![]() |
| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২ |
সোনু
টিফিনের পরের ক্লাসটা আমার ছিলো না। পারমিতা আসেনি আজ, সেখানে বড়দি পাঠালেন। সাধারণত এত ছোটো ক্লাসে কখনও আসা হয় না। কুচি কুচি ঘাসফুলে ভরা একখণ্ড জমি। ক্লাস থ্রী। বড়ো বড়ো গোল গোল চোখ করে সবাই দেখে নিচ্ছে আমাকে। বসতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে দুটি কচি ঘাস দাঁড়িয়ে পড়ল। ওয়াশরুম। পরক্ষণেই দুজনের জলতেষ্টা। একজন গম্ভীর মোটা চড়ুই পাখি কম্প্লেন জানালো, রং পেন্সিলের বাক্স নিয়ে নিয়েছে তার পাশের কচি খুকিটি। এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরে নিজের খাতা খুলে একটু নোট লেখার তোড়জোড় করছি, এমন সময় ফর্সা দুদিকে আলুথালু বিনুনী করা হাঁটু ছাড়ানো ফ্রকে সে চলে এলো একেবারে পাশে। চোখ দুটো নদীর জলে সূর্য।
"তোমার হাত ঠিক হয়ে গেছে?"
গতমাসে হাতে ফ্রাক্চার হয়েছিল আমার।
হাত ঝুলিয়ে ব্যাণ্ডেজে আসছিলাম।
অবাক হই।
"তুমি দেখেছ?"
যতটা হেলানো যায় ঘাড় হেলিয়ে
বলল, “হ্যাঁ তো!”
“তখন তোমার খুব ব্যথা করেছে?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। কিন্তু তুমি
কী করে জানলে?”
সে বললে, “হ্যাঁ জানি। খুব যন্তন্না
করেছে। আর তুমি কান্না চেপেছিলে ব্যথায়”।
বিস্ময় মুগ্ধতায় পরিবর্তিত হয়।
“কী করে জানলে?”
সে একটু থেমে বললে, “আমার মারও
হাত ভেঙে গেছিল। খুব যন্তন্না হতো”।
"কবে?”
“সে অনেকদিন আগের কথা”
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সরাসরি
সে। পলকহীন পাকা গিন্নির মতো বলল, "আমার জন্মের অনেক আগে"।
“তুমি তবে জানলে কী করে?”
“আমার দিদা বলেছে”।
আমি কী বলব ভেবে থৈ পাই না। মেয়েটা
পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গাল টিপে হালকা আদর করি।
“এখন ভালো আছেন মা?”
"মা তো নেই! মরে গেছে। আমার
ভাইকে হতে গিয়ে খুব যন্তন্না হয়েছিলো তো!”
বেল বাজছে। যন্ত্রের মতো বেরিয়ে
আসছি ক্লাস থ্রী থেকে।

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন