কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

গৌরাঙ্গ মোহান্ত

 

কবিতার কালিমাটি ১৪১


টাঁড়বারো

 

বৃষ্টির ভেতর বুনো মোষের দল ছুটে যাচ্ছে; অরণ্যের জলসিক্ত ক্লিয়ারিঙে রেখে যাচ্ছে উদ্দাম খুরমুদ্রা। বদ্বীপের সর্বোচ্চ বাঁশের চেয়ে লম্বা কৃষ্ণ পুরুষ আকাশে হাত তুলে নির্বোধ মোষের দলকে নতুন পথে চালিত করবার জন্য ইঙ্গিত দেয়ায় তারা অরণ্যের গুল্মলতা, পত্ররাজি ছিঁড়ে ছুটে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে; ছিন্ন লতাপাতা মৃত্তিকার সাথে মিশে যাচ্ছে। মৃত্তিকা যন্ত্রণার সাক্ষী—অক্ষরহীন বলে অরণ্যের কোনো অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করতে পারে না। রাত্রির শেষ প্রহরে টাঁড়বারো সহচরীদের সাথে অরণ্যপথ পরিদর্শন করে; বিক্ষত অরণ্যের সৌন্দর্য দেখে সহচরীবৃন্দ প্রমোদনৃত্যের আয়োজন করে, তাদের দীর্ঘ পা অলৌকিক ছন্দে মৃত্তিকা, বৃক্ষশাখা ও আকাশ স্পর্শ করে। মোষের ক্ষিপ্রতা বাড়াবার জন্য তারা বৃষ্টিজলে মিশিয়ে দেয় মাহুলি।

 

রোদ ও সবুজ পাতা

 

রোদ সবুজের বহুমাত্রিকতাকে উদ্ভাসিত রাখে। বৃক্ষের কোমল পল্লবের প্রতি রোদের রয়েছে তীব্র মায়া। তাদের নৃত্যতরঙ্গের সাথে ঝোলানো আয়নায় আমাতেরাসুর উৎসুক দৃষ্টি গুহাবাসনাকে চূর্ণ করে। পুরনো পাতার গাঢ় রঙে বৃক্ষের অভিভাবকতার কৃৎকৌশল স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলে পুরনো পাতার নৃত্যে উন্মাদনা নেই। তারা জেনে গেছে পৃথিবীর মণ্ডনকলা; রূপ দেখবার বা দেখাবার তাগিদ তাদের নেই। বৃক্ষের গভীর চিন্তা পুরনো পাতার ভেতর অধিগম্য। পথবৃক্ষের জন্য কেউ সুভোজ্য কমপোস্টের ব্যবস্থা করে না। বরং পথের অতিরিক্ত ধুলো তাদের শ্বসনক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়। বৃষ্টির রুপালি ধারার প্রতীক্ষায় তাদের কাটে মৌনকাল। মেঘের গর্জন তাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত রাখে। প্রজাপতির বজ্রভাষা বৃক্ষের সংবেদনায় সঞ্জীবনী সোনাটা হয়ে ওঠে, মানুষ সোনাটা থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যায়।

 

 

ফ্রয়ডনফ্রয়ডা

 

প্রত্যেকের জন্য একদিন গাছের পাতা থেমে যাবে। আমাদের জমির ধারে বেড়ে ওঠা শীর্ণ একটি বেলগাছ শৈশবের সাক্ষী হয়ে আছে। রাস্তা প্রশস্ত হয়ে ওঠবার সাথে সাথে বেলে আমাদের অধিকার লুপ্ত হয়েছে। তবে জানি আমার জন্য একদিন তার হার্প কনচ্যার্টো এক মিনিটের জন্যে হলেও আনাফি দ্বীপের নৈঃশব্দ্যের অনুষঙ্গী হবে। বাড়ির পেছনের দীর্ঘ একটি আমগাছ ঝড়ের রাতের শিহরণকে বজ্ররেখার  ব্যাকরণ শেখায়। বৃক্ষের সংখ্যালঘুনীরবতার সুযোগে আমগাছটিকে তক্তায় রূপান্তরিত না করবার জন্য আমার ভাইকে বলে রেখেছি। আমার বিশ্বাস, এ গাছের পাতাগুলো যথাসময়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকবে। আম্র মুকুলের সৌরভকালে কিংবা মানুষের আনন্দ-উৎসবে আমি উদ্বাহু চৈতন্য হয়েছি বলে ফ্রয়ডনফ্রয়ডা-তরঙ্গ এক মুহূর্তের জন্যেও গতিশূন্য থাকবে না।


3 কমেন্টস্:

  1. Awesome,
    Specily first two poems.
    & first one is supper. Thank boss & thanks.

    উত্তরমুছুন
  2. অনবদ্য তিনটি কবিতাই। আপনার কবিতা পড়ে বরাবর মুগ্ধ হই। গদ্যকবিতার এক অনন্য উদাহরণ।

    উত্তরমুছুন