কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

জাঁ ফেরি’র গল্প




প্রতিবেশী সাহিত্য

জাঁ ফেরি’র গল্প

(অনুবাদ: অদ্বয় চৌধুরী)



লেখক পরিচিতি

জাঁ ফেরি মূলত একজন ফরাসি স্ক্রিনপ্লে রাইটার। লুই বুনুয়েল এবং লুই ম্যাল-এর সহকর্মী, আন্দ্রে বেতঁ-র বন্ধু জাঁ ফেরি ফরাসি ‘পেটাফিজিক্যাল’ সাহিত্যধারার অন্যতম বাহক। ‘কাঠের অ্যাক্যোয়ারিয়াম’ গল্পটি এডওয়ার্ড গভিন অনূদিত ‘দ্য কন্ডাক্টর অ্যান্ড আদার টেলস’ গ্রন্থে ‘মাই অ্যাকোয়িরিয়াম’ শিরোনামে গ্রন্থিত রয়েছে।


কাঠের অ্যাক্যোয়ারিয়াম

বেশ কিছুদিন হল আত্মহত্যার ভাবনাগুলোকে জমিয়ে রাখছি, সযত্নে লালন করছি আমি। ওদেরকে আদর দিয়ে বড় করে তুলছি। এবং ওদের সঙ্গে আমার এই দিনযাপন বেশ সহজ হয়ে উঠেছে ক্রমে। কোনো সমস্যা হয় না আর

দিনের বেলা ওরা চুপ করে থাকে, কিছুই বলে না। তখন আবলুস কাঠের ছোট্ট অ্যাক্যোয়ারিয়ামটায় ওরা ঘুমিয়ে থাকে। রাত হলে অ্যাক্যোয়ারিয়ামের ঢাকনাটা খুলে দিই আমি। তখন ওরা খিলখিল করে হেসে ওঠে, আনন্দে কিলবিল করে ওঠে; ওরা চারিদিকে ভেসে ভেসে বেড়াতে থাকে, এদিক-ওদিক গোঁত্তা মেরে সাঁতার কাটতে থাকে

ওদের ছোট্ট একটুখানি চ্যাপ্টা মাথা, ত্রিভুজাকার। মাথার রংটা সাদাটে। দেখতে লাগে অনেকটা কলের গানের পিনের মতো। যাদেরকে ফোনোগ্রাফনিডল বলা হত। অবশ্য এখন আর কলের গানের পিন বা ফোনোগ্রাফনিডল কিরকম দেখতে ছিল তা মানুষের মনে নেই। ওই ছোট্ট প্রাণীগুলো যখন বেরিয়ে আসে তখন খুব ভালো লাগে। ওদের খুব সহজে খাওয়ানোও যায়। আমি ওদের যা দিই তাই ওরা খায়, কোনো ঝামেলা করে না। সে আমি খাবার হিসেবে দুঃখ দিই, বা উৎপাটিত দাঁত, আত্মাভিমানে আঘাত, বা অন্যান্য আঘাত, দুশ্চিন্তা, যৌন অক্ষমতা, মর্মবেদনা, অনুশোচনা, অন্তরযাতনা, অনিদ্রা যাই দিই না কেন, ওরা তাই এক ঢোকে খেয়ে নেয় এবং আরও আরও চাইতে থাকে। তবে ওদের সবথেকে বেশি প্রিয় খাদ্য হচ্ছে অবসাদ। অবসাদই ওরা সবথেকে বেশি খায়, কারণ এই খাবারের অভাব হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমি ওদের অবসাদ খাওয়াই গোগ্রাসে, তবুও ওরা শেষ করতে পারে না, এবং সব সময়েই কিছুটা অন্তত খাবার অবশিষ্ট থেকে যায়। অবসাদ আর ফুরায় না, আমি কিছুতেই অবসাদের থেকে মুক্তি পাই না

আমাকে বলা হয় ওদের এত বেশি পরিমাণে খাওয়ানো ঠিক নয়। এর ফল ভালো হবে না। একদিন ওরা অত্যধিক মোটা হয়ে যাবে আর অ্যাক্যোয়ারিয়াম ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু আমি সব সময় একটা বিরাট দেরাজে অ্যাক্যোয়ারিয়ামটাকে তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখি। ওই দেরাজটার সামনে আবার খুব ভারী একটা মারবেল পাথর চাপা দেওয়া আছে, যে মারবেলটার উপরে অনেক দিন আগে এক সময় বুড়ি মেরী তার মিছরির দানা পাকাতো

যদি ওরা অ্যাক্যোয়ারিয়াম থেকে বেরিয়েও আসে দেরাজে,ওই ভারী মারবেলটা দেরাজের সামনে থেকে ওরা সরাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। অবশ্য, নিশ্চিত করে তো কিছুই বলা যায় না, কেউ বলতে পারে না কখন এবং কীভাবে কি ঘটে যাবে। কিন্তু সবথেকে বড় প্রশ্ন হল ওই সমস্ত অবসাদ নিয়ে আমার আর কিই বা করার আছে?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন