কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

 

কবিতার কালিমাটি ১৪১


রামধনু রং অথবা সাত সমুদ্রের কবিতা

 

বেগুনি     

 

তাকাও, আকাশের নীলে এসেছে শূন্য, সেখানে

ভাসছে খোপ খোপ ইটের ঘর — তাতেই সে

কেমন মাথা উঁচিয়ে আছে দিগন্তে, ধীরেন দাদুর

বাঁকা কোমরে তখনো মায়াস্রোত; আর মাটির

খুসিতে তুলসীগন্ধ, বাতাসে ফুঁ-দিয়ে ছড়িয়ে

দিচ্ছে আনন্দ, তাকে চিনতেই ভিটে বরাবর

মাঠে ছুটাছুটি করছে ঢোড়াসাপ, চির বিষণ্ণ

সেই জলে এক হাঁটু গভীরতা, অর্জুনগাছের

নীচে মৌনগুলি নিষ্ক্রান্ত হতে চায় —

প্রত্যাশারর ফাঁকে নগ্ন পা-কে জানে অন্তর্ধানের

পথ কতটা মসৃণ  

 

নীল    

 

ঢেউ তার কাঁপন থেকে তুলে নেয় রোদের

প্রার্থনা, পুঁটিমাছের ঝাঁকে কোন ছায়া নেই —

হেলানো রোদের গা বেয়ে গড়িয়ে আসা তাপে

রানু বাঙালরা ক্রমশঃ স্থুল হতে থাকে, তার

চলনে তেমন ক্ষিপ্রতা নেই, ছড়িয়ে পড়ে  

হলুদ খাম; সাঁকো পরিয়ে আসা ধোঁয়ারাশি

সমুদ্র দেখার নেশায় আধা নির্মাণ বাড়ির

চাতালে দাঁড়ায়, কোন গাছ নেই তার, অবিরাম

শূন্যতায় দিগন্ত ছুঁয়ে শিরা-উপশিরায় বয়ে যায়  

আজন্ম জলাজমির সরসতা

 

আশমানি   

 

এই এবড়ো খেবড়ো মাঠে আমরা দৌড়াদৌড়ি

করলাম, কোথাও ঘাস কোথাও কাদা — আবার

কোথাও কাঁকড়া মাটির ঢিবি, সাধারণ বাস্তুবোধ,

আমাদের খেলার জন্য শুকোতে দেওয়া ধান

গুটিয়ে দিয়েছে রূপসা, ছুটাছুটিতে কিছু কচুপাতা

ছেঁড়া গেল — কিংবা ঘুঁটের জড়িয়ে থাকা গন্ধে

লাউফুলের সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে কাঁকড়ার

কামড়গুলিকে তাড়াতে লাগলাম

আমাদের হাতে কেবল ক্ষুধার্ত সুখ, হিংসা তাড়াতে

পারি না বলেই পৃথিবীর উৎসে পড়ে থাকে আমারই

মৃতদেহ

 

সবুজ   

 

একটি হাত কেবলই নাড়ে, কখনো জলের দিকে

কখনো খরার দিকে, হয়তো পথের হাতছানি-

ছায়ার নিচে আচ্ছন্ন দেহগুলি ছটপট করে

পথের শব্দে, সেখানেই চলে আকাশ অব্দি

আলো এবং অন্ধকারের আরোহ, পাখিরা ফুলের

গান শিখে নেয়, হাওয়ায় ভাসমান সেই বেহালায়

জেগে ওঠে — নেশা নেশা ঘাস

আলো সরে যাবার কোন সম্ভাবনাই নেই

আনন্দ শিখে নিতে নিতে আমিও নাড়াই

আমারই দুপুর পেরিয়ে যাওয়া হাত

 

হলুদ   

 

খড়কুটো কুড়োতে থাকি রাস্তা থেকে, কচুবনের

ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ডাহুক পাখির ঝাঁক

বেরিয়ে আসে একঝাঁক উড়ন্ত অন্ধকার থেকে

আস্ত স্নানের লড়াই, সবুজ উই চিংড়ের কাছে

আবির্ভাব বলে কিছু নেই, তবু হাতে কিছু শামুকের

থলথলে শরীর, মাংসল গমনের সাথে সব পূর্বাহ্ন,

জল ছুঁয়ে থাকা মূলরোমগুলি ভাসতে ভাসতে

ফেলে যায় মৃত্যুর ভঙ্গিমা  

 

কমলা    

 

হাত বাড়ালেই দেখি ঈশাণ কোণের বাতাস  

তার নিচে পাট কাচার পরের পচা জলের

মাঠ, আমি তো গিরগিটি হতে পারিনি কোনদিন

অপরাধ খেলা করে সেই জলের উপর, আর

বিলুপ্ত শালুক ফুলের পাতা - শিশির শুকিয়ে

গেছে কখন, আমি নির্জন খলসে মাছের চোখ

এড়িয়ে দরজা ধরতে চেয়েছি

তার ভিতরেই আড়ালে আছে কচুরিপানা এবং

মাংসল বুক, কিন্তু এ আমার গন্তব্য ছিল না  

 

লাল    

 

কোন ছদ্মবেশ নেই, গামছাপরা মানুষটির গায়ে

শুধু মাটিগন্ধ - মেঘের মধ্যে কাঙাল চেহারা হলেও

কখনও কাঙাল নয় - সে কারণে বিনয় চোখ,

উঠে আসে রবিধান মাঠের মতো সমুদ্র, এবং

নীরবতার নীল আকাশ, ধারে ধারে গাছগুলো

দিগন্ত ছুঁয়ে দেবার সাহস জোগায়

এসব কথায় মিশে যায় রোদ — নিজে নিজেই

তারপর একা একা অতলে ডুবতে ডুবতে প্রকাশিত

আত্মবীজ; গন্ধ আসে বৃষ্টি বৃষ্টি — আর হৃদয় তান্ত্রিক

মহা মৃত্তিকায় জেগে ওঠে বীজতলা; স্বপ্নরা চিক্ চিক্

করে বলিরেখায়


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন