কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

কৌশিক মিত্র

 

চিতকুল




এবারে যাব চিতকুল। হিমাচল প্রদেশ। অনেক দিন ধরে হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে ইন্টারনেটে। এই জায়গা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা ছিল না। শুধু জানতাম এটি ভারত তিব্বতের পুরনো বাণিজ্য রাস্তায় ভারতের দিকে শেষ গ্রাম।

শিমলা থেকে ২৩৫ কিলোমিটার। একটানা গেলে প্রায় আট ঘণ্টা লাগে। আমরা নামলাম চন্ডিগড় বিমানবন্দরে। যাব নারকান্ডা। শিমলা কুফরি পেরিয়ে ছোট্ট শৈলশহর নারকান্ডা। রাস্তায় দেখতে পেলাম এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বরফ জমে আছে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা লেগে গেলো পৌঁছতে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। বেশ ঠাণ্ডা। সরকারি পর্যটন দপ্তরের হোটেলে আজ রাত্রিবাস।

পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম। আজ যাব সাংলা পেরিয়ে বাৎসেরি। প্রায় ছয় ঘন্টার পাহাড়ী রাস্তা। রাস্তার ধারে পাহাড় সব বরফ দিয়ে মোড়া। মাঝে পড়ল করচম। বাসপা নদীর ধারে ছোট জনপদ। রাস্তা এখানে দুভাগ হয়ে গেছে। একদিক চলে গেছে কল্পা, রেকং পিওর দিকে। অন্য দিক চলে গেছে সাংলার দিকে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে এগিয়ে চললাম সাংলার পথে।

করচম থেকে সাংলার পথ বেশ সংকীর্ণ। অনেক জায়গায় পাহাড়ের উপর থেকে পাথর ঝুলে রয়েছে। এখানে অনেক সময়ই ধস নামে। দূরের পাহাড় তুষারাবৃত। সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর। রাস্তার এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যে আমরা বেশ কয়েক বার থামলাম।  শীতকাল। তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে আসছে। এই সময় রাস্তায় দেখতে পেলাম সাংলা দ্বার।

কিন্নর জেলায় বাসপা নদীর উপত্যকায় সাংলা জনপদ। এখানে বেশ কিছু হোটেল হোম স্টে রয়েছে। চিতকুল যাওয়ার পথে অনেক পর্যটক এখানেই রাত্রিযাপন করে। এখানে অনেক মন্দির রয়েছে। বেশ কিছু ট্রেক রুট সাংলা থেকেই শুরু। হোলি উৎসব এখানে খুব জাঁকজমক করে পালিত হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি আগামীকালই হোলি।




আমরা থাকব বাৎসেরিতে - সাংলা থেকে চিতকুলের পথে আট কিলোমিটার ভিতরে। সাংলা পেরোতেই ঠান্ডা যেন জাঁকিয়ে ধরলো আমাদের। সূয্যিমামা ততক্ষণে পাহাড়ের পিছনে অস্তাচলে। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় পাহাড়ের সরু রাস্তা যেন অতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। রাস্তা থেকে গ্রামের রাস্তা ধরে বাসপা নদীর ধারে আমাদের হোটেল।  এখানেই রাত্রিবাস। হাড় হিম করা ঠান্ডায় দোল পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় বাসপা নদীর শব্দ - সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ।

পরদিন সকাল। আজ যাব চিতকুল। কুড়ি কিলোমিটার পথ। এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে। সরু রাস্তা। পথের এক ধারে খাদ। নীচে বয়ে চলেছে বাসপা নদী। অন্য দিকে বরফের চাদরে মোড়া পাহাড়। মাঝে পড়ল খরোগলা রক্ছমের মত ছোট ছোট গ্রাম। রক্ছমে থাকার জন্যে রয়েছে ছোট বড় হোটেল। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

রক্ছম ছাড়িয়ে গাড়ি চলল চিতকুলের দিকে। চিতকুল পৌঁছতেই বোঝা গেল হোটেল হোম স্টে দেখে। ভারতের দিকে শেষ গ্রাম ভারত - তিব্বত বাণিজ্য পথে। ২০১৭ তে আইআইটি দিল্লীর এক সমীক্ষায় জানা যায় ভারতের সবচেয়ে পরিষ্কার বাতাস এখানেই। বাসপা নদীর জল এখানে বরফ। উপরে নীল আকাশ। রোদ ঝলমলে দিন। সাদা সবুজ বাদামি রঙের পাহাড়। সরু রাস্তা ওদিকে কোথাও চলে গেছে - নাম না জানা তিব্বতের কোনো গ্রামে।




ফেরার পথে "হিন্দুস্তান কা আখেরী ধাবা" য় এক কাপ চা না খেলে ই নয়। আর রাস্তায় বরফ নিয়ে কিছুক্ষণ খেলা। সাংলার হোলির উৎসব ও বাদ গেল না। এবার যাব কল্পা। অন্য এক পাহাড়ে। অন্য এক গল্প।

দিল্লী, চন্ডিগড়, শিমলা থেকে গাড়ি নিয়ে চলে আসা যায় চিতকুল। থাকার ব্যবস্থা সাংলা, বাৎসেরি বা চিতকুলেই। আর এখান থেকেই বেরিয়ে পড়া যায় ট্রেকিং-এ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন