কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৪


বিহিতাবলী

আচমকাই শব্দটা ভেসে এল।

-এই তমালি, ডান গালটা একটু বাঁদিকে ঘোরাও।

আমি বলতে চাইছি 'তুমি কি ছিলে আর কি হইয়াছ' এইভাবেই বলতে হবে। সর্দি লেগেছে?  তবে গলা ধরল কি করে? না, এখানে অবাক চিহ্ন, এখানে জিজ্ঞাসার। আসলে কৃষ্ণর চিত্রনাট্যের কর্ণাজুন কেউ সংলাপ মুখস্থ করে আসেনি। তাহলে বুঝতে পারলে, কোথায় জিজ্ঞাসার চিহ্ন আর কোথায় বিস্ময়বোধক? বুঝবে কী করে, বাংলা ব্যাকরণ পড়েছ? পানচুয়েশান? যতিচিহ্ন? কিছুই বোঝনা, কি করে বুঝবে? তোমাগো বিস্ময়ও নাই, বোধকও নাই।

বিদুর সেন কুমির। যার উপর পড়ে তার নজর, তার আর নিস্তার নেই। পা টেনে রওনা দেবে, এক্কেবারে নদীর ওপারে। হ্যাঁ, মাতা কুন্তীর কোলে কর্ণের মাথা।  সন্তানের মৃতদেহ বুকে চেপে কুন্তী চুমু খাচ্ছে আর হা কর্ণ, হা কর্ণ, বলে আর্তনাদ করে চলেছে। বিদুর সেন বলল আর নয়, অনেক হয়েছে।

তমালি উঠে পড়ার সময় বলে গেল, রাতে দেখা হবে।

অশোক খানিকক্ষণ শুয়ে রইল। নক্ষত্রবিরল মেঘার্ত আকাশ, মাঠের উপর থেকে কর্ণকুন্তী দৃশ্য সংগমে আরও একটি ছায়ার আনাগোনা দেখা যাচ্ছিল।  দুরের তাঁবুতে আলো দেখা যায়, আর একটু বাদে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা খাবার তোড়জোড় শুরু হবে। শ্রান্ত সে, তবু তার তাঁবুতে ফেরার ইচ্ছে নেই। খোলা মাঠে সে বিছিয়ে সটান যথা মৃত্যুর পরে। যথা যবনিকা পতনের আগে ও পরে। কন্ঠনালী জলের অভাবে রুক্ষ আর কর্কশ মনে হয়। অশোক যেন ধীরে হালকা --  বেজায় হালকা পালকে তার সমস্ত দেহ একটা পাখির মত--'আকাশ যার প্রাণ সেই পাখির মত-- কিন্ত গলা যে শুকিয়ে যায় --

ভীম হয় মনিদা -- বলল, খিচুড়ির হাঁড়ি আমি একা নামাতে পারবো না। খিচুড়ির ফোড়ন, ঠিক মত দিতে না পারলে বক্স অফিসে ভীড় হয় না --

বিদুর সেন চুপ করে শুয়ে আছে। আজ তার মনটা অশান্ত।  অথচ মহাভারতের কুন্তী কিন্ত মনে ও মাংসে অশোকের।  কৃষ্ণের সখা --  কেমন এক মেয়েলি গন্ধ এই বাক্যাংশের অর্জুন। আর যে আমার সংগ পেতে বিরাটরাজার পরিবারের রাঁধুনি, কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধে যে কৃষ্ণের কৃপা ছাড়া একজন প্রকৃত বীরকেও যুদ্ধে মারতে পারেনি সে কী করে শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হয়? মাছের চোখ --- সেও সেই কৃষ্ণের দৌলতে। রূপবান, কিন্ত কামুক মনে হয়নি কখনও। অন্য দিকে সমগ্র মহাভারতে কর্ণই একমাত্র পুরুষাকার। অর্জুন তো শশ্রুগুম্ফহীন মাকুন্দ একটা। আমাদের পালায়ও অশোক তেমন কর্ণের। জিম করা সাজানো মাংসপেশী যেন কামুকতার সাক্ষাৎ উদাহরণ। তমালির শরীর পুরো ভেজা, জ্বলন্ত আখায় চেপে রাখতে হয় গতর এমনতর মুখের ভাব। আচমকাই শব্দটা ভেসে এল। ছুটল সে মাঠে।

খিচুড়ি হল? গরম? ডিম ভাজা?

 

 



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন