কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

দ্য ক্লাউড

 


(অষ্টম পর্ব)  

হেমন্তের অপরাহ্নে ধানকাটা মাঠ যেন হাহাকারে কাঁদে। সবুজের সমারোহ থেকে হলুদাভ হতে হতে একসময় নুইয়ে পড়ে সেই মাটিতেই, যেখান থেকে গাছের উৎপত্তি, জীবজগতের সৃষ্টি, আর আমার-ও শুরু'র শুরু হওয়া, এইসব ভাবনায় ভাবিত আনন্দ বেশ আছে। সে বাতাস খায়। বাতাস দিয়ে স্নান করে, আর বাতাসই তাকে মাঝেমধ্যে নাড়িয়ে দিয়ে বিজ্ঞাপনের ও-ই ভাঙাচোরা টিন থেকে, রেডিও'র ভেতর থেকে, যে-ভাবে মানুষ কথা বলে সে-ভাবে তাকে দিয়ে কথা বলিয়ে নেয়।

তা, আজ আনন্দ বেশ স্ফূর্তিতে আছে। সকাল সকালেই ওদের মৃত আস্তানার সামনের অংশে কে বা কারা বেশ কিছু মুখবন্ধ বস্তা ফেলে গেছে। বাতাসে সে-সব বস্তার মুখ খুলে গিয়ে বন্দি অজস্র, অগুনতি টাকা উড়ছে রাস্তায়। কোথাকার প্রায়ই উলঙ্গ ছেলের দল হে হে হে করা হাসিতে টাকার পেছনে ছুটছে। আনন্দ বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ডের টিনের ছবি থেকে সেসব দেখে বললো-

ওরে ছেলের দল, টাকার পেছনে এখন থেকে না ছুটে, যাতে আপনিই টাকা তোদের দুয়ারে এসে কড়া নাড়ে, সে ব্যবস্থাটাই আগে কর।

আনন্দ দুচোখ বন্ধ করলো। যেন ধ্যান। যেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের "টাকা মাটি মাটি টাকা" তাকে আলোড়িত করছে। এদিকে ওঁদের আস্তানার দিকে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তা বড় হবে। বহু লেবার, জেসিবি,  পিচ গলাই-এর গাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি।

দুপুরের বাতাস খেয়ে আনন্দ দু-চোখ মুদিত করলো। একটা তন্দ্রালু ভাব। টিনের তৈরি সাইনবোর্ডের বিজ্ঞাপনে আনন্দ তার ঘারের পেছনে কার যেন দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলো। পাশ ফিরে একটু চমকেই গেলো সে। ওর অন্তঃসারহীন চোখের তারাতে এ কোন মনিরত্না ভরদ্বাজ!

মেয়েটি খুব কাঁদছে। কাঁদতে থাকুন আপনি। কাঁদলে চোখ পরিষ্কার ও মন হালকা হয়ে যায়। আনন্দ তাই খুবই সন্তর্পণে নিজেকে বাঁচিয়ে মনে মনে মেয়েটির উদ্দেশ্যে একথা বলতে থাকে।

হাজার হোক, তাদের দু'জনের এতদিনের পুরনো ডেরায় মা লক্ষী তবে এলো, একথাও আনন্দ ভাবতে বসে বেশ আনন্দই পায়।

উৎপল চিত্রকর কবরস্থানের পূব দিকে তাকিয়ে পশ্চিমের পরন্ত শীতকালীন রোডে পিঠ দিয়ে তার ক্যানভাসে ছবি আঁকছে। ছবি যখন, তখন জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবে। থাকবে মূর্ত বা বিমূর্ত রূপের টান। তবে এই পর্বে উৎপল চিত্রকর তার জলরঙে আঁকা ছবিতে মেঘকে বাদ দিয়ে হালকা টাচের বৃষ্টি ছড়িয়ে দিলো জমির ওপর। জলের স্পর্শ পেয়ে জমির ফলনগুলো বেশ মাথা তুলতে শুরু করেছে।

মনিরত্না দাওয়াতে মাদুরের আসন বিছিয়ে আনন্দকে খেতে দিয়েছে। পাশে জলচৌকিতে বসা নিমচাঁদ খাওয়াদাওয়ার পরে দাঁত খুঁচানো কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে মাঝেমধ্যে হ্যাট হ্যাট করে সর্ষের জমিতে আসা ছাগল তাড়াচ্ছে।

নিমচাঁদ দাগা ফাল্গুনের সর্ষের রূপ ভালোই বোঝে। সে জানে দূর থেকে সর্ষেজমি ঘন দেখালেও তত ঘন হয় না। তাই, শিয়ালকাঁটার দানা মিশিয়ে তেলের উৎপাদন, আর বিঘা প্রতি উৎপাদনে লাভের লক্ষ্যমাত্রাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে নেওয়া। তবে, সে-সব তো, পূর্বজন্মের গল্প। এজন্মে এবং আবারও জন্মালে সে নিজে আনন্দকে নিয়ে মতলব ঠাওরেছে যে, এই বাতাস জন্মে তারা আর কোনোদিনই ধর্মপথ বিমুখ হবে না।

নিমচাঁদ ডাক দিলো, মনি... ও মনিরত্না...

(ক্রমশঃ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন