কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

অচিন্ত্য দাশ




সাদামাটা গল্প


-“কী রে, এই ভর সন্ধ্যেবেলা ঘরে বসে আছিস! অ্যাঁ, লিখছিস নাকি?
-“হ্যাঁ। দাঁড়া, এই তো হয়ে গেল।
-“তা কী লিখলি...”
-“তেমন কিছু নয় রে, আচ্ছা বলছি শোন্...”

তখন আমি পাঁচ কী ছয় বছরের। সেই বয়স যখন থেকে যা-দেখলাম-যা- শুনলাম তা একটু একটু মনে থাকা শুরু হয়। আমাদের বাড়ির সামনেই ছোট রাস্তা, রাস্তার ওপারে একটা চায়ের দোকান। জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে বাইরে পা-ঝুলিয়ে বসে বসে দেখতাম। সকালের দিকটায় খুব ভীড় হতমিস্তিরি, মজুর, ফেরিওয়ালা সব বেঞ্চিতে বসে চায়ের ভাঁড়ে লেড়ো বিস্কুট ডুবিয়ে ডুবিয়ে খেতএকটু পরে ওদের কাজে যাওয়ার সময় হয়ে যেত, ব্যাস্, সব খালি। তারপর একটা খয়েরী-সাদা কুকুর, পাড়ার‌ই বাসিন্দা, এদিক-সেদিক দেখতে দেখতে আসতবেঞ্চির তলার জায়গাটা ছিল ওর রির্জাভ করা। সেখানে আধো-শুয়ে-আধো-বসে অপেক্ষা করত। অপেক্ষা করত একটা আধ-পাগলা লোকের জন্য। লোকটা আসত কিছুক্ষণের ভেতর। ছেঁড়াখোড়া পাৎলুন আর জামা। কাঁচাপাকা মুখ ভর্তি দাড়ি। যা চার-আনা আট-আনা এর-ওর কাছ থেকে পেত তা পকেট  থেকে বার করত। একটা হাফ-পাউণ্ড পাউরুটি কিনত রোজ। সেটা আদ্দেক করে ছিঁড়ে একটা ভাগ দিত বেঞ্চির তলায় বসে থাকা বন্ধুকে, আর বাকিটা নিজে খেত। দিনের পর দিন একই রুটিন।

অনেক দিনের কথা, তারপর তো প্রায় পঞ্চাশ বছর কেটে গেছে। সে বাড়ি তো কবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তারপর কত জায়গায় থেকেছি, কত কী ঘটে গেছে। এক সময় সংসারী হলাম, তারপর এই এখানে থিতু হয়েছি কিছুদিন হল। জানিস্, সেদিন কলকাতা গিয়েছিলাম কাজে। সেই যেখানকার কথা বলছিলাম সে দিকটাতেই যেতে হয়েছিল। সব পাল্টা গেছে রে! চেনাই যায় না। যে রাস্তায় আমাদের বাড়ি ছিল তা অনেক চওড়া হয়ে গেছে। দুদিকে বড়বড় সব ফ্ল্যাটবাড়ি, চকচকে দোকান, কাঁচের দেওয়াল দেওয়া রেস্তোরাঁ দু-তিনটে। বলাই বাহুল্য, টিনের চাল দিয়ে ছাওয়া চা-এর দোকান যেখানে মাটির বাঁধানো উনুনে চা ফুটত,  বয়মে রাখা হত বিস্কুট পাশে পাঁউরুটি -- সে আর নেই। সে বেঞ্চি নেই তাই তার নিচে সেই ‘ছায়াসুনিবিড়’ শান্তির ঠাঁইও নেই। পাঁউরুটি ভাগ করে খাওয়া হবে বলে কুকুর তার মানুষ বন্ধুর জন্য আর অপেক্ষা করেও থাকে না। বড় বড় বাড়ি, শপিং-সেন্টারের নিচে এইসব সাদামাটা ছবি চাপা পড়ে গেছে। তা তো যায়ই, কে আর ওসব ধরে রাখে! তাই ভাবলাম একটু লিখে রাখি, এই আর কী...  



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন