কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

কাজল সেন

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩১



রুক্মিণী

 

রাজগড় স্টেশনে এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ নেই। তাই দেবশঙ্করকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চড়তে হয়েছে। ট্রেনের সময় সারণীতে রাজগড়ে পৌঁছনোর কথা রাত আটটায় হলেও, এসে পৌঁছল দশটায়। দেবশঙ্কর প্ল্যাটফর্মে নেমে বুঝে উঠতে পারল না, এত রাতে রাজগড়ের নিষিদ্ধপল্লীর খোঁজ সে কীভাবে করবে!

রুক্মিণীর খবরটা দেবশঙ্করকে জানিয়েছিল সনাতন। সনাতন থাকে পুরুলিয়ায়। দেবশঙ্করের বাড়িও সেখানেই। একদিন দেখা হতে দেবশঙ্করকে জানিয়েছিল, রাজগড় নিষিদ্ধপল্লীতে রুক্মিণীকে সে দেখেছে।

খবরটা পাওয়ার পর থেকেই দেবশঙ্কর ভাবছিল, তাকে একবার রাজগড়ে যেতেই হবে রুক্মিণীর কাছে। রুক্মিণীর খোঁজ সে অনেকদিন ধরেই করছিল। কিন্তু জানত না, কোথায় আছে রুক্মিণী! রুক্মিণী আগেও নিষিদ্ধপল্লীতেই ছিল, তবে রাজগড়ে নয়, রাজগড় থেকে দুটো স্টেশন পেরিয়ে শক্তিনগরে। একসময় শক্তিনগরের নিষিদ্ধপল্লীতে দেবশঙ্করের যাতায়াত ছিল। সেখানেই রুক্মিণীর সঙ্গে প্রথম মিলিত হয়েছিল। কী ছিল রুক্মিণীর শরীরে! দেবশঙ্কর আজও বুঝে উঠতে পারে না, রুক্মিণীর শরীর তাকে কেন এক অমোঘ আকর্ষণে তার কাছে বারবার টেনে নিয়ে যেত।  ক্রমশ এমন হয়েছিল, শক্তিনগরের সেই পল্লীর আর কোনো মেয়ের কাছেই সে যেত না। শুধুমাত্র রুক্মিণীর জন্যই সে যেত শক্তিনগরেরে নিষিদ্ধপল্লীতে।

স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে একটা সাইকেলরিক্সা ভাড়া করল দেবশঙ্কর। রিক্সাওয়ালা কোথায় যেতে হবে জেনে, মুখ বেঁকিয়ে হাসল। ভাড়াটাও বাড়িয়ে বলল। দেবশঙ্কর পরোয়া করল না। মিনিট পনেরো পর যথাস্থানে পৌঁছে দেবশঙ্কর ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল। দেবশঙ্কর ভেবেছিল, বাইরেই কোনো দালালকে পেয়ে যাবে, তাকেই বলবে রুক্মিণীর ঘরে নিয়ে যেতে। কিন্তু হয়তো রাত অনেকটা গড়িয়ে যাবার জন্য, এখন আর বাইরে কেউ গ্রাহকের অপেক্ষায় নেই, আর যারা সন্ধ্যায় এসেছিল তারাও নিশ্চয়ই ফিরে গেছে! তবে ভেতরে ঢুকতেই কয়েকটি মেয়ে এসে তাকে ঘিরে ধরল। রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দিল নিজের নিজের ঘরে নিয়ে যাবার জন্য। দেবশঙ্কর অনেক বুঝিয়ে তাদের শান্ত করল, বলল, সে এসেছে শুধুমাত্র রুক্মিণীর কাছে। রুক্মিণী! কে রুক্মিণী? ও বুঝতে পেরেছি, ঐ যে একবার নাকি কোন নাগরের সঙ্গে পালিয়েছিল! শুনেছি, নাগর তাড়িয়ে দিতে আবার ফিরে এসেছে লাইনে!

রুক্মিণীর ঘরে তখন গ্রাহক ছিল। দেবশঙ্করকে অপেক্ষা করতে হলো মিনিট পনের। গ্রাহক বেরিয়ে যেতেই দেবশঙ্কর চট করে ঢুকে পড়ল তার ঘরে। রুক্মিণী নিজেকে তখনও গুছিয়ে নিতে পারেনি। জামা-কাপড়ও ঠিকঠাক পরতে পারেনি। তাছাড়া সন্ধ্যায় পরপর তিনজন গ্রাহককে পরিষেবা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আর কোনো নতুন গ্রাহক তোলার ইচ্ছে ছিল না।

আচমকা ঘরে দেবশঙ্করকে দেখে হকচকিয়ে গেল।

-তুমি?

-তোমাকে আমি আবার নিয়ে যেতে এসেছি রুক্মিণী! তুমি আমার স্ত্রী। মন্দিরে আমরা বিয়ে করেছিলাম।

রুক্মিণী হাসল।

-তুমি এক বেশ্যাকে বিয়ে করেছিলে। সবাই জেনে গেছিল। তোমার আড়ালে আমাকে সবাই বেশ্যা বলেই ডাকত। আমি তাই পালাতে বাধ্য হয়েছিলাম।

দেবশঙ্কর অনুনয় করল, তুমি আমার সঙ্গে ফিরে চল রুক্মিণী! আবার আমরা সংসার সাজাব।

রুক্মিণী কঠিন স্বরে বলল, আমি খুব ক্লান্ত আজ। তবু তুমি শুতে পার আমার সঙ্গে। বেশি টাকা দাবি করব না।

 




 



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন