কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৪

ফ্রেন্ড

বন্ধুত্বটা এমন একটা উচ্চতায় অথবা নিম্নতায় নিয়ে গেছিল রেনিটা যে, মাঝে মাঝে খেয়াল থাকত না  দেবু তার বয়ফ্রেন্ড অথবা শুধুই ফ্রেন্ড! রেনিটা নামটার মধ্যে যদিও একটা বিদেশী গন্ধ আছে, কিন্তু রেনিটা বিদেশি নয়, কখনও দেশের বাইরে যায়নি, বরং নিতান্তই পাতি বাঙালি মেয়ে। শুধু তাই নয়, পড়াশোনার মাধ্যম আদৌ ইংরেজি নয়, নিছকই বাংলা, ইস্কুল বিন্দুবাসীনি বালিকা বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয় থেকেই রেনিটা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে এখন যদুপতি মিত্র স্মৃতি কলেজে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছে। এহেন রেনিটা সুন্দরীর সঙ্গে দেবুর বন্ধুত্বটা কখন ও কবে পেকে উঠেছিল, তার খোঁজ কেউ রাখেনি। বিশেষত দেবু নিতান্ত বাচ্চাবস্থা থেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে এখন সেন্ট পলস কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ছে। বাংলাভাষার সঙ্গে তার কোনো সখ্যতা নেই, ভাষাটা বলতে শিখলেও পড়তে বা লিখতে শেখেনি। অথচ সেই ইংরেজি মাধ্যমের সঙ্গে বাংলা মাধ্যমের এমনই সম্পর্ক তৈরি হলো যে, যে সম্পর্ককে তা্রা বিশ্বাস করে বন্ধুত্ব রূপে, যে বন্ধুত্বে কোনো লিঙ্গভাবনা নেই, বলা যেতে পারে লিঙ্গনিরপেক্ষ। রেনিটা ইংরেজি আর দেবু বাংলাটা ঠিক না শিখলেও, দুজনে খুবই শিক্ষিত হয়ে উঠেছিল বাংলা ও ইংরেজি গালাগাল ও খিস্তিতে। সঙ্গে হিন্দীতে অপশব্দ ব্যবহারেও তারা ছিল সমান পটু। বস্তুত তাদের দুজনের বন্ধুত্বের কোনো তুলনাই হয় না। তাদের দুই পরিবারের মধ্যে ভাব ভালোবাসা অনেকদিনের। একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একই অফিসের সহকর্মী ছিলেন তাদের দুই বাবা। স্বাভাবিক নিয়মেই দুই মায়ের মধ্যেও জমে উঠেছিল মিতালি। হয়তো সেই সূত্রেই ছেলেবেলা থেকে গভীর বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল রেনিটা ও দেবুর মধ্যে।

তা বন্ধুত্বটা নিঃসন্দেহে খুবই জমাট ছিল। রেনেটা ও দেবুর মা-বাবাও নিশ্চিন্ত ছিলেন দুজনের সম্পর্কে। তাদের ঘনিষ্ঠ মেলামেশা নিয়েও বিন্দুমাত্র চিন্তিত ছিলেন না। যদিও তাঁরা লক্ষ্য করেছিলেন, রেনেটা ও দেবুর সম্পর্কটা যেমন ভাই-বোনের আদৌ ছিল না, তেমনি প্রেমিক-প্রেমিকারও ছিল না। এমনকি তারা পরস্পরের শরীর সম্পর্কেও নেহাতই উদাসীন ছিল। তাঁরা অবাক হয়েছিলেন, যখন দুই পরিবার একসঙ্গে পুরী বেড়াতে গিয়ে একদিন দেখেছিলেন, রেনেটা হোটেলের ঘরে দেবুর সামনেই তার পোশাক পরিবর্তন করেছিল। না, রেনেটা বা দেবু, কারোও এব্যাপারে কোনো দ্বিধা বা দুর্বলতা ছিল না। কোনো আকর্ষণ ছিল না। নারী শরীরের প্রতি দেবুর এই উদাসীনতা দেবুর মাকে উদ্বিগ্ন করেছিল। আর সেই উদ্বিগ্নতাই তাঁকে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল, যেদিন তিনি নিজের বাড়িতেই এক দুপুরবেলা একটি ঘরে একই বিছানায় দেবু ও রেনেটাকে শুয়ে থাকতে দেখলেন। দুজনেই ঘুমোচ্ছিল। তাদের বিস্রস্ত দুটি শরীরের মধ্যে কোনো ফাঁক ছিল না। ছিল না কোনো শারীরিক অন্তরঙ্গতার প্রত্যাশিত বিভঙ্গ।

কথাটা তিনি চেপে রাখতে পারেননি। রেনেটার মাকে গোপনে বলেছিলেন, আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তোর মেয়ের সঙ্গে একদিন আমার ছেলের বিয়ে হবে, তার তো কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

শুনে দুঃখের হাসি হেসেছিলেন রেনেটার মা। বলেছিলেন, আমার মনে হয় ওরা দুজনেই আসলে সমকামী!

 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন