![]() |
| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪২ |
পুরুলিয়া
পলাশ ফুটেছে দেখতে এলাম। এই কুমারী নদীর পাড়ে। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা কতদিন পর তোদের সঙ্গে দেখা হলো।
- জানিস শিলু, আমার খুব ইচ্ছে ছিল,
পলাশ ফুল কুড়িয়ে নেব।
- আমি কিছু কুড়িয়ে নেব না। শুধু
তোর ছবি তুলব রে মৌ!
- ভোররাতে খুব ঝড়বৃষ্টি হয়েছে,
টের পেয়েছিলি?
- নাঃ, একেবারে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি,
সকাল।
- আমাদের ঘরের একটা জানলা খুলে
গেছিল, দমকা হাওয়ায়। কয়েকটা গাছ-ও তো পড়ে গেছে, এই বিকেলে শুনলাম।
- কোনো কোনো রাতে এমন ঝড়বৃষ্টি
আসে। খানিকটা ওলট-পালট করে দিয়ে যায়। তাই না?
- কবি হয়ে গেলি তো!
- সবকিছু কি ঠিক সময়েই মনে পড়ে?
তবে পড়েও যদি সেটা শুনতে ভালো লাগে, ক্ষতি কী? মনে কর এখন যদি বুবাই আমাদের বাঁশি
বাজিয়ে শোনায়!
- চল এবার বেরোই। ট্রেন আসার সময়
এসে গেছে।
আজকে আমি তোদের সবার সামনে একটা
কথা বলি, যেটা আমি কোনোদিন কোনোভাবেই বলিনি। মনে হচ্ছে, আজকেই সেইদিন।
- বলবি মৌ? আর একবার ভেবে দ্যাখ!
- নাঃ, বলবই আজকে।
- তুই যদি বলিস, তাহলে আমিও বলব।
জয়গুরু!
- বুবাই শোন না! আমি কী বুঝতে পেরেছি,
তোর কী মনে হয়?
- নামগুলো কি পাল্টে দিবি?
- পাল্টে দিলেও তোরা সবাই বুঝতে
পারবি।
- তাহলে তো কথাই নেই। আর বলিস না,
বুঝেই গেছি!
- আমারও একটা হাল্কা চান্স আছে
বল। না বলে দিস না প্লিজ! ঐটা ধরে নিয়েই আমি ফিরব।
- তোর ভাবনাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে
দেখবি - কোথায় যেন একটা বাঁশি বেজে উঠেছে আর সামনের পলাশ গাছের তলাটা ফুলে ফুলে ভরে
গেছে।
- তাই? হবে বলছিস? সকালে উঠেই দেখব
তাহলে। যাবি আমার সঙ্গে?
- আরে, ওদের গাড়ি কোন রাস্তায় ঢুকছে? ফোন করে ফিরে আসতে বল তাড়াতাড়ি। ওদিকে তো রাস্তা বন্ধ। বুবাই একবার আমাদের কোচ পজিশন দেখে বল না!
- সামনের দিক থেকে ছয় নম্বরেই।
- তাই? তবে তো অনেকটা এগিয়ে যেতে
হবে।
- এখানে একটা ছবি তোল। আমি যে গান
গেয়েছিলেম, শুকনো পাতা ঝরার বেলায়, এই কথাটি মনে রেখো। গাড়ি ঢুকছে। আলো দেখা গেল।
- উল্টোদিক থেকে একটা মালগাড়ি
আসছে। দ্যাখ শিলু বুবাই খুব দুঃখ পাচ্ছে এখন।
- ট্রেন ছেড়ে দেবে তো! এই বুবাই,
এই আমি দ্যাখ জানলায়। একবার হাতটা ছুঁয়ে দে, শুধু! হ্যাঁ, দৌড়ে আয়। এই তো। আবার
দেখা হবে রে! নিশ্চয়ই হবে!
- ট্রেন ছাড়ার বাঁশি বেজে উঠলো।

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন