কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

রীনা ভৌমিক

 

কবিতার কালিমাটি ১৫২


মুক্তগদ্য

তিন টুকরোয় আমি

চড়ুইপাখির মুখঝামটায় আলমোড়া ভাঙছে নিমফুলি সকাল। নিম নিম গন্ধবলয়ে ভাত কুড়ানো খেলা জমে উঠেছে। তিন টুকরো গড়াগড়ি যাপনে নদীর ছিটেফোঁটাও নেই। তিন তিন তিন টুকরোকে এক দেখছি।

 

‌এক টুকরো

যে টুকরোয় "জঙ্গল জঙ্গল পাতা চলা হ্যায়"। মুগলি ঝাঁপান। জীবনের জড়ো করা অজস্র স্বপ্ন বিক্রির যাবতীয়, মধুভান্ডে পরিচর্যা রেখেছি। সহজিয়া ঝাড়ুপোছা লাগছে। আদিবাসী গ্রাম হেঁটে যাচ্ছে একঝাঁক শৈশব নিয়ে। বালখিল্য খিলখিলিয়ে রোদ্দুর মাখছে। রোদ্দুর গড়িয়ে গড়িয়ে জীবন জাগাচ্ছে। ঝোপজঙ্গলের আড়াল পাল্লায় যে স্বচ্ছতোয়া ক্ষীণ, গান গাইছে। শিশুর চোখ বিস্ময় খুলছে মাছ...সাপের জলজ স্বতঃস্ফূর্তে...

আমার রুক্ষ বুক তৃষ্ণা খুঁড়ছে...

 

দুই টুকরো

এইখানে এক গুমসুম নিজস্বী। সকাল ভেঙে ভেঙে যখন সূর্য মাথায়, শরীরটাকে টেনে তুলি বিছানায়। জন্মাবধি দলদলে এমন পা আটকে যে দিনগত পাপক্ষয়ে পাপ আর ক্ষয় আলাদা চেনাই যায় না। মধ্যগগনকে ডেকে একথা বলতেই সে গম্ভীর মুখে বিড়বিড়ায়, "দিলে তো একটা সুন্দর জীবন ভাগাড়ের লাশে মিশিয়ে।" ধন্দে পড়ি, আমি আবার জীবন নিয়ে কী করলাম! সে কোন পুতুল নাচিয়ে আমার জীবন নিয়ে যথেচ্ছ গল্প জুড়লো। একটা অনাথ যাপন ঘুণ হয়ে আসর দাপালো। যার বহিঃপ্রকাশ নেই, আছে গুপ্তঘাতক। আমি নিরন্তর নৈঃশব্দে নালিশ রাখছি... বড্ডো কষ্ট...উফ্...

 

তিন টুকরো

একটা অনিবার্য বাপসির (ফেরার) গুম গুম শব্দ শুনি। রেল পটরির ভাইব্রেশানে। তল্পিতল্পা গুটাচ্ছি। নিয়ে যাবার তো কোনো হ্যাপা নেই, যদি অর্জিত কিছু থাকে, দিয়ে যাবো ফুল পাখিকে। পড়ে থাকবে ঘরবাড়ি। আমারি কিছু দীর্ঘশ্বাস। অজস্র ব্যর্থ স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার ফিসফাস দ্যাখনহাসির পেছনে যেটুকু স্যাঁতস্যাঁতে বাষ্প মেঘ হতে চেয়ে মাথা কুটেছিল একদি। রয়ে যাবে একটা ভারবাহী জীবনের বিস্মৃত গজল হয়েণ। আমি  নকল হাসির প্লাস্টিক সার্জারির ইউনিক স্বচ্ছলতা খুঁজছি। বিদায় মুহূর্তে খুব সাজবো। সেই হাসি ঝুলিয়ে দেবো আমার পুরনো ঠোঁটে। চিরদিন, মায়া আয়নায় যেভাবে নিজেকে দেখতে চেয়েছি অনন্ত আকাশ জুড়ে!

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন