কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

শুভ্রনীল চক্রবর্তী

 

সুভাষচন্দ্র বসু, পরবর্তী ১৯৪৫ (৬)  

 




নেতাজি কি এখনো জীবিত?

এতদিন আমরা নেতাজীকে নিয়ে যেটুকু জেনেছি অর্থাৎ ১৯৯০এর আগে পর্যন্ত বা বলা যায় গুমনামী বাবার মৃত্যুকাল পর্যন্ত তা কম বেশি ক্লাসিফাইড এবং কিছু প্রামাণ্য দলিল মেলে কিন্তু ১৯৯এর পরবর্তী কার্যকলাপ জানা একপ্রকার দুরূহ ব্যাপার। আমি বহুবছর এই নিয়ে গবেষণা করছি এবং বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি যেগুলো যথাসম্ভব আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, কিন্তু আমার বিগত ধারাবাহিকগুলোর মত পুঙ্খানপুঙ্খ সোর্স বা রেফারেন্স দিতে পারবো না, কারণ বেশিরভাগই শোনা বা দ্যাখা অন্যান্য গবেষক বা নেতাজির সহকর্মীদের থেকে যাদের সাথে দেখা করা বা কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমি বেশ কিছু ঘটনা বা রাজনৈতিক কার্যকলাপ তুলে ধরার চেষ্টা করবো এবং আমার এই গবেষণা পত্রের শেষ লগ্নে এসে যেগুলো মিসিং লিঙ্ক হিসেবে আপনাদের সাহায্য করবে। আবার অনেক ঘটনা আমি চাইলেও প্রকাশ করতে পারবো না, কারণ তাতে আমাকে রাষ্ট্রের কাছে অনেক আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। বিগত  আলোচনাগুলোর মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয় বুঝতেই পেরেছেন নেতাজির মত হাইভোল্টেজ মিস্ট্রি আজ পর্যন্ত বা আধুনিক ইতিহাসে আমরা দেখিনি এবং এই বিষয়ের মত ওয়াল্ড কনস্পিরেসি আর কোনো রাষ্ট্র নায়ককে নিয়ে হয়নি, তাকে নিয়ে সব সত্যি সামনে আসলে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক কিছুই ওলোট পালোট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তাই ব্যক্তি বা সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সব সত্যি বা ১৯৪৫ পরবর্তী বেশিরভাগ সত্যিই প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

১৯৯০ সালে নর্শিমা রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কংগ্রেস স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে প্রথম নেতাজীকে তাদের একজন বলে মেনে নেয় এবং গান্ধী পরিবারের ক্ষমতা কিছুটা শিথিল হওয়ায় নেতাজির পরিবারের উপর নজরদারিও বেশ শিথিল হয়। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার সুভাষ বসুকে মরণোত্তর ভারত রত্ন দেন, কিন্তু বসু পরিবারের বহু মানুষ এই পুরস্কার অস্বীকার করে্ন, কারণ তারা মনে করতেন নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়নি এবং এখনো বেঁচে আছেন,   তাই মরণোত্তর ভারতরত্ন মেনে নেওয়া মানে সুভাষ বসু মৃত এটা মেনে নেওয়া। সেই কারণেই তারা এই পুরস্কার বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। হঠাৎ ঠিক সেই সময়ে ৯২ সাল নাগাদ নেতাজির এক সহকর্মী জেনারেল অমর বাহাদুর সিং দাবী করেন তিনি নেতাজীকে দেখেছেন ও কথাও বলেছেন। উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরে মৌনীবাবা বা সন্ত সম্রাট যোগী নামে এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা করে তিনি এই কথাটি সর্বসমক্ষে আনেন এবং মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট দেখলেও  জানতে পারবেন জেনারেল অমর বাহাদুর সিং ছাড়া আরও ৩ ব্যাক্তি মৌনীবাবাকে নেতাজি বলে দাবী করেন। ঠিকই ধরেছেন এক্ষেত্রেও নেতাজি বহুবার মৌনীবাবার ছদ্মবেশে এসে তাঁর কার্যকলাপ সম্পন্ন করতেন। মৌনীবাবা মারা যান ২০০৩ সালে এবং তারপর তার ব্যবহৃত বহু জিনিস পাওয়া যায় যেখান থেকে নেতাজি সম্পর্কিত বহু তথ্য উঠে আসে এবং সবথেকে মজার বিষয় হলো এই মৌনীবাবার সঙ্গে গুমনামী বাবার যোগাযোগেরও তথ্য উঠে আসে। শুধু গুমনামী বাবা নন আরও অনেক সাধুর সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিল যাদের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি নেতাজি ভেবেছেন। এই বিষয়ে নিয়ে পৃথকভাবে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা করবো। তবে এই মৌনীবাবা ও গুমনামি বাবার ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি নেতাজি বহুবার বিভিন্ন সাধুর ছদ্মবেশে আবির্ভূত হতেন তার কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে তাই শুধুমাত্র গুমনামী বাবাই নেতাজি এবং গুমনামী বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নেতাজির মৃত্যুকে জুড়ে দেওয়া একপ্রকার বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আরও একটি বিষয় বলে রাখা দরকার গুমনামী বাবা যেমন পর্দার আড়ালে বেশিরভাগ সময়  থাকা পছন্দ করতেন ঠিক তেমনই মৌনীবাবাও তাই অনেকে তাকে পর্দা বাবাও বলতেন। একথা বলা অপ্রয়োজনীয় যে সুভাষ বসুকে মান্যতা দেওয়ার ক্ষমতা ভারতবাসীর নেই তাই এ আমাদের পরম দুর্ভাগ্য যে চিরকালই তাকে পর্দার আড়ালেই থাকতে হয়েছে দেশের স্বার্থে ও দেশবাসীর স্বার্থে।

এইবার যে ঘটনাটি বলবো তার তথ্য প্রমাণ বা ব্যক্তির নাম কিছুই দেওয়া যাবে না, শুধু ঘটনাটির উল্লেখ করবো, মানা বা না মানা সম্পূর্ণ পাঠক মহোদয়ের উপর। ১৯৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি নেতাজি উত্তরপ্রদেশ ও নেপাল বর্ডারে  গোন্ডা প্রদেশে সম্ভবত মুজেহেনাতে তার ১০০ বছর জন্মদিন উদযাপন করেন এবং জাতীর উদ্দেশ্যে তার ঘনিষ্ট মহলে বক্তৃতা দিয়ে চলে যান, সঙ্গে ছিল তার লিবারেশন আর্মির বেশ কিছু লোক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ৯৭এর ২৩শে জানুয়ারি বর্ডার এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ডে সকালবেলায় হঠাৎ একটি চপার আসে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন শ্বেত  বসন ও সানগ্লাস পরিহিত এক সাধু। সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকজন লোকজন এবং কিছু আর্মড বডিগার্ড। বেশ কিছু সময় কাটিয়ে সেখান থেকে তিনি আবার চপারে উঠে চলে যান। তবে গ্রামের লোকজন বলতে পারেননি তিনি সুভাষ বসু কিনা, তবে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া যায় তিনিই নেতাজি এবং মজার বিষয় হলো ঠিক তার পরেই ১৯৯৭ সালে সুপ্রীম  কোর্ট তার মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কার ফিরিয়ে নিতে ভারত সরকারকে নির্দেশ দেয়। ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে ৯২ সালে পুরস্কার ঘোষণার ৫ বছর পর সেই পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং ভারতের ইতিহাসে  এটি  প্রথম ঘটনা যে কাউকে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং পাঠক মহোদয় তার বুদ্ধি দিয়ে সহজেই এই কো ইনসিডেন্ট ধরতে পেরেছেন আশাকরি এবং নেতাজির জনসমক্ষে আশার ঠিক পরপরেই এহেন আচরণ প্রমাণ করে কোর্ট বা সরকার ও জানে যে তিনি মৃত নন।

বলাইবাহুল্য এরপর ১৯৯৯ সালে অটল সরকার এসে মুখার্জি কমিশন গঠন করে এবং এই একটি মাত্র কমিশনই সর্বপ্রথম বলেছে যে নেতাজি প্লেন দুর্ঘটনায় মারা যাননি। মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট পড়লে বোঝা যায় তারা অনেক দূর এগিয়েছিল নেতাজির কার্যকলাপ নিয়ে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পার্লামেন্টে পেশ করার পর সবই নাকচ হয় এবং তড়িঘড়ি করে কমিশন বন্ধ করার কথা বলা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে শুধু এটুকুই পাশ হয় যে নেতাজি ১৯৪৫ সালে তাইহুকো বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। জাস্টিস মুখার্জির কাছে আরও অনেক তথ্য থাকলেও সেদিন তা সামনে আসেনি।

আর একটি ঘটনা বলি, আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে এটা বিস্ময়কর হলেও এটা চরম সত্যি এবং এই ঘটনার বইয়ের রেফারেন্সও আমি উল্লেখ করবো শেষে। আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন বরফানি দাদাজি মহারাজের কথা তিনি ২২১ বছর বেঁচে ছিলেন (গুগল করলে পেয়ে যাবেন)। রঞ্জিতকুমার মজুমদার, তাকে নিয়ে রিসার্চ করছিলেন এবং ২০১০ সালে অমরকণ্টকে তার আশ্রমে তিনি যান ও দাদাজির সঙ্গে দেখা করেন। বিভিন্ন কথার প্রসঙ্গে সুভাষ বসুর কথা আসে এবং দাদাজী মহারাজ বলেন সুভাষচন্দ্র বসু বেঁচে আছেন এবং তিনি কঠোর যোগ সাধনায় রত। রঞ্জিতবাবু এই সম্পূর্ণ কথোপকথন তার বরফানি দাদাজি মহারাজ বইতে লিখেছেন। প্রথমে লেখক অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেন  দাদাজী মহারাজকে যে  নেতাজি এখন বেচে থাকলে তার ১১৩ বছর বয়স হবে, তো এটা কি অস্বাভাবিক নয়? মহারাজ বলেন, তাহলে তো আমিও ২০০ বছরের বেশী বেচে আছি এটাও তোমার বিশ্বাস করা উচিৎ নয়, মুচকি হেসে আবার বলেন, যোগবলে কি না হয়!

আপনারা ধারাবাহিকভাবে একটু দেখলে বুঝতে পারবেন নেতাজি কিন্তু একজন আদ্যপ্রান্ত ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন, তিনি মহামায়ার উপাসক ছিলেন, সাবমেরিন করে আসার সময় তিনি দুর্গা ষষ্ঠীর দিনে সাবমেরিনের ভেতরেই মা দুর্গার পূজা করেন নিজে হাতে, এতটাই তিনি ধর্মপ্রাণ ছিলেন। এছাড়াও ছোটবেলায় দুবার তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সন্ন্যাস নিতে। প্রথমবার খুব ছোটই ছিলেন তাই কোনোভাবে ফেরানো হয় তাকে এবং দ্বিতীয়বার এই ঘটনা ঘটে ১৪ বছর বয়সে এবং প্রায় ১ মাস তিনি বাইরে বাইরে ঘোরেন। সেই সময় এক সাধুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয় এবং তাঁর কাছ থেকে নেতাজি দীক্ষা নিয়ে ধর্মচর্চা করতে চান কিন্তু সেই সাধু তাকে বলেন এখনো সেইসময় আসেনি ধর্মচর্চার তোমার এখনো অনেক কাজ বাকী। সেই সাধু আর কেউই নন আমাদের ঋষি অরবিন্দ যাকে নেতাজি নিজের পথ প্রদর্শক মনে করতেন। ঋষি অরবিন্দর ছায়া কিন্তু নেতাজির মধ্যেও সমারভাবে বিদ্যমান তাই আগে বিপ্লবী এবং পরে সন্ন্যাসীর হওয়ার এক অদ্ভুত প্রবণতা গুরু শিষ্য দুজনের মধ্যেই থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আমার কাছে আরও কিছু তথ্য আছে যার ভিত্তিতে হলফ করে বলতে পারি নেতাজি আজও জীবিত আছেন। একজন সাধুর ১২৬ বছর বাঁচাটা কোনো ব্যাপারই নয় কিন্তু। হ্যাঁ আমাদের সাধারণ মানুষের এটা বিশ্বাস করতে খুব অবাক  লাগলেও এটা কিন্তু সত্যি, আপনি একটু রিসার্চ করলে দেখবেন জাপানের লোকদের গড় আয়ু ৯০ বছর, কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস। হুঞ্জা বলে একটি প্রজাতি আছে যারা বেলুচিস্তানে থাকে এবং তাদের গড় আয়ু ১২০-১৫০ এমনকি ৮০  বছরের মহিলারাও গর্ভবতী হন (গুগল করে দেখতে পারেন )। সুতরাং পরিমিত আহার এবং উপযুক্ত জলবায়ু থাকলে ১২৬ বছর সাধারণ মানুষই বাঁচতে পারে সেখানে একজন যোগবলে বলীয়ান সাধুর ক্ষেত্রে এই বয়স নেহাত অবাক হওয়ার মত বিষয় নয়। আমি অনেক ক্ষেত্রেই মুখার্জি কমিশনে কর্মরত কিছু মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি এবং তারা ২০২১ সালে নেতাজির ছবি আমায় দেখিয়েছেন, যখন তার বয়স ১২৪ বছর। যদিও প্রামাণ্য দলীল হিসেবে সেই ফটো বা তাদের নাম আমি কিছুই দিতে পারলাম না এখানে কারণ নেতাজির মত হাই ভোল্টেজ বিষয়ে ডি ক্লাসিফাইড না  হলে কিছু তথ্য দেওয়া মানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের চক্ষুশুল হওয়া। তবে এটা ভাববেন না যে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার এই খবর জানে না, প্রত্যেকেই জানে কিন্তু অনেক রকম বৈদেশিক চাপ আছে তাদের উপর, সব সত্যি সামনে আনলেই মুশকিল। এটা আমার কথা নয় রাজনাথ সিং স্বয়ং একথা বলেছেন ২০১৬ সালে যে, সব ফাইল ডি ক্লাসিফাই করলে আমাদের বিদেশ নীতির অনেক রকম অসুবিধা হতে পারে।

এইবার লেখার শেষ পর্যায়ে আসি আর একটা বিষয় নিয়ে, যেটা আলোকপাত করা ভীষণ দরকার। অনুজ ধর ও চন্দ্রচুর ঘোষের কোনানড্রাম বেরোনোর পর বিশেষ করে সৃজিত পরিচালিত গুমনামী বাবা বেরোনোর পর অনেকেই প্রায় এই বিষয়ে সন্ধিহান যে গুমনামী বাবার সঙ্গে নেতাজিও ১৯৮৬ সালে মারা যান। সহায় কমিশন যদিও বলে দিয়েছে গুমনামী বাবা নেতাজি নন, কিন্তু তাও আমি আরও কিছু তথ্য এবং যুক্তি দেওয়া যথোপযুক্ত মনে করি এ বিষয়ে। এত বছরের গবেষণার পর আমি নিজে এই বিশ্বাসে উপনীত যে নেতাজি গুমনামী বাবা কিন্তু গুমনামী বাবা নেতাজি নন। অর্থাৎ নেতাজি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে তার ডামি ইউস করতেন কারণ স্বাধীন ভারতে জনসমক্ষে তিনি আসতে কোনোদিন চাননি এদিকে তাকে তার কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে হবে সুতরাং অগত্যা বিভিন্ন সময়ে তাকে বিভিন্ন সাধুর বেশ নিতে হয়েছে। গুমনামী বাবা এতটা বিখ্যাত হয়েছেন প্রচারের কারণে কিন্তু এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাধুর ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন যেমন মৌনী বাবার কথাও আমরা আগে আলোচনা করেছি। এনারা ছাড়াও অনেক সাধুর বেশ তিনি নিয়েছেন এবং আমি সেগুলো আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরছি।

শৈলমারি আশ্রমে সারদানন্দ জী মহারাজের কথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি সেটা ৬০ এর দশকে। এছাড়া তার পরবর্তী সময়ে মধ্য প্রদেশের পন্ডলা নামক গ্রামে শ্রী জ্যোতিরদেব মহারাজ। অনেকেই বলেছেন এই সাধু নাকি মাঝে মধ্যেই গ্রাম থেকে চলে যেতেন এবং অনেক সিনিয়র আর্মি অফিসার রাজনৈতিক নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। ১৯৭৭ সালে এই সাধু মারা যান এবং নাগদা ডিস্ট্রিক এর জগন্নাথপ্রসাদ গুপ্তা সহ আরও ৪জন ব্যক্তি মুখার্জি কমিশনকে জানান এই ব্যক্তি নেতাজি ছাড়া আর কেউই হতে পারে না।

এছাড়াও জয় গুরুদেব বলে একজন সাধু মথুরাতে ছিলেন যাকে তার সমর্থকরা নেতাজি বলে দাবী করতেন এমনকি স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, এছাড়াও সেইসময় বাজপেয়ী আদবানির সঙ্গেও তার ফটো পাওয়া যায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন একজন যে সে সামান্য সাধু হলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন না।

এছাড়া আর একজন সাধু হলেন লালধারী মুত্যা, তিনি দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এবং অনেকেই তাকে নেতাজি মনে করতেন। তার মৃত্যুর পর নেতাজি সম্পর্কিত বহু জিনিস সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের সময় জার্মানি ঘড়ি, মিলিটারী জ্যাকেট, ক্যাপ এসব অনেক জিনিস পাওয়া যায়।

সুতরাং শুধু গুমনামী বাবা বা মৌনীবাবা নন নেতাজি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাধুর বেশ ধারণ করে নিজের বৃহৎ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন এবং হয়তো এখনো তিনি এভাবেই আত্মগোপন করে জাতীর উদ্দেশ্যে কাজ করে চলছেন। হয়তো আরো ১০-১৫ বছর পর তা আমাদের সামনে আসবে। তবে আমার এখনো পর্যন্ত গবেষণায় আমি এই ধারণায় দৃঢ় বিশ্বাসী যে, নেতাজি এখনো বেঁচে আছেন, যতটা তথ্য দিয়ে সম্ভব আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি, কিন্তু আরও অনেক বিষয় আমি নিজে জানতে পেরেছি যেটা চাইলেও এই মুহূর্তে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি না, তবে সব কিছুর উপর ভিত্তি করে আমার এখনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত আপনাদের জানালাম। আমি নিশ্চিত সরকার নিশ্চয় আরও ফাইল আমাদের সামনে আনবেন এবং আমরা তার সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য আগামী দিনে জানতে পারবো।

(ক্রমশ)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন