কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / ষষ্ঠ সংখ্যা / ১২৬

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩১



বিউটিশিয়ান

 

দাদা প্রত্যুষের বিয়ের দুবছরের মধ্যেই বাবা-মা দুজনেই মরে গেল। সরকারী চাকরী পেয়েই দাদা নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছিল। তাই অবিবাহিত থাকার কারণে বাবার ফ্যামিলি পেনশনটার অধিকারী দীপাই হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার পর মাস্টার্স  করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু হুট করে বাবা মারা যাওয়াতে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ছোটবেলার বান্ধবী অনসূয়ার খুব ইচ্ছা ছিল বিউটিশিয়ান কোর্স করার। তাকেও বলেছিল অনসূয়া। অনসূয়ার সঙ্গে দীপাও কোর্সটা খুব ভালো ভাবেই সম্পন্ন করে।

দাদা-বৌদির আচার আচরণ কয়েক দিনের মধ্যে বেশ পাল্টে গেল। তারা দীপাকে আলাদাও করে দিল। বাবার পেনশন নিয়ে দিনরাত তাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। বাড়ির নিচের অংশটা দীপা ভাগে পেল। নিচের বারান্দাটাকে ঠিকঠাক করে একটা দোকানের চেহারা দিয়ে একটা বিউটি পার্লার খুলে বসল দীপা। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী দীপা তার বিউটি পার্লারের নাম দিল 'বনলতা বিউটি পার্লার'। ধীরে ধীরে তার ব্যবসা জমে উঠেছিল।

ব্রাইডাল মেকআপের জন্যও অনেকেই আসতে শুরু করায় দীপা তার কাজের ফাঁকেই ব্রাইডাল কোর্সটাও করে নেয়। এলাকায় তখন 'বনলতা বিউটি পার্লারের' খুব নামডাক। বিভিন্ন খদ্দেরদের সাজিয়ে সে শুটিং করে তার ফেসবুকের ওয়ালে পোস্ট করতে শুরু করায় তার বিউটি পার্লারের নাম উত্তর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়তে বেশি দেরি হলো না।

সে নিজেও তো একদিন নববধূর সাজে সেজে উঠবে! সে ঠিক যেভাবে নিজেকে সাজাতে চায় সেই রঙিন স্বপ্ন আর তার নিজস্ব শিল্পশৈলী মিশিয়ে প্রত্যেক বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাওয়া মেয়েদের সাজিয়ে তুলত। নিজের মনের সুপ্ত ইচ্ছা আর মাধুরী মিশিয়ে যখন সাজানো শেষ হয়ে যেত তখন সবাই অবাক হয়ে যেত।

'সত্যিই দীপাদির কাজের তুলনা হয় না' - এই কথাটা ছড়িয়ে পড়তেই দীপা যেন তার কাজে আরো ডুবে যায়। দিনরাত বিভিন্ন নন্দনতত্ত্ব ও সৌন্দর্য চর্চার বই, ম্যাগাজিনে নিমগ্ন হয়ে যায়। তাকে আরো ভালো কাজ করতে হবে -- এই মানসিকতায় সে এগিয়ে যেতে থাকে। তবে যা কিছু সৃষ্টি সবই যেন নিজের আগামী দিনের নববধূর সাজকে মাথায় রেখে করে। এটা যে সে ইচ্ছে করে করে তাও না, কিন্তু পরোক্ষে, নিজের অজান্তেই সেই ভাবনাটা তার হৃদয় আর মস্তিষ্ক জুড়ে খেলা করে। আর সেই ভাবনাটাই তাকে তাড়িত করে এক এক জন মেয়েকে তার প্রণয়ীর কাছে অসম্ভব সুন্দর করে তুলে ধরার আকাঙ্ক্ষা।

'দীপাদির পার্লার' থেকে কবে যে লোকমুখে 'দীপা মাসির' পার্লার হয়ে গেছে তা সে খেয়াল করতে পারেনি। যেদিন খেয়াল করল সেদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে চমকে উঠল। সারা মুখে বলিরেখার ভাঁজ উঁকি দিচ্ছে। তার ফেসবুকের দেওয়ালে তার জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছা বার্তার পাতা খুলে দেখল, আজ তার বয়স বাহান্ন পেরিয়ে তিপ্পান্নতে পড়ল।




1 কমেন্টস্:

  1. মনের জানাল ধরে কেউ কি উঁকি দিয়ে গিয়েছিল! হয়তো বা। ভালোগলো লেখাটা

    উত্তরমুছুন