কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০


বায়োস্কোপ

বায়োস্কোপে ঢুকে হল্ অন্ধকারে ঢেকে যাবার পর জিৎ নিজের বাঁ হাত দিয়ে কুর্চিকে বেড় দিয়ে ওর ডান হাতের আঙুলে আঙুল ছোঁয়াল। তারপর ওহাতে আলতো চাপ দিয়ে বোঝাল, আমি আছি। আর নিজের ডান হাত দিয়ে কুর্চির সদ্য বেড়ে ওঠা চুলের সিল্ক আলতো সরিয়ে ওর বাঁ গালে ভালবেসে হাত বোলাতেই কুর্চি ঝরঝর কেঁদে ফেলল। এই কান্না জুনের পাঁচ থেকে কুর্চির কোথাও একটা জমে ছিল, কেউ দেখতে পায়নি। চোখের গরম জল জিতের হাতে। আষাঢ় ফোঁটায়। জিৎ কুর্চির চুলে হাত বুলিয়ে চলে।

কুর্চি যে বাড়িতে ভাড়া থাকে, তার পেছনের জঙ্গলে পরপর কয়েকটা বিশাল কুর্চি গাছ আছে, মে-জুন সাদা ফুলে ঢেকে যায়, কুর্চি ওই আলোর মধ্যে নিজের মুক্তি খুঁজে পায়। জিৎ তাই ভালবেসে কুর্চি ডাকে। ডাকতে ডাকতে আসল নাম কবেই ভুলে গেছে। কি একটা যেন ছিল...

গোটা হলে হাতে গোনা কিছু লোক। এই কল্পনার ছ্যাকড়াগাড়ি সিনেমা দেখতে কারো ইন্টারেস্ট নেই, বোঝা যাচ্ছে। অথবা যারা এসেছে, তারাও হয়ত জিতের মত নিজস্ব কোন সেন্টিমেন্ট নিয়ে হলে ক’টুকরো ভাঙা কাচ জুড়তে এসেছে। আবার মুখদেখা আয়না। এভাবে জোড়া যায়?

জিৎ একটা অদ্ভুত হ্যালুসিনেশনের জগতে থাকে। ও মনেপ্রাণে কুর্চিকে নিজের বউ হিসেবে কল্পনা করে। রোজ। যদিও টাইমফ্রেমটা একটু নড়বড়ে। কুর্চির গলা শুনে ঘুম ভাঙে, কুর্চিকে ফোনের ওপাশে রেখে ঘুমোতে যায়। কুর্চিও বোঝে না ওর কোন্ জগতে পা ফেলা উচিৎ। কনফিউজড। জিৎ ডেডিকেটেড, প্যাশনেট। ওকে পাশে পেলে, ওর বুকে হাত রাখলে কুর্চি ভরসা পায়। কিন্তু ওর একটা জলজ্যান্ত পিছুটান...

পাঁচ তারিখ হ্যালু ভাঙার আগে ওর গালে এক সপাট থাপ্পড়। ও বুঝে ওঠার আগেই। ঘর জুড়ে টুকরো বিটুকরো মুক্তোর দানারা, ওর নিজস্ব অভিমান মর্যাদা, একে একে, গড়াচ্ছে। সেখান থেকে পঁচিশের বায়োস্কোপ। ভেঙে যাবার পরের কনস্ট্রাকশন। দূরের জঙ্গলে ও রোজ দেখতে পায়। ভেঙে যাওয়া গাছের গুঁড়ির ওপর নাম-না-জানা চারাগাছ, তার মাথায় কুঁড়ি ফুটছে। হাওয়া খেলছে।

জিৎ আর কুর্চির ঠোঁট একে অপরের স্বাদে বিভোর, হলের বাইরে তখন অঝোর আষাঢ়, বায়োস্কোপের ভেতর চড়া মিউজিক আর চোখ ঝলসানো আলো। জিৎ ডানহাত দিয়ে কুর্চির চোখ ঢেকে। এসব আজগুবি দেখে লাভ নেই। জিতের মধ্যে কুর্চি আরো মিশে যাচ্ছে। এই কান্না ভালবাসার, অভিমানের। হলের বাইরে চারুলতার মাধবী, ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে অভিমানী চোখে অনেক দূর।

সকাল সাড়ে এগারটা। কুর্চি নিজের ছোট্ট ভাড়াঘরের বারান্দায় কাপড় গুছোচ্ছে। বাইরে জিৎ একটা অটো নিয়ে ক্যাঁঅ্যাচ করে দাঁড়াল। হাত নাড়ছে। কুর্চির বুকের ভেতর আবার লাবডুব। যে অবয়ব ও রোজ ছুঁয়ে থাকতে চায়, আদরে ভরিয়ে দিতে চায়, ওর সামনে। জিতের আগে কোন প্রেফিক্স বসানো যায় না?

— নেমে এসো, চলো, বায়োস্কোপ যাব।

— অটোটা ছেড়ে দিলে, এবার কিভাবে যাব?

জিৎ হাসে। চোখ বরাবর।

— হাঁটব। পার্ক সরণি সৃজনী ধরে হাঁটব। যাবে না?

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন