![]() |
| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২ |
চোখের কোণে
অমলীর হাতটা ছিল অচেনা শীতের মতো ঠাণ্ডা। সে জানত না কেন, তার নিজের হাতের উষ্ণতা আজ তাকে ভরসা দিতে পারছে না। শহরের অচেনা ভিড়ে হেঁটে চলার সময় তার চোখ আটকে গেল এক অচেনা ছেলের দিকে। ছেলেটি বইয়ের দোকানের জানালার পাশে বসে কিছু পড়ছে। পাতার শব্দ, পেন্সিলের হালকা স্ক্রেচ—সবকিছু যেন তাকে ডাকছিল।
অমলীর মনে হল, এই অচেনা শহরেও কোনো
এক কোণে যেন তার নিজের গল্প লুকিয়ে আছে। ছেলেটির চোখে অদ্ভুত এক শূন্যতা, আর সেই শূন্যতাকে
সে চেনত, মনে রাখত। হয়তো সেই শূন্যতাই মানুষকে মানুষ করে।
ছেলেটি হঠাৎ তাকালো অমলীর দিকে,
এবং অমলীর মনে হল, তিনি তাকাচ্ছেন না, বরং অদৃশ্য কোনো কথোপকথন শোনার চেষ্টা করছেন।
অমলী একটু পিছিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতটা নিজের বুকের কাছে ধরে রাখল। মনে হচ্ছিল, আজকের এই
অচেনা চোখের কোণেই তাকে সবকিছু বোঝানো হলো—একটি নিঃশব্দ বোঝাপড়া, যা ভাষার চেয়ে গভীর।
সে গেল না, ছেলেটির দিকে না তাকিয়ে।
কিন্তু সেই ছোট্ট মুহূর্তটা, যা শহরের হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, অমলীর মনে থেকে যাবে—যেমন
রেখে যায় একটি বুকে লুকোনো নামমাত্র আলো, যা রাতে পথ দেখায়।

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন