কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

অজিত বাইরী

 

কবিতার কালিমাটি ১৪৪


ইলিউশন

    

লোকটাকে আমরা দৌড়োতে দেখছিলাম;

তার পায়ের পেশী ফুলে ফুলে উঠছিল,

তার সারা শরীর চুইয়ে ঝরছিল ঘাম,

তাকে ওভাবে দৌড়োতে দেখে

বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে

পলক ফেরাতে পারছিলাম না।

আমরা উত্তেজনায় আর আবেগে করতালি দিচ্ছিলাম,

আমাদের মুহুমুহু করতালি আর থামছিল না।

 

আধঘণ্টা পর আমরা যখন নিরস্ত হলাম,

দেখলাম, লোকটা যেখান থেকে দৌড়

শুরু করেছিল ঠিক  সেই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে আছে

এক পা-ও এগোয়নি সামনে।

 

আমাদের কৈশোরকালে

যোগেশ দত্তের

এই দৌড় দেখেছিলাম, তিনি যে জায়গা

থেকে দৌড় শুরু করতেন, সেখান থেকে

একচুলও নড়তেন না।

 

আজ, পরিণত বয়েসে এসে একই দৌড় দেখছি;

দেশ দৌড়োচ্ছে, সমাজ দৌড়োচ্ছে, জনগোষ্ঠী  দৌড়োচ্ছে;

কিন্তু কেউ একতিলও সরছে না।

 

কবি

 

গঙ্গার ঘাটে পুড়ছিল লোকটা, তার কোন

জাত ধর্ম ছিল না;

সে ছিল নির্ভেজাল কবি।

 

গঙ্গার ঘাটে পোড়ার আগেও পুড়েছে জীবনভর;

মানুষের সংস্রবে থেকে মানুষের থেকে পেয়েছে  অবহেলা, বঞ্চনা।

কবি ছিল বলে মর্যাদা ছিল না সমাজে।

কবি ছিল বলে উপেক্ষা সয়েছে সংসারে।

সকার বন্ধুরা তাকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি।

কবি পরিচয় পেয়ে নিয়োগকারিরা তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছে।

অর্থ, যশ কোন কিছুর প্রতিই ছিল না তার মোহ;

সে শুধু কবি হতে চেয়েছিল।

 

সেই নির্লোভ লোকটা এখন পুড়ছে গঙ্গার ঘাটে ।

আর গঙ্গাপাড়ের দামাল হাওয়া

উসকে দিচ্ছে চিতার আগুন।

লোকটা কি পুড়ে ছাই হচ্ছে?

না কি মানুষ ও সমাজের প্রতি তীব্র বিদ্রূপে

আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে

হা-হা হাসছে?

 

দূরবীনটাকে উল্টো করে ধরো 

 

দূরবীনটাকে উল্টো করে ধরো,

বিশ্বলোক দেখুক তুমি কত ক্ষুদ্র, কত নগণ্য ।

কোলাব্যাঙের মতো পেট ফুলিয়ে ভাবছো,

অক্লেশে একলাফে পার হবে সমুদ্র;

অথচ ক্ষুদ্রতম ডোবাও

অতিক্রমের সাধ্য নেই তোমার।

মানুষ, তুমি দাঁড়িয়ে আছো ক্ষুদ্রতম দ্বীপের উপর।

আর ভাবছো,

তোমার সমতুল্য ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের অধিকারী কেউ নয়।

গ্যাসবেলুনের মতো তুচ্ছ আত্মগর্ব

যে-কোন-মুহূর্তে চুপসে যাবে।

দূরবীনটাকে তুমি ভুলভাবে ধরে আছো,

উল্টো করে ধরো।


1 কমেন্টস্: