কালিমাটি অনলাইন / ১২৬ / দ্বাদশ
বর্ষ : ষষ্ঠ সংখ্যা
বিগত বিংশ শতাব্দীতে আমরা কয়েকটি যুগান্তকারী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, যার মধ্যে
দুটি বিশ্বযুদ্ধের পাশাপাশি আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিকতা
থেকে ভারত এবং আরো কয়েকটি দেশের মুক্তি, রাশিয়া চীন এবং পূর্ব ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে
সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যস্থা স্থাপন এবং তার বিপজ্জনক পরিণতি ইত্যাদি। ‘কালিমাটি’ ১১১তম সংখ্যা যৌথভাবে সম্পাদনার দায়িত্ব
গ্রহণ করে আমি কাজল সেন এবং পূর্ণেন্দুশেখর মিত্র সবিনয়ে নিবেদন করি যে, যেহেতু আমাদের
দুজনেরই জন্মতারিখ বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে, তাই বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধে সংঘটিত
বিশ্বের কোনো ঘটনারই আমরা প্রত্যক্ষদর্শী নই। যেটুকু জেনেছি এবং উপলব্ধি করেছি তা বিশদ পড়াশোনা করে,
ভিডিওতে সংরক্ষিত প্রচুর তথ্য ও তথ্যচিত্র ঘেঁটে, বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের বিবৃতি ও স্মৃতিচারণ
অনুধাবন করে। কিন্তু পঞ্চাশের দশকে জন্মগ্রহণ করার পর সারা বিশ্বে যা কিছু ঘটনা সংঘটিত
হয়ে চলেছে, তার প্রতি আমাদের প্রত্যক্ষ দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে এবং আমরা তা বিশদভাবে
অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। আর এই সূত্রেই আমাদের মনে হয়েছে, বিংশশতাব্দীর
দ্বিতীয়ার্ধের সত্তরের দশকে মূলত আমাদের দেশে এমন কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা এই দেশের
তৎকালীন স্থিতাবস্থায় এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক,
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য-কলা-শিক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের
সূচনা করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা একান্ত জরুরি যে, বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকে সংঘটিত যেসব
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সত্তর দশককে শতাব্দীর
অন্যান্য দশক থেকে পৃথকভাবে নির্দেশিত করেছে, একটা অন্য মর্যাদা দান করেছে, তা আমাদের
সবারই জানা আছে এবং সে সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও ফোরামে আলোচনা করেছি। কিন্তু
যেটুকু আলাপ ও আলোচনা করেছি তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কতটা প্রাসঙ্গিক করে
তুলতে পেরেছি, সে সম্পর্কে আমরা আদৌ অবগত নই। এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা
তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি ভুল তথ্য, বিকৃত ব্যাখ্যা
ও বিশ্লেষণ। আর তাই পরবর্তী প্রজন্ম সত্তর দশকের মূল্যায়নে ভুল ধারণা পোষণ করেছে এবং
অনীহা বোধ করেছে।
মূলত আমাদের মনের এই ভাবনা থেকেই আমরা ‘কালিমাটি’ পত্রিকার ৪৬তম বছরের ক্রমিক
১১১তম সংখ্যার জন্য বেছে নিয়েছি আলোচ্য বিষয়
– সত্তরদশক। যে নির্দিষ্ট ঘটনাগুলি নিয়ে এই প্রাসঙ্গিকতায় বিচার বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তার একটি তালিকা এখানে রাখছি—
নকশালবাড়ি আন্দোলন, জয়প্রকাশ নারায়ণ আহুত ছাত্রআন্দোলন, সারাভারত রেল ধর্মঘট আন্দোলন, ভারতে এমার্জেন্সী ঘোষণা, পশ্চিমবঙ্গে তৎকালীন কেন্দ্রসরকার
ও রাজ্য সরকারের শ্বেতসন্ত্রাস, ব্যাংক জাতীয়করণ, মহাকাশ অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য
ISRO স্থাপন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি – ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি (১৯৭২), ভারত-সোভিয়েত
বন্ধুত্ব, শান্তি, সহযোগিতা চুক্তি (১৯৭১),
দলিতসাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, বাংলা ও অন্যান্য ভাষার সাহিত্যে ও শিল্পে নকশালবাড়ি
আন্দোলনের প্রভাব ও পালাবদল, ভারতীয় চলচ্চিত্রে
নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রভাব ও পালাবদল, ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক নারীদিবসের
সূচনা, সত্তর দশকের আন্দোলনের বিরোধীতায় ধর্মীয়
অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, আচরণ, ভন্ডামি, জ্যোতিষ, সাম্প্রদায়িকতার প্রচার ও প্রসার
শাসকশ্রেণীর পক্ষ থেকে, দন্ডকারণ্য থেকে মরিচঝাঁপি প্রবঞ্চনা, ভারতের প্রথম সফল পারমাণবিক
পরীক্ষা, সত্তরের দশকের এক অনন্য নারী-অভ্যুত্থান : চিপকো আন্দোলন, উত্তাল সত্তরে প্রযুক্তির
প্রথম প্রতিশ্রুতি।
আলোচনার জন্য তালিকা আরও দীর্ঘ করা যেতে পারত। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজন
করা যেতে পারত। ‘কালিমাটি’ সম্পাদকমন্ডলীর
পক্ষ থেকে আমরা মোটামুটি এই তালিকা সামনে রেখেই বিভিন্ন লেখকের কাছে লেখা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমরা
অত্যন্ত আনন্দিত, তাঁরা সবাই আলোচ্য বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত মননশীল ও সংবেদনশীল
লেখা পাঠিয়েছেন। যদিও কিছু আলোচ্যবিষয়ের ওপর লেখা সংগ্রহ করতে পারিনি। যে লেখাগুলি
সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, তা সংকলিত করে প্রকাশ করা হল ‘কালিমাটি’ পত্রিকার এই সংখ্যাটি।
যে বিষয় নিয়ে আমাদের এই সংখ্যার আয়োজন, সত্তরদশক, উল্লেখ করা বাহুল্য হবে, অর্থাৎ যে
উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের এই সংখ্যাটি প্রকাশের আয়োজন ও তৎপরতা, তার আংশিক কাজই আমরা করতে
সক্ষম হয়েছি। তবে আমরা আশাবাদী, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই বিষয়ের ওপর কাজ করে সম্পূর্ণতার
পথে আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবেন। তাঁদের সচেতনতার প্রতি আমরা আস্থাশীল।
‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন