কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

প্রশান্ত গুহমজুমদার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০


অমলের দিনকাল

ঘরের বাইরে পা রেখে অমলের কুয়াশায় প্রায় হারিয়ে যাওয়ার জোগাড়। শীত অবশ্য তেমন লাগছে না। বুলবুলের বুকের ওম এখনো ওকে জড়িয়ে আছে। আর কে-ই বা আছে অমলের! এক কাজের মাসি। আম্মা। অমল ওকে এই নামেই ডাকে। সারাদিন থেকে রাত্রে ঘরে ফিরে যায়। অমলের ভালোমন্দ সব ওরই হাতে। ও জানে, অমল মাঝেমধ্যে কোথায় রাত  কাটায়। তাতে আম্মার কিছু যায় আসে না। এই শহরতলীর অনেকেই অমন যায়। তার লোকটাও কি যেত না! অমল তো তবু একা। কারখানার রবি জিজ্ঞেস করেছিল, কি পাস্‌ তুই ওখানে রোজ রোজ? অমলও ঠিক বোঝে না, বুলবুলের কাছে ও কি পায়! শুধু বোঝে, কারখানার হৈহল্লা থেকে বেড়িয়ে বাকি সময়টায় যে একাকীত্ব ওকে গ্রাস করে থাকে, সেসব থেকে মুক্তি পায় এখানে এসে। বুলবুলের কাছে যে অন্য লোক আসে, অমল জানে। বুলবুলও ওকে সব বলে। আর বলে, হারিয়ে যাওয়া এক নদীর গল্প, বাংলাদেশের  দাদুর গল্প, একটা পুরনো বটগাছ আর এক মেঠোপথের ঠিকানা। অমল বলে তার মৃত বাবা-মায়ের ভালবাসা আর ঝগড়ার কথা। বুলবুলেরই ওড়নায় আড়াল করা ঘরের একমাত্র তাকে রাখা বুলির দাদুর সাদা কালো ছবি হাসে। ক্যালেণ্ডারের রাধা হাসে। বুলি মানে বুলবুলও খুব হাসে। হাসতে হাসতে চা করে, মেটেচচ্চরি করে, গেলাসে মদ ঢেলে দেয়। হ্যাঁ, অমল বুলির জন্য ভালোমন্দ খাবার নিয়ে আসে আর কম দামী রাম। একবার শাড়ি আর ব্রা-প্যান্টি নিয়ে এসেছিল। তা দেখে বুলির হাসি আর থামতেই চায় না। ও হাসলেই বাঁদিকের গজদন্ত বেড়িয়ে আসে আর দুই গালে টোল। অমল সেসময়ে চিক্‌না বুলবুলিকে দেখতে থাকে, দেখতেই থাকে। হাতের গ্লাস আর ঠোঁটে ওঠে না।

শীতটা এবার ভালোই পড়বে মনে হচ্ছে। আজ কারখানায় নাইট শিফট। গিয়ে স্নান করে আম্মার রাঁধা ভাত খেয়ে টানা ঘুম। ওর তো আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। পি এফ- এর নমিনি আম্মা আর বুলির নামে করে দিয়েছে। অমল সাবধানে হাঁটে। এই কুয়াশায় রাস্তা প্রায় দেখাই যায় না। হঠাৎ মিঁয়াও শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ায় অমল। একটু ঠাহর করার চেষ্টা করে। পেয়েও যায়। রাস্তার পাশের শুকনো ড্রেনের ভিতর পড়ে গিয়েছে একটা সাদা বিড়াল বাচ্চা। সামনে অসহায় ওর মা আর আরও তিনটে বাচ্চা। ও গিয়ে সাবধানে তোলে। ভয় পাচ্ছিল, মাবিড়ালটা তেড়ে না আসে। বুলিকে দেবে। রোজ সকালে বুলি বস্তির দুটো বিড়ালকে খেতে দেয়। প্রশ্ন করলে, বুলি বলেছিল আহা মা ষষ্টীর বাহন। অমল মনে পড়লো, ওকে একবার ষষ্টির ছড়া আনতে বলেছিল।  অমল মনে মনে হাসে। কোথাও একটু কষ্টও কি উথলে ওঠে না! বুলিরও মা ষষ্টী!

বুলিকে নিয়ে সামন্তপাড়ার ওদিকে একদিন ও চলে যাবে। আম্মাকেও নিয়ে যাবে। এখনো বলেনি বুলিকে। আম্মাকেও না। অবশ্য বুলির বাড়তি উপার্জনটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে কি বুলি রাজী হবে না!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন