কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

হ্যান কাং-এর গল্প

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

হ্যান কাং-এর গল্প

(ভাষান্তর - অদিতি ফাল্গুনী)




 

(লেখক পরিচিতিঃ দক্ষিণ কোরীয় লেখক হ্যান ক্যাং ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন, ‘তাঁর তীব্র  কাব্যিক গদ্যের জন্য যা ঐতিহাসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয় এবং মানব জীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে।’ মাত্র ৫৩-বছর বয়সী এই নারীলেখক প্রথম দক্ষিণ কোরীয় যিনি এই পুরস্কার পেলেন এবং সাহিত্যে এ পর্যন্ত ১২১ জন বিজয়ীর ভেতর তিনি অষ্টাদশতম। একই সাথে তিনি একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং দৃশ্যগ্রাহ্য শিল্পকলায় আগ্রহী।

হ্যানের সেরা উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ (২০০৭ সালে কোরিয়াতে প্রকাশিত) ২০১৫ সালে প্রথম  ইংরেজিতে অনূদিত হয়। ২০১৬ সালে এই বইটি ম্যান ব্যুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভ‚ষিত হয় এবং পুরস্কারের অর্থ হ্যান কাং ও তাঁর অনুবাদক ডেবোরাহ স্মিথের ভেতর সমান ভাগে ভাগ হয়। এসময় স্মিথের অনুবাদ মূল গ্রন্থের মূলানুগতা কতটা রক্ষিত হয়েছে সে বিষয়ে বিতর্কের ঝড় তোলে। কিন্ত এটাই অনুবাদ সাহিত্যের সৃজনশীল সৌন্দর্য অনুবাদ নিজেই যেখানে একটি সৃষ্টি: এটি একটি কল্পনাপ্রবণ  অনুশীলন, অক্ষরে অক্ষরে তর্জমা নয়, এবং হ্যান কাং এই প্রশ্নে তাঁর অনুবাদকের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

হ্যান কাংয়ের মোট ছয়টি বই এপর্যন্ত ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’-ই তাঁকে প্রথম  আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচিত ‘হিউম্যান এ্যাক্টস’, ‘দ্য হোয়াইট বুক’, ‘ইউরোপা’ এবং ’গ্রিক লেসনস।’ ২০১৩ সালে তাঁর মিতায়তণ কাজ ’আরোগ্য লাভ’ একটি  দ্বি-ভাষিক সংস্করণে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘আমরা আলাদা হই না’ ১৯৪৮-৪৯ সালের জেজু বিদ্রোহ (সমাজতান্ত্রিক-পুঁজিবাদী ভুবনের শীতল যুদ্ধের সময়ে কোরীয় উপ-দ্বীপের বিভক্তি) এবং লেখকের এক বন্ধুর পরিবারে দুই কোরিয়ার বিভাজনের বেদনা নিয়ে রচিত যা ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়)।

 

শ্বেত পুস্তক

 


জলাভূমি

 

এক রাতে বরফ পড়ার পর, সে নিকটবর্তী জলাভূমি বরাবর হেঁটে যায়। দু’হাতে শটি আর নলখাগড়া সরায়  সে, প্রতিটি সরু আর সাদা ডাঁটা বরফের ওজনের নিচে নত হয়ে আছে। এই নলখাগড়াগুলো একটি ছোট্ট জলাভূমিকে বেষ্টন করে আছে, যেখানে এক জোড়া বুনো হাঁস বাস করছে।

এই নলখাগড়ার বনের কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে বরফের পাতলা স্তর নিথর জলের সাথে মিশেছে, সেখানে হাঁস দু’টো জল ও বরফের ধূসর-নীলাভ প্রচ্ছদে পাশাপাশি ভেসে চলে, দু’জনেরই ঘাড় নামানো- আচঞ্চু পানের পিপাসায়।

ওদের কাছ থেকে পিঠ সরানোর আগে সে নিজেই নিজেকে বলে: তুমি কি চলতে চাও? সামনে ধাক্কা দিতে চাও? তার কি কোন মূল্য আছে?

একটা সময় ছিল, যখন সে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিত, না।

এখন সে হাঁটে, সংযত হয়ে কোন উত্তর দেয় না। বিষাদ ও কোমলতার অন্তর্বর্তী সেই পৌনে-হিমায়িত জলাভূমি ছেড়ে সে চলে যায়।

 

চাল - কাঁচা ও রান্না করা

 

রাতের খাবারে রান্নার জন্য সে চাল খুঁজতে বের হয়। এই শহরে আঠালো ভাত খুঁজে পাওয়া বলা যতটা সহজ, করা ততটা নয়। এমনকি এই শহরে তার নিকটতম বড় সুপারমার্কেটেও সে কিছু স্প্যানীশ চাল পায় যা পাঁচশো গ্রামের ছোট ছোট প্লাস্টিক প্যাকেটে বিক্রি হয়।

বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসার সময় সাদা চালগুলো তার থলেতে শান্তভাবে শুয়ে থাকে।

সদ্য রান্না হওয়া ভাতের পাত্র থেকে সাদা ধোঁয়া ওঠে, এবং সে এই পাত্রের সামনে ঠিক যেন প্রার্থনার ভঙ্গিতে বসে থাকে। সে অস্বীকার করতে পারে না যে এমন মূহূর্তে, সে বোধ করে যে তার ভেতরে কিছু রয়েছে। এটাকে অস্বীকার করা খুব কঠিন।

 

সর্বব্যপ্ত শুভ্রতা

 

যে বছর সে তার প্রথম শিশুটিকে হারিয়েছিলেন, সে বছরই তিনি আরো একটি অপরিণত মানব শিশুর  জন্মদান করেন। আমাকে বলা হয় যে দ্বিতীয় যে শিশুটি, একটি ছেলে সন্তান, মৃত মেয়ে শিশুটির চেয়েও কম সময় তার মাতৃগর্ভে ছিল, জন্মের অল্প পরেই মারা যায়, একটিবার তার চোখ দু’টো না খুলেই। ঐ দু’টো জীবন যদি তাদের সঙ্কট বিন্দু নিরাপদে কাটাতে পারতো, তবে তিন বছর পর আমার জন্ম এবং আমার চার বছর পর আমার আর এক ভাইয়ের হয়তো জন্মই হতো না। আমার মা তাঁর ভেতরে ওদের দু’জনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতেন না, তাঁর আঙুলগুলো সেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন স্মৃতির ধারালো কোণের উপর সতর্কভাবে ঘুরে বেড়াতো না।

এই জীবন যাপনের জন্য আমাদের একজন হলেই চলতো। তুমি যদি প্রথম কয়েক ঘন্টা বেঁচে যেতে, তবে আমি হয়তো এখন আর বাঁচতাম না।

আমার জীবনের অর্থই হলো তোমার বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি।

অন্ধকার এবং আলোর মধ্যবর্তী তফাতে শুধু, সেই এককমাত্র নীলাভ বর্ণের ফাটলে, আমরা একে অপরের কাছে মুখ দেখাতে পারি।

 

তোমার চোখজোড়া

 

আমি যখন তোমার চোখ জোড়ার দিকে তাকাতাম, তখন সব কিছু ভিন্নভাবে দেখতে পেতাম। যখন তোমার শরীর নিয়ে আমি হাঁটতাম, তখন ভিন্নভাবে হাঁটতাম। আমি তোমার পরিষ্কার বস্তুগুলো দেখতে  চাইতাম। নিষ্ঠুরতা, বিষাদ, হতাশা, আবর্জনা, যন্ত্রণার আগে পরিচ্ছন্ন যা কিছু শুধুমাত্র তোমার জন্যই ছিল, সব মলিনতার উর্দ্ধে যা কিছু শুভ্র। কিন্তু ঠিক আমি যেমনভাবে চাইছিলাম, তেমনভাবে হয়নি। যেন কোন গভীর, কাজল কালো আয়নায় কিছু খুঁজে পাবার আশায় বারবার আমি তোমার চোখের মণিতে উঁকি দিয়ে  তাকিয়েছি।

শুধু যদি তার আগে আমরা কোন শহরে বাস করতাম, আমি আমার মা’কে বেশ কয়েকবার আমার শৈশব  নিয়ে গল্প করতে শুনেছি। শুধু যদি একটি এ্যাম্বুলেন্স আমাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতো! শুধু যদি ওরা তাকে একটি ইনকিউবিটরে পুরে দিতে পারতো, ছোট্ট একটি চালের গুঁড়োর পিঠের মত শিশুটি। ইনকিউবেটর তখনো একটি নতুন জিনিষ।

শুধু যদি তুমি শ্বাস নেওয়া বন্ধ না করতে। এবং তাই যদি আমার বদলে তোমাকে পুরো জীবনটা দেয়া হতো, তবে আমার কখনো জন্ম হতো না। আর যদি এটা তোমাকে দেওয়া হতো, তবে তুমি দৃঢ়ভাবে সামনে চলতে পারতে, তোমার নিজের চোখ জোড়া এবং নিজের শরীর নিয়ে, সেই কালো আয়নায় তোমার পিঠের প্রতিচ্ছায়া।

 

শবাচ্ছাদন

 

তুমি তার সাথে কী করেছিলে?

প্রথম যে রাতে আমি আমার বাবাকে একথা জিজ্ঞাসা করি, তখন আমি প্রায় কৈশোরোত্তীর্ণ এবং তিনি তখনো পঞ্চাশ পুরো হননি, উত্তর দেবার আগে তিনি কিছুটা সময় মৌন রইলেন।

ওকে আমি একটি সাদা চাদরে ঢেকে দিয়েছিলাম, তারপর ওকে পাহাড়ে নিয়ে গেলাম, এবং সেখানে ওকে সমাধিস্থ করলাম।

ঠিক কথা। একাকী।

সেই শিশু কন্যাটির গাউনই তার শবাচ্ছাদন হয়ে উঠেছিল। নবজাতিকাকে পেঁচানোর গজ কাপড়ই হয়ে উঠেছিল যেন তার কফিন।

বাবা বিছানায় ঘুমাতে যাবার পর, আমার কক্ষে যাবার সময় একটু জল খেতে থামলাম এবং আমার শক্ত, কুঁজো হয়ে ওঠা দুই কাঁধ খাড়া করলাম। আমার বক্ষাস্থিতে হাত চেপে ধরে, হাল্কা নি:শ্বাস নিলাম।

 

ওন্নি

 

আমি প্রায়ই ভাবতাম যে যদি আমার একজন বড় বোন থাকতো তবে কেমন হতো? একজন ওন্নি (বড় বোন) যে কিনা আমার চেয়ে এক হাত লম্বা। একজন ওন্নি যে খানিকটা ঢিলে হয়ে আসা তার সোয়েটার আর সামান্য ঘষে যাওয়া দাগ সহ চামড়ার জুতো আমাকে দেবে।

একজন ওন্নি যে তাঁর কোটের উপর কাঁধ ঝাঁকাবে এবং আমাদের মা অসুস্থ হলে ফার্মেসিতে যাবে। একজন ওন্নি যে তার হাতের আঙুল তার ঠোঁটে রেখে আমাকে বকবে: আস্তে, তোমাকে আস্তে হাঁটতে হবে।

একজন ওন্নি যে আমার গণিত খাতায় সমীকরণ লিখতে পারবে। এটা সত্যিই খুব সহজ, তুমি বেশি বেশি ভাবছো।

ভ্রু কুঁচকে সে সমাধানে পৌঁছনোর জন্য তাড়া-হুড়ো শুরু করলো।

 

একজন ওন্নি যে আমার পায়ে কোন কাঁচের টুকরো বিঁধলে আমাকে বসতে বলবে। যে আমার মাথার উপর বাতি ধরে এর আলোয় কাঁচের টুকরোটি বের করে আনবে, প্রচন্ড যত্নের সাথে, একটি সুই দিয়ে ও সেই  কাঁচের টুকরোটি বের করে আনবে যে সুইটি এর আগে সে গ্যাসের চুলোর শিখায় ধরে জীবাণুমুক্ত করেছে।

 

অন্ধকারে ভয়ে জড়োসরো আমাকে দেখতে যে ওন্নি কাছে চলে আসবে। এর কোন দরকার নেই, এ সবই এক ভুল বোঝা। এক সংক্ষিপ্ত, আড়ষ্ট আলিঙ্গন। ওঠো, ঈশ্বরের দোহাই। চলো এখন আমরা খেতে বসি। একটি শীতল হাত আমার মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর কাঁধ দ্রুত সরে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে।

 

সাদা কাগজের উপর ছড়িয়ে দেওয়া এক গুচ্ছ শব্দ

 

খুব সকালের তুষারের উপর আমার কালো জুতো জোড়া দাগ এঁকে দিলো, ফুটপাথ ঘেঁষে যেন কাদাটে একটি স্তর পড়ে গেলো।

যেন সাদা কাগজের উপর ছড়ানো একগুচ্ছ শব্দ।

সিউল, যাকে আমি গত গ্রীষ্মে শেষ দেখেছি, জমে গেছে।

পেছন ফিরে দেখার সময়, আমি দেখলাম যে জুতোর সেই সদ্য ছাপ ফেলা দাগ আবার ঢেকে যাচ্ছে তুষারে।

সব কিছু শুভ্র হয়ে উঠছে।

 

শোকের পোশাক

 

দু’জন ব্যক্তি বিয়ে করার আগে, এ ওর পিতা-মাতাকে পোশাক উপহার দেয়। এখনো যারা জীবিত, তাঁদের জন্য রেশমের পোশাক, যাঁরা চলে গেছেন তাদের জন্য সূতির শোক পোশাক।

আমার ভাই আমাকে ডেকেছিল পরখ করতে যে আমি তার সাথে যাব কিনা। যতক্ষণ না তুমি ফিরে এলে, আমি অপেক্ষা করেছি- নুনা।

যে নারীকে তাঁর বিয়ে করার কথা ছিল, তিনি একটি সাদা সূতির স্কার্ট এবং জ্যাকেট প্রস্তুত করেছেন, যা আমি এক খন্ড পাথরের উপর মেলে দিয়েছিলাম। মন্দিরের পেছনটায় দীর্ঘ ঘাসের তৃণভূমিতে প্রতি সকালে সূত্র পাঠের পর আমাদের মায়ের নাম উচ্চারিত হয়। যেই না আমি আমার জামার আস্তিনে ভাইয়ের সিগারেট  লাইটারটা ধরালাম, নীল জিভের এক ধোঁয়ার সূতো কুন্ডলী পাকিয়ে উঠলো। বাতাসে সাদা কাপড়গুলো এভাবে মিশে যাবার পর, এক আত্মা তাদের পরিধান করবে। আমরা কি সত্যিই এটা বিশ্বাস করি?

 

ধোঁয়া

 

আমরা দু’জন আমাদের সামনে যা আছে সেদিকে নিবিড়, অপলক চোখে চেয়েছিলাম, আমাদের মুখ ছিল বন্ধ। ছেয়ে-ধূসর একদজোড়া ডানার মত ধোঁয়া বাতাসে মিশে যাচ্ছিলো। হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি আগুনকে  দেখলাম, আমার জ্যাকেটটা খেয়ে সে দ্রুতই আমার স্কার্টের উপর লাফিয়ে উঠলো। যখন শেষ কাপড়ের  টুকরোটুকুও বহ্নিশিখা গ্রাস করে নিলো, তখন আমি তোমার কথা ভাবলাম। তুমি যদি এখন আমাদের কাছে আসতে পারো, তবে দয়া করে এসো। সেই কাপড়ের টুকরোগুলোর উপর তোমার পা একবার হোঁচট খাক, ঠিক যেন একজোড়া ডানার উপর হোঁচট খাওয়া। এটাকে ওষুধ বা চায়ের মত পান করো, শব্দের পরিবর্তে আমাদের নৈ:শব্দ্য ধোঁয়ায় মিলিয়ে যায়।

 

নৈ:শব্দ্য

 

শেষ পর্যন্ত যখন দীর্ঘ দিনগুলোর শেষ হয়, তখন নীরব হবার দরকার দেখা দেয়। যেমন, চুলার সামনে অচেতনভাবে বসে থাকার সময়, আমি আমার নিশ্চল হাত দু’টো নৈ:শব্দ্যে বাড়িয়ে দিই, আঙুলগুলো আগুনের সামান্য উত্তাপ ভোগ করতে থাকে।

 

নিচের দাঁত

 

’অন্নি’ শব্দটির উচ্চারণ একটি শিশুর ‘নিচের দাঁত’-এর সাথে মিলে যায়। আমার ছেলের মাড়িতে গাছের  পাতার মত প্রথম যে দু’টো ছোট ছোট দাঁত গজিয়েছে।

এখন আমার ছেলে বড় হয়েছে এবং ও আর শিশুটি নেই। সেই বারো বছরের বালকটির গায়ে কাঁথা টেনে দিতে দিতে, আমি আমার খালি লেখার ডেস্কে ফেরার আগে সতর্কভাবে ওর টানা নি:শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনলাম।

 

বিচ্ছেদ

 

মরে যেও না। ঈশ্বরের দিব্যি যে মরো না।

আমি আমার ঠোঁট খুলি এবং সেই শব্দগুলো বিড়বড়ি করে বলি যা তুমি তোমার কালো চোখ জোড়া খুললে শুনতে পেতে, যে তুমি ভাষা জানতে না। সাদা কাগজের উপর আমি আমার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে লিখি।

আমি বিশ্বাস করি যে বিচ্ছেদ বোঝাতে এর চেয়ে শ্রেয়তর কোন শব্দ নেই। মরে যেও না। বাঁচো।

 

শুভ্রতার সর্বব্যপ্তি

 

তোমার চোখ জোড়া দিয়ে আমি একটি সাদা বাঁধাকপির ভেতর গভীরতম, উজ্জ্বলতম জায়গাটি দেখতে পাব, দামি ও তরুণ পাঁপড়িগুলো এর হৃদয়ে লুকানো।

তোমার চোখ জোড়া দিয়ে, আমি দিনের বেলায় জেগে থাকা আধখানা চাঁদের শৈত্য দেখতে পাব।

কোন এক সময়ে এই চোখ জোড়া এক হিমবাহ দেখতে পাবে। তারা বরফের সেই প্রকান্ড টুকরোটির দিকে তাকাবে যা পবিত্র এবং জীবন্ত হবার কারণে কলুষিত হয়নি।

এর ভেতর তারা দেখতে পাবে সাদা বার্চ বনের নৈ:শব্দ্য। জানালার স্তব্ধতার ভেতর যেখানে শীতের সূর্য ঢুকে পড়ে। ধূলোর ঝকমকে যত কণার ভেতর ঘরের সিলিংয়ে তীর্যক ভাবে দুলছে আলোর পাত।

যাবতীয় শ্বেত বস্তুর সেই শুভ্রতার ভেতর, তুমি যে নি:শ্বাস ফেলেছিলে, সেই শ্বাসে আমি শ্বাস নেব।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন