প্রতিবেশী
সাহিত্য
অনামিকা’র কবিতা
(অনুবাদ : মিতা
দাস)
কবি পরিচিতি :
হিন্দি ভাষায় কবি ও ঔপন্যাসিক অনামিকা জন্মগ্রহণ করেন
বিহারের মুজাফঃরপুরে ১৭ই আগস্ট ১৯৬১ সালে। তাঁর ইতিমধ্যে আটটি কবিতা সংকলন, পাঁচটি
উপন্যাস এবং চারটি সমালোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। হিন্দি ছাড়া তিনি ইংরেজিতেও
প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন। কবিতা রচনায় সম্মান স্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন ভারতভূষণ
অ্যাওয়ার্ড। বর্তমানে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সত্যবতী কলেজে ইংরেজি
বিভাগে রিডার পদে কর্মরতা। শিক্ষাজীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছিলেন
ডক্টর অফ ফিলোজফি এবং ডক্টর অফ লেটার্স। তাঁর বাবার নাম শ্যামনন্দন কিশোর।
আস্তাবল
আমি শ্বাসের পুরনো রুগি
ঘুমে ছটফট করি
কখনো পুরনো দিল্লির রেলওয়ে
স্টেশনে
আবার কখনো পাশের কোনো আস্তাবলে
ঘোড়া গাড়ি তে বাঁধা ঘোড়ার মত
দাঁড়ানো অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ি!
মুখে আধ চিবানো ঘাসের এক-আধটি পাতা
এমনি পড়ে থাকে মুখে
আর চিবুতে পারি না!
আমার জানা নেই,
কেমন দেখতে
সেই ঘোড়া বিক্রি করা ঘুমন্ত মানুষের
চেহারা
ঘোড়াও কিন্তু জানে না।
জানিনা কেমন-কেমন যুদ্ধ থেকে
ফায়ার এসেছে
এই পরিশ্রান্ত ক্লান্ত প্রাচীন
ঘোড়া!
ঘোড়াওয়ালা মোর গেছে
অচল হয়ে পড়ে আছে চাবুক
কাঁধে বেশ ব্যথা,
অসহ্য পিঠ
জুড়ে,
নিজের আত্মীয়ের মত করে
আজ কাউকে যে দেখি না
কি জানি কেমন আছে আমার ঘুড়ি (ঘোড়ার
স্ত্রী)
হয়তো ওর গায়েও পাথর ছোঁড়ে সবাই!
কী বলে ওরা - ললিত ললাম -
বুড়ো
ঘুড়ি লাল লগাম!
বলো ওকে আমার লাল সেলাম,
বলো আমি এখন ভালোই আছি
আর বাবা ভারতীও ভালোই আছেন।
ডাকু খড়্গ সিংহও আছে ভালোই!
সময় কিন্তু বদল হয়ে গেছে
একটি ঝুপড়িতে থাকে দুজনেই
মিলে-মিশে
সেখানেও পাতা হয় মহাভোজের পাত!
খায়-দায় আর মন ভরে খায়
পান ঘরের জলও,
আর লুটিয়ে গড়িয়ে থাকে এপাশ ওপাশ।
ইচ্ছা
পুরাতন গন্ধে ভরা ইমারত
পুরাতন ইচ্ছেয় ভরে ওঠে
যার ভেতর আমরা বাস করি
অনেক বছর দম বন্ধ করে
সেই ভাড়াটের মতই
যার কাছে না তো দেওয়ার মত
ভাড়া ছিল আর না তো কোন সৎ ঠাঁই
দম বন্ধ করে থাকতে থাকতে
আমরা এক দিন
আমরা হয়ে যাবো পায়রা
আর পুরনো অট্টালিকা
আমাদের পাখায় চড়ে
ঘুরে বেরিয়ে আসবে
দূর... সুদূর!
তৈয়ারি
দুর্দিনের জন্য জমিয়ে রাখা
আপোসে বলা কওয়া
অর্থহীন কথার কিছু বীজ।
আশা বিশ্বাস
মানিব্যাগে রাখা সযত্নে।
কিবদন্তীগুলি রাখলাম
তথ্যদের মহাপ্রলয়ে
মনুর সেই নৌকার মত নড়ে উঠল
যখন আমাদের মন
আমরা এই প্রার্থনা করলাম
স্মৃতিতে স্মরণে
আজ না হয়
তোমরা তো টিকে থাকো
অক্ষয় বটের পাতারা।
মশারী
ছোট্ট একটি শহর
আছে বেশ মশা মাছি,
চোরকাঁটাও!
রক্তাক্ত হয়েছে গরমে মানুষ
লাইট গেছে পাঞ্জাবে
দিন মজুরি খাটতে
এদিকে ছাদের পাখায়
পাখিরা বাসা বাঁধছে
একটি উৎসবের মত ওরা অন্ধকার
বারান্দায়
নিজেদের বিছানা পাতে
চৌকিতে টাঙানো হয় মশারী
ঠিক একটি সমারোহের মত!
একটা দিক বাঁধা হত প্যারা গাছের
ডালে
একটি দিক ছিটকিনির নাকে
একটি দিক বাঁধা হত পেরেকে
আর একটা যেত অনন্তে!
চাঁদ
এই দিকটায় বড় মনোযোগ দিয়ে
বেঁধেছিল একটি ঝলমলে গিঁট
সুন্দর মুক্তোর গিঁট
এক দিন রাতে এলো একটি নেকড়ে বাঘ
লোকেরা ঘুম থেকে উঠে দিলো ছূট।
কিন্ত সটান টাঙানো ছিল মশারীগুলি
খালি বিছানার উপর!
অনেক বছর গড়িয়ে গেলো
আজও টাঙানো রয়েছে মশারী ঠিক সেই
ভাবেই,
কেউ আর মশারীগুলি গোটায় না
এখন ঝনঝন শব্দ করে না মশারী গোটাবার সময়
হাতের চুড়ি দুটি দুই আনার!
যখন তুফান ওঠে
কেঁপে উঠে মশারীর কাপড়
কিন্ত ভাঙতে দেয় না বাঁধন
কাপড় দিয়ে চারিদিক বাঁধা
হাওয়ায় উড়তে থাকে মশারী
ঠিক মনে হয় যেন একটা উজ্জ্বল
ঘুড়ি;
দূরে কোথাও যেন ফুটপাথে শোওয়া
অজানা পথিক
পাশ ফিরে ঘুম ঘরে ছটফট করছে
কফে ভরা বুকে ও নিঃশ্বাসের
উত্থান পতন নিয়ে
এই লয় নিয়ে বুকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে .... ঘুমেই!
সারাটি রাত শব্দ করে কফে ভরা
বুক
ঘড়...ঘড়...ঘড়...ঘড়...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন