![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৪৪ |
নীলদিন
একা একা
পথ হাঁটছিলাম ---
হয়তো বা
সমুদ্রের ধারে, অতলান্ত নীলের গভীরে
যেখানে বিষণ্ণ
প্রাণ
অর্থহীন আশ্বাস
খোঁজে।
(শঙ্খের মত সাদা
সমুদ্র ফেনায় / বারবার ভেঙে প’ড়ে / ঢেউগুলো তবুও মরীয়া।)
ঝিলমিল রোদ
ঝাউবন, বালিয়াড়ি, পার হয়ে গড়িয়ে
পড়েছে --
আমার পায়ের কাছে।
গুঁড়ো গুঁড়ো
সমুদ্রফেনায়
সাদা হয়ে যাওয়া কোনো শঙ্খের বুকে
দূর অতীতের
স্মৃতি -- সাগরগর্জন --
কান পেতে শুনি ।
খ্যাপা সব
ঢেউয়ের মাথায়
সূর্যসোনার
স্বপ্ন ঝিক্মিক্ জ্বলে,
আকাশের রোদধোওয়া
উজ্জ্বল নীল --
দূরে, বহুদূরে,
দিগন্তের
বেদনার্দ্র অথৈ নীলিমায়
ডুবে গেছে
ভালোবাসা চেয়ে!
সমুদ্র, আকাশ --
আমারও দু’চোখ নীল,
গভীর বিস্ময়ে আর --
একা একা,
জ্বলে জ্বলে
নিভে যাওয়া,
বিষণ্ণ তারার
মত।
লবণাক্ত
জানি না!
জানি না কি করে
সবুজ ঘাসের বুকে
টুপটাপ শিশিরেরা ঝরে,
জানি না কি করে
তোমার ঐ সুঠাম
শরীর
সাঁওতালি নাচের
ছন্দে ঝঙ্কার তোলে,
জানি না কি করে
আকাশ গাঢ়, গাঢ়তর
হয় --
ভেজা মাটির
তীব্র গন্ধে
বুকের মধ্যে
টুপটাপ টুপটাপ
লোনা জল ঝরে
বুকের মধ্যে
লোনা জল --
মাটির গভীরে,
ঘাসে
পাতায়
বর্ষার গাঢ় রাতে
শরতে
শীতে --
ফাল্গুনে
নিমফুলের তীব্র গন্ধে,
ছলছল করে
লোনা জল।
তোমার দীঘল শরীর
তবু কাঁপে,
ঝঙ্কার তোলে,
আনন্দে? না কি যন্ত্রণায়?
নির্জন
নির্জনতাকে সঙ্গী করে,
কেটে যায় কতগুলো নিঃশব্দ প্রহর
শীতের কুয়াশা ভর করে
নেমে আসে ধূসর ম্লানিমা।
নিশ্চিন্ত ঘরের
কবোষ্ণ সংকীর্ণতা,
মুখ গুঁজে পড়ে থাকে ।
অঘ্রাণের হিমেল হাওয়ায়
পৌষালী শীতের আমেজ ---
পলাতক সোনালী রোদ্দুর
স্লেটরঙা আকাশের গা থেকে
নিঃশেষে মুছে আসে,
ঘড়ির কাঁটায়
সময় এগিয়ে যায় অভ্যাস মতন।
আমি শুধু অপলক,
কবিতার বিদেহী শরীরে
বসন্তে-সুবাস খুঁজি --
শ্লথ হাত থেকে
খসে পড়ে কবিতার সাধ।
বিষণ্ণ সন্ধ্যা এক
পরিশ্রান্ত সংসারী মেয়ে
এলিয়ে দিয়েছে
গা,
ধূসর আকাশে
নিভু নিভু নক্ষত্রপ্রদীপ --
চোখে মুখে
হিমেল সান্ত্বনা মেখে আস্বাদন করি
কবোষ্ণ নিঃসঙ্গতা;
অজস্র অলস
টুপটাপ ভাবনার শব্দিত নীরবতা
নির্জন হয়ে থাকে,
হিম দুই চোখের পাতায়
ক্লান্ত দৃষ্টি উদাসী বাউর ---
ঝিঁ ঝিঁদের ঐকতান,
অশ্রুত একতারা
বেজে চলে ক্রমিক ঝংকারে।
সময়ের চোখে ধুলো দিয়ে
চুরি করে নিই এক অলৌকিক দ্বীপ,
বিচ্ছিন্ন, একক --
নিটোল শিশিরবিন্দু,
একান্ত আমার।
আমি তো এমনই
নির্জন হয়ে যেতে চাই।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন