কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

রাজীব কর

 

কবিতার কালিমাটি ১৩০


উচ্ছে-বেগুন-পটল-মুলো

 

উচ্ছে

 

গা ভরা সবুজ টিলা, অমসৃণ ত্বক আর

আশরীর তিক্ত অভিজ্ঞতা যার — তাকে ঘরে আনি।

সে আমার মধুমেহ করে নাশ, মুখে আনে রুচি

মাংস খাওয়ার লোভ ফিরে আসে আবার।

 

আমার শরীরে শরীর দিয়েছে সে, দিয়েছে জীবন

তার বুঝি শরীর ছিল শুধু, ছিল না কুসুমিত মন?

সে আমার হৃৎপিণ্ডে এসে কলুষিত রক্ত ধুয়ে দেয়

তবু কেন যে শুদ্ধ হতে পারি না!

 

ছয়রিপু হাতছানি দেয়, শ্যাওলারা চারপাশে জড়ায়

কল্মষে ডুবে যায় অর্ধেক জীবন।

 

বেগুন

 

যতই ঘেঁটেঘুটে বেছেবুছে আনি — পোকা ঠিক বেরবেই

কেটেকুটে বাদ দিতে দিতে

আরো আরো গভীরে যেতে যেতে দেখি

অবশিষ্ট নেই কোনো গুণ

 

এতটা নরম এ জীবন, মন, দেহের সকল গহন

নিজেই বুঝিনি

 

একরতি পোকা, সে ঠিক বুঝেছিল

এমন বোকার ভিতরে বসত নিরাপদ

 

ব্যঞ্জনাহীন এই রান্নাঘর, পাত পেড়ে বসেছ বটে

তোমাদের ব্যঞ্জন কম পড়ে যাবে!

 

পটল

 

এতটা বাছাবাছির কী-বা দরকার

ইচ্ছেমতো তুলে নেওয়া যায় না তাকে।

আত্মহত্যাও স্বেচ্ছাধীন নয়, ভিতরের কোনো ক্ষয়

অকস্মাৎ প্রবল শক্তি হয়ে জাগে,

সংসারের কোন অভিজ্ঞতা কাজে লাগে তখন?

 

যতই রং করো গাত্রে সবুজ, শরীর চিরে

যতই রচো নারীর নয়ন-উপমা — সে কেবল

নির্মোহে নিষ্ঠুরে আমার আবেগ থেকে অনেক দূরে

লিখে রাখে নামধাম, তারিখ, সময়,

উত্থান তার অনিবার্য, পরম

 

অসংখ্য শরীর নিয়ে অনন্তের পায়ের কাছে পড়ে আছে সে

কে কখন তুলে নেবে তাকে, জানে না স্বয়ং

 

মুলো

 

মূল থেকে সে এলো, মাটির ললিত-লাবণ্যে ছিল, অসূর্যম্পশ্যা

সোঁদাগন্ধ লেগে আছে সারা গায়ে

নরম শরীর তার, মুকুটে সবুজ পালক

তবু সে রাজা নয় — ব্যঞ্জনচর্চিত এ বিশ্বপাকশালে

 

ব্রাত্য-বৈষ্ণব হয়ে পড়ে থাকে পাঁচজনের সংসারে

কখনো ঘন্টা বাজিয়ে সে একাই বসে পড়ে ভোজন-বন্দনে

কবর থেকে উঠে আসা শুভ্র-সতেজ অস্থি যেন, অথচ কোমল

 

বৈচিত্র্য-সাধক সে, আমি তার গন্ধবিরোধী

তথাপি ঘরে আসে, মিশে যায় নিরামিষে

আমি তার মাংসলোভাতুর, সে আমার চিরশত্তুর


1 কমেন্টস্: