কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯

অশোক তাঁতী




কাকতাড়ুয়া ও বসন্ত বৌরি  


লোকটা অপেক্ষা করতে থাকে। যেমন করে মানুষ অপেক্ষা করে। সূর্যের উদয় হয়, রোদ মাথার ওপর ওঠে, পশ্চিম আকাশ গোলাপি আভাতে ছেয়ে যায়।

সে এল না। মেঘের রঙ বদলায়,বাতাস নিথর হয়,আকাশ ঘন নীল।
বৃষ্টি এল। চোখ উপচে যেমন বাদল নামে। এগোয় পৃথিবীর বুকের দিকে।

তবে বৃষ্টিরও শেষ আছে। যেমন সব কিছুরই থাকে। বৃষ্টি থামার পর কিছু দাগ থেকে যায়। জলের স্রোত যেখান দিয়ে যায় সেই দাগ। মাটির ওপর কিছু আঁকাবাঁকা রেখা। কিছু ঠাণ্ডা বাতাস। মনে হয় হয়ত শরীর মন শীতল হল। তা কি কখনো হয়?

বৃষ্টি থামতে খটখটে রোদ ওঠে। লোকটার বুকের ভেতর বাতাস শুকিয়ে যায়। শুকনো বাতাসে মাটিতে ফাটল নামে। মাটি একা একা উদাস তাকিয়ে থাকে। লোকটার শরীর থেকে কিছু শুকনো মাটি খসে পড়ে। এমনি অবহেলায় থাকতে থাকতে লোকটার পোষাকের রঙ চটে যায়। পায়ে খড়ি ফোটে। লোকটার হাত হাওয়াতে পতপত ওড়ে। পোশাকের বোতাম খুলে যায়। পোশাকটা কখনো গায়ে লেগে থাকে কখনো নিজের খেয়ালে ওড়ে। লোকটাকে কাকতাড়ুয়ার মতো মনে হয়। যদিও কাক তাকে ভয় পায় কিনা জানা যায় না।

একটা বসন্ত বৌরি এসে রোজ দেখে যেত তাকে। একদিন সাহস করে পাখিটা কাকতাড়ুয়ার মাথার ওপর একটু বসেই ওড়ে যায়। বেশ মজা লাগে পাখিটার। প্রথম প্রথম সে ভাবতো তার বসার জন্য বুঝি কাকতাড়ুয়ার হাতটা ওমনি উড়ল। একটু একটু করে সে বুঝতে পারল,হাত আপন খেয়ালেই উড়ছে। দেখে সে সাহস করে বসে রইল মাথার ওপর। বুঝল একাকী মানুষটা তাকে অপছন্দ করছে না। পাখিদের এমন অনেক বোধবুদ্ধি থাকে যা আমরা মানুষে বুঝতে পারি না। পাখিদের গল্প এজন্যে সবসময় রূপকথা হয় না। হয় সংবেদনশীল মানুষের গল্প। বসন্ত বৌরি সে কথা জানে।

জানে বলেই একদিন সে মানুষটার মাথায় বসে গান গাইতে শুরু করল। গ্রীষ্মের দুপুরে এমন একটানা গান মানুষটাকে উদাস করে দিত। মনে হত পৃথিবীটা সত্যিই সুন্দর। শুধু পাখি,কিছু বেগুনী রঙের ফুল। একদিন একটা বেগুনী ফুল কাকতাড়ুয়ার আঙুলে আটকে থাকতে দেখেছে পাখিটা। অবাক হয়েছে। পরদিন ফুলটা শুকিয়ে যেতে বসন্ত বৌরির খুব কষ্ট হয়েছে। যদিও সে জানে না কার জন্য ফুল হাতে এই অপেক্ষা।

গ্রীষ্মকালে শুধু রোদ থাকবে না। এক বিকেলে সামান্য কিছু ঝড় হল। পাখিটা সন্ধ্যে নামার আগে খুঁজে পেল একটা গাছের ডাল। কাকতাড়ুয়া হেলে পড়ল মাঠের ওপর। রাত শেষ হতে মাঠময় জল। থইথই জলে কাকতাড়ুয়া অনেক ভাসল। ভাসল তার খড়,কাঠ,ছেঁড়া জামা। ভাসল ভুসোকালি মুখ।

রোদ যখন উঠল, বসন্ত বৌরি উড়ে এল সেই মাঠে।
মাঠ তখন খাঁ খাঁ।



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন