কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

অম্লান বোস

 

আত্মার আত্মীয়রা

 


বুকটা ছাঁত করে উঠলো ডক্টর বোসের। তপনের কথা শেষ হবার পর কয়েকটা সেকেন্ড মাত্র কেটেছে, ডক্টর বোস মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসছেন অপারেশন থিয়েটার থেকে। চোখের জল অসহ্য তাপে বাস্প হয়ে চোখ ফেটে বেরিয়ে আসছে, ঠিক তখনই ও টি’র বাইরে অপেক্ষারতা সহকারিণী তাঁর আই-ফোনটা হাতে দিয়ে বললো “স্যার, আপনাকে বারবার কল করছে”। হাতে নিয়ে কানে দেবার সঙ্গে সঙ্গে শুনলেন … পাশের হাসপাতাল থেকে অপ্রীতিকর কিন্তু প্রত্যাশিত দু:সংবাদ -

“ড: বোস, দু:খের সংগে জানাচ্ছি, অনেক চেষ্টা করেও আমরা তরুণকে আর ধরে রাখতে পারলাম না - দু মিনিট আগেই ও চলে গেল”।

অবাক হলেন না ডক্টর বোস, শুধু হতাশ মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো - “দুমিনিট আগে?” ঐ সময়েই তো তপন এখানে অপারেশন টেবিলে শুয়ে অজ্ঞান অবস্হায় ওপার থেকে মৃত মা আর ভাইয়ের ডাক শুনছে বলছিল, ওদের হাসি খুশী উজ্জ্বল চেহারা দেখছিল। তখনই আমি বুঝেছি ওর ভাই চলে যাবে। আমি জানতাম - এটাই হবে।

হাতের সার্জিকাল গ্লাভস্ দুটোতে হতাশার আগুন-ঝাঁঝ, অসহিষ্ণু ডাক্তার তাঁর পরিশীলিত ধৈর্য হারিয়ে পাগলের মতই নিরুপায় হাত থেকে ও দুটোকে জোর করে টেনে খুলে নিয়ে গার্বেজ বিনের নির্বাক গহ্বরে ছুঁড়ে দিলেন!

নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স - এন ডি ই। ১৯৭৫ সালে মনস্তত্ববিদ রেমন্ড মুডি এই নামকরণটা করেছিলেন। কথাটা কিছুদিন আগেই শুনেছিলাম। খবরকাগজে পড়েছিলাম গাড়ি চালাতে চালাতে এক ভদ্রলোক হঠাৎই হৃদরোগে  আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে থাকার সময়েই মৃত্যুর চৌকাঠটা পার হয়ে আবার তাঁর নিজস্ব জীবনে ফিরে এসেছেন। আশ্চর্য লেগেছিল, কৌতুহলের বশে রেবেকা ও কোনরের সম্পাদনায় প্রকাশিত বইটা পড়ে ফেললাম। অজস্র চমকপ্রদ ঘটনার বিবরণ, অবিশ্বাস্য বলতে পারি না, কারণ এসবই নামকরা বিজ্ঞানী, মনস্তাত্ত্বিকদের গবেষণার বিবরণ - তবে অপার্থিব তো বটেই। ভালই লাগছিল ঐ জীবন মৃত্যুর দরজা দিয়ে যাওয়া আসার চমকপ্রদ ঘটনাপ্রবাহ, যদিও বৈজ্ঞানিক তত্ত্বজ্ঞান দিয়ে আমি এগুলোকে ঠিক মাপতে পারছিলাম না।

জগদ্বিখ্যাত রিসার্চ স্কলার এবং সার্জন ডক্টর বোস নানা সমস্যাজনিত অসুস্হতার কারণে বিশেষ করে মুমূর্ষু শিশুদের শেষ মূহূর্তগুলি নিয়ে বহুরকমের গবেষণা করেছেন। তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ দু তিন বছরের। উনি জোর দিয়েই বলেছেন, এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশুই সুস্হ হয়ে ওঠার পরে তাঁকে বলেছে যে শরীর ছেড়ে চলে যাবার মুহূর্তগুলো তাদের কাছে খুবই শান্ত, নির্মল এবং আলোকিত মনে হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে আবার সেই সময়ে কোন কোন পরিচিত, কিন্তু মৃত, নিকট আত্মীয় বা বন্ধুদের দেখতে পেয়েছিল।

ড: বোসের কাছেই শোনা - তপন একটি ৮ বছরের ছেলে, ভাই তরুণ ৬ বছরের। একদিন তাদের স্কুলে নিয়ে যাবার পথে এক দুর্ঘটনায় তাদের মা ঘটনাস্থলেই মারা যান আর তরুণকে ঘোর আশংকাজনক অবস্হায় স্হানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় - ড: বোসের তত্ত্বাবধানেই। অজ্ঞান অর্ধমৃত বড়-ভাই তপনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাই সে দুর্ঘটনাস্হলে মা’র মৃত্যুসংবাদ জানতে পারেনি এবং তার ভাই তরুণকে যে দগ্ধ অর্ধমৃত অবস্হায় পাশেই অন্য আর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারও মৃত্যু হয়েছে এটাও তার জানার কথা নয়। তবু অচেতন অবস্হায় জীবন মৃত্যুর দোলাচলে তপন তার মৃত মা আর ভাইকে দেখেছিল, তাদের ডাক শুনেছিল। আবার সেই অবোধ্য অথচ তথ্যনির্ভর এন ডি ই!

* * * * * * * *

ছুরি কাঁটার সঙ্গে পুলকের খুব একটা সখ্যতা নেই দেখলাম, দুটো ফিশ্ কাটলেট হাতে ধরেই শেষ করল, ভাল করে হট্ এ্যান্ড সুইট চিলি সস্ মাখিয়ে। পুলক আমার আর এক জীবন্ত সাক্ষী যে এই অদ্ভুত সংবেদনের প্রত্যক্ষদর্শী।

চায়ের কাপে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে চোখদুটো আমেজে প্রায় বুঁজে চেয়ারে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসল। “স্যার চা-টা কিন্তু অসাধারণ। আমি সত্যিই…

অপরেশ আমার সব ব্যাপারেই সাহায্যের হাত বাড়ায়, এবারেও অন্যথা নেই। ঝাঁঝালো স্বরে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে - “স্যারের সবকিছুতেই নজর উঁচু - তুই শুরু কর তো যে জন্যে আসলি!”

আমার কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে। গন্ডগোলে কথার খেই হারিয়ে যাবে সেটাকে আমি হতে দিতে পারি না, স্টিয়ারিংটা তাই নিজের হাতে নিতেই হল।

“ঠিক আছে, ঠিক আছে অপরেশ, ওকে এবার বলতে দাও। বলো পুলক, ঐ এ্যাকসিডেন্টের পর তোমার ঠিক কি হয়েছিল বলো তো। জানো নিশ্চয়ই, আমি এসব নিয়ে একটু পড়াশোনা করছি আজকাল।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি স্যার, তাহলে আমার ঐ দুর্ঘটনা থেকেই শুরু করি?”

একটু থেমে পুলক শুরু করলো -

“পরের দিনই ফারটিলাইজার কারখানাটা হ্যান্ড ওভার করার কথা, তিনশো ফুট ওপরে ইন্সপেকশন শেষ করে তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি উৎফুল্ল হয়ে একটা বলিউডি সুরে শীষ দিতে দিতে। ফ্লো, প্রেসার, তাপমাত্রার প্রত্যেকটা গেজ সঠিক মাপ দেখাচ্ছে। হঠাৎ আকাশবাতাস চিরে একটা একটানা তীক্ষ্ণ আর্তনাদে চমকে উঠলা, মানে একটা বড়রকমের গোলমাল হয়েছে। পেছনে চিমনীর চূড়াটা লক্ষ্য করতে গিয়েই অঘটন - হড়কে গেল পা। মাধ্যাকর্ষণের অমোঘ আকর্ষণে আমি সিঁড়িতে গড়াতে শুরু করলাম, মাথায় কাঁধে পিঠে পায়ে এলোপাথাড়ি আঘাত, মাথার খুলিতে পর পর লোহার হাতুড়ি। নাকমুখ দিয়ে এক ঝলক নোনতা স্রোত আমার চোখ মুখ ঢেকে দিল, মনে হল ডানহাত নির্ভরতার খোঁজে আকাশটা আঁকড়াবার চেষ্টা করে নিরাশ হয়ে লোহার সিঁড়িতেই নেতিয়ে পড়ল।”

একটু অন্যমনস্ক হয়, চোখের পাতা নামিয়ে নিল পুলক।

ওকে সামলাবার একটু সুযোগ দেবার জন্যেই বোধহয় অপরেশ ডান হাতটা তুলে বলল - “আমি এখানে ছোট্ট একটু কথা বলি সুজিতদা? এই দুর্ঘটনার আগে পলু কোন অজানা কারণে মানসিক বিপর্যয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলেছিল। অসংযম, মাদকদ্রব্য, ড্রাগ। কয়েকবার অতিরিক্ত পরিমানে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে সে”।

কোন গুরুত্ব না দিয়ে চোখ আধো বন্ধ অবস্হায় পলু শুরু করল -

“কী হল জানি না স্যার, আমি সামনের ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম, ভাসমান অবস্হায় - মাটির কয়েক ফিট ওপর থেকে। আমার থেঁৎলানো দেহটা রক্তে ভাসছে, চারদিকে ছোটাছুটি, নিরাপত্তা কর্মিদের ব্যস্ততা, গ্যাস নিষ্কাসনের কর্ণভেদী শব্দ, সহকর্মিদের আতঙ্ক, আমাকে স্ট্রেচারে ওঠানো - সব ছাপিয়ে স্যার আমি কেমন শান্ত বাতাবরণে ভেসে উঠলাম, মাটি থেকে চার পাঁচ ফিট ওপরে। আমার অচেতন শরীর ঘিরে উদ্বেগ, চাপা আশঙ্কাজড়িত কন্ঠে ম্যানেজারের নির্দেশ, জীপ ট্রাকটরের আনাগোনা - সব সব দেখতে আর শুনতে পাচ্ছি ঐ ভাসমান অবস্হায়। কোন কষ্ট, বেদনা বা ভয় নেই - এক নিস্তব্ধ শান্তিসাগরে দুলছ। দেখলামশ, লাল নীল সবুজ আলো ছড়িয়ে এ্যাম্বুলেন্স এলো, আমার অচেতন দেহটা তোলা হল, তীরবেগে তীক্ষ্ণ সাইরেনে আশঙ্কা আর সন্ত্রাস ছড়িয়ে চলল স্হানীয় হাসপাতালের দিকে। আশ্চর্য, হাওয়ার সওয়ারী হয়ে আমিও তখন ঐ এ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যাচ্ছি। আমার তখনকার অবস্হা নিয়ে আমার মনে কোন প্রশ্নই জাগেনি।”

“হাসপাতালের সবুজ ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন দক্ষতার সঙ্গে আমাকে নিয়ে গেল এমার্জেন্সী থেকে ও টি তে। সার্জন, এ্যানাস্হেসিস্ট্, সহকর্মিদের নিয়ে প্রখর আলোর নীচে শুরু হল আমার অপারেশন - সবই কিন্তু আমি দেখছি ভাসমান অবস্হায়।”

ডক্টর বোসের কাছেও পুলক বলেছিল, ঐ অবস্হাতেই সে তার পরিবারের সদ্যমৃত আত্মীয়দের অনেককেই দেখতে পাচ্ছিল চোখের সামনে - একেবারে জীবন্ত, মূর্ত। পুলক তাদের দেখেছিল তারা খুব সুখী, নিশ্চিন্তে অসীম আনন্দের সাগরে ভাসছে। বারবার পুলককে ওদের কাছে ডাকছে। ওরা মুখে কোন কথা বলছে না, নিজেদের মধ্যেও না, কিন্তু মনের তরঙ্গের মাধ্যমে নিজেদের উষ্ণ আনন্দবার্তা পুলকের প্রাণের ভেতরে ঢেলে দিতে চাইছে। তাদের হাসিখুশী ভাব, স্বাভাবিক উচ্ছাস আর অশরীরি ইংগিত স্পষ্ট জানাচ্ছে যেখানে আছে, তারা গভীর প্রশান্তিতেই আছে।

“তোমার মনের অবস্হা তখন কি পুলক - কি মনে হচ্ছিল তোমার তখন?” থাকতে না পেরে বললাম আমি-

“আমার মনে তখন কেবল কৌতুহল, কোন দু:খ নেই, শরীরে কোন ব্যথা যন্ত্রণা নেই। আশ্চর্য এক মুক্ত আকাশে পাখীর মত উড়ে বেড়াচ্ছি যেন, চারদিকে ঝকঝকে রোদ, খুব শান্তিপূর্ণ, স্হির, নিস্কম্প আবহাওয়া। মনেই আসেনি যে আমি হাসপাতালে আছি।”

“মাই গড্ - তারপর?”

“একটা অজানা স্রোত আমাকে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। লম্বা সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে চোখধাঁধানো একটা সাদা উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলাম।

অপার শান্তির মধ্যে ভেসে যেতে যেতে হঠাৎ একটা জমাট দেওয়াল সামনে এসে গেল, আলোটা হারিয়ে গেল - পেছনদিক ছাড়া কোন রাস্তা নেই আর। ইচ্ছে না থাকলেও বাধ্য হয়েই ফিরতে হল আর ভাসতে ভাসতে হাসপাতালের অপারেশন রুমে এসে আমাকে আমার অচেতন দেহেই আশ্রয় নিতে হল - কেউ যেন জোর করেই ওখানে ঢুকিয়ে দিল আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও। কেমন মনে হল এটাই আমার নিরাপদ আশ্রয়, আমার নিজস্ব জায়গা। আশ্চর্য, তখনও চোখের সামনে পরিষ্কার দেখছি ওদের ব্যস্ততা, তৎপরত, ডাক্তারদের কর্মকান্ড, আনুষঙ্গিক সতর্কতার মধ্যে তাদের একমুখী শুশ্রূষা, নিরলস পরিচর্যা। এর মধ্যে এক সহকারী বললো - বেঁচে আছে তো?”

ডাক্তাররা কয়েক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে, সুষ্ঠু সুশ্রূষায় পুলককে সুস্হ করে তুললেন এবং আশ্চর্যের কথা, যখন সে সুস্হ হয়ে ছাড়া পেলো তখন শরীরে মনে, আচার ব্যবহারে ওর বিগত দিনগুলির অসংযমী আচরণের কোন ছায়া নেই, নেই কোন ডিলিরিয়াম। পুলক যেন নতুন প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে মৃত্যুর আঙ্গিনা থেকে।

পুলক বলে চললো - “আমার সব কথা শুনে ড: বোস উৎসাহী এবং সক্রিয় হয়ে উঠলেন। তাঁর বিশ্বাস, তাঁর গবেষণা এবং আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার যোগফল তাঁর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্যতার কাজে সহায়ক হবেই, এবং বিজ্ঞানিদের জগতে বিষ্ময়কর আলো ফোটাতে পারবে। তাই তিনি আমাকে একদিন নিজের ওয়ার্কশপে এনে জ্ঞানী বিজ্ঞানীদের সামনে এই অদ্ভুত ঘটনার সরাসরি বিবরণ দিতে চাইলেন।”

পুলক নিজের অন্তরের তাগিদেই গেল সেখানে আর, ঐ মঞ্চে অলৌকিক বা অশরীরি ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ দিয়ে অবিশ্বাসীদের অনেকের মধ্যেই কৌতূহল সৃস্টি করল। আত্মবিশ্বাসী, অনাড়ম্বর উপস্হাপনার সময়ে পুলকের মুখের  স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য, চোখের অস্বাভাবিক দ্যূতি আর নিজের বক্তব্যের ওপর সাবলীল আস্হা উপস্হিত সকলকার মনে গভীর ছাপ ফেলে দিয়েছিল। সাধারণভাবে অবিশ্বাসী শ্রোতারাও প্রশ্নের তরঙ্গ তুলে, বিজ্ঞানের কস্টিপাথরে যাচাই করে, এই ঘটনাটিকে নেহাতই কল্পনাপ্রসূত গল্পকথা বলে উড়িয়ে দিতে পারলেন না।

বিজ্ঞানী, মনস্তত্ববিদ, গুণীজনদের প্রতিটি কঠিন প্রশ্নের উত্তর পুলক এমন দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে ভর করে সরল করে দিয়েছিল যে সেদিন শ্রোতাদের স্বাভাবিক সন্দেহ আর অবিশ্বাস অনেকাংশেই দূর হয়েছিল। ডঃ বোসের এই গবেষণা আর অজানা পথের বিশদ অনুসন্ধান সেদিন সত্যিই গতি পেয়েছিল।

ডক্টর বোস ঠিক এইটাই চাইছিলেন, অবিশ্বাস আর সন্দেহের বরফে একটু ফাটল ধরাতে পারলে সেই সূক্ষ্ম রন্ধ্রপথে প্রবেশ করবে অজানা আনন্দময় জগতের সত্যের আলো, ঐ অহেতুক ভীতি, অনিশ্চয়তার অন্ধকার দূর হবে। জগত জুড়ে নতুন ভাবধারায় সুস্হ আলোচনা শুরু হবে। পৃথিবী জুড়ে অক্লান্ত গবেষণার পর প্রমাণিত হয়েছে এর সংগে হ্যালুশিনেশনের কোনই সম্পর্ক নেই। সাধারণতঃ এই অবস্হা যাঁরা উপলব্ধি করেন, তাঁদের অধিকাংশই অকস্মাৎ দুর্ঘটনার বা দুঃখজনক মৃত্যু বা অপমৃত্যুর সামনাসামনি হয়েছেন। উঁচু মাচা থেকে পড়ে যাওয়া শ্রমজীবি মজদুর, যুদ্ধফেরত মুমূর্ষু সৈনিক বা মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহত মানুষদের নিয়ে এইবার এই গবেষণার পথ ধীরে ধীরে নির্ভুল নিশানায় এগোতে শুরু করল।

ড: বোস এবং অন্যান্য আগ্রহী বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে, এই জাতীয় অসংখ্য ঘটনার প্রত্যক্ষ শ্রোতা ছিলেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি প্রায় অবশ্যম্ভাবী বর্ণনা তাঁরা পেয়েছেন, যেমন পুলকও নিজস্ব অভিজ্ঞতায় শুনিয়েছিল। এন ডি ই’র একান্ত অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে অনেকেই জানিয়েছেন তাঁদের অশরীরি অবস্হার মধ্যে নিজের কানে শুনেছিলেন ডাক্তাররা তাকে ‘মৃত’ বলেই ঘোষণা করেছেন অথচ, অবিশ্বাস্যভাবে, তাঁরা নিজেদের পুরনো জীবন আবার ফিরে পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, ঐ সময়ে বেশীরভাগ মানুষই মৌমাছির ঝিনঝিন একটানা রব অথবা টেলিফোন রিংএর পাতলা আওয়াজ খুব উঁচু পর্দায় শুনতে পায়। এই সময়ে আবার কেউ কেউ তার নিজের জীবনে ঘটেছে এমন কিছু বিশেষ দৃশ্যাবলীও ঘটতে দেখে।

এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা তাদের বিগত জীবনের কোন ঘটনা দেখতে পায় আর সেই সময়েই সে নিজে তার কাজের শুভ বা অশুভ দিক বিচার করতেও সক্ষম হয়। এটা তাদের ভবিষ্যত জীবনপথে সঠিক দিকনির্দেশে সহায় হয়ে থাকে বলে দেখা গেছে।

মানুষের এই দুর্বোধ্য অবস্হা নিয়ে আজ শাখা প্রশাখা প্রসারিত করে সারা বিশ্বে বিজ্ঞানীদের তোলপাড় অনুসন্ধান চলছে, এবং অস্তিত্ববাদীদের প্রবল বিশ্বাস - তাঁরা এই অনিশ্চয়তার ওপর বিজ্ঞানের সন্ধানী আলোক সম্পাত করতে পারবেন। আমরা সাধারণ উৎসুক মানুষেরা অপেক্ষা করব।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন