নিম্নবর্গত্ব আসলে মানসিকতার, লিঙ্গ কিংবা অর্থের নয়
(১)
মাসখানেক পূর্বে মেহেদি হাসানের একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। শিরোনাম ছিল ‘নিম্নবর্গত্ব আসলে লিঙ্গের, শুধু অর্থের নয়’। এখানে লিঙ্গ বলতে বোঝানো হয়েছে পুরুষকে অর্থাৎ বর্গত্বের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং অর্থই একমাত্র নির্ধারক। কিন্তু আমার ধারণা, বর্গত্বের ক্ষেত্রে মন ও চিন্তাবৃত্তি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের বাস্তবতা মানসিকতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। এ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রথমে লিঙ্গ এবং অর্থের সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলবো, এরপর তুলে ধরবো, কেন মন গুরুত্বপূর্ণ।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবসময় লিঙ্গকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। তারা নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যবহার করেছে গোয়েবলসীয় তত্ত্ব। জোসেফ গোয়েবলস বলেছেন, মিথ্যাকে বারবার বলা হলে তা সত্যে পরিণত হয়। যদিও তত্ত্বটা আধুনিক, কিন্তু কৌশলটা বেশ প্রাচীন। এই প্রচেষ্টায় নারীশিশুর মনে গেঁথে দেওয়া হতো, তারা পুরুষের তুলনায় দুর্বল, কম বুদ্ধিসম্পন্ন, অধস্তন ইত্যাদি। তারা খাবার-দাবারেও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষায়ও তারা ছিল বঞ্চিত। তাদেরকে শুধুমাত্র গৃহস্থালি কাজকর্মে উৎসাহিত করা হতো। নারীর শারীরিক দুর্বলতা, এমনকি সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার জন্যও দায়ী করা হয়েছে লিঙ্গকে। অর্থাৎ জন্মসূত্রে সকল মানুষের মধ্যে অবস্থিত মন এবং মানসিক শক্তিকে ঠুনকো হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টির অভাব নারীর মানসিক শক্তিকে যুগ যুগ ধরে অকার্যকর করে রাখছিল। বস্তুত সভ্যতার প্রথম থেকে পুরুষতান্ত্রিক ফাঁদে পড়ে মানুষজন লিঙ্গকে প্রধান শক্তি হিসেবে গণ্য করেছে। বোধের জগতে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। পুঁজিবাদী যুগে সবকিছু অর্থের মানদণ্ডে নিরূপণ করা হয়। এতে সবার বিশ্বাস জন্মেছে, শ্রেণি বা বর্গত্ব বিষয় অর্থ দ্বারা নির্ধারিত। যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের তাগিদে নারীশিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রচার করা হয়েছে নারীশক্তিকে, তখন থেকে প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন। যদি মানসিক শক্তি গুরুত্বহীন হতো তবে বিদ্যমান সময়ে নারীদের যে-অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তা সম্ভব হতো না। মূলত আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা নারীর মনকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপরতলায় সবসময় সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির অবস্থান। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ১০ শতাংশ ধনীর কাছে বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৬% গচ্ছিত (৯ ডিসেম্বর ২০২১)। কিন্তু লিঙ্গ মূল উপাদান হলে পিরামিড কাঠামোর উপরের দিকে আরও বেশি ক্ষমতাবান পুরুষের উপস্থিত থাকার কথা। বর্গত্বের ক্ষেত্রে এ দুটি মুখ্য বিষয় হলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানও এত প্রকট হবার কথা নয়।
বিভিন্ন সফল ব্যক্তির জীবন পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট হবে, অর্থ প্রধান নিয়ামক নয়। এ লেখায় দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে চাই, যারা আরম্ভ করেছেন শূন্য থেকে। একজন মায়ার আমসেল রথসচাইল্ড (Mayer Amschel rothschaid), যিনি ব্যাংকিং রাজবংশ নামে অভিহিত, প্রথম জীবনে তিনি ফ্রাঙ্কফুর্টের জুডেনগাসের একটি সরু গলিতে বসবাস করতেন। দ্বিতীয়জন মুকেশ আম্বানি, তিনি বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম সম্পদশালী ব্যক্তি। তিনিও ছোটবেলায় বোম্বের ভুলেশ্বর পাড়ার দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করতেন। মূলত তারা মানসিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন।
সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে যারা স্থির মানসিকতার (Fixed Mindset)। এরা চিন্তা করতে অক্ষম। এদের পক্ষে মানসিক শক্তিকে অনুভব করা সম্ভব নয়। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন যারা বৃদ্ধির মানসিকতার (Growth mindset)। একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণশক্তি স্নায়ু থেকে শরীরে প্রবাহিত হলেও এর কার্যকারিতার ৯৫% অচেতন থাকে। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে নিজেদের মৌলিক অধিকার, শ্রেণি, বৈষম্য ইত্যাদি সম্পর্কেও সচেতন হবে। সেক্ষেত্রে এলিট শ্রেণির পক্ষে পুঁজি এবং ক্ষমতা বিস্তার করা সম্ভব নয়। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রকৃতিপ্রদত্ত সর্বজনীন একটা বিষয়কে গোপন করে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়েছে অর্থ এবং লিঙ্গকে, যা নির্দিষ্ট শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে।
মন অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্তুগত (Non-physical) পদার্থ। বুদ্ধ বলেছেন, ‘মনই সব। তুমি যা ভাববে তাই হবে তোমার ভবিষ্যৎ’। ডক্টর জো ডিসপেঞ্জা (Joe Dispenza-Chiropractor) বলেছেন, ‘মানুষের চিন্তার চেয়েও তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি বেশি শক্তিশালী’। মনের অফুরন্ত শক্তিকে যারা অনুভব করে ব্যবহার করতে পেরেছেন তারাই অর্জন করেছেন সফলতা।
যদি মন ক্ষুদ্র বিষয় হতো তবে প্ল্যাসিবো এফেক্ট (Placebo Effect) কাজ করার কথা নয়। প্ল্যাসিবো এফেক্ট হচ্ছে এমন এক ধরনের ঔষধ বা ব্যবস্থাপনা, যার সাথে রোগের কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সেই ঔষধের প্রভাবে বেশিরভাগ সময় রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের মনের বিশ্বাস শরীরে ইতিবাচক সংকেত পাঠায় এবং সে অনুযায়ী বাস্তবতা পাল্টে যায়।
(২)
কিন্তু কেন মনকে আড়াল করে রাখা হয়েছে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন? একসময় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো দূরের অনুন্নত দেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে শাসনকার্য সম্পাদন করতো। উপনিবেশবাদের পতন এবং আধুনিক রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে এই ধরনের দখলদারিত্ব কমে গেছে। বর্তমানে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের (Group Psychology) মনস্তত্ত্বকে বিভিন্ন প্রকার অদৃশ্য কলাকৌশলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণের অভ্যাস এবং মতামতকে আকার দেওয়া হচ্ছে। বেক্সিটের সময়ও বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক কলাকৌশল অবলম্বন করে হয়েছিলো (বেক্সিট মানে ব্রিটেনের প্রস্থান। যারা বেক্সিটকে সমর্থন করতেন অর্থাৎ লিভ গ্রুপের রাজনৈতিকবৃন্দ তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার প্রোপাগান্ডা চালিয়েছেন, যার বেশিরভাগ ছিল মিথ্যা। এই ষড়যন্ত্রে ক্যাম্ব্রিজ অ্যানালাইটিকার নাম প্রকাশিত হলে বলা হয়, গণভোটের ক্যাম্পেইনের সময় এই কোম্পানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জনগণের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। মানুষজনের পছন্দ-অপছন্দ দেখে তারা নির্ধারণ করেছিল, কোন্ শ্রেণির মানুষ কোন্ জিনিস পছন্দ করে এবং তাদের চিন্তাধারা কোন্ ধরনের। সেই অনুযায়ী তারা বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ নির্মাণ করে প্রচার করেছিল। তেমনি একটা প্রচারণা ছিল - ইউ’র অনুমতিক্রমে ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করতে পারবে তুর্কির ৭৬ মিলিয়ন লোক। যে-সব বয়স্ক লোক বিদেশিদের ভয় পান এবং যাদের কাছে ইমিগ্রেশন ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ, এই সংবাদ কেবলমাত্র তাদেরকেই দেখানো হয়েছিল। বস্তুত তুর্কি ইউ’র সদস্যই ছিল না। এমনকি ভিসা ফ্রি ভ্রমণের অনুমতি দেবার কথাও তারা বলেনি। প্রতিটি নির্বাচনের সময়েও বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক উপায়ে জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করা হয়। এতে মানুষজনের নজরে পড়ার আশঙ্কা কমে যায়, একই সাথে কমে যায় প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ খরচ অর্থাৎ মন সম্পর্কে অজ্ঞতার হেতু এলিট শ্রেণি সাধারণের চিন্তার জগতও পরিচালনা করতে পারছে। এক্ষেত্রে দূরত্ব কোনো বাধা নয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই কৌশলগুলো নিয়ে ‘মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ’ নামক প্রবন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার জন্য প্রথমে মনকে গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সেই মনস্তত্ত্বকেই ব্যবহার করা হয়েছে প্রধান অস্ত্র হিসেবে।
বর্তমানে প্রতিটি বড় রাষ্ট্রে পাবলিক রিলেশন নামক একটা সংস্থা অদৃশ্যভাবে কাজ করে থাকে। এই ধারণার প্রচারক হলেন এডওয়ার্ড বার্নেস (Edward Berneys)। তাকে পেশাদার জনসংযোগ পরামর্শ ধারণার অগ্রদূত বলা হয়। তিনি আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানির নিয়ন্ত্রক (Manipulator) হিসেবে কাজ করেছেন। এডওয়ার্ড বার্নেসের মতো নিয়ন্ত্রকরা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষের সচেতনতাকে অকার্যকর করে রাখেন। এতে জনগণ রাষ্ট্রের অবকাঠামোর জন্য দম দেওয়া পুতুলের মতো কাজ করে, খায়-দায়-ঘুমায়, সন্তান প্রসব করে ইত্যাদি। এরা চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে একেবারে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি। রাষ্ট্র কর্তৃক এই বৃত্তের বাইরে যেয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষ চিন্তা করতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন সচেতন। যারা চিন্তা করতে সক্ষম (বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক) তাঁরা অনেকাংশে সচেতন মানুষ। এদের সচেতনতাকেও বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই নিয়ন্ত্রণের দরুন (Psychological manipulation) সরকার দেশের স্বার্থপরিপন্থী কাজ করলেও জনগণ সহজে বিপ্লবের পথে এগুতে পারে না।
মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো সংস্কৃতি এবং শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদি। শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বড় কোম্পানি এবং আমেরিকার মতো দেশ এই হাতিয়ার দ্বারা সাধারণ মানুষকে পরিচালনা করছে। এই পদ্ধতিতে এত কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যে, বেশিরভাগ মানুষ অনুধাবন করতে পারে না, তারা চিন্তা করতে অক্ষম এবং তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্লেটো তাঁর ‘Allegory Of the Cave’ নামক গল্পে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন।
এ পর্যায়ে আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো, শ্রেণি কীভাবে মানুষের মনকে প্রভাবিত করে থাকে?
মানবসমাজ প্রতিটি মানুষকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন নাম প্রদান করে। সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে এভাবে চিহ্নিতকরণের আওতামুক্ত থাকলে আইন প্রয়োগ এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এটা অনেকাংশে সত্য। মানুষ যখন মানসিকভাবে পদ্ধতিটা মেনে নিয়েছে, তখন এলিট শ্রেণি প্রতিটি মানুষকে পণ্যের মতো নিম্নবর্গ, উচ্চবর্গ হিসেবে বিভক্ত করেছে। মানুষ যতই আধুনিকতার পথে এগিয়ে গেছে, ততই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বহিঃশক্তি থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছে ঠিকই, কিন্তু অনিবার্য হয়ে পড়েছে ব্যক্তির বর্গত্ব। বর্গত্বের ট্যাগলাইন লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তি মানুষ ‘আমি’ অর্থাৎ ‘নিজ’ থেকে সরে গেছে দূরে; রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাজকর্মে দাসের মতো হারিয়েছে চৈতন্য (মনের সাথে যুক্ত)। সামাজিক চিহ্নিতকরণ এবং বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট নিয়মে অভ্যস্ত করে নিয়ন্ত্রণ করা।
(৩)
পূর্বে মানুষের জীবনে মনের প্রভাব সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। আমিও অন্যদের মত অর্থ এবং লিঙ্গকে মুখ্য হিসেবে ধরে নিয়ে পথ চলেছি। নারী নির্যাতনের মূল কারণ হিসেবে আর্থিক অসঙ্গতিকে চিহ্নিত করে, বিবাহিত জীবনে সঙ্গতিও তৈরি করেছিলাম। তারপরেও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আমাকে মুক্ত করতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কেউ এগিয়ে আসেনি, বরং কালচারাল সার্ভাইভাল রেজিস্টেন্সের ( Cultural Survival Resistance) নামে বলি দিয়েছে। মানসিক দিক থেকে আমি এতো দুর্বল ছিলাম যে, সারাজীবন ভেবেছি, একজন রাজপুত্র এসে আমাকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করবে। একবারও অনুধাবন করিনি, অক্ষম বা মূর্খ মানুষের কল্পনা বাস্তবে পরিণত হয় না। তাই যারা রাজপুত্রের ট্যাগ লাগিয়ে জীবনে এসেছে, তারা ছিলো দেহপন্থী। আমার মন কিংবা বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের বিষয়ে তাদের ন্যূনতম আগ্রহ ছিলো না। কীভাবে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হতে পারি, সেই বিষয়ে কেউ পরামর্শও দেয়নি। যখন বুঝেছি, বাঁচার শর্ত একটাই ‘যুদ্ধ করা’, তখন বোধোদয় হলো, রাজপুত্র টার্মের বাইরে বের হতে না পারলে সারাজীবন ধুকেধুকে মরতে হবে। কিন্তু কারাবাসে থেকে মনের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিলো শরীরের (অনুভূতি) হাতে। নতুন পথের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলাম না। দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে পড়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যখন মন এবং মানসিক শক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি তখন থেকে প্রশিক্ষিত করেছি মনকে। সে-সময়ে Langston Hughes এর I, Too কবিতার মতো সব অপমান সহ্য করে রান্না ঘরে ভাত খেয়েছি। (রান্নাঘরে ভাত খাওয়ার ব্যাপারটা রূপক। এটার অর্থ নিজেকে প্রস্তুত করা) প্রার্থনা করেছি পরিবর্তনের। কচ্ছপগতিতে সমুখে এগিয়ে গেছি; নিজেকে সচেতন করেছি; আত্মার রসদ যুগিয়েছি। যারা প্রার্থনা শব্দ দেখে ভ্রু কুঞ্চন করছেন তাদের বলছি, প্রার্থনা, কল্পনা বা ইতিবাচক চিন্তা এবং কর্ম এই তিন শক্তি মিলে মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। এখন আমি যখন কারাগার থেকে মুক্ত ও স্বাধীন তখন দৃঢ় কণ্ঠে বলছি, মানুষ বাঁচে তার বিশ্বাসে, লিঙ্গে কিংবা অর্থে নয়।
তথ্যসূত্র:
১- Using Your Thoughts and
Emotions To Transform Your Life (Danny Fitzpatrick -Dec-1- 2023)
২ Strange but true: 95
percent of brain activity is unconscious (The Oklahoman-oct-9-2018)
৩। The unconscious
subconscious and spirituality (Belinda Matwali-june 13-2023)
৪। How Capitalism Shapes the
Mind- (Karim Bettache Ph.D. October 9, 2023)
৫। We are all victims of a
patriarchal society- (Mahamuda Rahman-8-march-2021)
৬। The Power of Belief: How
Your Subconscious Mind Shapes Your Reality-(Dynamo Jakk-8-feb-24)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন