বেদনার বাবা ও বেদনা
গুঁড়ো দুধের ক্যালেন্ডারে বাচ্চারা যেমন নাদুস নুদুস থাকে
ওরকম একটা বাচ্চা আমার কনে আঙুল ধরে
দাঁড়িয়েছিল। আঙুল ধরে রাখার ভঙ্গিটা মায়াময়। এই বাচ্চাটার মা নেই। আমার সাথেই
থাকে। আমার হাঁটার সাথে তাল মেলাতে পারে না। আমি ওর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটি।
এই বাচ্চাটার নাম বেদনা।
স্বভাবতই আমার গতি শ্লথ হয়। ও খুব হাসিখুশি। সারাক্ষণ কথা
বলে। আমাকে প্রশ্ন করে-
:
তুমি স্কুলে পড়ো?
:
না তো!
:
কী পড়ো?
:
তোমাকে পড়ি।
সে চিন্তিত হলো। হয়তো এই হেঁয়ালি বোঝে না। বাচ্চাদের
চিন্তার ধরন খুব সুন্দর। প্রসঙ্গ
পাল্টাবার জন্য বলি-
:
খাবে কিছু বেদনা? খিদে পেয়েছে?
:
না।
ছোটদের মুখের ডগায় না বোধক লেগেই থাকে। আবার বলি-
:
লগন বয়ে যায় / পা চালিয়ে আয়
আমার সাথে থপথপ করে হাঁটছে বেদনা। তাল মেলাতে পারে না। আমি
আবার ওর হাত ধরি। রোদের ডালিম আজ আমাদের শহরে। চারপাশে উজ্জ্বল মানুষের মুখ। শহরে
সুন্দরের মন্ত্রীসভা। বেদনাকে সুন্দর করে ফ্রক পরিয়েছি। পনিটেইল করে চুল বেঁধে
দিয়েছি। একদম চুলটানা বিবিয়ানা সে আজ। ভীষণ সুন্দর লাগছে ওকে। আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে
এই বাচ্চাটাকে দেখতে থাকি। গাছের পাতা থেকে মাতা মেরী সুন্দর এক পশলা রোদ ওর নাকের
ডগা ছুঁয়ে হেসে দেয়।
:
ও মামনি, এসো কিছু খাই!
:
না, খাব না।
:
হাঁটতে ভালো লাগছে?
:
না।
:
তাহলে চলো ওখানটায় গিয়ে বসি!
:
না।
:
আমার ঘাড়ে উঠবে? আমি তোমার টাট্টু ঘোড়া হই?
জবাব দিল না। সবুজ রাস্তাটার পাশে একটা শালিকের দিকে তাকিয়ে
রইল। একটা কুচকুচ সুন্দর কাঠবিড়ালি সামনের দু’পা তুলে কুটকুট কী যেন খাচ্ছে।
পৃথিবীতে খাবার দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর হলো
কাঠবিড়ালি আর খরগোশের। এবার আমি ওকে বলি-
:
ও মা আমার খিদে পেয়েছে। চলো কিছু খাই।
:
আচ্ছা চলো বাবা! খাব।
আমি বেদনার সুমতিতে খুশি হয়ে উঠি।
:
বলো মা কী খাবে তুমি?
:
তোমাকে খাব বাবা।
চমকে উঠি। মুহূর্তে জোরে হেসে দিই। চট করে ওকে কোলে তুলে
নিই। ও খিলখিল করে হাসতে থাকে। কোলে উঠে বাচ্চাটা আমার গলা জড়িয়ে থাকে।
বেদনা আমাকে জড়িয়েই থাকে। আমি ওর নাকে নাক ঘষি। বাচ্চাটা
খিলখিল করে হাসে। আমি বিড়বিড় করে উঠি:
বিদায় বিদায়
বিদায়টা এমন মিষ্টি দুঃখ, যে আমি আগামীকাল পর্যন্ত শুভদিন বলব আমরা দুজন...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন