| কবিতার কালিমাটি ১৫২ |
লুকোনো আলিঙ্গন
অতটা হেঁটে এলেও
পায়ে ব্যথা হয়নি;
ঘরে ফেরার এমনই আনন্দ।
দু'হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছে একঘরে সেই নদী;
আমাদের অতৃপ্তি ভাসিয়ে
দিক বদলানোর প্রথম পাঠ তো ওখান থেকেই।
চোখে বাষ্প জমছে
দিনশেষের কালো ছায়া দেখে কড়ি গোনা দ্রুত
করে ফেলছি অজান্তেই।
সেই লুকোনো আলিঙ্গনগুলো বের করে
মুছে রাখা দরকার;
আমার একটু নির্জনতা চাই; নীরবতাও।
আকাশ থেকে নেমে এসে
পারিজাতে সেজে উঠছে ড্রইংঘর;
আমাকে বাঁচানোর কথা বলব না
আমাকে ধরে রাখার জন্যই আমার শর্তহীন আবেদন।
প্রবাহের স্বাদ
হিরণ্ময় ঘুমের কাছে ঋণশোধ হলে
একটি প্রণাম রাখি ফুলের চতুষ্কোণ ছুঁয়ে।
জীবনের শেষে থাকে বাতাসের ক্লান্ত শ্রমদান;
তবুও কী কিছু আলো কিছু রঙ
পৃথিবীতে ফিরে ফিরে বকেয়া হিসেব নিতে আসে!
এ-জীবনে খেলা থাকে, হয়তো বা সকলেই খেলে,
প্রবাহের স্বাদ নিতে রোদ মেখে হাঁটা
জন্মদিনে চড়া রঙ -- বিবাহের প্রজাপতি আঁকা।
অতিজীবনের হাতছানি ঘিরে বয়স দীর্ঘ হয়,
সন্দিহান প্রেতাত্মায় ঝুঁকে যায় বৃক্ষের ডাল।
আমাদের প্রিয়জন যারা ছিল কুয়াশায় দূরে -- কিছুটা
গহিনে
তাদেরকেও কাছে ডাকি,
কিছু কিছু প্রিয় গল্প বলাবলি করি।
সেই চোখ কোথায় তোমার
সেই চোখ কোথায় তোমার
যে চোখে আমার শব চিতা পেয়েছিল?
সেই চোখ আজ কেন ক্লান্ত ডানা হয়ে
বন্ধ করে পুরনো ঝরোখা।
নিঃশ্বাসের শব্দ আজ মাপা যাচ্ছে অনায়াসে,
কেন আজ দরজা ঠেলে ঢুকবে না সেদিনের নারী?
আমার জলের কাছে ঘনিষ্ঠ স্পর্শে এসে বসেন ঈশ্বর।
দ্রুতগামী যানের ভিতর দিয়ে দেখা যায়
প্রসাধনহীন অযত্নসম্ভব এক মুখ
আর সেই চোখ
যে চোখের অশ্রুস্রোত বর্তমানহীন।
রাক্ষসের স্বাক্ষর
রাক্ষসের স্বাক্ষর নিতে গিয়ে
পৌছে গেছি পূতিবন্দরে;
নদী তরঙ্গের আয়না ভেঙ্গে ভেঙ্গে
পুলটিস বানাচ্ছে।
নদী কারোর কথা শোনে না--
পাথর বা পাষন্ড
কেউই মুখ তুলে কথা বলতে পারে না।
রাক্ষস একমাত্র সেখানেই সভা ডাকে।
দুর্বত্ত কুঠার দেগে দেবার আগেই
পাখিরা ভেসে যায়।
গামছাবোনা রং নিয়ে বিকেল আসে।
মানুষজনের
চিৎকারে
এদিকের ঘরবাড়ি বন্দরের ওপারে চলে যায়।
স্পর্শবিদ্যুৎহীন একা নারী
কষ্টে থাকে খুব স্পর্শবিদ্যুৎহীন একা নারী,
সীমান্তস্পৃষ্ট বৃদ্ধ ঝরাপাতা জড় করে আগুন জ্বালায়।
এ সব দেখতে থাকি
দেয়ালে প্লাস্টার খসে টুপটাপ।
নিজের আশ্রয় কত অর্থহীন মনে হয়;
নিরাপত্তার গভীর অভাবে কাঁদে
বিশ্বস্ত ডাইরির বিছেহার –
শকুন্ত পাখির খোঁজে বিজ্ঞাপন দিই।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন