কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

রোমেনা আফরোজ

 

কবিতার কালিমাটি ১৪৪


আমি মরেছি চুমুর অভাবে

 

প্রতিদিন কত মানুষ কতভাবে মরে যায়

আমি মরেছি চুমুর অভাবে।

একটা বিশুদ্ধ চুমুর অভাবে সকালকে শুনিয়েছি নারীবাদী গল্প

দুপুরকে বলেছি, ভিক্ষা নেই

সন্ধ্যাবেলায় জ্বেলেছি মাটির প্রদীপ,

রাতকে নিষিদ্ধ করেছি শরীর থেকে

তবুও অন্ধকার আসে, নিত্যদিন চৌকাঠ মাড়িয়ে কেউ শেকল খোলে,

বুকের ভেতর বাজার বসায় শকুন পাখি

একটা মাঠ অপেক্ষা করে লাল শাড়ির

তবুও কেউ আমার অপেক্ষার নাম দেয়নি।

তাপসী মরেছে বুকের ব্যারামে

সুখের সন্ধানে গিয়ে ফেরত আসেনি তার স্বামী

সমাজ মরেছে সুদের কারবারে

দেশটা মরছে কুশিক্ষায়,

আর আমি মরছি চুমুর অভাবে

একটা চুমুর অভাবে আমার হাড়ের ভেতর গড়ে

উঠেছে পৃথিবীর বৃহত্তম শশ্মানভূমি।

 

চন্দ্রবিন্দু

 

আমি হলাম চন্দ্রবিন্দু, আমাকে মুছে ফেলার জন্য কেউ বৃষ্টির অপেক্ষা করেনি। দাঁড় করায়নি অজুহাত। তারপরেও বেহায়ার মত সমস্ত অপমান, ধূলিকণা ঝেড়ে  উঠে দাঁড়াই। আলাপ জমাই। নিজেকে রাখি ভুল পাত্রে। আমি হলাম বাণের জলে ভেসে আসা লাশ,  কেউ ভালোবাসেনি আমাকে। কেউ ফিসফিস করে বলেনি, আমার তোমাকেই লাগবে। নদী যেমন সাগরকে ভালোবাসে, চাঁদ যেমন অন্ধকারকে, তেমন ভালোবাসা আমি কারো চোখে দেখিনি। কেউ হাত ধরে বলেনি, চলো পালাই। রোজ তোমাকে ভালোবাসার গল্প শোনাব!

 

বেনামী রোদ্দুরে ভিজে আছি

 

তোমার আলিঙ্গনের ভেতর  হলুদ ক্রিসেন্থিমাম ফুঁটেছিল উৎসবের মত। এক একটি আঙুল ছুঁয়েছে  নির্ঘুম রাতের যন্ত্রণা, পথশ্রম।  তোমার ঠোঁট ছুঁয়েছিল কপাল নাকি তুমি স্পর্শ করেছো আমার নিয়তি? তোমার স্বাগত ভঙ্গিমা বলে দেয়, জলপাইবন এবং শান্ত নদীর কথা। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, তোমার ক্ষুধা-পিপাসা ঘুমিয়েছিল প্রভুভক্ত কুকুরের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে। তবে তুমি কিসের আয়োজনে আগুন রেখেছো দু'চোখে? কী পোড়ানোর নেশায়  নিয়তিকে স্পর্শ করেছো  দু’হাতে? জানি, আমাদের প্রেমের সংবিধান নেই। আমরা শুধু আকাশ ছোঁবার আশায় জেগে উঠি মধ্যরাতে।  ক্রুশবিদ্ধ করি সমুদ্র। ওটুকু হেঁটে গেলে যে যার পথে ফিরে যাব। পূর্ণমিলনের অপেক্ষায় কোথাও না কোথাও

 ক্রিসেন্থিমাম ফুটবে বেনামে।

 

(১)

 

জুলাই শেষে একটা স্বপ্ন বেঁচে আছে

একটা স্বপ্ন রাতভর ভিজতে থাকে মন্টিনি শহরে

তোমার আঙ্গুল আমার পিঠে রোজ লিখে যায় অলীক স্বপ্ন।

আমার জামদানি আর তোমার  পাঞ্জাবি একসাথে ভেজার অপেক্ষায় প্যারিস শহরে খুঁজতে থাকে অনুকূল বাতাস৷

তুমি একে আশ্রয় দাও, প্রেম দাও, বাঁচিয়ে রাখো,

তোমার বুকে আশ্রয় পেলে আমাদের স্বপ্ন  ক্রিসেন্থিমাম হয়ে ফুটবে। আইফেল টাওয়ারের মত ছুঁয়ে যাবে নীল আকাশ।

 

(২)

 

তোমার শহরে এসে আবিষ্কার করেছি, ভালোবাসা  আকাশের মত বিস্তৃত। আইফেল টাওয়ারের মত  একরোখা। বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো রক্তাক্ত। এবার সেন নদীর দিকে তাকাও, বলো, এই সত্যকে স্বীকার করার ক্ষমতা নিয়ে  ক’জন জন্মায়?  তুমি সাদা পাঞ্জাবির বোতামে  সত্য লুকাও এমনভাবে, যেমন মানুষ  প্রতিদিন লুকায় মৃত্যুকে।  আমিও সুঁই সুতা দিয়ে সেলাই করে দিয়েছি গোপনীয়তা, বারুদের গন্ধ।  আমাদের দুজনের মাঝে বাঁশের নড়বড়ে সেতু, ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছে, এর অস্তিত্ব শুধু দীর্ঘশ্বাস জানে কিংবা বাতাসের কাছে আছে  ঠিকানা। আমাদের কবিতা আলোকিত হয় অন্ধকারে। ভোরের আলোয় মিলিয়ে যায় নক্ষত্রের অবস্থান। আমরা রাতভর বৃষ্টিতে ভিজে নির্মোহ ভঙ্গিতে এগিয়ে যাই সমুখে। এমন বিসর্জনেও বেঁচে আছি, যেমন বেঁচে থাকে চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল।

 

 

বিস্ফোরণ

 

তোমার মত দেবতাদের জন্যই বসন্ত আসে। আগুন জ্বলে। পোড়ে আদরে বেড়ে উঠা রাজহাঁস। আমার জন্য বসন্ত এক অলিখিত সশস্ত্রযুদ্ধ। বসন্তে আমি পারমাণবিক বোমার মত বিস্ফোরিত হবার আশঙ্কায় থাকি।  হাড়ের ভেতর শীত ডালপালা মেলে দেয়।  শরীর আর মনের বিবাদে বিষাক্ত হয়ে উঠে বাতাস,  বিষয়-সম্পত্তি ।  তাই আজ দূরের  ঘাসবনে, পর্বতচূড়ার নিঃসঙ্গতায় বুদ্ধের শরণাপন্ন আমি।  এই চিলেকোঠার বনবাসে, দূর আকাশের দিকে তাকালে, তোমাকে মনে পড়ে।  মনে পড়ার চেয়েও বেশি নিকটে  বসে ছিলে তুমি। আজ সর্বত্র বৃষ্টি নেমেছে। অনন্ত বৃষ্টিতে ভিজে আমি লিখছি গ্রীষ্মকালীন কবিতা।

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন