কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১৩৭

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

শ্রেষ্ঠা সিনহা

 

আশ্বিনে যাব আমি যুদ্ধযাত্রায় : কবিতার অনন্য স্বরান্তর




কবিতা সাহিত্য সৃষ্টির অন্যতম প্রধান সংরূপ। যার ধারায় বহমান পৌরাণিক কথা কাহিনি থেকে সমকালীন সমাজ সংস্কৃতি। সেই সমাজের মানুষের আদব-কায়দা সহ রীতি-নীতি সকল বিষয়ের মেলবন্ধন দেখা যায় কবিতায়। আদি কোভিদ লেখনীতে উদ্বেলিত কৌঞ্চ-মিথুনের আর্তি নান্দনিক আনন্দের প্রতিচ্ছবি হিসাবে প্রতিফলিত হয় কবিতার দর্পণে।

প্রাচীন গ্রিসে মহাকবি হোমারের কাব্য সৃজনের প্রতিসরণ সমগ্র বিশ্বের কাব্য সাহিত্যে প্রতিপাদিত হয়। ছন্দবদ্ধ সংরূপে নিবদ্ধ কবিমনের আনন্দ সত্যের মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় কাব্য কবিতা ধারায়। শব্দের সহায়তায় অর্থ ব্যঞ্জনার ছন্দ সম্মিলিত রূপ অনুভূতির রঞ্জনে রঞ্জিত বাস্তব জীবনের কাহিনিচিত্র; কবিতার উপাদেয় প্রধান বস্তু। যুগের প্রবাহশীলতার গতিরেখা ধরে কাব্য কবিতার কায়া নানা রূপে পরিবর্তিত হয়েছে। যুগগত বিভাজনের সুস্পষ্ট রেখা সাহিত্যের অন্যান্য ধারার মতো সমান্তরালভাবে কবিতার ধারায়ও বহমান। তাই দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে মানবমনের আনন্দের প্রতিস্বর প্রতিবিম্বিত হয়। শব্দ বিন্যাসের অনুরণিত কবিতার ছন্দমালার ঝংকার আধুনিক কালের কবি কাজল সেনের ‘আশ্বিনে যাব আমি যুদ্ধযাত্রায়’ নামক কাব্যগ্রন্থে প্রতিধ্বনিত হয়। ৫০টি গদ্য কবিতার সংকলনে সংকলিত এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা  পাঠকের অনন্য ভ্রমণের সঙ্গী। সমালোচকদের মতানুসারে কবি মনের সংগোপনে থাকা সূক্ষ্ম অনুভূতি কবিতার মূলভাবকে ব্যক্ত করে পাঠকের কাছে। যার ফলে পাঠক সহৃদয়তার মাধ্যমে রসবস্তু গ্রহণ করতে পারে। আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সেই দিকটিও লক্ষ্য করা যায়।

মনের সঙ্গে স্মৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। একে অপরকে জড়িয়ে তাদের তারা জীবনের সাক্ষ্য বহন করে চলে। সময়ভেদে স্মৃতির পথরেখা ধরে আমাদের ভুলোমন ফিরে ফিরে যায় অতীতের দিকে। ঘুরে-ফিরে খুঁজে  চলে ঋতু আবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হওয়া সাদাকালো ছবির চরিত্রদের। ‘স্মৃতি’ এবং ‘ ভুলোমন তুমি’ কবিতাদুটি একে অপরের পরিপূরক তথা বেঁচে থাকা মুহূর্তের কোলাজ হিসাবে আগামীর দিকে অগ্রসর হয়; আর  স্মৃতিকাতর মন যেন কবির কলমে ভাষা পায়-

“তুমি ভুলোমন তবু তুমি কেন ভুলতে পারোনি সেই শীর্ণ জলধার আহ্বান আমন্ত্রণ

তুমি তো জানো নিশীথ শুধুই একটা প্রাপ্তি তারপরেই ফুটে ওঠে ভোরবেলা”

‘আশ্বিনে যাব আমি যুদ্ধযাত্রায়’ নামক নামকরণের মধ্যেই ভাবব্যঞ্জনার গভীরতা লক্ষ্য করা যায়। আশ্বিন মাসের সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির এক উৎসবমুখর সম্পর্ক রয়েছে। সব না মেলে হিসেব থেকে পরাজয়ের গ্লানি সব কিছু পিছনে ফেলে আমরা সামিল হই ভালো থাকার গতিধারায়। অনেক ফেলে আসা স্মৃতি, ফেলে আসা সংসার কিংবা প্রেমের পরিণতি সবই একপ্রকার ‘হারানো পান্ডুলিপি’ খুলে মিলিয়ে নিতে চায় অঙ্কের ধারাপাত। তাই কবি সময়ের সঙ্গে যুদ্ধের মাধ্যমে যেন প্রিয়তমার সঙ্গে যেন আরো একবার সাক্ষাৎ করতে উৎসুক। প্রাচীন সাহিত্যের শকুন্তলাও এখানে তপোবনে অপেক্ষা করে থাকে তার প্রিয়তম দুষ্মন্তের জন্য। রাজসভার  সবার অপমানের সমান্তরাল ঘটনায় নতুন এক উপকথার পরিচয় লক্ষ্য করা যায় এই কবিতায়। সেখানে অপেক্ষা কন্টকিত দিনের ঘূর্ণনের সঙ্গে সম্পর্কিত। অথচ অপরিসীম অপেক্ষা আবার কাল্পনিক বিস্তারের পরিসর অতিক্রম করে আমাদের পৌঁছে দেয় বাস্তবের সরলরেখায়। মিলেও যেন ভাবনার জালে অধরা থেকে যায় বহু সমাধান। বাস্তবিক কাঠিন্যের গাঢ়ত্ব সন্ধের অন্ধকারের সঙ্গে সম্মিলিত হয়-  

“দিন বয়ে যায় কণ্টকিত দিনের চাকার অবিশ্রান্ত ঘূর্ণনে

চড়ুইপাখিরা আর বাসা বাঁধে না খড়কুটো মুখে বয়ে আমার খোলা বারান্দায়

একটা সরলরেখা বারবার হোঁচট খেয়ে হারিয়ে যায় চৌরাস্তার মোড়ে

মনে নেই ভুলে গেছি ঠোঁটের উপরে অন্য ঠোঁটের ঘর্ষণে বিস্ফারিত হয় কিনা প্রেম

সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো অবিরত ছুটির দিন আছড়ে পড়ে আমার জীবন সায়াহ্নে

সারাটা সকাল জুড়েই কেমন একটা গা-ছাড়া গা-ছাড়া ভাব

আলসেমি গভীর হয় দরকারি সব কাজ পড়ে থাকে সন্ধ্যের ঘনত্ব যায় বেড়ে”

সেই ঘনত্বের পরিসর আরো বিস্তৃত হয় স্মৃতি-সরণীর ছায়াপথে। কালিবহুল শব্দের সংসার চিঠির আবেষ্টনীতে ধ্বনিময় হয়ে ওঠে। প্রিয় মানুষের দিনান্তকালীন রুটিন মাফিক জীবনের সাক্ষ্য সংগ্রহ করে সেই চিঠি। যার অভিব্যক্তিতে প্রকাশিত হয় ভালোবাসার কথা। অথচ সেই ভালোবাসারা নিয়মের ঘূর্ণনে পরিণতির পূর্বেই অতলে হারিয়ে যায়। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘চাবি’ কবিতায় প্রিয়তমার উদ্দেশ্যে যে হৃদয়ের মণিকোঠার কথা বলেছিলেন, যার তাদের বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি। আলোচ্য কাব্যের কবির চিঠিতেও যেন সেই কথায় পুনরক্ত হয়েছে আরো একবার। অথচ কাগজ-কলমে সাক্ষী থাকা ফেলে আসা যাপন থেকে যায় কালির দাগ বদলে-  

“চিঠি লেখার জন্য আমার সংগ্রহে ছিল রকমারি কলম

লাল নীল সবুজ সাদা কালো আরও যে কত কত রঙ

আর ছিল কয়েক রঙের কালি নীল লাল সবুজ আর কালো

প্রতিটি রঙ ছিল যেন ভালোবাসার বিভিন্ন অভিব্যক্তির প্রতীক

মনে পড়ে তোমাকে শেষ চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলাম নীল খামে

নীল কালিতে লেখা সেই চিঠি তুমি পেয়েছিলে বহু দূরের শহরে এসে

মাসখানেক আগে স্বামীর হাত ধরে তুমি পৌঁছেছিলে সেই নতুন সংসারে”

লৌকিক প্রবাদ প্রবচন অনুযায়ী মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু কালের এক অমোঘ সরলরেখার রৈখিক আবর্তনে নিবদ্ধ। ফলত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মানুষ ইহলোকের সমস্ত বন্ধন কাটিয়ে পরলোকে যাত্রা করে। কেবল এই পৃথিবীতে থেকে যায় তার প্রিয় মানুষজন প্রিয় স্মৃতিরা এবং বেশ কিছু প্রিয়তম মুহূর্ত। সেই স্মৃতিমেদুরতার সূত্র ধরে পরিবারের অন্য মানুষদের মনের অন্তরালে যেন শোকের অপ্রকাশিত ভাবনা ফেনিয়ে ওঠে-

“কাছে বা দূরে কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হলে

আমি খুব অসহায় বোধ করি

বুঝতে পারি না কীভাবে মৃতের প্রিয়জনদের কাছে

প্রকাশ করব আমার শোক

কী শব্দ গেঁথে গেঁথে জানাব সান্ত্বনা”

প্রিয়জন হারানোর দুঃসংবাদের সঙ্গে সঙ্গে যে উদ্বেগ আমাদের মনে ধরা দেয় তা হল, শেষদিনের যাপনের কথা। বহু না মেলা সম্পর্কে ধাঁধা কিংবা বহু অপূর্ণ ইচ্ছার মেলবন্ধনে চঞ্চল মানব মন নিজো খেয়ালে এগিয়ে চলে। নানারকম কল্পনাজাত ভাবনার শঙ্কা-আশঙ্কার দোলাচলে তার চলার পথের অভিজ্ঞতা মানুষকে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার রসদ জোগায়। মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুসরণে বলা যায় ‘জন্মিলে মরিতে হবে / অমর কে কোথা কবে!’; জন্ম-মৃত্যুর এই সমানুপাতিক সম্পর্কের সমীকরণ ‘মৃত্যুসংবাদ’ শীর্ষক কবিতায় কবির লেখনীতে প্রতিভাত হয়; তাই কবি বলেছেন-

“ভাবি সত্যিই যদি আজ বা কাল মৃত্যুর পরোয়ানা আসে

তাহলে কি আমার শেষযাত্রায় সম্মিলিত হবার অনুরোধ

সবাইকে জানিয়ে রাখব আগাম

মেয়ে আমার দূরে থাকে আসতে সময় লাগে

তাকে কি সতর্ক থাকতে বলা জরুরি

কত বই পড়া হলো না কত যে কবিতা গল্প উপন্যাস

শোনা হলো না অনেক গান খেলা হলো না আরও অনেক মাঠে ফুটবল

রবীন্দ্রনাথের গোরা আমি পড়েছি কয়েকবার অন্তত বার চারেক

ভাবি চলে যাবার বার্তা যেদিনই আসুক না কেন জীবনে

গোরা আর সুচরিতার সঙ্গে দেখা করে যাব শেষবারের মতো”

সে কোন ঘটনা বা পরিস্থিতির অন্তিম লগ্নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন সূচনা লগ্নের পরিসর অগ্রসর হয়, ঠিক তেমনি মানব জীবনের ক্ষেত্রে জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে জন্মেরও মুহূর্ত দেখা যায়। শেষের থেকে শুরুর যাপন যেন আরো একবার চিরন্তন চিরকালীন সত্য হিসেবে। পরিচিত হয় আমাদের কাছে। মানব-আত্মা অবিনশ্বর, তার  কোন মৃত্যু বা ছেদ নেই। কেবলমাত্র নশ্বর কায়া পরিত্যাগ করে সে আবারও অগ্রসর হয় কালের বিবর্তিত রেখায়। নতুন দেহে পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরে আসে বসুন্ধরার কোলে। আরও এক নতুন অভিজ্ঞতায় যাপিত হয় তার সেই পুনর্জন্ম। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানব সমাজের পরিচিতি বহুজন বিদিত। সঙ্গবদ্ধভাবে জীবন যাপন সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই শুরু হয়। যা পরবর্তীকালে পরিবার কেন্দ্রিক ব্যবস্থায় উন্নীত হয়। অথচ আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তি ভেদে মনের অন্তরালে বাস করা ‘অন্য আমি’র কথা প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। অন্তরের অন্তরালে থাকা সেই মানুষটিও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। অথচ পুনর্জন্মের সূত্র ধরে আমাদের কাছে অমিল থেকে যায় একটি প্রশ্নের উত্তর, সেই প্রশ্নই যেন আরো একবার পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন কবি ‘পুনর্জন্ম হলে জন্ম হবে কার আগে’ শীর্ষক কবিতায়-

“আমাকে কেউ কখনও বলেনি

আমি যে শহরে বসবাস করি সেই শহরের ভেতর

লুকিয়ে আছে অন্য এক‌টা শহর

আমাকে একথাও কেউ বলেনি

আমি যে বাসায় থাকি সেই বাসার ভেতর

লুকিয়ে আছে অন্য আর একটা বাসা

না একথা অবশ্য কেউ বলেনি আমি নিজেই উপলব্ধি করেছি

আমার ভেতরেও লুকিয়ে আছে অন্য আরও এক আমি…

আমি তো জানি আমি যেদিন মারা যাব সেদিন মারা যাবে আমার ভেতরের মানুষটা

শুধু জানি না পুনর্জন্ম হলে জন্ম হবে কার আগে আমার নাকি আমার ভেতরের সেই মানুষটার”

লালন শাহ্ ফকির তাঁর অনন্য কৃষ্টি হিসাবে বহুকাল আগে সৃষ্টি করেছিলেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ নামক জীবনের সারকথা। ধর্ম-বর্ণ-জাতির ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান তার সাহিত্যে লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভাবে দিনের অন্তিম লগ্ন ও  রাতের সূচনা লগ্নের মধ্যবর্তী সময় গোধূলি নেমে আসে, ঠিক তেমনভাবে জীবন পরিসরের শুরু ও শেষের ব্যবধানে সায়াহ্নবেলাও এসে হাজির হয়। সমগ্র জীবন জুড়ে অর্জিত নানান অভিজ্ঞতা কথা হেসে যেন দাঁড়িপাল্লার মাপে আরও একবার পরিমাপ করে নিতে চায় তার অস্তিত্বকে-

“জীবনে যে কত সাথীর আনাগোনা হলো কত বান্ধবের ঘটল আগমন বিসর্জন

কাকেই বা মনে রেখেছি কতোটা মনে রাখা যায় যখন আমিও এসে দাঁড়িয়েছি সায়াহ্নবেলায়”

পদ্মপাতায় অস্তিত্বের মতো হৃদয়ের স্পন্দন মৃত্যুর মহাসাগরের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক হারে এগিয়ে চলে। দুঃখ সুখের দোলা চলে। তার সঙ্গে সঙ্গে দুঃস্বপ্নের দিনগুলো যেন হাতছানি দেয় মানুষকে জীবন সায়াহ্নে। ধীরে  ধীরে শৈশব কৈশোর কাটিয়ে যৌবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেন এগিয়ে চলে মহাকালের অন্তর্লীন  সাগরে অবগাহনের জন্যে। দৈনন্দিন যাপনে মানুষ যেন অপেক্ষমান সেই অনন্ত যাত্রার জন্য। সেখানে পঞ্চভূতের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয় প্রতীক্ষা-অভিজ্ঞতায় ভরপুর জীবনকাল-

“শুনেছি জীবন নাকি পদ্মপাতায় জলের বিন্দু আর মৃত্যু মহাসাগর

নক্ষত্রের বিছানায় নিজেকে নিমজ্জিত করে অনুভব করতে চেয়েছি মহাকাল

এ তবে কেমন আসা জীবনের মুখোশ পরে যদি না থাকে তার দীর্ঘতম আকাশ

আমি জানি আমাকে একদিন চলে যেতেই হবে বয়স নির্ধারিত করে দিন ও ক্ষণ…”

সুখ-দুঃখের নিয়মমাফিক ঘূর্ণনে আবদ্ধ জীবনীর প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা, ভরসা এবং বিশ্বাস অপরিসীম। তাই তিনি জরাব্যাধি সামাজিক অবক্ষয় সবকিছু বিপরীতে ভালো থাকার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের রসদ বাঁচিয়ে এগিয়ে চলার কথা গদ্য কবিতার ছায়ায় বিবৃত করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দূর্বিনীত ব্যবহার বারংবার আমাদের অস্তিত্বকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে তোলে। কঠিন বেদনাদায়ক পরিস্থিতি কাটিয়ে তিমিরহননের পথে মানুষ নতুন আলোকে সন্ধান করে। সেই আলোর আলোকবর্তিকা হিসেবে থেকে যায় ভালো থাকার ভালো স্মৃতি-

“সবাই ভালো থেকো সুস্থ থেকো আর আনন্দে থাকা তো আরও বেশি কাম্য

আমরা যারা ভালো থাকার কথা বলি নিজেরাও ভালো থাকার চেষ্টা করি”

কবিতার বিন্যাস ছন্দময়, তার পথচলা নিরন্তর। সেই নিরন্তর ছাঁদে আমাদের কন্টকিত যাপন থেকে শুরু করে, অতীতের হারিয়ে যাওয়া কোনো অপূর্ণ ইচ্ছেরা অথবা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ স্মৃতি-কাতরতা সহ সকল অভিজ্ঞতায় ধীরে ধীরে ধ্বনিময় হয়ে উঠেছে কাজল সেনের উক্ত কাব্যগ্রন্থে। আমাদের যাপিত জীবনের গভীর দর্শন বৈচিত্র্যে সুসজ্জিত ভাষার ধ্বনিময় ঝংকার পাঠকের হৃদয়ে সুরময় প্রতিধ্বনি সঞ্চারিত করেছে, যা কবির লেখনীর অনন্যতাকে চিনিয়ে দেয়। 'আশ্বিনে যাব আমি যুদ্ধযাত্রায়' শীর্ষক কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ অলংকরণে চিত্রিত ভিড় যেন আমাদের মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং বহি:দ্বন্দ্বের রেখাচিত্রকে প্রতিবিম্বিত করে। তাই  আলোচ্য কাব্যগ্রন্থটিকে মানুষের জীবনের যাপিত সময়ের সাক্ষ্য বলা চলে।

(আশ্বিনে যাব আমি যুদ্ধযাত্রায় / কাজল সেন / আলোপৃথিবী প্রকাশনী / প্রচ্ছদশিল্পী মৌমিতা পাল / বিনিময় মূল্য ২০০ টাকা / কলকাতা বইমেলা ২০২৫)  

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন