতেই অস্বীকার করা যায় না।



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন