![]() |
সমকালীন ছোটগল্প |
আনন্দধারা
সোনাদা বললেন, জানি তুই এসব মানিসনা। বিশ্বাস করিসনা। তবু বলছি গ্রহের ফের খুব বড় ব্যাপার। গ্রহের মন্দ দশায় তুমি নাস্তানাবুদ হবে। তোমায় পাগল করে ছাড়বে। শরীর, স্বাস্থ্য, মন, টাকা পয়সা, সবেতেই মার আর মার।
আমার আর তোর বৌদির যেমন, দুজনেরই রাহু শনির সর্বনেশে
কালযোগ। দেখছিস না, আমাদের সংসারটার কেমন ছিরিছাঁদহীন ভাঙ্গাচোরা অবস্থা। ষোল সতের
বছর বিয়ে হয়ে গেল, কোন সন্তান নেই। রোজগারপাতি তথৈবচ। দুজনের চোখের সামনে নিরানন্দের
পর্দা ঝুলছে। দুজনের শরীরেই যেন রাজ্যের যত রোগ এসে বাসা বাঁধার জায়গা খুঁজছে। জানি
না, এ মন্দ দশা কতদিন ধরে চলবে !
এই অব্দি বলে সোনাদা একটু থামলেন। লম্বা করে শ্বাস ফেললেন।
একটু শব্দও হলো তাতে। তারপর আমার মুখের দিকে চেয়ে বললেন, চা খাবি তো ?
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, হ্যাঁ।
- শুনছো ?
রান্নাঘরে বৌদির উদ্দেশ্যে উঁচু গলায় ডাকলেন সোনাদা, দুকাপ চা।
- তুমি আবার খাবে
? বৌদি জানতে চাইলেন।
- খাবো বই কি !
- সকাল থেকে ক'কাপ
হবে বলো তো ?
- দুই, আর এই এক,
তিন। সোনাদা আমার দিকে চেয়ে হাসলেন, সামান্য এক কাপ চা নিয়ে তোর বৌদির এই যে
উৎকন্ঠা, জানবি এও ওই গ্রহেরই খেলা। রাহু মানুষের মনে অকারণে ভয় তৈরী করে। এক কাপ
চা বেশী খাওয়া বা একবার বেশী বাথরুম যাওয়া, সবেতেই আতংক। এই বুঝি কিছু গড়বড় হলো ! একটু চুপ
করে থেকে বললেন, তবে কিনা, জানিস শৈবাল, এরও প্রতিকার আছে। যেমন কুকুরে কামড়ালে
অ্যান্টির্যাবিশ ইনজেকসন বা জংধরা লোহায় কাটলে টকসয়েড, গ্রহের মার আটকাতে রত্নধারণ
তেমনি। মালটা কিন্তু জেনুইন হতে হবে। তাতে টাকার অংকটাও বেড়ে যাবে। কিন্তু কাজ
হবেই হবে। এটা নিশ্চিত করে বলছি। আর আমার মতো আর্থিক অবস্থা যার, সে স্টোনের বদলে
শেকড় বাকড় মূল এই সবে ভরসা করে। তাতেও কাজ হয়। তবে ভেরি স্লো পোগ্রেস। ভেরি স্লো।
এমনও হতে পারে, এক জীবনে কিছুই হলো না। কোনরকমে খেয়ে পরে বেঁচেবর্তে রইলে। শেকড়
বাকড় তোমাকে ওইটুকু সাপোর্ট দিল।
রান্নাঘর
থেকে বৌদি দুকাপ চা নিয়ে এলেন। শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছে জিজ্ঞেস করলেন, বিস্কুট
দোব ?
আমি ঘাড় নেড়ে
বললাম, না।
- খাও না। বেকারীর
বিস্কুট, দাম কম হলেও খেতে খুব ভাল, শুকনো ভাজা, তেল নেই। শরীরের কোন ক্ষতি হবে
না।
বৌদির কথা বলার এই ধরণটা
একই সঙ্গে উইট এবং সিরিয়াসনেস, আমাকে বেশ তৃপ্তি দেয়।
হেসে বললাম, দিন। আপনি
হাতে করে দিচ্ছেন, আমি জানি খেতে ভাল লাগবেই। ক্ষতির তো কোন প্রশ্নই ওঠে না।
- হয়ে গেল। সোনাদা
হা হা করে হেসে বললেন, এই যে সার্টিফাই করলি, এরপর এলিয়ে যাওয়া বা আলুনে তরকারি
খেয়েও বলতে হবে গ্র্যান্ড।
- তুমি যেন তেমন
মানুষ ! বলতে বলতে বৌদি রান্নাঘরের দিকে হেঁটে যান, না ভাই, আমি এতটা অন্যমনস্ক
নই।
- দেখ, দেখ ! সোনাদা
আমার মুখের দিকে চেয়ে আঙ্গুল তুলে বললেন, এটাও ওই গ্রহেরই খেলা। তোমায় দোলাচলের
মধ্যে রাখবে। এই মনে হলো, যা বলেছি, ঠিকই তো। একশবার ঠিক। পরমুহূর্তেই মনে হবে,
এভাবে বলাটা বোধহয় ঠিক হলো না। তখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা।
- চা ঠাণ্ডা হয়ে
যাচ্ছে কিন্তু। বৌদি রান্নাঘর থেকে বললেন, শৈবাল তুমি চুমুক দাও। গণৎকারের
ব্যাখ্যা শুনতে গেলে, চায়ের বদলে সরবত খেতে হবে।
- এটা তোকে নয়।
আমাকে উদ্দেশ্য করে বলা। এইটুকু বলে সোনাদা অল্প কয়েক মুহূর্তের জন্য মাথা নিচু
করে কী যেন ভাবলেন। তারপর খোলা জানলা দিয়ে দৃষ্টিটাকে বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে অনুচ্চ
গলায় বললেন, তোর বৌদি এখন বেশ ভাল মুডে আছে। অনেক সময়েই এই সব ছোট ছোট রঙ্গিন
মুহূর্তগুলোর নাগাল পাওয়া যায় না, কেন বলো তো ! কেন এমন হয় !
- আমি কী বলব ? কী
বলার আছে আমার ? চুপ করে থাকি।
এ বাড়িতে বৌদি নয়, সোনাদাকে আমার অদ্ভুত মানুষ বলে মনে হয়। হঠাৎ করে শুনলে
সোনাদার কথাবার্তায় বেশ আকর্ষণ বোধ হয়। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় কথাবার্তাগুলিকে পরপর
সাজালে, একটিকে আর একটির বিপরীত মনে হয়। আমার ধারণা সব কিছুর মধ্যে সোনাদা গ্রহের
কারসাজি এই ব্যাপারটা ইনফিউজ করতে যান বলেই, এমনটা হয়।
বৌদিকে আমি কোনদিনই গ্রহের ফের, জ্যোতিষ বিচার, রত্নধারণ এইসব বিষয়ে একটি কথাও
বলতে শুনিনি। বরং সোনাদা আলোচনা শুরু করলে, বৌদি উপস্থিত থাকলে, সাদামাটা যে কোন
বিষয়ে কথা শুরু করে আলোচনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা করেন।
আমি বেশ বুঝতে পারি সোনাদা অসন্তুষ্ট হন। কিন্তু কখনই কড়া চোখে বৌদির দিকে
তাকানো বা রাগে অন্ধ হয়ে দুম করে উঠে পড়া, এই জাতীয় কিছু করেন না। বড় জোড় 'আমি এ
সবের কী জানি বল' বা 'এ ব্যাপারে তোর বৌদির অবজারভেশন খুব ভাল', এইরকম কিছু বলে
পরিবেশটাকে হালকা করার চেষ্টা করেন।
তখন সোনাদাকে বেশ ভাল লাগে। এমনকি বৌদির চেয়েও বেশী বুদ্ধিমান এবং পরিশীলিত
মনে হয়।
(দুই)
যখন আমি ক্লাস নাইন টেন-এ পড়ি, তখন প্রথম সোনাদার নাম শুনি। বেশ কয়েকবার চাক্ষুষ দেখেছিও। আলাপ হয়নি। সোনাদা তখন আমাদের এই ছোট মফস্বল শহরটিতে, তবলা বাদক হিসাবে একটি পরিচিত নাম। তবলা শেখার ব্যাপারে আমারও গভীর আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমাদের বাড়ির 'শিল্প সংস্কৃতির ছায়া না মাড়ানো' সদস্যদের কড়া নির্দেশ ছিল, পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু শেখার ভাবনাটা যেন স্কুলের গণ্ডী শেষ করার পর ভাবতে শুরু করি।
কলেজে ভর্তি হয়েই আমি সোনাদার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। রেল স্টেশনের একটু আগে
টালিখোলা অঞ্চলে বাড়ি। ভাড়াবাড়ি। যৌথ পরিবার। বৃদ্ধ বাবা এবং বিবাহিত দুই দাদা
বৌদির সংসারে অবিবাহিত সোনাদা থাকেন। আমাদের শহরের ছোট একটি কারখানায় হিসাব নিকাশের
কাজ করেন। তার সঙ্গে সকাল বিকাল তবলার টিউশন। ছাত্র সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকজন।
তাদের মধ্যে আমি একজন।
অল্পদিনের মধ্যেই সোনাদার খুব কাছের মানুষ হয়ে গেলাম। তবলা শেখার নির্ধারিত
দিনের বাইরে, মন চাইলেই অন্য যে কোনদিন সোনাদার বাড়ি চলে যেতাম। এমনও হয়েছে, কোন
ছাত্র নেই, সোনাদা নিজে প্র্যাকটিস করছেন, আমি তাঁর সামনে বসে দুঘন্টা তিন ঘন্টা
সময় পার করে দিয়েছি। তাঁর বাজনা শুনছি। কব্জিতে ভারি লোহার হাতুড়ি বেঁধে সোনাদা
তবলা প্র্যাকটিস করতেন। ঘরটা আয়তনে ছিল বেশ ছোট। একটা মাত্র জানলা। সেটা খোলা যেত
না। জানলাটার নিচেই ছিল অপরিচ্ছন্ন বিশাল নর্দমা। জানলা খোলা রাখলে নর্দমার
দুর্গন্ধ। তার সঙ্গে মশার উপদ্রব। ছোট মাপের একটা সিলিং ফ্যান ছিল। সেটা মাঝারি
গতিতে ঘুরত। কোন রেগুলেটর ছিল না। গরমের দিনে তবলা বাজানোর ধকলে সোনাদার সারা শরীর
বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ত। সোনাদা চোখ বুজে তবলা বাজিয়ে যেতেন। আর থেকে থেকেই পাউডারের
কৌটোয় হাত ডুবিয়ে, দুহাতের চেটো, আঙ্গুলের
ফাঁকে পাউডার ঘষে নিতেন। কখনও আবার বন্ধ দুচোখ খুলে, ইশারায় জলের বোতল
দেখিয়ে, আমায় নির্দেশ দিতেন তাঁর গলায় জল ঢেলে দিতে। সেই সময় সোনাদা বাজনাটা একটু
স্লো করে দিয়ে নিজের ঘাড়টাকে উঁচুকরে তুলে ধরতেন। আমি তাঁর গলায় জল ঢেলে দিতাম।
এইসব মুহূর্তে আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত তৃপ্তি তৈরী হতো। বইতে যেমন পড়েছি বা
ছবিতেও দেখেছি, গুরুকে মান্য করা, গুরুর সেবা করা, গুরু শিষ্যের পরম্পরা রক্ষা
করা, এই জাতীয় অনুভূতিতে আমার সারামন ছেয়ে যেত। শ্লাঘা তৈরী হতো। সোনাদার প্রতি
কৃতজ্ঞতা বোধ একলাফে অনেকটা বেড়ে যেত। রাতে সোনাদার বাড়ি থেকে ফাঁকা রাস্তায়
সাইকেল চালিয়ে নিজের বাড়ি ফিরতাম যখন, মনে হতো আমিও সোনাদার মতোই তবলাকে আঁকড়ে ধরে
এগিয়ে যাব।
(তিন)
স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। বাস্তবে এ সবের কিছুই হয়নি। কোনরকমে গ্র্যাজুয়েশনের গণ্ডী টপকালাম। বাড়ির লোকের শাসন ধমক ছাড়াই, নিজেই বুঝতে পারলাম, তবলার নেশায় পড়াশোনার বেশ ক্ষতি হয়েছে। তখন বাঁয়া এবং তবলা দুটিকে গরম কাপড়ে মুড়ে পাকাপাকি চৌকির নিচে ঢুকিয়ে দিলাম। চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলাম। কলকাতা যাতায়াত শুরু হলো।
একদিন সকালে সোনাদা আমার বাড়ি এসে নিজের বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করে
গেলেন। আর আমি যে তবলা বাজানো বন্ধ রেখে চাকরির চেষ্টা করছি, এই সিদ্ধান্তে
স্বস্তি প্রকাশ করলেন। গলির মুখে এসে আমার হাত দুটি ধরে বললেন, অবশ্যই আসবি
কিন্তু। আমার পাশে দাঁড়াবি। দাদা বৌদিদের অনিচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করছি বলে,
বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। বিয়ে মিটলে একদিন সব ডিটেলসে বলব।
মাঝে বেশ কিছু বছর সোনাদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এর ওর মুখে শুনতে পেয়েছি,
সোনাদা আর তবলার টিউশন করেন না। নিজেও তবলা বাজান না। চাকরির পাশাপাশি অর্ডার
সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করেন। সার্জিকাল গুডসের।
হঠাৎ একটা ছুটির দিনে সোনাদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল বুনোকালি মন্দিরের সামনে।
সোনাদা মন্দির থেকে বেরোচ্ছেন। কপালে লাল টকটকে সিঁন্দুরের লম্বা তিলক।
ছেলেমানুষের মতো আমার সাইকেলের হ্যাণ্ডেল চেপে ধরে মিনতি করার মতো করে বললেন, আয় না
একদিন আমার বাড়ি। যোগাযোগটা একদম কেটে দিস না। আগের মতো না পারিস, মাঝে মধ্যে আয়।
মানছি আমার বাড়িটা শহরের আউট স্কার্টে, একটু দূরের পথ। তাহলেও ....। এই অব্দি বলে,
ঝপ করে আমার বুকের ওপর নিজের হাতটা রেখে বললেন, তোকে ছুঁয়ে বলছি, তোর বৌদির কাছে
তোর যে কত গল্প করেছি ! একদিন আয়, তখন মিলিয়ে নিতে পারবি, আমার মুখে শুনে শুনে তোর
বৌদি তোকে কতটা চিনে গেছে। নিজের সম্বন্ধে তুই কিছু বলার আগেই দেখবি ও তোর কথাগুলো
বলে দিচ্ছে।
সোনাদা মিথ্যে বলেনি। বাড়িয়েও কিছু বলেননি। প্রথম দিন সোনাদার বাড়ি গিয়ে আমি
সেটা বুঝতে পারলাম। আমার বেশ ভালও লাগল। আমাকে নিয়ে দুজনের মধ্যে এত কথাবার্তা
হয়েছে, ভাবতেই কেমন নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।
আর তারপর থেকেই মাঝে মধ্যে সোনাদার বাড়ি আসাটা ভাললাগার মতো ব্যাপার হয়ে
দাঁড়িয়েছে। যেদিন আসি, যখনই আসি, মনে হয় মনে রাখার মতো, মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটা
অভিজ্ঞতা আজ হবেই হবে।
সোনাদা এখন তবলা বাজান না। অ্যাভারেজ মানুষের মতোই গায়ে গতরে খেটে রোজগারপাতির
চেষ্টা করেন। সোনাদার কথায়, 'খুঁটে খাওয়া'। আর জ্যোতিষ চর্চা করেন। কিন্তু সেটা
পেশাদারি নয়। ভাললাগা, তার থেকে বিশ্বাস। আর আমার মতো পছন্দের দুচারজনের সঙ্গে
এনিয়ে একটু আধটু কথা বলা।
বৌদি সংসারের কাজ করেন। আর পাঁচজন ঘরোয়া মহিলা যেমন করে। সোনাদার সংসারে বৈভব
নেই। অহংকার করার মতো পার্থিব কিছুই নেই। আর এ নিয়ে দাদা বৌদি দুজনের কাউকেই
কোনদিন খেদ প্রকাশ করতে শুনিনি।
অভাবের সংসারেও সন্তানের উপস্থিতি অনেক ফাঁকফোঁকোর ভরাট করে দেয়। সন্তানকে
কেন্দ্র করে বাবা-মার সাধ ইচ্ছে অপূর্ণ স্বপ্ন পূর্ণতার প্রকাশ দেখতে পায়। সোনাদা
এবং বৌদির ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনাও নেই। কারণ তাঁরা নিঃসন্তান।
তারপরেও দুজন মানুষ পরস্পরকে ভালবাসে, দোষারোপের পরিবর্তে একে অন্যের
খামতিগুলি মেনে নেয়, বাইরের কারের সামনে সেটা আড়াল করার চেষ্টা করে, এ ব্যাপারটা
আমাকে যে কি গভীর তৃপ্তি দেয় !
(চার)
অফিসে কাজের ফাঁকে সোনাদার ফোন পেলাম, কাল পরশুর মধ্যে একবার আসতে পারবি ? জরুরী একটা বিষয়ে আলোচনার দরকার ছিল।
বললাম, অফিসে কাজের চাপ রয়েছে। বাড়ি ফিরতে দেরী হচ্ছে। রবিবার সকালে যাওয়া
যেতে পারে।
সোনাদা বললেন, তাই আয়, আলোচনাটা কিন্তু জরুরী।
রবিবার সকালে আমি যখন সোনাদার বাড়ি গেলাম, সোনাদা বাড়ি ছিলেন না। বৌদি বললেন
বাজারে গেছে। এখুনি চলে আসবে। ভালই হয়েছে। তুমি তার আগেই এসে গেছ।
আমি বললাম, আগে এসে গেছি, ভাল হয়েছে, মানে ?
বৌদি মুচকি হেসে বললেন, বলছি।
'ললিত পঞ্চম' নামে একটি উচ্চাঙ্গ সংগীত শিক্ষায়তনের অনুষ্ঠান কার্ড, বৌদি আমার
হাতে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখ।
সংস্থাটির বার্ষিক অনুষ্ঠান পুরসভার হলঘরে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসাবে
উপস্থিত থাকবেন তবলাবাদক স্নেহময় আচার্য (সোনাদা)। আমি প্রথমে একবার, তারপর রুমালে
চোখ মুছে কার্ডটি আর একবার পড়লাম, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আমার বুকের মধ্যে তবলার
সুরেলা বোল বাজতে শুরু করল। বৌদিকে বললাম, এটা তো দারুণ ব্যাপার। যে ছেলেটি 'ললিত
পঞ্চম' স্কুলটা চালায় আমি তাকে চিনি। খুব ভাল গান গায়। অনেক ছাত্র ছাত্রী। আমার
মনে পড়ছে বৌদি, আমি যখন সোনাদার কাছে তবলা শিখতে আসতাম ওই ছেলেটাকে দু একবার দেখেছি।
আপনাদের পুরনো বাড়িতে। বয়সে আমার থেকে অনেকটাই ছোট। সোনাদা ছেলেটার বাড়ি গিয়ে, ওর
গানের সঙ্গে সঙ্গত করতেন। এর জন্য কোন মাইনে নিতেন না। মাইনে দিয়ে তবলচি রাখার মতো
আর্থিক অবস্থা ওদের ছিল না।
- আমি ঠিক অতটা
জানি না। বৌদি বললেন, তোমার দাদার মুখে শুনলাম ছেলেটা পরিশ্রম করে, রীতিমত লড়াই
করে, আজ একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
- শুধু ওইটুকু নয়।
ছেলেটার যথেষ্ট কৃতজ্ঞতাবোধ আছে। তার আজকের হয়ে ওঠার পেছনে যে সোনাদার অবদান আছে
এটা সে এত বছর পরেও মনে রেখেছে।
- কিন্তু তোমার
দাদা যে রাজি হচ্ছে না। বৌদি বললেন।
আমি বললাম, কী ব্যাপারে
?
- অনুষ্ঠানে যেতেই
চাইছে না।
- কেন?
- সেটা দাদার মুখ
থেকেই শুনো।
অল্পক্ষণের মধ্যেই সোনাদা বাড়ি ফিরলেন। 'ললিত পঞ্চম'-র আমন্ত্রণ পত্রটি আমি
হাতে ধরে আছি দেখে, হেসে বললেন, তার মানে আমাকে গোড়া থেকে কিছু বলতে হবে না।
রিপোর্টিং হয়ে গেছে।
আমি বললাম, এটাই কি আপনার জরুরী আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ?
সোনাদা ঘাড় নাড়লেন, একদম ঠিক তাই।
- আলোচনার আর কোন
প্রয়োজন নেই। আমার স্পষ্ট মত, আপনি যাবেন। যাওয়া উচিত।
- কিন্তু কিভাবে ?
সোনাদা আমার মুখের দিকে চেয়ে বললেন।
- আমন্ত্রণ পেলে যেভাবে
যায়। প্রধান অতিথি তো, তাই ধুতি না হোক অন্তত পাজামা পাঞ্জাবী পরে যাবেন। সংগীত
অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্যান্ট সার্ট ঠিক মানায় না।
- দূর বাবা ! সোনাদার গলায় অধৈর্য ঝরে পড়ল, আমি তো ওখানে গেলে
অপ্রস্তুতে পড়ব। অপদস্থ হব। রাহু শনির সর্বনেশে যোগ। তার সঙ্গে আগামী দুমাস বুধের
ফের। বুধ নীচস্থ। বক্রি অবস্থান। কে বাঁচাবে আমায় অপমানের হাত থেকে ?
সোনাদার কথায় খুব বিরক্ত বোধ করলাম, সোনাদা প্লীজ, একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
একটি ছেলে গুরুদক্ষিণা দিতে চাইছে। সেটাকে অবজ্ঞা করা মানে, সংগীত কলাকে অপমান করা
!
আমার কথায়
সোনাদা চমকে তাকালেন, আমি যে এমনটা ভাবিনি, তা কিন্তু নয়, বিশ্বাস কর। কিছু বলতে বললে,
দু-চার কথা বললাম। কিন্তু যদি একটু বাজাবার অনুরোধ করে, তখন ?
- অল্প একটু
বাজাবেন।
- কীভাবে ?
সোনাদার গলা অসহায়ের মতো শোনাল, যে পাখি উড়তে পারত, তাকে দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দী
করে রেখে, হঠাৎ করে খাঁচার দরজা খুলে দিলে, সে ফুড়ুৎ করে উড়ে যেতে পারে ? খাঁচায়
বন্দী থেকে তার ডানা ভারি হয়ে যায়। চাইলেই সে উড়তে পারবে না। আমারও তো সেই একই
দশা। দীর্ঘদিন তবলায় হাত ছোয়াইনি। দুটো হাত ভারি হয়ে গেছে। এতটা ভারি যে, চাপড়ই মারতে
পারব না। তবলায় বোল ফোটা তো দূরের কথা, টুং টাং শব্দও বেরোবে না।
- ঠিক আছে। আমি
বললাম, বাজাবেন না। মিধ্যে করে বলবেন, আপনার শরীর অসুস্থ। তা সত্ত্বেও এসেছেন ওই
ছেলেটা আর তার ছাত্র ছাত্রীদের আশীর্বাদ করার জন্য।
- এটা উদ্যোক্তারা
মানবে ?
- মানবে শুধু নয়,
আপ্লুত হবে। কারণ আপনার মতো একজন সিনিয়র শিল্পীর আশীর্বাদ, শুভকামনা, যারা শিখছে,
তাদের কাছে এ বড় কম পাওয়া নয়।
বৌদি জোরালো সমর্থন করলেন, ঠিক বলেছ। তোমরা দাদার আশীর্বাদ যেমন দামি, তেমনই
তাদের সম্মান গ্রহণ করাটাও সৌজন্যের মধ্যেই পড়ে। তাই না ?
বৌদি এমন চমৎকার করে বললেন, আমি রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গেলাম, দারুন বলেছেন বৌদি ! শব্দচয়ন,
তার সঙ্গে অকট্য যুক্তি। ফাটাফাটি।
(পাঁচ)
স্টেজের ওপর উজ্জ্বল আলোর মধ্যে চেয়ারে বসা সোনাদাকে চিনতেই পারছিলাম না।
বৌদি আমার পাশে বসে। নিচু গলায় করে বললেন, তোমার দাদার চোখমুখের চেহারাই
পাল্টে গেছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে, ওর ভাল লাগছে। খুশি হয়েছে।
একমাথা কাঁচাপাকা চুল। পরনে পাজামা পাঞ্জাবী। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে নীলপাড়
সাদা উত্তরীয় গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুন্দর একটি ফুলের বুকে, যেটি সোনাদা কোলের
ওপর রেখে বসে রয়েছেন। সোনাদা মাঝখানে বসে আছেন। তাঁর দুপাশে আরও দুজন মানুষ।
এই তিনজনকেই সম্বর্ধিত করা হয়েছে। তিনজনে একসঙ্গে মিলিতভাবে প্রদীপ জ্বালিয়ে
অনুষ্ঠানের সূচনা করেছেন।
'ললিতপঞ্চম' আজকের এই মূল অনুষ্ঠানটির আগে, মাসাধিককাল সময় ধরে সঙ্গীত এবং
বাদ্যের প্রতিযোগিতা করেছে। বয়সের নিরিখে ক খ গ এই তিনটি বিভাগে ভাগ করে। সফল
প্রতিযোগিদের পুরস্কৃত করা হলো। সোনাদা তাদের অনেকের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন।
তারা প্রত্যেকে সোনাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। সোনাদাও তাদের মাথায় হাত ছুঁইয়ে
আশীর্বাদ করলেন।
আমি অনুষ্ঠানের শুরু থেকে সব ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছি।
বৌদিকে বললাম, এক সপ্তাহের মধ্যে ছবিগুলো তৈরী করে আপনার বাড়ি পৌঁছে দোব। যত্ন
করে রাখবেন।
বৌদি বললেন, নিশ্চয়ই। সোনাদানার চেয়ে ছবিগুলো কি কিছু কম দামী ? বলো ?
সোনাদা তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণটিও ভালই বললেন –
তোমাদের বড় হতে হবে। অনেক বড়। আমি এমনটাও চাই, তোমরা তোমাদের গুরুকেও টপকে
যাও। এই কথাটা বললেন যখন, হলজুড়ে শ্রোতারা একসঙ্গে তালি বাজিয়ে উঠল। আমি লক্ষ্য
করলাম, বৌদির সারা মুখ জুড়ে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা। আর সেই ঘোরের মধ্যেই বৌদিও তালি
বাজাচ্ছেন।
তবলার একটি বোল
বলে আমি আমার কথা শেষ করছি। সোনাদা বললেন, আমার গুরুর গুরু বেনারসের ওস্তাদ রাম
সহায় এই বোলটি বাজাতেন। শুনতে নাচের বোলের মতো। আসলে এর চলনটাই আলাদা।
মাইক্রোফোনটিকে সোনাদা একটু কাছে টেনে নিলেন। তারপর চোখ বুজে কপালে হাত ছুঁইয়ে
শুরু করলেন,
তাক্ থুন্না কেটে তাক্
তেরে কেটে তিক্ ক্রান ধা
ক্রান তা কেটে তাগ্
তিৎ ক্রান তা
নাগ তেরে কেটে তাক্ ক্রান ধা
নাগ তেরে কেটে তাক্ ক্রান ধা
তখন সারা হল জুড়ে সুগভীর নিস্তব্ধতা। সোনাদা মুহূর্তকাল চুপ করে থেকে, বন্ধ দুচোখ খুলে দুটি হাত জড়ো করে প্রণাম জানালেন শ্রোতাদের উদ্দেশে। আর মুহূর্তে করতালির শব্দ ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল। হলঘরের খোলা দরজা জানলা দিয়ে সে শব্দ বাতাসে ভর করে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল।
বৌদিকে বললাম, সোনাদার বক্তৃতা আমি আমার মোবাইলে ভরে নিয়েছি।
বৌদি কিশোরী মেয়ের মতো আবেগ উচ্ছ্বসিত গলায় বললেন, সত্যি !
(ছয়)
বৌদিকে কথা দিয়েছিলাম অনুষ্ঠানের ছবিগুলি এক সপ্তাহের মধ্যে ওনার বাড়িতে পৌঁছে দেব। ওয়াশ ইত্যাদি পর্ব মিটিয়ে ছবিগুলি তৈরীও হয়ে গেছে। ছুটির দিনে সাংসারিক কাজের চাপে সময় বার করতে পারিনি। আজ অফিস থেকে ফিরে মনে হলো, যত দেরীই হোক, আজ রাতেই আমি ছবিগুলি পৌঁছে দিয়ে আসব।
সোনাদার বাড়ি হুগলী মোড় পেরিয়ে, কানাগড় বাজার পার হয়ে, রেললাইন টপকে ওপাশে আরও
একটু পথ যেতে হবে। আসা যাওয়া মিলিয়ে কয়েক মাইল সাইকেল চালাতে হবে।
এখন আশ্বিনের শেষের দিক। বাতাসে ভ্যাপসা গরম ভাবটা নেই। ভরা পূর্ণিমা। থালার
মতো বড় চাঁদ আকাশের গায়ে। সাদা আলোয় অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। জি.টি. রোড
ছেড়ে যখন স্টেশন যাওয়ার রাস্তাটা ধরলাম, চারপাশের পরিবেশটা যেন আরও মনোরম হয়ে উঠল।
পথের একপাশ জুড়ে চাষের জমি। কোথাও ধান, কোথাও আনাজ ভর্তি মাঠ। অন্য পাশে বট অশ্বথ
জাম কাঁঠালের বড় বড় গছ। মাঝে মাঝে জলাশয়। তার চারপাশ ঘিরে আকাশ সমান মাথা উঁচু করে
দাঁড়িয়ে সারি সারি তালগাছ। আর এইসব গাছের ভিড়ে ফাঁক ফোঁকরে মানুষের বসবাস। পাকা গাঁথনি।
মাথায় টালি টিন বা অ্যাসবেসটার ছাওয়া মাঝারি বাড়ি। সোনাদার বাড়িটাও তেমনি।
অন্যদিনের মতো আজও উঠোনের বাঁশের দরজাটা ঠেলে সরিয়ে, 'সোনাদা' বলে ডাকতে গিয়ে
থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মুহূর্তের জন্য মনে হলো আমি কি ভুল কোথাও এসে হাজির হলাম ! ঘরের
দরজা হাট করে খোলা। সেই খোলা দরজা দিয়ে নারীকণ্ঠের গান, 'ম্যায় তো চলে পাছা' আর
তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তবলার ঠেকা, দুই-ই যেন তীব্র আকুতি নিয়ে বদ্ধ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে
আসতে চাইছে।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি,
সোনাদা দরজার দিকে পিছন ফিরে বসে তবলায় ঠেকা দিচ্ছেন। আর সোনাদার মুখোমুখি বসে
দুচোখ বুজে বৌদি মারুবেহাগে সুর বেঁধেছেন, 'ম্যায় তো চলে পাছা'।
আলতো করে ডাকলাম, একবার, তারপরে আরও একবার, সোনাদা।
বৌদি চমকে উঠে দুচোখ খুলে, অবাক গলায় বললেন, শৈবাল ? কখন এসেছ ?
আমি বললাম, এইমাত্র।
- ভেতরে এসো।
আমি ঘরে ঢোকা মাত্র বৌদি যেন খুব লজ্জা পেয়েছেন, এমনি দ্রুততায় রান্নাঘরের
দিকে ছুটে গেলেন।
সোনাদা বললেন, বস। তবলা থেকে হাত নামিয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে হাসলেন, খুব
অবাক হয়ে গেছিস, তাই না ?
- অবভিয়াসলি ! আমি বললাম, বৌদি ক্লাসিকাল গান জানেন, আপনি তো
বলেননি কোনদিন !
- বলার সুযোগ
পেলাম কোথায় ? মাঝের সতের আঠারোটা বছর কোথায় যে হারিয়ে গেল !
- মন খারাপ করবেন
না। যে কোন সময়েই নতুন করে শুরু করা যেতে পারে। আর অধীত বিদ্যা তো ভোলার নয়।
- সোনাদা সমর্থনের
ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন, তা ঠিক। বিশ্বাস কর শৈবাল, সেদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে কেমন যেন
চার্জড হলাম। ভেতর থেকে নাড়া দেওয়া বুঝিস, সেইরকম একটা কিছু ঘটে গেল। মনে হলো আর
চুপচাপ বসে থাকা নয়।
- কিন্তু আপনার ! বলে আমি
সোনাদার মুখের দিকে চেয়ে হাসলাম।
- কী ? সোনাদা
উদগ্রীব গলায় জিজ্ঞেস করলেন।
- রাহু শনি বুধ
শুক্র এইসব গ্রহের ফের ? একটু থেমে বললাম, তাদের বর্তমান অবস্থান ?
সোনাদা মাথা দুলিয়ে বললেন, জানি না। তবে মনে হচ্ছে সময়ের অভিমুখটার বদল ঘটছে।
এই সময়ে ফোকাসটাকে ঠিক রেখে, লেগে থাকতে হবে। ব্যাস, তাতেই হবে।
সোনাদার কথায় আমার ভিতর থেকে কে যেন আনন্দের রাশ ঠেলে দিল। আনন্দের আতিশয্যে
বলে উঠলাম, কেয়াবাত, কেল্লাফতে ! আপনি আবার বাজাবেন। আপনার বাজনার সঙ্গে
বৌদির গান ! এই
দুইয়ে মিলে দারুণ একটা হৈচৈ-এ ব্যাপার হবে। আপনি মিলিয়ে নেবেন। আজ এই ফাঁকাঘরে কোন
শ্রোতা নেই। কিছুদিন পরে হলভর্তি শ্রোতার সামনে বসে বৌদি গাইবেন। তার সঙ্গে আপনি
সঙ্গত করবেন। শ্রোতারা মাথা দোলাবে। আর অবাক চোখে আপনাদের দুজনের দিকে চেয়ে থাকবে।
- এখনও তো তেমনটাই
হচ্ছে। সোনাদা বললেন।
আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, তার মানে?
সোনাদা মেঝে ছেড়ে উঠে জানলার কাছে গেলেন। ইশারায় আমায় ডাকলেন।
আমি সোনাদার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্র, আমার পিঠে একটি হাত রেখে, অপর হাতটি
জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে ফিসফিসে গলায় আঙ্গুল তুলে দেখালেন, ওই দেখ,
আমাদের গান বাজনা শুনে আকাশের চাঁদ কেমন থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সাদা আলো গায়ে মেখে
দাঁড়িয়ে গাছগুলো কেমন বুঝদারের মতো অল্প অল্প মাথা দোলাচ্ছে। আর এপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে
ঐ পুকুরটাকে দেখ। জলও কেমন তিরতির করে কাঁপছে। তার মানে ওরও ভাল লাগছে। মুগ্ধ
শ্রোতারা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভাললাগা জানান দিচ্ছে, যে যার মতো করে! চারপাশ
আনন্দে ভাসছে।
সোনাদার চোখমুখের চোহারায়, কথাবলার ভঙ্গিমায় কিসের যেন ঘোর লেগেছে।
আর আমিও যেন সেই ঘোরে !
সোনাদার পাশে দাঁড়িয়ে। নির্বাক।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন