কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

পায়েল চট্টাপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০


আলো

''মিসেস গাঙ্গুলী এই বইটা বোধহয় আপনি চাইছিলেন।'' ‘প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস'’। আলো ফুটলো কমলিনীর চোখে-মুখে। এইতো প্রথম পাতাটা। শুভময়কে কমলিনী। ল্যান্ডলাইন নম্বরটা লেখা। এই লাইব্রেরীতে প্রায়ই যাতায়াত কমলিনীর। বিয়ের পরেও এইটুকু মৌতাত বাঁচিয়ে নিয়েছেন শিক্ষিকা কমলিনী। লাইব্রেরীটা কমলিনীর শ্বশুরবাড়ির কাছেই। বিয়ের ব্যাপারে মেয়ের এটুকু আবদার মেনেছিলেন কমলিনীর রাশভারী বাবা। মেয়ে তবে বাকিটা তেমন করে  বলতেও পারেনি। কলেজে পড়তে পড়তেই আলাপ হয়েছিল শুভময়ের সঙ্গে। গভীর চোখ, ঝাঁকড়া চুল। আপাত-শান্ত ছেলে, তবে ভেতরে যেন একটা গভীর দিঘী। কলেজ ইউনিয়ন, হোস্টেল, স্বপ্ন, সাম্যবাদ সবটা মিলিয়েই ছিল শুভময়। বাবার প্রথমদিন থেকেই পছন্দ ছিল না শুভময়কে। মা আর কমলিনী অমন রাশভারী মানুষের কাছে অসহায় হয়ে থেকেছে চিরকাল। তবুও একবার কমলিনী চেষ্টা করেছিল। কুন্ঠা, সংকোচ মেশানো মনের কথা উগরেছিলো বাবার কাছে। বাকিটা যা হয়! বাবার জেদের কাছে হার মানা আর অমলেন্দুর সঙ্গে বিয়ের মধ্যে তফাৎ ছিল কয়েক মাস। শুধু কলকাতার নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিয়ে করার দাবি জানিয়েছিলো কমলিনী। বাবাও মেয়ের এটুকু মেনেছিলেন। আসলে ঘুনাক্ষরেও সত্যিটা টের পাননি কিনা। শুভময়ের তিল তিল করে গড়ে তোলা লাইব্রেরী ''স্মৃতি-ঘর' ওই অঞ্চলে'। কমলিনীর বিয়ের কথা শোনার পর থেকেই বেপাত্তা শুভময়। কোথায় যেন হারিয়ে গেল দুম করে। এদিকে ফান্ড, সময় মতন সরকারি কাজকর্ম সবটাই কোন এক অদৃশ্য সুতোয় আটকে তখন। ভার নিয়েছিল কমলিনী। তারপর অমলেন্দুর সঙ্গে বিয়ে। অমলেন্দু সব জানত। ‌ কমলিনী বলেছিল। কমলিনীর  ভেতরের আলো শুভময়ের লাইব্রেরী। এই লাইব্রেরী গড়ে তোলার জন্য জুতোর সুখতলা খুইয়েছিল শুভময়। এমনকি নিজের জীবনের জমানো পুঁজিটুকুও খুইয়েছে সেখানেই। এমনকি শুভময়কে কমলিনীর দেওয়া প্রথম উপহার, সেই বইটুকুও গচ্ছিত রেখেছে সেই লাইব্রেরীতেই।

''আমি শুভময় বলছি মা, ভালো আছি, বাইরে রয়েছি কাজে, যাবো তোমার কাছে, আমার বন্ধুর বাড়ি ওটা, তুমি ওখানে ভালো থাকবে।'' ওপাশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কমলিনী ফোনের স্পিকারটা অফ করে দিল। বৃদ্ধা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে এবার। কমলিনীর কলেজের বান্ধবী তৃষা জানায় কথাটা। শুভময়ের একাকী, অসুস্থ মা একবার শুনতে চায় ছেলের গলা। কমলিনী শুভময়ের ল্যান্ডনম্বরে ফোন করে কথা বলে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে অশীতিপর বৃদ্ধাকে। রোজ সন্ধ্যেবেলা অমলেন্দু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শুভময়ের গলা করে ফোন করে ওর মাকে। কখনো শুভময়ের গল্প শোনায় ওর মায়ের পাশে বসে। বৃদ্ধার চোখে-মুখে আলো ফুটে ওঠে। কমলিনী দেখে। ওদের তিনজনের পৃথিবীতে আলো ছড়িয়ে পড়া দেখতে পায় ও। কমলিনী জানে এই আলো ওর ভেতরের প্রদীপের আলোর থেকেও অনেকটা উজ্জ্বল।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন