কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

গৌরাঙ্গ মোহান্ত

 

কবিতার কালিমাটি ১৪৪


শান্তিপাদের গান

একদল হরপ্পাবাসী হয়তো এখানে এসে রাস্তার লেআউট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ নগর পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিল; তাদের গুণরাজরা অট্টালিকাগুলো গেঁথে তুলেছে আর নাগরিকগণ দূরতম নক্ষত্রের রঙিন রশ্মি নিরীক্ষায় মেতে থেকেছে। সোনালি চূড়ার নিচে অন্ধকার পথে অদৃশ্য শৃঙ্খলের আওয়াজ শোনা গেছে। বিপণিকেন্দ্রের চতুর্দিকে ক্ষিপ্রতার সাথে হেঁটেছে ফাফনির; পথে পথে বাজিলিস্কের আনাগোনা, তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে পথিক বিশ শতকের কিছু ভবন পেরিয়ে সবুজ পথের সন্ধান করে। সুরের উৎসের কাছে মান্টিকোর দাঁড়িয়ে থাকে বলে সকলে সঙ্গীতবিমুখ। অথচ পথিককে শান্তিপাদের গান শুনতে হয়। তাকে বিশ্বাস করতে হয়, পুরুষ্ণী তীরবর্তী অরণ্য শ্বাপদসংকুল থাকা সত্ত্বেও বিশাল সমাজের অগ্নিশিখাকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্য তা অসংখ্য গুঁড়ি উৎসর্গ করেছে। এ অরণ্যের অন্ধকারে ঝলকে ওঠেনি কোনো কৃপাণ। সুদাসের প্রচেষ্টায় পুরুষ্ণীর জলে ভেসে গেছে অন্ধকার; অরণ্য আর বিস্তীর্ণ তৃণভূমি থেকে জেগে উঠেছে আয়ুর্বেদ।


ব্লেড ও দৃশ্যাবলি

দাড়ি কাটার পর বাস্কেটে এমনভাবে রেজারকে দাঁড় করিয়ে রাখি যাতে তীক্ষ্ণতর ম্যাক-৩ ব্লেড এমনকি মাইক্রোফিন স্কিন গার্ড দৃশ্যমান না হয়। ব্লেডের দিকে তাকালেই সেটি বড় চাপাতির রূপ ধারণ করতে থাকে। বাড়িতে বসে সব কথা বন্ধুদের শোনানো সম্ভব নয় বলে সূর্যের আলো অদৃশ্য হলে ছেলেরা হাঁটতে বেরিয়ে পড়ে। অন্ধকারে চাপাতি চলৎশক্তি অর্জন করতে পারে, পথযাত্রীর ফোনে ভেসে আসতে পারে দুঃসহ সংবাদ—দ্রুত অটোরিকশায় চেপে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যাবার যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। দাড়ি কাটার সময়কে আমি কোনোভাবেই প্রলম্বিত করি না। ব্লেডের চেতনা এতো প্রবল যে সে দৃশ্যের পর দৃশ্যকে আহ্বান করতে থাকে আর দৃশ্যগুলো আমাকে অর্ধস্বচ্ছ কাচের দরজার পেছনে দাঁড়ানো আবছা সিলুয়েটের কাছে নিয়ে যায়। যদিও অনিশ্চয়তার ভেতর আমি কিছু মৃত্যুচিহ্নকে কেটে ফেলি—প্রাথমিক বর্ণ হারিয়ে ফেলবার পর দাড়ি অস্তিত্বকে প্রজ্বলিত গবাক্ষের দিকে টেনে নিয়ে যায়।


ড্রিপ চ্যাম্বার

ড্রিপ চ্যাম্বারের দিকে তাকিয়ে বুঝি ফোঁটা ফোঁটা লবণজলই জীবনের উৎস। অসমাপ্ত লিব্রেতো চোখে অঞ্জন প্রয়োগে সক্রিয় হলে সমস্ত নৈঃশব্দ্যের ভেতর প্রস্তুত হয়ে ওঠে আমার ল্যাপটপ; আমি অনূদিত কবিতার পঙ্ক্তিরাজি প্রত্যক্ষ করি। অনেক শব্দ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় এবং সাথে সাথেই গুগল সমার্থশব্দের সারণি উন্মোচন করে। আমি শব্দ নির্বাচন করে কলোকেশনের ঐতিহ্য-প্রদেশে অন্তর্হিত হতে থাকি। 'ছদিন ধরে কিছুই খাওনি। পেঁপের জুস খেয়ে নাও', রিনার কথায় আমার চোখে স্পন্দন জাগে। ঘরের আলোয় ল্যাপটপ নিরাকার হয়ে ওঠে আর আমার শরীরে ধ্বনিত হতে থাকে প্লেইটলেটের পতন।

 



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন