কালিমাটি অনলাইন / ১২৯ / ত্রয়োদশ
বর্ষ : দ্বিতীয় সংখ্যা
বিগত ৫ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত
নন্দন চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজিত সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন
মেলা ২০২৫। মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার পায় ৫০০টি লিটল ম্যাগাজিন।
গত বছরে আমি দুর্ঘটনাজনিত অসুস্থতার কারণে মেলায় যেতে পারিনি। এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ
হয়ে উঠতে না পারলেও গত ৮ এপ্রিল মেলায় গেছিলাম। গেছিলাম পত্র-পত্রিকার আকর্ষণে এবং
লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক-কর্মী এবং সাহিত্যিকবন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হবার এক অমোঘ টানে।
হ্যাঁ, দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল কিছুজনের সঙ্গে, আর দেখাসাক্ষাৎ হয়নি যে কত কতজনের সঙ্গে!
খুব মনে পড়ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রয়াত সন্দীপ দত্তর কথা। লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী
ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্ণধার সন্দীপ দত্তর প্রস্তাবেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির উদ্যোগে
১৯৯৯ সালের ৯ জানুয়ারী শুরু হয়েছিল লিটল ম্যাগাজিন মেলা। তখন বামফ্রন্টের আমল। তখন
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুদ্ধদেব
ভট্টাচার্যই সূচনা করেছিলেন লিটল ম্যাগাজিন মেলার। মেলার প্রদীপে প্রথম সলতে জ্বালিয়েছিলেন
কবি অন্নদাশংকর রায়। লিটল ম্যাগাজিন মেলা এবং কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় টেবিল থাকত
লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী ও গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। সন্দীপ প্রতিদিন মেলায় তাঁর
টেবিলে বসে থাকত। টেবিলে ছড়ানো থাকত বই ও পত্রিকা। আর সন্দীপের গায়ে জড়ানো থাকত ‘লিটল
ম্যাগাজিন পড়ুন ও পড়ান’ লেখা পোস্টার। তার মাথায় বসানো কাগজের টুপিতেও সেই একই শ্লোগান।
আজীবন সন্দীপ লিটল ম্যাগাজিনের স্বার্থে কাজ করেছেন। আমার জানা নেই, আর কারও সন্দীপের
মতো লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা আছে কিনা। হয়তো কারও কারও
আছে। আর সেক্ষেত্রে উচ্চারণ করতেই হয়, তার পেছনে আছে একমাত্র সন্দীপ দত্তর ‘অনুপ্রেরণা’।
আর তাই নন্দন চত্বরে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, কেমন যেন একটা শূন্যতার আবহ ছড়িয়ে আছে মেলা
প্রাঙ্গনে।
এবছর নন্দনে আয়োজিত সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলায় অনেকে এসেছেন, অংশগ্রহণ করেছেন কবিতাপাঠ ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায়। আবার বেশ কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক-সঞ্চালক মেলা বয়কট করেছেন। যাঁরা আকাদেমির আমন্ত্রণপত্র পাননি, এমনকি যাঁরা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন, তাঁরাও অনেকে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। প্রাসঙ্গিক এই বয়কটের স্বপক্ষে তুলে ধরছি বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট শ্রদ্ধেয় কবির ফেসবুক বক্তব্য। তিনি লিখেছেন – “দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলা ও সাহিত্য উৎসবে সানন্দে অংশগ্রহণ করে আসছি। কখনও এমন সংকটের মুখোমুখি হইনি। এখন পশ্চিমবঙ্গে অদ্ভুত এক আঁধারের মুখোমুখি হয়েছি। অভয়াহত্যা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছিল, প্রতিবাদে মিছিলেও হেঁটেছি। আর এখন রাজনীতিসৃষ্ট অসহনীয় সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও হিংসার আবহ এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উদ্ভুত শিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতির প্রকাশ ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাকুরিহীনতা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে খুবই অস্থির করে তুলেছে। এই অবস্থায় লিটল ম্যাগাজিন মেলা ও কবিতা উৎসবে যোগ দেওয়ার মতো আমার মানসিক স্থিরতা ও প্রশান্তি বিপর্যস্ত। আমি এই আয়োজন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত একান্তই আমার ব্যক্তিগত। আমাকে উদ্বোধনী মঞ্চে কবিতাপাঠের আমন্ত্রণের জন্য আকাদেমিকে ধন্যবাদ”
তাঁর এই বক্তব্য, অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত। কিন্তু উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, যাঁরা বয়কটের দলে, তাঁদের বক্তব্যও একই। এবং শুধু যাঁরা কবিতাপাঠ ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি, তাঁরাই নন, লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্যের অনুরাগী অনেক অনেক মানুষ এই বক্তব্যের ভাবনাই মনে পোষণ করেন। এমনকি যাঁরা মেলায় গেছিলেন লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি দুর্বার আকর্ষণে, তাঁরাও এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।
‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জানাই বাংলা নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
প্রতি,
উত্তরমুছুনমাননীয়
সম্পাদক মহাশয়,
কালিমাটি,
মাননীয়েষু, আশাকরি এখন একটু ভাল আছো। আপামর এই সংস্কৃতির বিপণন জোয়ারে এমন একটা পত্রিকা চালানো কে কী সাহসের, তা পত্রিকা-বান্ধবরাই জানেন। দারুণ... সম্পাদকীয়! তোমার লেখা পড়তে পড়তেই শিখছি...। যেমন ওই জোয়ারের জল গাছে লাগলে গাছ বাড়ে, মাটি সেই কাজ করে। তেমনই তুমি দাদা হয়ে, সম্পাদক হয়ে করে চলেছ। লড়াই থেকে আরও লড়াইয়ে আমরা যেন এক সঙ্গে থাকি। আর মনে পড়ে যাচ্ছে, সন্দীপদার সঙ্গে সেবার দেখার সূত্র ছিল, শরৎচন্দ্র বাসভবন, কলকাতা, তোমার দেওয়া সম্মানের ভার যেন বইতে পারি...। প্রণাম নিও।