কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০ |
ক্যাপ্টেন স্পার্ক
আজও স্কুল থেকে ফিরে মায়া দেখলো, রিকু ওই কাঁচের ছোট্ট গোল অ্যাকুরিয়ামে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল মায়ার। হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বাইরের ঘরের সোফায় বসে ডাক দিল রিকুকে, 'রিকুবাবা! মন খারাপ?' রিকু মায়ের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল, – ' না তো!'
''খেলতে যাওনি কেন তবে? বন্ধুরা
আসেনি আজ ডাকতে?'
'এসেছে তো!'
'তুমি যাওনি কেন?'
রিকু কোনো উত্তর না দিয়ে ব্যালকনিতে
চলে গেল। সেখান থেকে ঝুঁকে আবাসনের মাঠে ওর বন্ধুদের খেলা দেখতে থাকল। মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে সোফা থেকে উঠে পড়ে স্নানঘরে গিয়ে ঢুকলো।
স্নান সেরে বেরিয়ে দেখলো, রিকু
হোমওয়ার্কের খাতা খুলে বসেছে ডাইনিং টেবলে। সদ্য ক্লাস ওয়ানে উঠেছে সে। কেজি ক্লাসের ছেলেরা তাকে দাদা বলে ডাকে বলে বেশ
একটা ভারিক্কি ভাব এসেছে কথাবার্তায় রিকুবাবুর।
পাশে তার হরলিক্সের গ্লাস রাখা। মায়া দেখে আশ্বস্ত হলো। যাক বাবা, রিকু আবার ছন্দে
ফিরেছে। 'ক্যাপ্টেন স্পার্ক' নামে রিকুর আদরের শার্ক মাছটি মারা যাবার পর থেকে এই তিনদিন ওর খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা
সব শিকেয় উঠেছিলো। সারাদিন ওই অ্যাকোরিয়ামে
নাক ঠেকিয়ে কাটিয়ে দিতো।
মায়া, রিকুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
'ভাবছি, কাল তোর জন্য একটা নতুন শার্ক কিনে নিয়ে আসবো।' রিকু মায়ার দিকে তাকিয়ে রইল
কয়েক মুহূর্ত। তারপর গম্ভীর গলায় বললো, 'একদম না।' বলে আবার খাতায় মন দিলো। মায়া নিশ্চিন্ত
হয়ে নিজের স্কুলের ক্লাস টেস্টের খাতার বোঝা নিয়ে ছেলের পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে
পড়লো।
সকাল ছটায় রিকু ঘুম ভাঙালো, 'মা! ও মা! ক্যাপ্টেন স্পার্ক এর খাবারের বটলটা কোথায় রেখেছ?'
ঘুম চোখে মায়া বললো, 'ওই তো, টিভি
ক্যাবিনেটের নীচের তাকে। কেন, কী করবি?'
'আরে, ওর খিদে পেয়েছে তো!' বলতে
বলতে রিকু ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
ধড়মড় করে উঠে বসলো মায়া বিছানার
ওপর, 'কার!' রিকুর পেছন পেছন ডাইনিং হলে বেরিয়ে এসে দেখলো, রিকু দানা দানা খাবার ফেলছে
অ্যাকুরিয়ামের জলে, আর সেটা টুপ করে ডুবে গিয়েই গুপুস করে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ছলাৎ
করে নড়ে উঠছে গোলাকার বদ্ধ জলটুকু। সকালের তেরচা রোদ এসে পড়েছে রিকুর উজ্জ্বল হাসিমুখে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন