কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

আমিনুল ইসলাম

 

কবিতার কালিমাটি ১৫২


কালিও মাটি, মাটিও কালি

(১)

গাঢ় ছাপ রাখছে নৌকা। চোখও হয়তো জানে প্রাণই সেই ট্রিগার। কোলাজ জন্মানো মনোরম কিছু দৃশ্য লাটাই খুলে সাজবে। অথৈ বুকে শুধুই রাফটিং। বাতাসকে ছন্দে সেঁকবে। বাতাবিলেবুর মনেও লেগে থাকবে বাতাসের সেই আঘ্রাণ

 

(২)

টিপ-পরানো সুরভিত কিছু অবহেলা। নাসপাতির স্লাইসগুলোয় সংক্ষেপে মনযোগ বুনছে। পাশেই একদলা হাড়কনকনে শীত। ছাপছে। ক্যানভাস। ভোটমঞ্চ। অনেকগুলো বসন্তদিন। ফসকে মাছ হল। টোপ হল। বঁড়শি হল। সুরভিত স্তন ছুঁলো। রসের নাসপাতি থেকে ভিজে সপসপে সাপও হল সেই সময়

 

(৩)

মেঘে দাগ লেগে আছে। ঝরেপড়া কাচের ডানায় পুরনো শব্দরাই আসলে হিসেব কষছে। ঢেউয়ের ঘাড়ে হাত রেখেই হয়তো হাঁটবে দুপুর। গন্ধে অতল আলোলাগা নোনা-নেমেপড়ায় গুটিয়ে নিচ্ছে চামড়া। কাঠের অজানা নরমতা ডুবজলে ফেলবে ক্ষণকাল। চিহ্ন ছুঁয়ে স্মৃতিরাও আজ হরিণ

 

(৪)

চোখের নৌকোয় জন্মাচ্ছে আলোর অর্ধেক। তার অস্পষ্ট নীচেই আত্মসমর্পণ। ভেজাকাঠের ঘোমটা তুলছে একঝাঁক স্মৃতির গন্ধ। টেবিলের ধারে পড়ে থাকা ছুরি আজও শুনবে সেই রিবন-ছেঁড়া হাওয়ার জানলা। একটু ঠাণ্ডা হলে হয়তো কাচ বরাবর গড়াবে অসমাপ্ত আকুলতা। ম্লান হলেও থকথকে সত্য আরও অবিকল

 

(৫)

যত অঙ্গীকার সব গড়িয়ে পড়বে। দীর্ঘশ্বাস ছায়ার মতো ছুঁয়ে দেবে কাদামাটির সেই চিহ্ন। মানুষের মতোই কোনওকিছুর রং পাল্টাতেও সময় মানে না। ঘরের ভেতর থকথকে রোদ লাগবে। বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ বুঝতেও পারবে না মানুষের ভিতর

 

(৬)

ভেজা লাল-তুলি অজান্তেই ডুবছে সন্ধ্যার গুঢ়তায়। ল্যান্ডস্কেপে চিড় ধরাচ্ছে পেনসিল। নামহীন পাখিরা ডাকে না আজ। ডানা ভিজছে। অদৃশ্য বৃষ্টি জমছে বারান্দায়। আঙুলের ছাপের প্রতিফলন। ধরতে না পারা মুহূর্ত। এমনই দাগ। সাবান মাখলেও জ্বলে ওঠে। নেবে না

 

(৭)

দুলে ওঠা নরম ঝড় খিল খুলবে। বাতাসে গোপন ব্যবধানের গন্ধ। ফেলে রাখা চাদরে উষ্ণতার নীরব কল্‌মা। ধুলোজমা চায়ের কাপ বুঝবে সন্ধ্যার খিদে। সবকিছুই গিলে নিতে চায়। শুধু সেঁটে রাখে মলিন তন্দুর। অসমাপ্ত ছোঁয়ার না-দেখা সীমারেখা

 

(৮)

শিশিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে একটুকরো আগুন। তুচ্ছ কাগজে গাঢ় রেখাগুলোর আজ রবিবার। গভীরভাবে পান করবে কালো নির্যাস। টেবিলে রাখা ফলের ঝুড়ি। অস্বস্তি ঘনীভূত হচ্ছে। দূরে খালি-বোতলের গায়ে ঠাণ্ডা শূন্যতা। স্পর্শ ভেঙে অবশ। ভাঙনেরও সময় হলে আর আটকে রাখা যায় না

 

(৯)

মোমবাতির কানে নিমজ্জিত নিশ্বাস। পাথরে দাগ কাটে। বসে থাকে শুকনো পাতায়। কেউ যেন অসমাপ্ত রেখে গেল সবকিছু। ঘরের কোণে একরাশ ক্ষমা জমে থাকা অন্ধকারের গায়ে আঁচড় কেটে দেয়। তীব্র বয়ামের ভেতর আটকে আছে গন্ধরা। এমন অনেক অনুভূতিই রব হয়ে উঠতেও পারে

 

(১০)

রোদের আঁশ লেগেছে কাচে। হঠাৎ উড়ে যাওয়া টুকরো গন্ধ। বাতাস নয়। অদৃশ্য নথি। আজ একটু বেশিই উষ্ণ রেখাটি। স্থগিত কোনও সিদ্ধান্তে দেশলাই ঘষবে বলছে। আলোদের উতলা শ্বাসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সময়। কাঁচের ওপারে ধরা যায় না তার প্রবল

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন