কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

অভিজিৎ বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৪


পাখি

কয়েদখানার দরজা খুলে গেল।আর তখনই মনে হতে লাগলো নতুন স্বপ্ন হয়তো সামনে দাঁড়িয়ে। সবার ভেতর স্থবিরতা সরে গিয়ে চঞ্চলতার লক্ষ্মণ ফুটে বাইরে বের হতে যখনই যাবে তখনই। হ্যাঁ, ঠিক সেই মুহূর্তে একজনকে মাইকে বলতে শোনা গেল, আজ প্রকাশ্যে একজনকে ফাঁসি দেওয়া হবে। তবে তার আগে  এই শহরের সবচেয়ে সুন্দরী, যার জন্য হাজারো পুরুষ জান বাজি রাখে, সে কিছু বলবে।

ফিসফাস হতে লাগলো, কেউ মেলাতে পারছিল না, সুন্দরী আর ফাঁসি এই শব্দ দুটোর মধ্যে কী সম্পর্ক!

কেউ কেউ নিজেকে নিজেই বলতে শোনা গেল, দেখা যাক কী হয়!

আচ্ছা সুন্দরী দেখতে কেমন? চোখ কি মায়াবী? শরীরে কি কেঁপে কেঁপে ডুমুর গাছের মতো হবে তার?

অসংখ্য বুটজুতোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর তখনই সবাইকে একটা খোলা আকাশের নিচে মাঠের সামনে আনা হলো। খুবই শান্ত অথচ কী নির্মম পরিবেশ! কয়েকটা গাড়ির শব্দ আর রাইফেল তাক করে উর্দি পরা সৈনিকদের চলা। কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পারছিল না কেউই।

এমন সময় খোলা জিপ থেকে একজন নামলো। মাইক্রোফোনে বলতে শোনা গেল, শহরের সবচেয়ে সুন্দরী আমাদের মাঝে। সৈনিকরা গুলি ছুঁড়ে অভিবাদন জানালো। আর কয়েদীরা বলতে লাগলো, আমাদের রাজা মহান। আমরা ভাগ্যবান এমন সুন্দরীকে কাছ থেকে দেখার জন্য। এমন রাজা লাখো বছর বাঁচুক।

কিন্তু এসবে সুন্দরীর কিছু যায় আসে না। সে সোজা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গেল। তারপর স্থির হয়ে সামনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চারপাশ একবার দেখে নিল। কেউ কিছু বলতে যাবে। সবাই চুপ থাকো। চুপ। একদম চুপচাপ। নো সাউন্ড।

সুন্দরী এবার সামনে মাইক্রোফোন নিয়ে ক্যালকুলাস, লিবনিজ, আর্কিমিডিস, প্লবতা এই শব্দগুলো উচ্চারণ করলো। কেউ বাপের জন্মে এই শব্দগুলো শোনেনি। সবাই তো রূপে পুড়তে ব্যস্ত। তীব্র শীতে পুনরায় একটা স্বপ্ন নেমে এলো  এতো মানুষের ভেতর। সুন্দরী হাতের ইশারা করতেই দ্রুত একজন খাঁচাভর্তি চারটে চড়াই পাখি নিয়ে আসে। তারপর খাঁচা খুলে পাখিদের উড়িয়ে দিয়ে বলে, মুক্তি! স্বাধীনতা! সবার কাছে এই শব্দগুলো পরিচিত মনে হচ্ছে। আর তখনই সবাই সব কিছু ভুলে যেতে লাগলো। তাদের নিজেদের নামধাম, ঠিকানা, কোন রাজনৈতিক দল করত, কাকে ভালোবেসে চুমু দিয়েছিল - সব। রাজার চেহারা কেমন সেটাও মনে করতে পারে না কেউ।

জল্লাদ সুন্দরীর সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে দড়ির পাক গুনতে থাকে।

‘আচ্ছা জল্লাদ কেন এখানে?’

রাজার একজন প্রতিনিধি ঘোষণা করে, ‘এই শহরের সবচেয়ে সুন্দরীকে একটু পর ফাঁসি দেওয়া হবে’।

তবুও কারও কিছু প্রতিক্রিয় হলো না। রাজা, সৈনিক, জল্লাদ - এই শব্দগুলো অচেনা লাগছে তাদের কাছে।

পাখিদের উড়ে যাওয়াটা মনে আছে সবার। পাখিদের উড়ে যাওয়া... আর সুন্দরী বুকে তীর মারার মতো হাসি হেসেছিল সেটা। শালা রাজাটাজা, ক্যালকুলাস, প্লবতা, আর্কিমিডিস কিছু মনে নেই কারও। সুন্দরীর জন্য জান বাজি রাখতে সবাই ছটফট করতে লাগলো।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন