কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২


কালো ম্যাজিক

হাতে লাঠিসোটা-চাকুছুরি। দুপুর ফুঁড়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো পাঁচজনের দলটা - ‘টোনহি লোগ! অন্দর মে  কোন্ কোন্ হ্যায়, ডাইনির দল! বাহার আ যাও!’

ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল। জঙ্গলঘেরা গ্রাম। দুঃস্থ অসহায় নিরন্ন মানুষজন! সেখানকারই ভাঙ্গা চালা-মাটির বাড়ি। আগন্তুকদের চিল্লানি শুনে ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো পরিবারের ছ'জনই।

মৌত, মানে মৃত্যুদণ্ড! সশস্ত্র আগন্তুকেরা পরিবারের ছ'জনের উপর হঠাৎই প্রাণঘাতী আক্রমণ চালালো। মুহূর্তেই সব কিছু তছনছ করে দিয়ে লোকগুলো নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো। বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকলো ছ'ছটা রক্তাক্ত-শরীর – দো-আওরত, চার-আদমী!

খবর পেয়ে তিনদিন পরে পুলিশ এলো। কিন্ত কাউকেই বাঁচানো গেলো না। কেউ ধরা পড়লো না! পুলিশের খাতায় লেখা হলো রিপোর্ট - এটা সন্ত্রাসবাদী রাজনৈতিক দলের কাজ!

ঘটনার পরের দিন পাঁচজন হামলাকারী থানায় আত্মসমর্পণ করলো। পুলিশ অফিসারের তীক্ষ্ণস্বর - ‘শুয়োর  কা আওলাদ! তোদেরকেই তো আমরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি। বল, কে তোদের নেতা? দেখ, এবার তোদের কী শাস্তি হয়!'

থানার একটা লকআপে পাঁচজন খুনীকে বন্ধ করা হলো। পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলো, ‘স্কাউন্ড্রেল! তোরা ওই ফ্যামিলির ছয়জনকে কেন খুন করলি? কে তোদের নেতা? সন্ত্রাসবাদী পার্টির কোন গ্রুপের সাথে তোরা আছিস?'

আত্মসমর্পণকারীদের একজন মুখ খুললো। জানালো, তারা সন্ত্রাসবাদী দলের লোক নয়। তবে এটা ঠিক, গতকাল ডাইনি পরিবারের ওই ছজনকে তারাই খতম করেছে। তাই আজ নিজেরাই আত্মসমর্পণ করতে এসেছে।

'ঝুট বাত! তোরা পার্টির লোক। এবার সত্যি সত্যি বল, কেন ঐ পরিবারটাকে শেষ করে দিলি?'

পুলিশের প্রশ্নের জবাবে খুনিদের আর একজন মুখ খুললো - 'ও লোগ বহুত খারাব আদমি হ্যায়! ও লোগ যাদুটোনা করতে রহতে হ্যায়! ওদের যাদুটোনার জন্যেই আমাদের অসুখবিসুখ সারে না। এই ডাইনি পরিবারটার জন্যেই কয়েকমাস আগে গাঁয়ের সাত-আটটা বাচ্চা জ্বরে ভুগে, বমি-দাস্ত হয়ে মরে গেছে। ঘরে বসে ওরা মন্ত্র পড়ে, ঝাড়ফুক তুকতাক করে! এদের ম্যাজিকের জন্যেই মাঠে খেতের ফসল শুকিয়ে যায়।  আমরা দিনের পর দিন না খেয়ে বেঁচেবর্তে থাকি!’

খুনিদের মধ্য থেকে এবার অন্য একজন মুখ খুললো - ‘ওই পরিবারের সবাই টোনহী! ওরা লুকিয়ে লুকিয়ে বাণ ছোড়ে। ডাইনি হয়ে যাদুটোনা করে। এইসব যাদুটোনার জন্যে আমাদের এই খারাপ অবস্থা! তাই গতকাল এদেরকে আমরাই খুন করেছি।

পুলিশ অফিসার জানালো, ‘জানিস এই অপকর্মের জন্য তোদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?’

অপরাধীরা বললো, 'জানি। তবুও গ্রামের থেকে এই সব যাদুটোনা, এইসব কালো ম্যাজিক বন্ধ হোক!  আমরা ভালো নেই, আমরা খুব কষ্টে আছি।'

লকআপের জানালা থেকে দেখা যাচ্ছে গাছগাছড়া। তার মাথার উপরে অপরাহ্নের সূর্য। সূর্য বুঝি নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে – সত্যিই কি কালো ম্যাজিক? সেটা কেমন ম্যাজিক!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন