কোরীয় সাহিত্যে ঐতিহ্য-পরম্পরা
সাহিত্যে একটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন প্রকাশমান। সাহিত্যের ভেতর দিয়ে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীর ভাষার বিবর্তন, শিল্প চেতনা, মূল্যবোধ, দর্শন ও জীবন-সংগ্রামের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ব্রুস ফুলটন (Bruce Fulton) ধারণা করেন, কোরিয়ার ঐতিহ্যের উৎপত্তিস্থল সাইবেরিয়া। তবে ক্রমান্বয়ে কোরীয় ঐতিহ্যে চৈনিক নন্দনতত্ব, কনফুসীয় মতবাদ ও বৌদ্ধ দর্শন সাঙ্গীকৃত হয়। কোরীয় জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্ডিতের সহায়তায় বৌদ্ধ দর্শনের আলোকমার্গের সন্ধান লাভ করেননি। চৈনিক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের মাধ্যমে কোরীয় জনসাধারণ লাভ করেছেন বৌদ্ধ দর্শনের যথার্থ শিক্ষা। ফলে কোরীয় ঐতিহ্যের বিকাশে চৈনিক সংস্কৃতির প্রভাব অত্যন্ত প্রবল। কোরিয়া দীর্ঘকাল জাপানের শাসনাধীন থাকায় কোরীয় সমাজ ও ঐতিহ্যের ভেতর জাপানের প্রভাবও বিদ্যমান। টি. এস. এলিয়টের দৃষ্টিতে ঐতিহ্যের ধারণা 'the historical sense' বা ইতিহাস-চেতনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ইতিহাস- চেতনার জন্য এক জাতীয় ইন্দ্রিয় চেতনার প্রয়োজন যা যুগপৎ অতীতের অতীত-চেতনা এবং অতীতের সমকালীন চেতনার সঙ্গে অন্বিত। পৃথক পৃথকভাবে চিরন্তন চেতনা ও লৌকিক চেতনা এবং একই সঙ্গে চিরন্তন ও লৌকিক চেতনার সমন্বয়ে যে ইতিহাস-চেতনা মূর্ত হয় তা একজন লেখককে ঐতিহ্যিক করে তোলে। এলিয়টের অভিমত হচ্ছে, ঐতিহ্য উত্তরাধিকারসূত্রে লাভযোগ্য নয়, কঠোর শ্রমের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয়। কোরীয় সাহিত্যে ঐতিহ্য-পরম্পরাঅন্বেষণের ক্ষেত্রে এলিয়টের অবলোকনকে আমরা গুরুত্ব দেব।
মৌখিক রচনা কোরীয় সাহিত্যের প্রাথমিক রূপাবয়ব নির্মাণ করে। চিনা ভাবলিপি হানমুন সংযুক্ত শিলা থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক কাল পর্যন্ত সাহিত্যের লেখ্য ভাষা হিসেবে সমাদৃত হয়। হানমুন সাহিত্যের ভাষা হিসেবে পণ্ডিত-আমলাগণের ভাবপ্রকাশের বাহন হয়ে ওঠে। হাংগুল ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত হলেও বিংশ শতক পর্যন্ত এ ভাষা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি।
চর্যাপদ সদৃশ হাইয়াংগা বা দেশীয় গান কোরীয সাহিত্যের আদি নিদর্শন। প্রধানত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও শিলা যোদ্ধাগণ এ গানগুলোর রচয়িতা। ত্রিরাজ্য (খ্রিঃপূঃ ৫৭-৬৬৭ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালে ২৫টির ভেতর অন্তত তিনটি গান রচিত হয়েছে। চৈনিক ভাবলিপির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হাইয়াংচাল লিখন পদ্ধতিতে হাইয়াংগা লিপিবদ্ধ করা হত। সংযুক্ত শিলা (৬৬৭-৯৩৫) সময়কালে কোরীর লেখকগণ কর্তৃক ধ্রুপদি চৈনিক ভাষায় লিখিত হানশি কবিতা বিস্তৃতি লাভ করে। চিনের ট্যাং কবিতার শিল্পকৌশল কোরীয় কবিতায় অনুসৃত হয়। এলিট শ্রেণির লেখকের হানশির পাশাপাশি সাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ মৌখিক ঐতিহ্য সমুজ্জ্বল ছিল। এ ঐতিহ্যের ভেতর লোকগান, শামান মন্ত্র, আনুষ্ঠানিক গান উল্লেখযোগ্য। 'আরিরাং' কোরিয়ার সুপরিচিত লোকগান। কোরিও রাজ্যে (৯১৮-১৩৯২) বিকশিত সাহিত্য গীতল লোকগান, শিহওয়া নামক গদ্য এবং শিজো নামক ব্যক্তিগত গানের সমাহারে প্রোজ্জ্বল। এ সৃষ্টি সম্ভার ১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দে হাংগুল প্রবর্তিত হবার পর হাংগুল লিপিতে রেকর্ড করা হয়। কোরীয় গীতল লোকগান Changga-র রচয়িতাগণ মূলত অজ্ঞাত রয়েছেন। চিনা ভাষায় লেখা হত হানশি কবিতা। চোসন (Choson) লেখকগণও চিনা ভাষায় লিখতেন; তবে তারা shijo রচনা করতেন হাংগুল লিপিতে। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক কোরীয সাহিত্যের উন্মেষ ঘটে। পূর্ব এশিয়ার কথাসাহিত্যে পাশ্চাত্য বস্তুবাদ এবং কাব্যে রূপকল্পবাদ ও প্রতীকবাদের প্রভাব অবারিত হওয়ায় এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়া জাপানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কোরিয়ার আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এ সময়ে শিক্ষা, সমতা ও নারীর স্বাধীনতা প্রাধান্য পায় এবং হাংওল সাহিত্যের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯২০ এর গোড়ার দিকে বামপন্থি লেখকগণ প্রায়শ গ্রামীণ জীবনের দুঃখকষ্টের কথা লিপিবদ্ধ করতেন এবং জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সচেষ্ট থাকতেন। কোরিয়ার শিল্পায়নের পূর্বে প্রলেতারিয়ান লেখকগণ রায়তদের সংগ্রামী জীবনকে চিত্রায়িত করেন। কেবল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে যখন বামপন্থি সাহিত্যের ধারাকে দমন করা হয়, তখন কোরিয়ার শিল্প শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটে। প্রলেতারিয়ান লেখকগণ কারখানার শ্রমিকদের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন, তবে গ্রামীণ বাস্তব জীবনের চিত্র উন্মোচনের ক্ষেত্রে তাদের প্রয়াস ছিল দুর্বার। এক পর্যায়ে ঔপনিবেশিক শাসক কোরীয়দের নিজের ভাষায় কথা বলা ও লেখা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ অবস্থা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চলমান থাকে। উল্লেখ্য যে জাপানের দমনপীড়ন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানিদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেন, 'May I be frank with you and say that when I chance to hear of some instances of ill-treatment to Koreans and to others who are less fortunate than yourselves, it hurts me very deeply causing keen disappointment?' রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছিলেন, পরাজিত মানুষেরা সুযোগ পেলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে; তাদের দীর্ঘ স্মৃতি ও ক্ষত হৃদযে ক্ষোভ সৃষ্টি করে বলে শক্তিধরের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে তারা প্রয়াস পায়। রবীন্দ্রনাথের দূরদর্শিতা প্রশ্নাতীত।
১৯৪৫ পরবর্তী স্বাধীন কোরিয়ায় Shin Kyong-nim, Kim Chi-ha, Ko Un প্রমুখ কবিগণ অসামান্য দীপ্তি নিয়ে আবির্ভূত হন। এ সময়ে Ko Un-এর ক্রিয়মাণতা বিস্ময়াবহ। কোরীয় যুদ্ধের দুর্ভোগময় কাল অতিক্রম করে তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর সুস্থির জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয় এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রিত হয়। কয়েক বছর পরে তিনি তরঙ্গিত সমাজে ফিরে আসেন। নাস্তির প্রগাঢ় স্রোত পেরিয়ে সাত ও আটের দশকে তিনি মানবতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে দৃপ্ত মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকণ্ঠ। 'Three-headed Hawk' বা 'তিন মাথার বাজপাখি' কবিতায় তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিনাশ কামনা করে বাজপাখির রূপকল্প সৃষ্টি করেন :
It dived with sharp eyes
glaring tore at them with its ferocious beak.
কো উনের কবিতা প্রবলভাবে ঐতিহ্যাশ্রয়ী।
তাঁর 'Asking the Way' বা 'পথের অন্বেষণ' করিতায় বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব লক্ষণীয় ।
You fools who ask what god is. Should ask what life is instead.
Find a port where lemon trees
bloom.
Ask about places to drink in
the port.
ঈশ্বরের সাধনায় প্রকৃত জীবনবোধ জাগ্রত হয় না—বুদ্ধের এ বিশ্বাস সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা প্রণিধানযোগ্য। 'বুদ্ধ দেব-প্রসঙ্গ' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেন, বুদ্ধদেব 'দেবতাকে মানুষের লক্ষ্য হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া এবং কল্যাণ তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতে তাহা তিনি আহ্বান করিয়ছিলেন।' বৌদ্ধ দর্শনের প্রতি অনুরাগের ক্ষেত্রে কো উন ও রবীন্দ্রনাথের ভেতর সাযুজ্য লক্ষ করা যায়। রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেন, বুদ্ধদেবকে 'অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি'। বুদ্ধের 'তপস্যার মধ্যে ছিল নির্বিচারে সকল দেশের সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা' যা রবীন্দ্রনাথের আকর্ষণের মুখ্য বিষয়। কো উন ও রবীন্দ্রনারের ভেতর বৈসাদৃশ্যও বিদ্যমান। কো উন নিজে স্বীকার করেন, রবীন্দ্রনাথের বাংলা অত্যন্ত চমৎকার। তবে তাঁর কবিতায় প্রার্থনার সুর যেভাবে অনুরণিত হয় তা কো উনের কবিতায় দৃশ্যমান নয়। কো উনের আপাত সহজ কবিতায় ফুটে ওঠে প্রতীকী চিত্রকল্পের ব্যঞ্জনা। 'Taklamakan Desert' কবিতায় তিনি মরুভূমির শূন্যতা ও নীরবতার ভেতর নির্জন যাত্রীর অভিজ্ঞতা লাভ করতে চান, এমনকি বিলুপ্ত হতে চান কেননা পৃথিবীর ও তাঁর ব্যক্তিগত লুব্ধতা তাঁর কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
Why I'm going to the Taklamakan Desert:
I can no longer stand the
world's greed or mine.
There, in the Taklamakan
Desert, the silence of a thousand-year- old skull.
ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদের 'কো উনের কবিতা: খুলির নীরবতা' গ্রন্থটির শিরোনাম এ কবিতা থেকেই সংগৃহীত হয়েছে।
রা হিদুকের 'অদৃশ্য হাতের তালু'
কবিতায় বৌদ্ধ দর্শন ও পুনর্জন্মের প্রসঙ্গ আভাসিত হয়েছে। Jeolla Province এর
Muan-এ অবস্থিত Hoesan White Lotus Pond সম্পর্কে পরিবেশবাদী এ কবিতাটি নির্মিত হয়েছে।
Jeong Su-dong নামের এক ব্যক্তি ১২টি পদ্মমূল রোপন করেছিলেন। এখন তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার
স্কয়ার মিটার জুড়ে কেবল পদ্মের শুভ্রতা। কবি এখানে শত বৎসর পরে কিংবা তারও পূর্বে
ফিরে আসতে চান। এলিয়টের 'The Waste Land' এর প্রথম পর্বে 'A little life with
dried tubers'-এর চিত্রকল্প পুনর্জন্মের ইঙ্গিত বহন করে না; মৃত্যুর শীতলতা দিয়ে কবিতার
এ পর্বটি আচ্ছন্ন। রা হিদুকের কবিতায় পদ্ম বুদ্ধের প্রজ্ঞাকে প্রতীকায়িত করে। এখানে
পদ্মগুটি পুনর্জন্মের প্রতীক।পদ্মগুটির কাছে কবি ফিরে আসতে চান যেভাবে কিম হিয়ন সুং
'ডুমুর গাছ' কবিতায় ডুমুরের শেকড়ের কাছে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন।
কিম কি-তায়েকের 'অফিস কর্মচারী' কবিতায় কাম্য সমাজ ও উজ্জ্বল ঐতিহ্যের স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে। কবিতাটিতে একজন নিষ্ঠাবান, সৎ কর্মচারীর জীবনালেখ্য পাঠককে স্পর্শ করে। কবি এখানে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি সুন্দর, কর্মময়, দুর্নীতিহীন সমাজের আদর্শিক চিত্র অঙ্কন করেছেন।
কিম কি-তায়েকের কবিতার বিপ্রতীপ চিত্র ফুটে উঠেছে কিম চি-হার 'Five Bandits' বা 'পাঁচ ডাকাত' কবিতায়। সাতের দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি পার্ক চুং হি ও আটের দশকে তার উত্তরসূরীর শোষননীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার হলে কিম চি-হা তাঁর ক্ষুরধার শব্দে এ দীর্ঘ কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতায় কবির প্রবল ইতিহাস-চেতনা মূর্ত হয়েছে। কবিতাটিতে pansori বা ঐতিহ্যিক মৌখিক পরিবেশনার গীতল ধারা অনুসৃত হয়েছে। পাঁচ ডাকাত কোরিয়ার পূর্বতন পাঁচ কর্মকর্তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যারা ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে জাপান কর্তৃক কোরিয়া দখলের সময় কোরীয় জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। অত্যন্ত শ্লেষাত্মক ভাষায় পাঁচ শ্রেণির নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তার পরিচয় ও অপকর্মের বর্ণনা কবিতাটিতে প্রদত্ত হয়েছে।
ঠকদের শারীরিক বর্ণনাও সুতীক্ষ্ণ। তাদের শরীরে রয়েছে চৌর্য বৃত্তির জন্য অতিরিক্ত গ্ল্যান্ড যা ষাঁড়ের বীর্য থলির মতো বৃহৎ।
Ordinary folk all have five viscera and six organs in their bellies, but these thugs have an additional thieving gland, as big as ox's balls, inside their bellies, so they have five viscera and seven organs.
এ কবিতার জন্য কিম চি-হাকে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন সহ্য ও কারাবরণ করতে হয়েছে।
কোরিয়ার বাইরে অভিবাসী কোরীয় কবিদের সমকালীন ডায়াস্পোরা কাব্য বিশ্বসাহিত্যে নন্দিত হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নিউইয়র্কবাসী Monica Youn এর 'Blackacre' (2016) কাব্যের স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে আলোকপাত করা যায়। কাব্যটি ৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত। চতুর্থ অধ্যায়ের Blackacre কবিতাটি ১৪ টি পর্বে বিভক্ত। এ সকল পর্বের কবিতাগুলো চলিষ্ণু গদ্যে সজ্জিত। বাংলা ভাষায় যারা গদ্যকবিতা চর্চা করেন তাদের জন্য এ কাব্যটি আদর্শ বলে প্রতিভাত হয়। কেননা Monica-র কাব্যভাষা এত দীপ্তিময় যে তা অনুরাগী পাঠককে অবলীলায় ঋদ্ধ করে।
Blackacre কবিতার দ্বিতীয় পর্বের নাম Wide। এ কবিতা থেকে কিছু বাক্য উদ্ধার করছি:
A wide-eyed girl is extreme
in her unliddedness, her bare membranes flinching at any con- tact, vulnerable
to motes, to smuts, to dryness. A wide-hipped girl extends the splayed arches
of her body to bridge the generational divides. A wide-legged girl unseals a
portal be- tween persons; she is disturbing to the extent that she is open to
all comers, a trapdoor that must be shut for safety's sake. A wide-eyed girl is
often thought desirable; a wide-hipped girl is often thought eligible; a
wide-legged girl is often thought deplorable. A wide-legged girl is rarely
wide-eyed, though she may have started out that way.
কবিতাটিতে সামাজিক প্রেক্ষাপটে 'প্রসারণ' শব্দের ধারণাকে পরীক্ষা করা হয়েছে। সংহত রূপকল্পের সাহায্যে জীবনের নানা স্তরে ব্যাপ্ত প্রসারণের তাৎপর্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিস্ময় ও তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীর অনির্দেশ্যতার সাথে 'প্রসারণ'-এর সংশ্লেষ রয়েছে—কবিতার শুরুতেই এ প্রত্যয় অভিব্যক্ত হয়েছে। এরপর কবিতাটিতে আয়তলোচনা, পৃথুনিতম্বা, প্রসারিত পদের তরুণীর শরীরী বৈশিষ্ট্যের অনুসন্ধান করা হয়েছে। আয়তলোচনাকে মুক্ত ও গ্রহণক্ষম তরুণী হিসেবে এবং পৃথুনিতম্বাকে প্রজন্মের যোগসাধিকা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। প্রসারিত পদের তরুণী অত্যন্ত মুক্ত স্বভাবের বলে সম্ভাব্য বিপদের সাথে তার সংশ্লিষ্টতাকে উন্মোচন করা হয়েছে। প্রসারিত পদের তরুণীদের ক্ষেত্রে এক প্রকার অন্ধত্ব আবির্ভূত হতে পারে যেখানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অজ্ঞাত ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত বৃত্তে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কবিতায় উন্মুক্ততা ও নিরাপত্তাহীনতার সামাজিক আদর্শ গভীরভাবে নিরীক্ষিত হয়েছে।
কবিতার মতো দক্ষিণ কোরিয়ার গল্প বৈচিত্র্যপূর্ণ। সো-জিন কিম 'কুকুর প্রজননকারী' গল্পে পিতার জীবনকথা তুলে ধরেছেন। পিতা দরিদ্র, রাস্তা পরিষ্কার করে জীবন নির্বাহ করেন। তবে তার নেশা কুকুরের প্রজননে সহায়তা করা। এ কাজ স্বভাবতই সুনাম বয়ে আনে না। কিন্তু গল্পকার নির্দ্বিধায় পিতার জীবনযাত্রায় আলো ফেলেন। Annie Ernaux-ও তার জননীর জীবন, অসুস্থতা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর অকপট বর্ণনা তুলে ধরে উপজীব্যকে বিশ্বাসযোগ্য ও হৃদয়গ্রাহী করে তোলেন।
Like many large families my mother's was a tribe : my grandmother and her children had the same way of behaving in public and of living out their semirural working condition.
'কুকুর প্রজননকারী' গল্পে পিতা যুদ্ধবন্দি হিসেবে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তার নিকট সহযোদ্ধাদের অর্থ গচ্ছিত থাকত। সে অর্থ লুণ্ঠনের জন্য কোরিয়ান ইয়ুথ কোর তাকে নির্যাতন করে। এক জার্মান রক্ষীর কুকুর, শেফার্ডকে দিয়ে তার শিশ্ন বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু তিনি অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করেও সহযোদ্ধাদের অর্থ দুষ্কৃতকারীদের হাতে তুলে দেননি। কুকুরের কামড়ে তার মৃত্যু ঘটে। কোরীয় সমাজের ঐতিহ্যিক মূল্যবোধ পাঠককে চমৎকৃত করে।
উত্তর কোরিয়ার গল্প অজ্ঞাত সমাজের রোমহর্ষক পরিবেশ উন্মোচন করে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ছদ্মনামধারী লেখক বান্দির 'The Accusation' যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত হয়। উত্তর কোরিয়ার এ গল্পগ্রন্থে স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে দৃশ্যমান বিভীষিকাময় ঘটনাবলির বর্ণনা রয়েছে। সাতটি গল্প নিষিদ্ধ জগতের তথ্যে পরিপূর্ণ। 'City of Specters' গল্পে একজন মা পিয়ংগিয়াঙে সামুদ্রিক পণ্যের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। একটি পার্টি সমাবেশে তার ছেলের অদ্ভুত আচরণ দৃশ্যমান হয়। কার্ল মার্কসের একটি চিত্রকর্ম দেখে সে চিৎকার করে ওঠে। সে চিত্রটিকে কোরীয় পুরাণের দৈত্য, ইয়োবি বলে ধারণা করেছিল।
জনজীবনে অন্ধকার কতটা দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে তা 'The Accusation' পাঠে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। Margaret Atwood লিখেছেন, 'The stories describe life under a locked-down totalitarian dictatorship in which everything is controlled by the central government, including writing and reading, in which society is riddled with spies who report on the most trivial of aberrations; and in which the non-elites are starved and overworked and lied to about the real state of affairs.'
কথা সাহিত্যে দক্ষিণ কোরিয়ার লেখকগণের রয়েছে ঈর্ষণীয় সুখ্যাতি।দেবোরা স্মিথ অনূদিত হান কাং-এর 'The Vegetarian' উপন্যাসের থিম মানবসত্তার ঔদ্ভিদ রূপান্তরণ। বিষয়বস্তু হিসেবে অভিনব না হলেও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এ উপন্যাসটি তাৎপর্যপূর্ণ। উপন্যাসটিতে প্রধানত তিনটি চরিত্রের বর্ণনার ভেতর দিয়ে প্রধান চরিত্রের পরিচয় ফুটে ওঠে।প্রধান চরিত্র ইয়ং-হাই স্বল্পভাষিণী। একজন নারী বিবাহিত জীবনে যতটুকু উষ্ণতা কামনা করে তা যথার্থভাবে ইয়ং-হাই অর্জন করতে পারেনি। কোরীয় পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে উগ্র পিতার শাসনে তার শৈশব কেটেছে। ফলে শৈশবের আনন্দ কিংবা স্বাধীনতা ভোগ করতে না পেরে ইয়ং-হাইয়ের প্রকাশ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকেনি। নিজের অস্তিত্বের স্বপ্নাচ্ছন্ন অঞ্চলে সে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। স্বামী ছং নিজের সীমিত দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন থাকায় শান্ত স্বভারের ইয়ং-হাইকে পত্নী হিসেবে নির্দ্বিধায় নির্বাচন করেছে। স্বপ্নের প্রভাবে ইয়ং-হাই আমিষ আহার বর্জন করলে কিংবা আমিষ রান্নায় অক্ষমতা প্রকাশ করলে ছং বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের দাম্পত্য যাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। ইয়ং-হাই স্বামীর শরীরী ক্ষুধা নিবৃত্তকরণে অপারঙ্গমতার কথা জানিয়ে দেয়। সামাজিকতা তার কাছে তুচ্ছ হয়ে ওঠে। অন্তর্বাস পরিধান তার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। অনিদ্রা তার সহচর হয়ে ওঠে। ইয়ং-হাইয়ের বাবা-মা-বোন আমিষ আহার্য গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করলে এক পর্যায়ে ইয়ং-হাই নিজের কবজিতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্তপাত ঘটায়। সে তার সারল্য-সাধনা থেকে বিচ্যুত হয় না।
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সে সকলের অজান্তে ঝর্নার পাশে রক্ষিত বেঞ্চে অর্ধনগ্ন হয়ে বসে থাকে। 'She had removed her hospital gown and placed it on her knees, leaving her gaunt collarbones, emaciated breasts, and brown nipples exposed'. সামাজিক জটিলতা অতিক্রমণের বাসনায় সে চিরাচরিত লজ্জাবোধকে অস্বীকার করে। তার অবস্থা হয়ে ওঠে শিকারি পাখির কামড়ে বিক্ষত সাদা-চোখের ছোটো পাখির মতো যার শরীরে 'vivid red bloodstraines' বিস্তৃত হয়ে আছে। ইয়ং-হাইয়ের নগ্নতা তার সারল্য-চেতনাকে উন্মোচন করে।সে নির্জন বৃক্ষের পরিচ্ছদহীন প্রতিনিধি। ইয়ং-হাইয়ের নিতম্বের ঊর্ধ্বাংশে ফুটে থাকা নীলচে-সবুজাভ জন্মদাগ প্রত্যক্ষ করার জন্য তার ভগ্নিপতি উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। ভগ্নিপতির এ আকাঙ্ক্ষার ভেতর দিয়ে তার লাম্পট্য প্রকাশ পায়।স্টুডিয়োতে ইয়ং-হাইয়ের সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরে শিল্পী ভগ্নিপতি বর্ণিল ফুলের ছবি আঁকে।জন্মদাগ প্রত্যক্ষ করে শিল্পীর বোধোদয় হয় 'There was nothing at all sexual about; it was more vegetal than sexual'.
ইয়ং-হাইয়ের অভাবনীয় সারল্য ও পবিত্রতা শিল্পীকে বিস্মিত করে। সে ইয়ং- হাইয়ের ভেতর নির্জন, নিরাভরণ বৃক্ষের অন্তর্গত শক্তির দ্যুতি আবিষ্কার করে, 'She radiated energy, like a tree that grows in the wilderness, denuded and solitary'. শিল্পীর নান্দনিক মূল্যায়ন ইয়ং-হাইয়ের চরিত্রকে উপলব্ধি করার জন্য সহায়ক। ছবি আঁকতে আঁকতে শিল্পী ইয়ং-হাইয়ের ভেতর মানুষ ও বন্য প্রাণীর বৈশিষ্ট্যে সৃষ্ট রহস্যময় জীবসত্তা প্রত্যক্ষ করে, 'Whether human, animal or plant, she could not be called a 'person' but then she wasn’t exactly some feral creature either more like a mysterious being with qualities of both'. কিন্তু সমাজের একজন প্রতিভূ হিসেবে শিল্পী শ্যালিকার নির্মল সত্তার স্বাভাবিক প্রসারণকে কালিমালিপ্ত করে। ইয়ং-হাইয়ের শরীরে অঙ্কিত ফুল রিরংসাকে প্রতীকায়িত করে। শিল্পীর শরীরে ফুল অংকন করা হলে তাকে শারীরিকভাবে গ্রহণ করতে দ্বিধা থাকবে না মর্মে ইয়ং-হাই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলে শিল্পী দ্রুত তার শরীরে ফুল আঁকিয়ে নিয়ে ইয়ং-হাইয়ের নিভৃত গৃহে উপস্থিত হয়। তার সারল্য, নগ্নতা ও নম্রতার সুযোগ নিয়ে সে ইয়ং-হাইয়ের সাথে মিলিত হয় এবং সম্ভোগের ভিডিয়ো ধারণ করে। শিল্পীর স্ত্রী ইন-হাই আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পীর শাস্তি নিশ্চিত করে। তবে নিজের সংসারে ইন-হাই রিক্ত হয়ে পড়ে। উপন্যাসে একমাত্র ইন-হাইকে সহানুভূতিশীল চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়ং-হাইকে কেবলমাত্র ইন-হাই দেখতে যায়, তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে সচেষ্ট থাকে। ইয়ং-হাই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের ঢালে বিস্তৃত অরণ্যের গভীরে স্থির, ও বৃষ্টিস্নাত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে; যেন সে উজ্জ্বল, সিক্ত বৃক্ষে রূপান্তরিত নতুন সত্তা। Dendrophilia বা বৃক্ষপ্রীতির কারণে সে যে অরণ্যের আশ্রয় খোঁজে তা ভাববার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। অতি-সারল্যকে ধারণ করবার জন্য সে নিজ গৃহে নগ্ন হয়ে থাকত, নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করত। ক্রমে তার চিন্তা প্রক্রিয়ার ভেতর পরাবাস্তব চেতনা এতটা প্রবল হয়ে ওঠে যে, তার আচরণে স্বাভাবিকত্বের সকল সূত্র বিশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। ইয়ং-হাই বিশ্বাস করে, সকল বৃক্ষ তাদের শীর্ষের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। সে ইন-হাইকে জানায় :
'Well, I was in a dream, and I was standing on my head...leaves were growing from my body, and roots were sprouting from my hands....So I dug down into the earth. On and on...I wanted flowers to bloom from my crotch, so I spread my legs; I spread them wide....'
শিল্পীর অঙ্কিত ফুল যৌনতার প্রতীক হলেও ঊরুসন্ধির ফুল যৌনতাকে প্রতীকায়িত করে না। কারণ ইয়ং-হাইয়ের দুর্বল শরীর ও স্বপ্নাচ্ছন্ন মনে রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা ব্যতীত কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তার দৃষ্টির ভেতর একদা বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কামনা বিসর্জনের অন্তর্গত সংকেত মূর্ত হয়েছিল; এখন সে প্রাতিস্বিক নির্বাণ লাভে অদ্ভুত ধ্যানে মগ্ন। ফলত ঊরুসন্ধির ফুল রূপান্তরের প্রাতিস্বিক প্রতীক হিসেবেই গণ্য।
মানসিক ব্যাধি (psychotic disorder) এর সাথে anorexia-র প্রাবল্যের কারণে সে খাদ্য গ্রহণেও অনীহ হয়ে ওঠে। সে চিন্তা করে শুধুমাত্র জল ও সূর্য়কিরণই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে। সে নিদ্রাহীন সময় কাটায় এবং ওষুধ খেতেও অস্বীকৃতি জানায়। ইয়ং-হাইয়ের জীবনতৃষ্ণা স্তিমিত হয়ে আসায় Anorexia দুশ্চিকিৎসনীয় হয়ে ওঠে। ইয়ং-হাই তার বড় বোনের নিকট প্রশ্ন উপস্থাপন করে, 'Why, is it such a bad thíng to die? এ rhetorical প্রশ্নের ভেতর দিয়ে সে মৃত্যুর শীতলতাকে সমর্থন জানায়। সংকট মুহূর্তে নাকে টিউব ঢুকিয়ে গ্রুয়েল দেয়া হলে তার অস্বাভাবিক আচরণের ফলে টিউব ও মুখ দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। তাকে বাঁচাবার জন্য তার বড় বোন সোলের প্রাচীন হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্সে বেরিয়ে পড়ে। যেতে যেতে ইন-হাই জানায়, জীবনে তারও স্বপ্ন রয়েছে; তবে স্বপ্নই জীবনে সবকিছু নয়, স্বপ্ন থেকেও কখনো জেগে উঠতে হয়। ইন-হাইয়ের এ বক্তব্যের বিপরীত চিত্র ইয়ং-হাইয়ের চিন্তার জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে; সে স্বপ্ন থেকে আর জেগে উঠতে পারে না।
দূর আকাশে কালো পাখি তমসাচ্ছন্ন মেঘের উদ্দেশ্যে উড়ে যায়। ইন-হাইয়ের দৃষ্টি তমসাকীর্ণ ও অনমনীয় হয়ে ওঠে। অসাধারণ এ চিত্রকল্প ইয়ং-হাইয়ের ট্রাজেডিকে প্রতীকায়িত করে।
হান কাং সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যের উপচারকে ব্যবহার করেছেন। ইয়ং-হাইয়ের নিতম্বের জন্মদাগ বা মঙ্গোলীয় চিহ্ন তার সারল্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক উৎসকে প্রতীকায়িত করে। বাসনা বিসর্জনের ভেতর দিয়ে ইয়ং-হাই বৌদ্ধ দর্শনের ইপিটমি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের সাথে কোরীয় সাহিত্যের সাযুজ্য অনুসন্ধানে আমাদেরকে বৌদ্ধ দর্শনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়।বাংলা ও কোরীয় সাহিত্যের উৎপত্তিকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের কাব্যিক গূঢ় চেতনার ঋণ অনস্বীকার্য। চর্যাপদের যুগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় সাহিত্যে বৌদ্ধ দর্শনের প্রাধান্য লক্ষণীয়। ১১০০ খ্রিস্টাব্দের কিছু পূর্বে বিদ্যাকর সংকলিত সংস্কৃত সুভাষিতরত্নকোষে বুদ্ধদেবের প্রশস্তিমূলক কবিতার পরে শিবের স্তুতিমূলক কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে ক্রমান্বয়ে বৌদ্ধ দর্শনের চর্চা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের 'যুদ্ধজন্মোৎসব', 'সকলকলুষতামসহর', 'বুদ্ধদেবের প্রতি', 'বোরোবুদুর', 'সিয়াম' প্রভৃতি কবিতা ছাড়াও সমকালীন ঔপন্যাসিক সন্মাত্রানন্দের 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা'-য় বৌদ্ধ দর্শনের বিস্তৃত বিশ্লেষণ লক্ষ করা যায়। কোরীয় যুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কোরীয় ও বাংলা সাহিত্য মুক্তি-চেতনার অনুষঙ্গে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যের সকল মানসম্মত কর্ম ইংরেজিসহ অন্যান্য বিদেশি ভাষায় অনূদিত না হওয়ার কারণে অবাঙালিদের নিকট যথাযথভাবে বাংলা সাহিত্য আদৃত হয়নি। দেশে যথার্থ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হলে পরিকল্পিতভাবে বাংলার ঐতিহ্য ও সাহিত্যের লালন ও প্রসারণ সহজতর হবে বলে ধারণা করা যায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন