কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 



অনিত্য

-কী ভাবছো এতো?

-আমি? কৈ, কিছু না তো!

মেঘনার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ শরণার্থীর মতো তাকিয়ে থাকে গৌরব। সবুজ ঘাসের গালিচায় এখনও সন্ধ্যা নামলে একটু একটু হিম জমে ওঠে। শহরের পার্কটা এবার বন্ধ হয়ে যাবে। উঠতে হবে।

ক্যাথেড্রালের দিকে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মেঘনার হাত ধরে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল গৌরব। এখুনি তার ঠোঁটদুটো আদরে আদরে আচ্ছন্ন করে দিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু নিজেকে সংযত করল সে।

-বলো, কী ভাবছ?

-আমাদের এই একসঙ্গে থাকার আজ তিনবছর। ভাবছি। এরপর কী?

-কি?

-যদি একঘেয়ে হয়ে যাই? ঘ্যানঘ্যানে?

-কক্ষণো না। একদিনও একঘেয়ে লেগেছে তোমার?

-না। কিন্তু সময় তো অনিত্য। সে তো আর তোমার অঙ্কের উপপাদ্যর মতো ধ্রুব হয়ে থেমে থাকবে না।

- কিন্তু যদি সে বদলে যায়? যদি তুমি একঘেয়ে হয়ে যাও আমার কাছে?

মেঘনার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে গৌরব। তাদের দুজনের দুইপাশ দিয়ে মানুষজন হেঁটে যাচ্ছে। কয়েক জোড়া কৌতূহলী চোখ কখনও বা জরিপ করছে তাদের। তিনবছরের লিভইন তাদের। অনেক ঝড়  ঝঞ্ঝা প্রশ্ন উত্তর পেরিয়ে। একী তবে নতুন কোনও মেঘ?

মেঘনা বলে চলে - চারপাশে চেয়ে দেখ গৌরব। শুধু অনিশ্চয়তা। কখন কার মৃত্যু ঘটছে কেউ জানছে না। কখন অজান্তে পালটে যাচ্ছে আমাদের পাড়া, গ্রাম, অস্তিত্ব। বদলে যাচ্ছে দেশ।

-যাক। কিন্তু আমরা তো বদলাইনি।

-কিন্তু বদলে গেলে?

ময়দানবের মতো এই বিচিত্র শহরের বুকে তারা দুজন ছোট ছোট অফিসচাকরি আঁকড়ে পাখির ঘর বেঁধে নিয়েছে। কে কার পরিপূরক, ভুলে গেছে দুজনেই। আজ তাদের ভালবাসার তিনবছর পূর্তির দিন। হঠাৎ কীভাবে সেইদিন যেন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। গৌরব নীরবতা ভাঙে।

-আমি কী একঘেয়ে হয়ে গেছি তোমার কাছে মেঘনা?

-কৈ না তো! কিন্তু কাল যদি…

-কালের কথা কাল ভাবব দুজনে।

-কিন্তু...

মেঘনা বলতে পারে না। তার দুই ঠোঁট ঢেকে দিয়েছে গৌরবের চুম্বন। তাদের ঘিরে পলাশের বৃষ্টি হচ্ছে তখন। চারপাশের সমস্ত অনিত্য অগ্রাহ্য করে ধ্রুব সূচকের মতো একজোড়া মেঘ হঠাৎ বসন্ত আচ্ছন্ন করে ফেলল শহরকে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন