কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

সুপর্ণা ভট্টাচার্য

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৪


খড়কুটো

সুনীতা চা নিয়ে বিনয়ের ঘরে যায়। বিনয়ের মুড়ি খাওয়া প্রায় শেষ। চা নিতে হাত বাড়ায়। বিনয় বুড়ো হয়েছে। বাড়ানো হাতে শিরাওঠা।

‘একটা কথা ছিল’! সুনীতা গলার ঘাম মুছতে মুছতে বলে।

‘বলো’! বিনয় মুখ নীচু করেই বলে।

‘এবার মনে হয় আমাকে চলে যেতেই হবে’।

‘হ্যাঁ, আমিও বড় অপমানিত হচ্ছি। ছেলেটাও’।

‘অপমানবোধ নেই আমার। আমার বড় ক্লান্তি লাগছ।’

‘জানি। কিন্তু কোথায় যাবে?’

সুনীতার মুখে ‘জানি’ শুনে অবাক হয় বিনয়।

‘দেখছি। তবে টাকা লাগবে কিছু’।

‘সব কিছু দেখেশুনে নিয়ে তবে যেও।’

‘আমি কিছুই দেখেশুনে নিতে পারি না।’

‘হুম, কত টাকা লাগবে বোলো।’

সুনীতা মুড়ির বাটি, চায়ের কাপ নিয়ে চলে যাওযার জন্য ঘোরে।

‘নীতা, আমিও খুব ক্লান্ত।’

‘তুমিও তাহলে কোথাও চলে যাও। তোমার যাওয়ার জায়গার তো অভাব নেই। টাকার অভাবও নেই।’

সুনীতা চলে গেলে বিনয় বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। নীচে কেয়ারটেকারের বউ পলি বাইরে মোড়ার ওপর বসে। শাড়িটা হাঁটু অবধি তোলা। বিনয় অলস চোখে দেখল। এই মলি তাকে একদিন পিছন থেকে গালি দিয়েছিল, ‘শালা হারামি’ বলে। এই আবাসনের সকলেই তাকে আড়ালে হারামি বলে, বিনয় জানে। তার চোখের দৃষ্টি খারাপ, সেটাও বিনয় জানে। তবুও তো কয়েকজন বিনয়ের হাতে ধরা দিয়েছে, স্বেচ্ছায়।

সুনীতার মত বিনয়ও ভেবে পায় না তার কারণ। ঘেন্না হয় ইদানীং নিজের ওপর। আগে হত না। কেমন একটা জিতে যাওয়া মনোভাব ছিল।

মলি হঠাৎ ওপরের দিকে তাকায়। বিনয়কে তিনতলার ব্যালকনিতে দেখেই শাড়িটা ঝপ করে পায়ের পাতা অবধি নামিয়ে নেয়। আজ ভ্যাবসা গরম। বিনয় ভাবল, যেখানে যাবে বলছে সুনীতা, সেখানে কি এসি থাকবে? এসি থাকলে তো অনেক টাকা লাগবে। এমনিতেই বহু টাকা দিতে হয় সুনীতার বোনকেই। বিনীতাও কেন যে নিজের করে পেতে চেয়েছিল তাকে! বাইরের অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্তি সুনীতা দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বিনীতার ঘটনাটা, সুনীতাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে দিল।

বিনয় দীর্ঘ একটাশ্বাস ফেলে।

সুনীতা রান্নাঘর থেকে বারবার একটা বন্ধ দরজার দিকে তাকায়। আজকাল আর চোখের জল ফেলে না। শুধু প্রেশারটা কিছুতেই নামতে চায় না। সব আক্ষেপ কি বুকের খাঁচায় জমা হয়ে হয়ে ব্লক হয়ে যাচ্ছে?

সে চলে গেলে বিনয়ের যন্ত্রণা বাড়তে পারে। একটা গোটা মানুষের দায়িত্ব নেওয়া তো শুধু শারীরিক হয় না! সেটাই বুঝল না বিনয় সারাজীবন ধরে!

সুনীতা আবার দুর্বল হয়ে যাচ্ছে! আবার!

হঠাৎ বন্ধ দরজা খোলে। সুনীতার ডাক্তার-ছেলে বের হয়, সঙ্গিনীকে নিয়ে। এই সঙ্গিনী বদলে যাবে কিছুদিন পর।

সুনীতা দ্রুত মনীষাদিকে ফোন করে, তার জন্য যে আশ্রয়ের খোঁজ করছে মণীষাদি, তা যেন খুব দ্রুত করে। এটা এখনই বলতে হবে, হবেই।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন