কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩২


 

ধরা-অধরা

সারাটা দিন তবু একররকম কেটে যায়, কিন্তু রাত ঘনিয়ে এলেই যতসব ঝঞ্ঝাট। তিনি এখনও চাকরি করেন, তাই অফিসের ব্যস্ততায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্য কিছু ভাবার সুযোগ থাকে না। আবার অফিস থেকে বেরিয়ে তখনই নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন না, আগে যে পাড়ায় থাকতেন সেখানে কালীবাবুর চায়ের দোকানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডা জমে, একা মানুষ রোহিতবাবু সেই পুরনো আড্ডাকে এড়িয়ে থাকতে পারেন না। অন্য কোথাও যাবারও থাকে না। রাত সাড়ে-নটা নাগাদ নিজের পাড়ায় ফিরে মধুবাবুর হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে ফ্ল্যাটে  ঢুকে পড়েন। ছুটির দিন ছাড়া সারাসপ্তাহ এই ফ্ল্যাটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রাতে ঘুমোনোর। তবে ফ্ল্যাটে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়েন না, বরং জামাকাপড় ছেড়ে আয়েস করে বসেন মদ্যপানে। এটা তাঁর অনেকদিনের অভ্যাস। বিছানায় যাবার আগে কয়েক পেগ স্কচ হুইস্কি পেটে না পড়লে তিনি একধরনের অসহায়তা ও বিষণ্ণতায় গুম হয়ে থাকেন। তারপর একটু একটু করে নেশা উঠতে থাকে, নেশা জমে ওঠে, রোহিতবাবু কিছুটা বেসামাল পায়ে টলতে টলতে বিছানায় এসে এলিয়ে পড়েন।

একা মানুষ রোহিতবাবু এরপর বিছানায় সারাটা রাত ঘুমিয়ে থাকেন অথবা জেগে থাকেন, সে সম্পর্কে কারও কিছু জানা নেই। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সকালবেলা বিছানা ছেড়ে উঠে রোহিতবাবু নিজেও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না, তিনি কি রাতে ঘুমিয়েছিলেন, নাকি জেগেই ছিলেন! আসলে তিনি বিছানায় শুয়ে বেডসুইচ টিপে ঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়ার পরেই একটা অন্য ধরনের অনুজ্জ্বল আলোয় ঘরটা ভরে যায়। আর সেই মরা আলোয় রোহিতবাবুর খুব কাছে এসে দাঁড়ান মনোরমা। একটা ঢলঢলে মুখ, লাবণ্যে সারাটা দেহ ভরপুর। রোহিতবাবুর মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে অস্ফূটে প্রশ্ন করেন, ঘুমিয়ে পড়েছ নাকি?

রোহিতবাবু এক একদিন অফিসে কাজের অবসরে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেন, মনোরমা প্রতি রাতে তাঁর কাছে কেন আসেন? সত্যিই আসেন! নাকি আদৌ আসেন না! নেশার প্রাবল্যে তিনি জেগে থেকে স্বপ্ন দেখেন অথবা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন!

রোহিতবাবু কোনোদিনই ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন। বিশেষত মনোরমা যে তাঁর মদ্যপান ও রাতের ঘুমের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভূত হয়ে তাঁর নিবিড় সান্নিধ্যে আসেন, তাও সম্ভব নয়। কারণ মানুষ জীবিত থাকলে তার ভূত হবার কোনো অপশন থাকে না। তাহলে কি মনোরমা আসেন রোহিতবাবুর স্বপ্নে? প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে, একই অবয়বে, একই পোশাকে, একই সাজসজ্জায়? রোহিতবাবু বিছানা ছেড়ে উঠে বসেন। মনোরমাকে বিছানার একধারে ইশারায় বসতে বলেন। ইঙ্গিতে বোঝান, কোনো কথা বোল না, নীরব থাকো, আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি দুজনে দুজনকে। তারপর ভোরের আগেই চলে যেও। সারাটা রাত আমি জেগে থাকি তোমারই জন্য, শেষ রাতটুকু বরং একটু ঘুমোই।

রোহিতবাবু বিশ্বাস করতে পারেন না, প্রতি রাতে তিনি জেগে অথবা ঘুমিয়ে একই স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে চলেছেন। না, তা হতে পারে না। মনোরমা তাঁর একান্ত অধরা কাম্যনারী। নিছক মদ্যপান বা স্বপ্নে তাকে ধরা অসম্ভব!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন